জ্বলদর্চি

শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ সঙ্গীতামৃত -১১ / সুদর্শন নন্দী

    অলংকরণ- রবীন্দ্রনাথ কপাট   

পর্ব-১১   

শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ সঙ্গীতামৃত  

সু দ র্শ ন  ন ন্দী


পরের গানের কথা। ১৮৮৩, ১৫ই এপ্রিল। ঠাকুর এসেছেন অন্নপূর্ণা পূজা উপলক্ষে  সিমুলিয়ায় সুরেন্দ্রনাথ মিত্রের বাড়িতে। আছেন মাস্টার, রাখাল, মনোমোহন, কেদার, রাম প্রভিতি অনেক ভক্ত। ঠাকুর ভক্তদের সাথে ঈশ্বরীয় প্রসঙ্গ করছেন।  
এবার সংকীর্তন আরম্ভ হবে। খোল বাজছে। গান আরম্ভ হয় নি। খোলের মধুর বাজনা, গৌরাঙ্গমণ্ডল ও তাঁদের নামসংকীর্তন কথা উদ্দীপন করে। ঠাকুর ভাবে মগ্ন। মাঝেমাঝে খুলির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করছেন আর  বলছেন, “আ মরি! আ মরি! আমার রোমাঞ্চ হচ্ছে।”
গায়কেরা জিজ্ঞাসা করলেন, কিরূপ পদ গাইবেন? ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বিনীতভাবে বলিলেন “একটু গৌরাঙ্গের কথা গাও।”
কীর্তন আরম্ভ হল। প্রথমে গৌরচন্দ্রিকা। তারপরে অন্য গীত:
লাখবান কাঞ্চন জিনি। রসে ঢর ঢর গোরা মুঁজাঙ নিছনি ৷৷
কি কাজ শরদ কোটি শশী। জগৎ করিলে আলো গোরা মুখের হাসি ৷৷
ঠাকুর গান শুনতে শুনতে সমাধিস্থ হলেন। গানটির দুলাইন বর্ণনা আছে কথামৃতে। রচয়িতা গোবিন্দদাস চক্রবর্তী। 
ঠাকুর কখনো সমাধিস্থ হচ্ছেন, কখনো বা কীর্তনের সঙ্গে আখর দিচ্ছেন।
শেষে শ্রীরাধাকৃষ্ণের মিলন গান হল:
ধনি মালা গাঁথে, শ্যামগলে দোলাইতে,
এমন সময়ে আইল সম্মুখে শ্যাম গুণমনি।

এরপর নীচের গানটি গেয়ে কীর্তন শেষ হল।  
নিধুবনে শ্যামবিনোদিনী ভোর।
দুঁহার রূপের নাহিক উপমা প্রেমের নাহির ওর ...
 

কীর্তন থামলে ঠাকুর, ‘ভগবত-ভক্ত-ভগবান’ এই মন্ত্র উচ্চারণ করে বারবার ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করছেন। ভক্তদের উদ্দেশ্য করে প্রণাম করলেন ও সংকীর্তনভূমির ধূলি গ্রহণ করে মাথায় দিলেন তিনি। 

সেদিন ( ১৫ই এপ্রিল ১৮৮৩) রাত্রি প্রায় সাড়ে নয়টা। সুরেন্দ্রনাথের বাড়িতে শ্রীশ্রীঅন্নপূর্ণা পুজা উপলক্ষে ঠাকুরদালান আলোকিত। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে দাঁড়িয়ে। সুরেন্দ্র, রাখাল, কেদার, মাস্টার, রাম, মনোমোহন ও অন্যান্য অনেক ভক্তেরা আছেন।  ঠাকুরকে সুরেন্দ্র বললেন আজ কিন্তু মায়ের নাম একটিও হল না।
একথা শুনে ঠাকুর মার নাম করে গান গাইলেন:
গো আনন্দময়ী হয়ে আমায় নিরানন্দ কর না।
ও দুটি চরণ বিনা আমার মন, অন্য কিছু আর জানে না...
 
(গানটি ঠাকুর পাঁচবার গেয়েছেন এবং ভক্তেরা দুবার গেয়েছেন তার উল্লেখ আছে কথামৃতে।
গানটির রচয়িতা গৌরমোহন রায়।) 
সেদিন ঠাকুর প্রতিমার সামনে বসে আবার গাইলেন:
বল রে বল শ্রীদুর্গানাম। (ওরে আমার আমার মন রে)৷৷
দুর্গা দুর্গা দুর্গা বলে পথ চলে যায়......
 
গানটি একটি পাঁচালি গান। রচয়িতা অজ্ঞাত। পুরো গানটি এখানে গাওয়া হয় নি। এই গানটি ঠাকুর আরেকবার ( ২৯ শে সেপ্টেম্বর ১৮৮৪) দক্ষিণেশ্বরে গেয়েছিলেন।  
 
পরের গান ১৮৮৩, ২৭শে মে ঠাকুর দক্ষিণেশ্বরে গেয়েছেন তার উল্লেখ পাই কথামৃতে।
ঠাকুর গঙ্গাস্নান করে মায়ের ঘরে গেছেন। সঙ্গে মাস্টার। ঠাকুর পূজার আসনে উপবিষ্ট । মার পাদপদ্মে ফুল দিচ্ছেন, মাঝে মাঝে নিজের মাথায়ও দিচ্ছেন ও ধ্যান করছেন।
অনেকক্ষণ পরে ঠাকুর আসন থেকে উঠলেন। ভাবে বিভোর, নৃত্য করছেন।  
এইবার ঠাকুর নিজের ঘরের পশ্চিম বারান্দায় এলেন। কাছে রাখাল, মাস্টার, নকুড়, বৈষ্ণব  
ঠাকুর। ভাবাবেশে গান গাইছেন তিনি:

     ১।      সদানন্দময়ী কালী, মহাকালের মনোমোহিনী৷
তুমি আপন সুখে আপনি নাচ, আপনি দাও মা করতালি ......
 
(গানটির রচয়িতা কমলাকান্ত। এই কীর্তন ঠাকুর আরেকবার গেয়েছিলেন তার উল্লেখ রয়েছে) 

     ২।      আমার মা ত্বং হি তারা
তুমি ত্রিগুণধরা পরাৎপরা......
( গানের রচয়িতা অজ্ঞাত। এই গানটি ঠাকুর একবার ভক্তদের উল্লেখ করেছিলেন এবং নরেন্দ্রও একবার গেয়েছিল।)
এছাড়াও ঠাকুর এসময় নীচের গানগুলি গেয়েছেন। এবং এভাবেই উল্লিখিত আছে কথামৃতে। 
     ৩।      গোলমালে মাল রয়েছে, গোল ছেড়ে মাল বেছে নাও।
     ৪।      মন চল যাই, আর কাজ নাই, তারাও ও তালুকে রে!
     ৫।      পড়িয়ে ভবসাগরে, ডোবে মা তনুর তরী;
মায়া-ঝড় মোহ-তুফান ক্রমে বাড়ে গো শঙ্করী।
     ৬।      মায়ে পোয়ে দুটো দুখের কথা কি।
কারুর হাতির উপর ছি, কারু চিঁড়ের উপর খাসা দই ৷
___________________________________________

এই ধারাবাহিক প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। 
নজর রাখুন  www.jaladarchi.com        

Post a Comment

0 Comments