জ্বলদর্চি

ধর্ম, সাম্প্রদায়িকতা ও নজরুল


ধর্ম, সাম্প্রদায়িকতা ও নজরুল

মু ক্তি  দা শ


ধর্ম অতি বিষম বস্তু। মানব হৃদয়ের সবচেয়ে স্পর্শকাতর স্থানটিতে এর অধিষ্ঠান। তবু ‘বিষম’ বলছি এই কারণে যে, ধর্মের প্রকৃত স্বরূপ ও তার সঙজ্ঞানুগ উপলব্ধি সম্ভবত আজও মানুষের বোধসীমার বাইরে। অন্যভাবে বলা যায়, ধর্মের ঔদার্যমন্ডিত নান্দনিক অনুভূতি না পেয়েছে তার বিশাল শুচিশুভ্র পরিব্যাপ্ততার মাঝে আপামর মানবজাতিকে একীভূত করতে, না পেরেছে তার মনের সংকীর্ণতা ও আত্মকেন্দ্রিকতাকে দূর করতে। এই ব্যর্থতা, এই অসাফল্য ধর্মের নয়, মানুষেরই। ধর্মকে সে ব্যবহার করেছে নিছক সংস্কার ও জৈবিক কামনা-বাসনা এবং জাগতিক স্বার্থসর্বস্বতাকে চরিতার্থ করার অন্যতম হাতিয়ার রূপে। এবং এই উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনের নিরিখেই কালক্রমে ধর্ম তার একক প্রসারতা হারিয়ে হয়েছে খন্ড-বিখন্ড। আর এই ধর্ম-বিভাজনই তো সাম্প্রদায়িক মনোভাবের অনিবার্য ফসল। 

ব্যুৎপত্তিগত বিচারে যা ধারণ করে বা রক্ষা করে, তা-ই ধর্ম। এর সমর্থন পাওয়া যাবে মহাভারতের কর্ণপর্বের একপঞ্চাশতম অধ্যায়ে উল্লিখিত ৫৭ নং শ্লোকে –

ধারণাদ্ধর্মমিত্যাহুধর্মো ধারয়তে প্রজাঃ।

যৎস্যাদ্ধারণ-সযুক্তং স ধর্ম ইতি নিশ্চয়ঃ।।

অর্থাৎ লোকসাধারণকে ধারণ বা রক্ষা করে বলেই একে ধর্ম বলে। যার দ্বারা লোকের রক্ষা হয়, তা-ই ধর্ম – একথা নিশ্চিত জেনো। ধর্মের এহেন সারগর্ভ সংজ্ঞাগত গূঢ়তা সম্পর্কে মানুষ যে অবহিত নয় – এমন কথাটি কিন্তু বলা যাবে না। তবে এই তাত্ত্বিক অতলতাকে অনুধাবন করতে হলে যে অনুভূতিসমৃদ্ধ মানসিকতার প্রয়োজন, মানবকুলে আজ তার বড়ই অভাব।

প্রচলিত অর্থে ধর্ম-এর প্রতিশব্দ হিসেবে আমরা ইংরেজি ‘রিলিজিয়ন’ (Religion) শব্দটিকে প্রায়শঃই ব্যবহার করে থাকি। মূল বিভ্রান্তি এখানেই। ‘রিলিজিয়ন’ কোনো বিশেষ সম্প্রদায় বা গোষ্ঠী অনুসৃত মতাদর্শকেই বোঝায় মাত্র, ‘ধর্ম’ শব্দটির সমগ্রতাকে প্রতিভাত করে না। মানুষের জীবন-প্রণালী ও সামাজিক অনুশাসনের প্রেক্ষাপটে সম্ভবত এই বিভ্রান্তি অনিবার্য, অমোঘ। এবং অপরিত্যাজ্যও বটে।

