জ্বলদর্চি

লোককথা - বোকা তাঁতি


লোককথা-বোকাতাঁতি  
গল্প - ১৪


সু ব্র ত কু মা র  মা ন্না   

এক পুরুষের ছবি, ঠিক তার মতাে

বােকার্তাঁতি চাষবাস আর গ্রামের বুড়াে পুরোহিতের উপদেশের কথা ছাড়া আর কিছুই জানত না। তার স্ত্রী চমৎকার ঘরকন্না করতাে। একদিন বােকার গ্রামে কলকাতা থেকে একটি ছােট্টো মেয়ে তার দাদুর সঙ্গে বেড়াতে এসেছিল। তার হাতে একটি ছােটো আয়না ছিল। সেটি তার হাত থেকে পড়ে গেল। বােকা তাঁতি কাজ সেরে বাড়ি ফেরার সময় সেটি কুড়িয়ে পায়। সেটি নেড়ে চেড়ে দেখার সময় তার মধ্যে দেখে এক পুরুষের ছবি, ঠিক তার মতাে। সে ভাবে দেবতারা খুশি হয়ে তার বাবার ছবি পাঠিয়েছেন। সে মনে মনে ঠিক করে ছবিটা কাউকে দেখানাে চলবে না, এমনকি বৌ-কেও না। বৌ এই ছবি নষ্ট করে ফেলবে। ছবিটি বাড়িতে যত্ন করে রেখে দেয়। মাঠে কিছুতেই তার কাজে মন বসে না। ছবিটা ঠিক আছে কিনা শুধুই এই কথা ভেবে। তাই সে কাজ করতে করতে ছবিটি ঠিক আছে কিনা বার বার দেখতে আসে।

লুকিয়ে এলেও স্ত্রীর চোখে কিন্তু ধরা পড়ে যায়। বােকা তাঁতি বলে - “তোমায় ভারী দেখতে ইচ্ছে হল তাই এলাম"। একথা শুনে বৌ ভারী খুশী হল। কিন্তু বার বার একই ঘটনা ঘটাতে বৌয়ের মনে সন্দেহ হল। সে লুকিয়ে দেখল তার স্বামী ফুলদানি থেকে কিছু একটা বার করে খুশি হয়ে আবার সেখানে রেখে দিয়ে চলে গেল।

বৌ জিনিসটা হাতে নিয়ে দেখে একটি সুন্দরী মেয়ের ছবি। ছবি দেখে বৌয়ের সে কী রাগ। ছবিকে তাে কত ভেংচি-ই না কাটল, বলল - গােমড়ামুখী, ট্যারা চোখ, আবার আমার মতাে করে চুল বাঁধা হয়েছে।

বােকা তাঁতি ফিরে আসতে দুজনের ঝগড়া বেঁধে গেল। বােকা বােঝাতে চেষ্টা করে যে বৌ না দেখেই ঝগড়া করছে, ওটা বাবার ছবি। কিন্তু বৌ কিছুতেই বুঝতে নারাজ। সে বলে "আমি কি কচি খুকি নাকি ? তােমার বাবার অমন আহ্লাদি মেয়ের মতাে চেহারা ছিল বুঝি! আমার মতাে করে খোঁপা বাঁধত ?"

সমস্যা সমাধানের জন্য তারা গ্রামের পুরােহিতের কাছে গেল। পুরােহিতকে সব কথা জানাল। পুরােহিত সব কথা শুনে আয়নাটি নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ গম্ভীরভাবে তাকিয়ে রইল, এবং বলল - তোমরা দুজনেই ভুল করেছ। এটা হচ্ছে অতি প্রাচীন এক মহাপুরুষের ছবি। দেখছাে না মুখে কত প্রশান্তি, কত গাম্ভীর্য, কতই না পাণ্ডিত্য দেখা যাচ্ছে। এই ছবিকে যেখানে সেখানে না রেখে বড়াে কোনাে মন্দির নির্মাণ করে সেখানে ধূপ-চন্দন নিয়ে পুজো করা উচিত।” একথা বলেই পুরােহিত ছবি নিয়ে চলে গেল। বােকা তাঁতি বৌয়ের সাথে ঝগড়া ভুলে খুশি হয়ে খেতে বসল।

Post a Comment

0 Comments