জ্বলদর্চি

রবিবারের গল্প - স্বাধীনতা



স্বাধীনতা

বি ম ল  ম ণ্ড ল 

মুকুলের বউটি কাঁদছে। কয়েকদিন তাদের  বাড়িতে  উনুন  জ্বলেনি। তিন- তিনটা  ছেলে-মেয়ে না খেয়ে অসুস্থ  হয়ে  পড়েছে। 
বউটা  পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে কয়েক বার গিয়েও  বাঁকা মুখে ফিরে এসেছে। 

এদিকে  মুকুল  বাড়িতে  নেই। সে খুব  গরীব, তার তেমন কোন জায়গা  জমি নেই। শুধু  বাবার বসত বাড়ি টুকু।  কয়েকমাস হলো  মুকুল উড়িষ্যায় রাজ মিস্ত্রির কাজে গিয়ে আর ফেরেনি। প্রথম প্রথম খবরাখবর  নিত। কিন্তু  এখন  কোথায়  আছে, কি করছে তার খবর  নেই। 

এদিকে  আমফান ঝড়ে  মুকুলের ঘর উড়ে গেছে। তাতে একটা পলিথিন  পেয়েছিল  অঞ্চল  থেকে সেটা  ঘিরে মা আর তিন ছেলে - মেয়ে থাকে। এই পলিথিনটুকু  ছাড়া  আর মুকুলের বৌ কোনো  ক্ষতিপূরণ  পায়নি । তবুও  মুকুলের বউ মুরগী পালন  করে তার থেকে দু'একটা  টাকা আয় করতো । তাও প্রায় বন্ধ। 
এদিকে ছেলে - মেয়েদের  রেশন কার্ড  হয়নি কারণ  মুকুলের বউয়ের  কার্ড হয়নি  বলে তাই ছেলে  মেয়েদের  কার্ড হয়নি । মুকুলও সেই সময় গুরুত্ব  দেয়নি। কিন্তু  এখন  সরকার  থেকে বিনে পয়সার চালও সেভাবে  পায়না । তাই অনাহারে  কাটছে মুকুলের বউ। 

পাড়ার এক মাস্টার বাবু মুকুলের বৌকে পাঁচ'শ টাকা দেয়। সেই টাকা দিয়ে মুকুলের বৌ ছেলে- মেয়ের জন্য বাজার করে  স্বাধীনভাবে  সন্ধ্যা বেলায় বসে  আলুভাত খায় যেন একমুহূর্তে সারা বাড়িময় জোছনার  আলোয় আলোকিত। সারা বাড়ি আলোকিত  হলেও মুকুলের বউয়ের মুকুলের জন্য সারাজীবন  অন্ধকার । তাই আজ মুকুলের বউ স্বাধীনতার আলোয় দাঁড়িয়ে    দু'মুঠো ভাত চায় আর তার মুকুলের আসার অপেক্ষায়  রাস্তার  তেরঙ্গা  পতাকার তলে খোলা আকাশের  নীচে  দাঁড়িয়ে  স্বাধীনভাবে কেঁদে  যায়।

Post a Comment

3 Comments

  1. পড়লাম। ভালো লাগলো খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে স্বাধীনভাবে কেঁদে যায়।

    ReplyDelete
  2. বেশ ভালো লাগল।

    ReplyDelete
  3. বেশ ভালো লাগল।

    ReplyDelete