এই রাষ্ট্র, এই সমাজই সৃষ্টি করে রিলিজিয়ন। পক্ষান্তরে ধর্ম নিজেই সৃষ্টি করে মানুষকে। কেন না, জীবজগতে সৃজনশীলতাও তো একটা ধর্ম। কোনও বস্তুর অন্তর্গত স্বভাবই তার ধর্ম। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘আত্মপরিচয়’-এর তৃতীয় নিবন্ধে বলেছেন – “সকল মানুষেরই ‘আমার ধর্ম’ বলে একটা বিশেষ জিনিস আছে। কিন্তু সেইটিকেই সে স্পষ্ট করে জানে না। সে জানে আমি খ্রীষ্টান, আমি মুসলমান, আমি বৈষ্ণব, আমি শাক্ত ইত্যাদি…কোন ধর্মটি তার? যে-ধর্ম মনের ভিতরে গোপন থেকে তাকে সৃষ্টি করে তুলেছে। জীবজন্তুকে গড়ে তোলে তার অন্তর্নিহিত প্রাণধর্ম। সেই প্রাণধর্মটির কোন খবর রাখা জন্তুর পক্ষে দরকারই নাই। মানুষের আর একটি প্রাণ আছে, সেটা তার শারীর মনের চেয়ে বড়ো – সেইটে মনুষ্যত্ব। এই প্রাণের ভিতরকার সৃজনীশক্তিই হচ্ছে তার ধর্ম। এই জন্যে আমাদের ভাষায় ‘ধর্ম’ খুব একটা অর্থপূর্ণ শব্দ। জলের জলত্বই হচ্ছে জলের ধর্ম, আগুনের আগুনত্বই আগুনের ধর্ম। তেমনি মানুষের ধর্মটিই হচ্ছে তার অন্তরতম সত্য।”

যেকোনো কারণেই হোক, মানুষের জীবন-প্রণালীতে ধর্মের এই মূল সুরটি আজ সর্বতোভাবে উপেক্ষিত। রিলিজিয়নের বিচ্ছিন্নতাবাদী মানসিকতা আজ সেখানে মৌরসীপাট্টা করে নিয়েছে।

আমরা জানি, বর্তমান ভারতবর্ষে মূলত দুটি ধর্মসম্প্রদায় পারস্পরিক বিরোধে, দ্বন্দ্ব-বিদ্বেষে রীতিমতন সক্রিয়। একটি হিন্দু সম্প্রদায় এবং অপরটি মুসলিম সম্প্রদায়। অথচ ভারতের মধ্যযুগীয় ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, মুসলিম আগমন ও আধিপত্য বিস্তারের সময়কাল থেকে ব্রিটিশ-শাসন কায়েম হওয়ার কয়েকবছর পর পর্যন্ত, কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনার কথা বাদ দিলে, হিন্দু এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে রয়েছে ধর্মসমন্বয় ও সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের স্বর্ণরেণু। পঞ্চদশ শতকের প্রথমদিকে কাশ্মীরের শাসনকর্তা জইনুল আবেদীন তাঁর অসাম্প্রদায়িক মনোভাব ও হিন্দুপ্রীতির জন্যে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন। কথিত আছে, ধর্মসমন্বয়তার খাতিরে তিনি নাকি গো-হত্যাও নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। সংস্কৃতভাষায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি ছিল তাঁর। সংস্কৃতে লেখা মহাভারত তিনি পুরোপুরি পার্সি ভাষায় অনুবাদ করে ফেলেছিলেন। তাঁর বিদ্যোৎসাহীতা প্রায় কিংবদন্তীর পর্যায়ে পড়ে।

বাংলার ইলিয়াস শাহী এবং হুসেন শাহী আমলেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ধর্মনিরপেক্ষতা লক্ষ্ণণীয়। ইলিয়াস শাহী আমলে হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রাধান্য ছিল সবচেয়ে বেশি। ইলিয়াস শাহী বংশের শাসকগণ এই দুই ধর্মের সমন্বয় সাধন করেছিলেন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে – “ইলিয়াস শাহীরা দেশবাসীর প্রতি খুব ভাল ব্যবহার করিতেন। এমনকি, তাহাদের হিন্দু ও বৌদ্ধ বড়লোকদের সাহায্য না লইলে চলিত না। তাহাদের রাজত্বে অনেক জায়গায় বড় বড় হিন্দু ও বৌদ্ধ জায়গীরদার ছিল।” (হরপ্রসাদ রচনাবলী)

