জ্বলদর্চি

করোনা কালের মূল সংকট- বেকারত্ব/শুভেন্দু মণ্ডল


অলংকরণ- সুদেষ্ণা রায়চৌধুরী   


করোনা কালের মূল সংকট: বেকারত্ব              
                                                           
    শু ভে ন্দু  ম ণ্ড ল     
       
ভারতবর্ষের মতো বিপুল জনসংখ্যার দেশে নানাবিধ সমস্যার সঙ্গে বেকারত্বের সমস্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। হঠাৎ করেই করোনা পরিমণ্ডলে বর্তমান পৃথিবীর অনেক দেশ আজ স্তব্ধ। অন্যান্য দেশের মতো এ দেশও বিপুল সংখ্যক মানুষ কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছে। কারণ ভারতবর্ষের মতো দেশে স্বীকৃত কোনো অর্থনৈতিক অধিকার নাগরিকদের না থাকায় বেকারত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্রমশ। এ দেশের নাগরিকরা জীবন ও জীবিকা নির্বাহের জন্য কৃষিকাজ, ছোটো ও বড়ো শিল্প, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নানাবিধ কর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য, দিন মজুরীর উপর নির্ভর করে থাকে। বর্তমান সময়ের অস্থির পরিস্থিতিতে একদিকে মৃত্যু মিছিল অব্যাহত অন্যদিকে, মানুষ প্রাণের ভয়ে এবং সরকারি নিয়ম-নীতির বিধি- নিষেধে আবদ্ধ হয়ে ঘরে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি ও প্রযুক্তি কোনো কিছুই আজ মানুষকে এই আবহ থেকে মুক্তি দিতে পারছে না। এহেন সমাজের যুবক-যুবতিরা চাকরি হারানোর ভয়ে আবার কখনও চাকরি না পাওয়ায় দিনদিন হতাশায় ভুগছে। এদের এমন অবস্থা একটা বন দপ্তরের সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি বের হলে পিএইচ . ডি ছাত্রারাও আবেদন করতে ভুল করছে না। আবার দেশে বা দেশের বাইরে যারা কাজ করছে তাদেরকে এই পরিস্থিতিতে ছাঁটাই করে দেওয়া হচ্ছে, নয়তো কম বেতনের চাকরি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের অবস্থা আরও বেহাল। কারণ নিজের রাজ্যে কাজ না পেয়ে তারা ভিন রাজ্যে কাজের সন্ধানে গিয়েছিল ঠিকই কিন্তু পরিস্থিতির বিপাকে বিপর্যস্ত হয়ে তারা আজ কাজ হারিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছে। এই বেকারদের উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার আজ অপারক। শ্রমিকরা যে আগ্রহে রাজ্যে ফিরেছিল একটা আশা নিয়ে, সেই আশা ভঙ্গ হওয়ায় আজ পুনরায় তারা ভিন রাজ্যে যেতে বাধ্য হচ্ছে। 

     ভারতবর্ষ যেহেতু কৃষি প্রধান দেশ, সেহেতু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে মোকাবিলা করে কিছু কিছু অঞ্চলের কৃষকরা ফসল উৎপাদন করলেও পর্যাপ্ত ফসল মজুত এবং বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার দৌলতে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ফসল স্থানান্তরিত না করতে পারায় তারা আজ নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন। তাই কৃষকরা যেমন আর্থিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি কৃষিকাজের সঙ্গে নিযুক্ত শ্রমিকরা বেকারে পরিণত হচ্ছে। বাজারের মূল্য বৃদ্ধির অসাম্যতা তাই দিন দিন লক্ষ করা যাচ্ছে। শিল্পের ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে আর এক সংকট। বড়ো ও ছোটো শিল্প কারখানাগুলি শ্রমিকের অভাবে, কাঁচামাল আমদানি ও শিল্পজাত পণ্যের রপ্তানি করার সমস্যার জন্য কারখানার মালিক ও শ্রমিকরা আজ বিপর্যস্ত ও বিধ্বস্ত। এর পাশাপাশি যারা লোন নিয়ে নতুন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল তারা আজ ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে। আবার অনেকে ইতিমধ্যে দেউলিয়া হতে বসেছে। সরকারি কিছু প্রকল্পে বিনমূল্যে  দানাশস্য সাধারণ মানুষকে বণ্টন করার জন্য অনেক মানুষ উপকৃত হলেও  দানাশস্য বিক্রেতা ও চাষীরা বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এই সংকটকালে মোবাইল ও নেটওয়ার্ক কোম্পানিগুলির দেদার বিক্রি যে বেড়েছে, সেই চিত্র আমাদের কাছে বেশ স্পষ্ট। শিক্ষিত যুবক-যুবতি যারা সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আংশিকভাবে যুক্ত ছিল তারা আজ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এমনকি রেল ও অন্যান্য সংস্থার চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের ছাঁটাই করা, সরকারি ও বেসরকারি কনস্ট্রাকশনের দিনমজুরা কাজ হারিয়ে রাজ ভিক্ষার জন্য আবেদন প্রার্থী। এমতাবস্থায় সরকারের সুনির্দিষ্ট দীর্ঘমেয়াদী কোনো পরিকল্পনা না থাকায় সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ আজ দিশেহারা। যেখানে সরকার রেল চালাতে ইচ্ছুক সেখানে হকারদের ক্ষেত্রে একটা বাধ্য-বাধকতা  থেকেই যাচ্ছে। কারণ রেল চালানোর ব্যবস্থা করলেও তাদের হকারি করার অনুমতি এখনও মেলেনি। 

এমন এক দিশেহারা পরিস্থিতি তখনই কাটবে যখন সাধারণ মানুষের হাতে কিছু টাকা আসবে। সাধারণত মানুষ ক্রয় ক্ষমতা হারিয়ে ফেললে তা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

Post a Comment

0 Comments