জ্বলদর্চি

দীর্ঘ কবিতা / বিমল মণ্ডল

ফোটোগ্রাফি - সৈয়দ স্নেহাংশু  



একটা ঢেউ

বি ম ল  ম ণ্ড ল

মন আর ভালো নেই 
ভালো থাকার প্রশ্নে 'ভয়'
প্রতিবেশি আর আমার আত্মীয়স্বজন
বসে থাকে ঘরে দিন রাত
বুকের মধ্যে মৃত্যু ঢেউ
যেন আমার চৌকাঠ মাড়িয়েই 
ঢুকে পড়ে শয়ন ঘরে  
আমার শরীর ভাসিয়ে দেয় 
আবার মুখের মধ্যে জল ঢুকিয়ে
বেঁচে আছি কিনা দেখে
আদলে প্রতিটি নিঃশ্বাস মেপে দেখে 
ও ওর মতো করে 

আমি দেখতে পাচ্ছি না ওর শরীর
শুধু আমার শরীর নিয়ে নাড়াচাড়া আর  পরপর ঢেউতে সরিয়ে সারা বাড়িময় আচ্ছন্ন করে রাখে

আমি ভেঙে ভেঙে যাই 
সারা বাড়িময় জিজ্ঞাসার প্রতিবেদন
বুকের মধ্যে মৃত্যু ঢেউ
যেন আমার চৌকাঠ মাড়িয়েই 
ঢুকে পড়ে আমার প্রেয়সীর বুকের উপর
বুকের থেকে নিঃশব্দে আমার যৌবন ক্ষুধা
তলিয়ে নিয়ে যায়
আমি বিছানার একপাশে চেয়ে চেয়ে থাকি
আমার সাহস, আমার কর্তব্য 
বাইরের দরজার ফাঁকে আটকে

আমাদের মাঝে শুয়ে নবপ্রভাতের বংশধর
তাঁরই একটি চোখ  আমাকে ভাবায়
বছর বছর কাঙাল হলেও 
ওকে নিয়ে রোচে  যাই আমার ভবিষ্যৎ

ও পাশ মাড়িয়ে জড়িয়ে ধরে
আর বলে "আমি বাঁচতে চাই বাবা... "
এই একটা শব্দ যেন যন্ত্রণা হয়ে ঘুরে ফিরে আসে    
আমার চোখে রাতের বাসা
ফুটন্ত রক্তের ঢেউ ভেঙে পড়ে শিরায় শিরায়
আমার কাছে ভাগ্য-জিজ্ঞাসা 
সে কেবল আগামীর জন্য বেঁচে থাকা

হঠাৎ আছড়ে পড়ে স্বজনদের মৃত্যু ঢেউ
ওরা আটকে আছে মৃত্যু চড়ায় 
ওদের শরীরে ঢেউ আর লাগে না 
বোবা মুখে ইশারায় বলে —
"শুধু আগামীর জন্য বেঁচে থেকো।"

সমস্ত নোংরা আবর্জনায় ভারিক্কি বুক
রাত - দিন ভেঙে সাত সমুদ্র ঢেউ
নক্ষত্ররাও মেঘের আড়ালে 
আবেদন লিপি  সাজায়

থৈ থৈ জল ছাদ ঘিরে ধরে
ভেসে ওঠে বিছানার খাট
আমাকে ঢেউ তুলে ধরে   
ছাদের দেওয়ালের প্রান্তে 

জীবন সংগ্রামের রাত 
বেদনার কাছে বড়ো হয়
বেঁচে রাখার লড়াই জীবন - মৃত্যু
অপূর্ব বিস্ময় কাজ করে
রাতভর  কপালে শুধু জাগে ক্লান্তি
আর বিন্দু বিন্দু ঘাম
শেষমেশ  ভোর হয়  
বিছানাপরে নিদান স্বাক্ষর  
ঢেউ ছুঁয়ে শরীরের হাড়ের ভেতর
আমার স্বপ্ন আর আমার আগামীর  স্বপ্ন
পৃথিবীকে করে রূপান্তর

শুধু একটা ঢেউ
সকালের পাগল বাতাসে 
আমাকে টেনে নিয়ে যায় 
আর এক নতুন মৃত্যুর চড়াতে
সেখানে শুয়ে আমার প্রেয়সী 
আর
আমার আগামীর ভবিষ্যৎ
নির্জন কপালে চুমু দেয়

 একটা ঢেউ ।

ফোটোগ্রাফি - সৈয়দ স্নেহাংশু । 

Post a Comment

0 Comments