প্রকাশিত হল স্বপ্ন অভিসারের দলিল : নক্ষত্র বীথি
দ্বি জ দা স
প্রকাশিত হল নারায়ণ প্রসাদ জানা-র তৃতীয় কবিতার বই। নাম : নক্ষত্র বীথি। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার চণ্ডীপুর থানার হাঁসচড়া গ্রামে জন্ম নারায়ণ পেশায় স্কুলশিক্ষক। ইতিমধ্যে 'হঠাৎ যখন বৃষ্টি নামে' ও 'অনুভব' নামে দুটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে ও পাঠক সমাজে সমাদৃত হয়েছে।
জ্বলদর্চি থেকে প্রকাশিত বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছেন রাজীব প্রধান। কবি তাঁর এই বইটি উৎসর্গ করেছেন তাঁর বড়দাদা ডাঃ শঙ্করপ্রসাদ জানা-কে।
সহজ সরল ভাষায় কবি ধরতে চেয়েছেন সময় ও নিজের ভালো-মন্দ লাগার অনুভবকে।
প্রথম কবিতা 'ঋক্-সূক্ত' তে লিখেছেন--
"যেখানে আকাশ নীল; সাগরের ঢেউ এসে মিশে
বলাকার পাখনায় বিষাদের রামধনু জাগে;
তোমার অধরের ফাঁকে মৃত্যুর উপত্যকা খুঁজি;
জল-ময়ূরের মত পদ্মপাতায় বাঁধি ঘর;
প্রেম তুমি যাযাবর ; এ পাহাড় নদী আকাশ রইল স্থবির"।
স্বভাব রোমান্টিকতায় কবি সমাজমনস্ক। যাবতীয় অন্ধকারের মধ্য থেকে বেরিয়ে নতুন আলোর-সন্ধানী তিনি লেখেন -- 'হয়তো একদিন পথ দেবে ডাক'। যে পথের সন্ধানে দেবতা করেছেন সৃষ্টি, কবিও তো সেই পথের পথিক। তাঁর ভাষায় --'কবি এক উদভ্রান্ত পথিক/ দেবতার মতো কবি করেছিল ভুল? ' আপাত বিরোধাভাস তুলে কবি অপূর্ব কাব্যভাষাকে নির্মাণ করেন বাণীরূপে। আর উঠে আসে নির্মল মানবিক সম্পর্কের ধারাপাত। কবি ছোটোবেলায় পাশের বাড়িতে যেতেন কথকতা- নামসংকীর্তন শুনতে। স্কুলের ব্যাগে থাকতো স্বামীজি প্রমুখের বাণী সংকলন। সন্ধ্যায় ঠাকুমার কোলে মাথা রেখে রামায়ণ মহাভারত শুনতেন। আর এ সব থেকেই নির্মিত হয়েছে কবির জীবন দর্শন, নির্মিত হয়েছে কাব্যের শরীরী ব্যঞ্জনা।
প্রায় প্রতিটি কবিতায় ধরা পড়েছে শুভ চেতনা প্রতিষ্ঠার প্রয়াস। আসলে এ কবির আত্মদর্শন। আত্মজিজ্ঞাসা। তাই তো লেখেন --
"আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াই প্রতিদিন
গায়ে এত কালি ঝুল
ঘসে ঘসে চেষ্টা করি তুলতে সব কালো
এত গভীরে যে হাজার চেষ্টায় বারে বারে ব্যর্থ হই"
কারণ, সময় অনেক পেরিয়েছে। ইতিমধ্যেই লোভ- ক্ষমতা-দম্ভ মিশে গেছে শিরায়। এমনকি ধমনীতেও। তাই মুক্তির সন্ধানে কবির কাতরতা।
নারায়ণ লেখেন সময় ও সমাজকে। 'রং' কবিতায় লিখেছেন -- "কেউ আর আগের মতো কথা বলে না/ চোখাচোখি হলে; পাশ কাটিয়ে চলে যায়।" কিন্তু প্রকৃতি নির্বিকার। বাতাস বইতে থাকে, বৃষ্টি পড়ে। হাওয়া বদলায়। বদলে যায় জলবায়ু। আর তারই অনুষঙ্গে কি তবে বদলে যায় মানুষের মন! রাজপথে শ্লোগান ওঠে। রং বদল হয়। আর প্রকৃতিতে রং লাগে। পলাশ কৃষ্ণচূড়ায় লাগে রঙের স্পর্শ। প্রকৃতি তো স্বাভাবিক। কিন্তু মানুষ তার রঙ বদলে নেয় স্বার্থের লক্ষ্যে। কবির কাছে তাই এই রঙ-বদল মনে হয় রঙহীন।
প্রকৃতি ও মানুষ এভাবেই কবির আশ্চর্য কাব্য কুশলতায় পাঠকের কাছে আদরণীয় হয়ে ওঠে।
ছিমছাম ছাপা বইটির দাম মাত্র ৫০ টাকা। আশা করি, বাংলা কবিতার পাঠক ও কবির হৃদয়-কথা এক হবে।
সংযোজন- মহালয়া তথা ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ জ্বলদর্চি ইউটিউব-এ বইটির প্রকাশ করেন সম্পাদক ঋত্বিক ত্রিপাঠী। সেই প্রকাশ অনুষ্ঠানের ভিডিও (ওপরে) সংযোজিত হল। ক্লিক করে দেখে নিতে পারেন।
0 Comments