এরপর হুশেন শাহী আমল। এই সময়কাল ধর্মীয় সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও সমন্বয়তার স্বর্ণযুগ হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছে। সে সময়কার সাহিত্যই তার নিদর্শন বহন করছে। ঐতিহাসিক হাবিবুল্লা লিখেছেন – “A period in which the vernacular found its due recognition as the literary medium through which the repressed intellect of Bengal was to find it’s release” (বাংলার ইতিহাস)

পরিতাপের বিষয়, পরবর্তীকালে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শক্তির উন্মেষ ও ক্রমবিস্তারের ফলে সব ওলোট-পালোট হয়ে যায়। ভারতীয় জনজীবনে হিন্দু ও মুসলমান – এই দুই বৃহৎ সাম্প্রদায়িক শক্তির সম্মিলিত ঐক্যরূপ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে ভীত সন্ত্রস্ত করে তুলেছিল। তাদের দাম্ভিকতাপূর্ণ আত্মবিশ্বাসের ভিতকে একেবারে নড়বড়ে করে দিয়েছিল। ১৮৫৭ সালে সিপাই-বিদ্রোহের পটভূমিতে এই ঐক্যশক্তির পথম বহিঃপ্রকাশ দেখেছিল ইংরেজরা। দেখে রীতিমতো শঙ্কিতচিত্ত, দিশেহারা। সুতরাং এই দুই মহাশক্তির মাঝে যেভাবেই হোক একটা সাম্প্রদায়িক বেড়া তুলে ফেলা দরকার। তবে ধীরে ধীরে। কূট-কৌশলের সাহায্যে। কখনো তাদের ধর্মীয় ভাবাবেগে সাম্প্রদায়িকতার সুড়সুড়ি দিয়ে, কখনো বা তাদের সারল্যমাখা দৃষ্টির সামনে অলীক স্বপ্নের কুহেলিকা বিস্তার করে। এ সম্পর্কে পি. সি. যোশী তাঁর একটি গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন – “During the siege of Delhi, British agents repeatedly tried to transform the joint Hindu-Muslim civil war, even as early as May 1857, British agents began inciting the Muslims against the Hindus in the name of Jihad and the matter was brought before Bahadur Shah.”

‌ইংরেজ শাসনকর্তাদের এই অনলস প্রচেষ্টা, আংশিকভাবে হলেও, প্রথম ফলপ্রসূ হয়েছিল ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী ও স্বদেশী আন্দোলনের পটভূমিতে। যদিও তা সেইসময়ে সুদূরপ্রসারী হতে পারেনি, তবু ভারতবর্ষের হিন্দু ও মুসলমান – এই দুই প্রধান ধর্মীয় গোষ্ঠীর পরিচ্ছন্ন মানসিকতার দেওয়ালে সাম্প্রদায়িকতার পেরেকটি তো ঠুকে দেওয়া গেল! ব্রিটিশ সরকারের বিভাজননীতির কূটনৈতিক চালে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের সাদা নিষ্কলুষ দেওয়ালে একটা ‘হেয়ার ক্র্যাক’ দেখা দিল বটে, কিন্তু অচিরেই জালিয়ানওয়ালাবাগের অবিস্মরণীয় ঘটনার মর্মান্তিকতা সেই ‘হেয়ার ক্র্যাক’ মেরামতও করে দিল। সেই নারকীয় ঘটনার দগদগে ঘা ভারতবাসীর মননে আজও সমুজ্জ্বল। রাওলাট অ্যাক্টের প্রতিবাদে সারাদেশ তখন উত্তাল। হরতাল-সভা-মিছিল। চারিদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা। বদরুদ্দিন উমর তাঁর ‘ভারতীয় জাতীয় আন্দোলন’ গ্রন্থে এ-প্রসংগে এক জায়গায় লিখেছেন – “ ভারতের ইতিহাসে একই সময়ে শহর থেকে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত এত ব্যাপক বিক্ষোভ ইতিপূর্বে আর দেখা যায়নি। এই বিক্ষোভে জাতিধর্ম নির্বিশষে জনগণ বিপুলভাবে অংশগ্রহণ করে…১৩ই এপ্রিল রাওলাট অ্যাক্টের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদসভা আহ্বান করা হয়, সেটা ডায়ার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। কিন্তু নিষেধ অমান্য করে ঐদিন জালিয়ানওয়ালাবাগে হাজার হাজার হিন্দু, মুসলমান, শিখ নরনারী জমায়েত হয়।” তারপর সেই বিপুল গণহত্যার পৈশাচিক তান্ডবলীলা – যার রক্তের ছিটে ভারতবর্ষের মাটিতে ব্রিটিশ শাসনের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছিল।

