জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা /শুভ্রদীপ রায়

ফোটোগ্রাফি - সৈয়দ স্নেহাংশু   


গুচ্ছ কবিতা 

শু ভ্র দী প  রা য়


Glitch in the   Matrix

সংঘাতের অবসরে আমরা একে অপরের কথা ভাবি। কিছু করার নেই। এভাবেই আমাদের ভাগ্য এনট্যাঙ্গলড।রাত্রিকালীন দাবা খেলায় আমরা একে অপরকে জিতিয়ে দিই। পরের দিন সকালে মেতে উঠি উত্তুঙ্গ তরজায়।এ এক ইনফাইনাইট লুপ।আমি জানি চারপাশে প্রচুর কথা ভেসে বেড়ায় আমাদের এই শত্রুতামূলক বন্ধুত্ব নিয়ে। ধরে নাও ওই রাতটুকুই আ গ্লিচ ইন দা ম্যাট্রিক্স! নিজের নিজের অভিষন্ধিগুলোর বর্ম খুলে সাদামাটা গৃহস্থ কাপড়চোপড়ে আরেকদান দাবা হয়ে  যাক বন্ধু...

 
প্লে ইট কুল

সংঘাতে  যেতে নেই মৃত্যুর সাথে।তাকে খানিকটা ঠান্ডা জল, দু একটা বাতাসা দিয়ে বসতে দাও নিজের বসতবাটিতে। তাকে বল কালো আলখাল্লা ঝুলিয়ে রাখতে দরজার পাশের দেওয়ালের পেরেকে।ভাল করে হাত পা স্যানিটাইজ করে তাকে ঘরে আসতে দাও।দেখতে দিওনা তোমার হাতের তাস।সরবিট্রেট,ইনসুলিন,স্ট্রসিট, অ্যাট্রোভাসট্যাটিন সব তৈরি রাখ নিজের অার্সেনালে। মুখে কিছু বলনা, ভয়ের ভ্রুকুটি আসতে দিওনা চেহারায়। জাস্ট চিল। অথচ এবেলা নয়ত ওবেলায় ঠিকই তোমার অবয়ব ঢেকে যাবে সাদা চাদরে। ডেথ : 1। তুমি: 0।


নেক্রোস্কেপ

আমাদের নদীতে একসময় ভেসে আসত উজ্জ্বল মাছ। এখন তার ঘাটে ভিড়েছে ফুলে ফেপে ওঠা লাশ। কাকের দল তার ওপর বসে কনসার্ট করছে।ব্যান্ডমাস্টার দন্ডবায়স ব্রীজের ওপর থেকে খড়কুটো নাড়ছে। চায়ের ঠেক অবধি উঠে গেছে দুর্গন্ধের তাড়নায়। এই নদীর পাড়ে আমাদের একদিন কবিতা পড়ার কথা ছিল। অনেক অনেক গানের আসর বসানোর কথা ছিল আমাদের। এখন সেটা নেক্রোস্কেপ। তবুও আমরা নতুন গাছ লাগানোর স্বপ্ন দেখি। সেই গাছ ঘিরে গড়ে উঠবে পাখিদের কলোনি-- এই স্বপ্নও কেউ কেউ দেখে ফেলছি আজকাল। শুনতে পাই পাহাড়ে মাঝে মাঝে মেঘ ভেঙে বৃষ্টি হচ্ছে। এভাবে যদি অন্যের ঘর মুছে আমাদের নদী আবার গর্ভবতী হয়,সেই আশায় বুক বাধছি।নাহলে ওই লাশেদের দলে নিজের নাম লেখাতে আর কতক্ষণ!


ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিট

তুমি  যাকে ' ট্রুথ অর ডেয়ার' বল,আমি তার নাম রেখেছি শিকারের অছিলা। তোমার শরীরের জ্যায়ে টান পরলেই আমার বাঁদিকের আপেল এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে যায়। আমি প্রথম সাক্ষাতেই বুঝেছিলাম এবার আমার লবেজান হওয়ার পালা। তুমি বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাঁটতে থাকলে আর আমি ফ্রয়েডের দিব্যি খেয়ে প্রেমে পড়লাম। তারপর কয়েক শতাব্দী পার হয়ে গেল আমাদের 'ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিট' খেলতে খেলতে।এর মাঝেই আমরা টুকটাক সম্পর্কে জড়ালাম,একে অপরের সাথে  যদিও নয়। আমাদের মাঝে এক দুবার রবীন্দ্রনাথ আসলেন ইনস্টিটিউশনের মত।রাতের পর রাত আমরা টেলিকম কোম্পানীদের পকেট ভরলাম, কত শত মেট্রো স্টেশনে গোলাপ আদান প্রদান করলাম।কিন্তু আমাদের মাঝের টাল খাওয়া সম্পর্ক ঘরবাড়ি পেলনা।এখন আমার চুলে পাক ধরেছে,তোমারও একঢাল জলোচ্ছাসে ভাটা। 

আমি জানি একদিন তুমি সুদুর দক্ষিণে উড়ে  যাবে,অথচ আমার কাছে কোনো উত্তর থাকবেনা সেই অপসৃয়মান  যাত্রাপথের। ' হে বন্ধু বিদায়'।

ফোটোগ্রাফি - সৈয়দ স্নেহাংশু   

Post a Comment

1 Comments