জ্বলদর্চি

দীর্ঘ কবিতা / শ্রাবণী গুপ্ত

ফোটোগ্রাফি - সৈয়দ স্নেহাংশু  


পথ

শ্রা ব ণী  গু প্ত


এক এক করে বন্ধ হতে থাকে সমূহ পথ
ধ্বংসের আবহ মাঝেও যে সৃষ্টির উল্লাসে
কখনও মেতে উঠেছিল সৌরপরিবার,
আজ তারই বিবিধ পথে কেবলই কঙ্কর
ঈশান নৈঋত এমনকি প্রতিটা কোণ থেকে
ছুটে আসছে বিষাক্ত উদ্ধত বায়ু....


আমরা দেখছি তুমুল অম্লবৃষ্টির মাঝে দাঁড়িয়ে
আমাদের পৌরাণিক গাভী, বৃষ্টিস্নাত
আমরা দেখছি রৌদ্রভুক্ বৃক্ষের নীচে দাঁড়িয়ে
আমাদের পোরাণিক ছায়া, রৌদ্রস্নাত

সকলেই অচৈতন্য কি?
কোথায় গেল আমাদের বাক্ ও বিবেক?

শেকড়বিহীন অস্তিত্বের দিকে ক্রমশ এগিয়ে চলেছে প্রাচি-প্রতীচির গরিমা
অযাচিত ঔদ্ধত্বের কাছে বিকিয়ে যাচ্ছে
কষ্টার্জিত চেতনা

আছড়ে পড়ছে ঘূনধরা মানব-শরীর
ছিটকে পড়ছে নাভিমূল
গর্ভজল ভেঙে উঠে আসছে অদ্ভুত এক কান্না
আমাদের ঘুমের মধ্যে এ কোন্ প্রেতিনীর অট্টহাস?
শূন্য থেকে ক্রমাগত শূন্যের দিকে
এ কোন্ অগম অভিযান?

অন্তরীক্ষ জুড়ে আমরা কি দেখতে পাচ্ছি
অগণিত মানুষের ঢল?
আলোকবর্ষ দূরে আমরা কি শুনতে পাচ্ছি
উদ্ধত মানুষের কোলাহল?
মানুষ? নাকি সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ অহংকার
দাঁড়িয়ে আছে, মুখ অবনত...


এই আমরাই
এই আমরাই তো কত রক্ত বইয়েছি
দেখিয়েছি ট্র্যাপিজের খেলা
ঘুরন্ত মাছের চোখে বিঁধিয়েছি 
আত্মাভিমানের তীর
লবণের আস্বাদ নিয়েছি কাজু আর বাদামে
নুড়িতে নুড়িতে ঘষে উপঠৌকন সাজিয়েছি
পোড়া মাংসের

জ্বালানী ফুরিয়ে, ফাঁপা মাটির উপরতলায় বানিয়েছি জমাটি সংসার...

হা রে প্রাজ্ঞ মানুষ
একেক করে সন্তানদের হাতে তুলে দিয়েছ বিদ্বেষের ধারালো অস্ত্র
একেক করে অর্ধভুক্ত আপেলে লুকিয়েছ
কাম এবং মোহ

যে কবিতা লিখেছ যে গান শুনেছ
যদি সত্যিকারের ধারণের ক্ষমতা রাখতে!

তুমি কি দ্যাখো নি
আজ দক্ষিনের জানালায় কোন পাখি এসে বসে না, কাক ডাকে না
চড়ুইপাখি দানা খুঁটে খায় না
জোনাকিরা অবধি ঘৃণায়, অন্ধকারে মুখ লুকায়

অপেক্ষা করো হে প্রাজ্ঞ মানুষ
আমাদের সম্ভাব্য ফসিল মাটির নীচে চাপা পড়বে
যেদিন, সেদিন বেশি দূর নয়
একেক করে সমূহ পথ বন্ধ হয়ে এলো বলে|

ফোটোগ্রাফি - সৈয়দ স্নেহাংশু  

Post a Comment

4 Comments

  1. খুবসুন্দ। অন্য মানসিকস্তরে নিয়েযা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. খুব সুন্দর। অন্য এক মানসিক স্তরে পৌঁছে দেয়।

      Delete
  2. মনোগ্রাহী... চেতনার রঙে রঙিন

    ReplyDelete