জালিয়ানওয়ালাবাগের পৈশাচিক ঘটনা যতই মর্মন্তুদ হোক বা ভারতের ইতিহাসে বিদেশী শাসকদের নিষ্ঠুর অত্যাচারের নজিরবিহীন দষ্টান্ত স্থাপন করুক – এরও যে একটা পজিভিটির দিক আছে, তা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন একজন ভারতীয় মুসলমান কবি। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম। আসলে হিন্দু-মুসলমানের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহাবস্থান তাঁর কাছে এতটাই কাম্য ছিল যে, এজন্যে তিনি যেকোনো মূল্য দিতেও রাজি। তিনি দেখেছিলেন এবং বুঝেছিলেন যে, কোনও একটি উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনা – বিশেষত, বহিঃশত্রুর কদর্য আগ্রাসন নীতির নগ্ন বহিঃপ্রকাশ তথা রাজনৈতিক স্বার্থোদ্ভুত বৈষম্যনীতি, হিন্দু-মুসলমানের সম্প্রীতির সম্পর্ককে অন্তত বেশ কিছুকালের জন্যে মজবুত ও অটুট রাখতে পারে। যাবতীয় পারস্পরিক অন্তর্দ্বন্দ্ব ভুলে তারা তখন একই সুতোয় গাঁথা একটি মালা যেন! চিত্রটি যথাযথভাবে নজরুল তাঁর ‘প্যাক্‌ট্‌’ শীর্ষক ব্যঙ্গ কবিতায় এরকম এঁকেছেন – 

“বদনা গাড়ুতে গলাগলি করে নব প্যাক্‌টের আসনাই,

মুসলমানের হাতে নাই ছুরি, হিন্দুর হাতে বাঁশ নাই।

….

বাবু দেন মেখে দাড়িতে খোজাব, মিঞা চৈতনে তৈল,

চারচোখে করে আড় চোখাচোখি, কি মধু মিলন হৈল!”

তারপর দিনকতক বাদে উত্তেজনা যেই না একটু থিতিয়ে এল, অমনি আবার –


“বদনা গাড়ুতে পুনঃ ঠোকাঠুকি বোল উঠিল হা হন্ত;

ঊর্ধে থাকিয়া সিঙ্গি মাতুল হাসে ছিরকুটি দন্ত। 

মসজিদ পানে ছুটিলেন মিঞা, মন্দির পানে হিন্দু,

আকাশে উঠিল চির জিজ্ঞাসা করুণ চন্দ্রবিন্দু!”

হিন্দু-মুসলমান সংহতির সুরমুর্ছনা যেমন নজরুলের প্রায় প্রতিটি কবিতায় ধ্বনিত হয়েছে, তেমনি গদ্যরচনাতেও। জালিয়ানওয়ালাবাগ প্রসংগে ‘ডায়ারের স্মৃতিস্তম্ভ’ শীর্ষক অনবদ্য রচনাটিতেও তারই অনুরণন – “এই মহামানবের সাগরতীরে ভারতবাসী জাগিয়াছে – বড় সুন্দর মোহনমূর্তিতে জাগিয়াছে। সেই তোমার আনন্দের হত্যার দিনে সেই জালিয়ানওয়ালাবাগের হতভাগ্যদের রক্তের উপর দাঁড়াইয়া হিন্দু-মুসলমান দুইভাই গলাগলি করিয়া কাঁদিয়াছে। দুঃখের দিনেই প্রাণের মিলন সত্যিকার মিলন হয়।…আজ এস ডায়ার, আমাদের এই মহামিলনের পবিত্র দৃশ্য দেখিতে তোমাকেও নিমন্ত্রণ করিতেছি।”

নজরুলই বাংলার হিন্দু-মুসলমান সংহতির অবিসংবাদিত শ্রেষ্ঠ কবি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অন্যতম সুফী সাধক। তাঁর লেখা গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক সবকিছুরই মৌল প্রেরণা ও এষণা ছিল ‘একই বৃন্তে দুইটি কুসুম’-এর মূলভাবনাটির নির্যাস। তাঁর লেখনী হিন্দু-মসলমান সম্প্রীতির ক্ষেত্রে সাংগঠনিক ভূমিকা নিয়েছে। রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনের মতনই নজরুলের সাহিত্য-সংস্কৃতির জীবনেরও দুটি ধারা। একদিকে দেশপ্রেম, অন্যদিকে সংহতি-প্রেম। হিন্দু ও মুসলমানের বিভেদ সৃষ্টির জন্যে একমাত্র দায়ী ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীদের ওপর তিনি ক্ষোভে আক্রোশে ফেটে পড়েছেন। যার প্রকাশ আমরা দেখতে পাই ‘অগ্নিবীণা’, ‘বিদ্রোহী’, ‘বিষের বাঁশী’ ‘ফণিমনসা’ প্রভৃতি অমরসৃষ্টিতে।

সমসাময়িক সমস্যাবলী নজরুলের রচনার প্রধান উপজীব্য হলেও তা কালজয়ী, অমর। তাছাড়া সাম্প্রদায়িক সমস্যা তো এখনও আমাদের দেশে একটি দুরারোগ্য ব্যাধির মতনই বিদ্যমান। ধর্মের নামে সারা দেশজুড়ে চলছে সন্ত্রাস। একের পর এক ঘটে চলেছে নারকীয় ঘটনা। এক ধর্মের সংগে অন্য ধর্মের সংঘাত বাধিয়ে, ধর্মকে হাতিয়ার করে বিভেদ ও বিচ্ছিনতাবোধের প্রসার ঘটিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুঠতে বদ্ধপরিকর একশ্রেণীর আত্মসর্বস্ব স্বার্থান্বেষী নেতার দল। বিগত দু-তিন দশক ধরে বাবরি মসজিদ ও রামমন্দিরের ভাঙা-গড়াকে কেন্দ্র করে যে উত্তেজনাপূর্ণ নাটকীয়তার সৃষ্টি হয়েছিল বা হয়ে চলেছে, তা কি হিন্দু-মুসলমানের সাম্প্রদায়িকতার নবতম সংস্করণ নয়? নজরুল কি তারও আগাম আভাস পেয়ে গিয়েছিলেন? নইলে তিনি লিখবেন কেন –

“তোদের আঘাতে টুটেছে মোদের মন্দির-মসজিদ,

পরাধীনদের কলুষিত করে উঠেছিল তার ভিত।

খোদা খোদ যেন করিতেছে লয়

পরাধীনদের উপাসনালয়।

স্বাধীন হাতের পূত মাটি দিয়া রচিবে বেদী শহীদ,

টুটিয়াছে চূড়া? ওরে ঐ সাথে টুটেছে তোদের নিদ।”

(হিন্দু-মুসলমান যুদ্ধ)

             


Post a Comment

0 Comments