জ্বলদর্চি

কবিতাগুচ্ছ: অসিতরঞ্জন ঘোষ

কবিতাগুচ্ছ: অসিতরঞ্জন ঘোষ

সাপ

বাবুরাম সাপুড়ে সাপ ধরেছে দুপুরে।
ধরা ছিল বেশ শক্ত, করতে সনাক্ত।
বেশ কিছু দিন ধরে, ছিল সে বনের আড়ে।
কিছুদিন আগে থেকে, কাটছে একে তাকে।
কেটে কুটে পালিয়ে, বনে গেছে লুকিয়ে।
এই এক খবরে, সি আই ডি সাপুড়ে,
দলবল সাথে করে, হাজির ভর দুপুরে।
কড়া রোদ চড়তে, সাপ পারে না নড়তে।
খপ্ করে যেই ধরে, মাথা আর লেজ নড়ে।
মারতেই এক ডান্ডা, সাপ বাবাজি ঠান্ডা।


মশার হুল

কে যেন রে হুল ফোটালি, ব্যথায় মরে যাই!
রাতের বেলায় দারুন জ্বর, দিনে উধাও তাই।।
চললো এমন দিন সাতেক, এখন খানিক ভালো।
হাঁটতে গেলে পড়ছি টলে, দেখছি চোখে কালো।।
কি আর করা এই শরীরে যেতেই হবে কাজে।
পকেট আমার গড়ের মাঠ, হাঁড়ি চড়ে না যে।।
বলছে লোকে মশার কামড়, হিমোগ্লোবিন কম।
শরীর বেশ কাবু যেন, মনেও নেই সে দম।
এক মারে যে অক্কা পায়, এমনটি তার তেজ!
টেক্কা দিয়ে শরীরটাকে, করলো সে নিস্তেজ।
বলিহারি ক্ষ্যমতা তার, মানুষ কাঁপে জ্বরে।
হুল ফুটিয়ে কোথায় গেল? কে তা বলতে পারে?
কামান দাগে, ধোঁয়া ছোটে, রাতে পোড়ে তেল।
পোঁ পোঁ আওয়াজ তবু শুনি, গুড়ুম আক্কেল!



মাথার ব্যামো

মাথায় আমার নাচছে ভ্রমর,কোমর ব্যথায় কাবু।
শরীর এখন দ-এর মতো, খাচ্ছি বার্লি সাবু।
পেটের ব্যামো চিরসাথী, ছেঁড়া কাঁথায় শুই,
তবু মন নাচতে চাইছে, চাইলে পাই বা কই?

দেহের ওজন কমছে ধীরে, কজন ভাবে আর?
নিজের ভাবনা কাছেই আছে, ভাগ করে কাবার।
ভাগের চাষি ভাগ দেয় না, উপোষ করে মরি।
শরীর আমার সাপের মতো, উঠছে গায়ে খড়ি।।

সাবান তেল আর পড়ে না,শেষের দিন শুরু!
নাচের ইচ্ছা মরলো মনে, শরীর আস্ত গরু!


সাফ কথা

পড়াশোনা আর করি না,
        আর করি যা অন্য।
অন্ধ থাকা বেশ ভালো, 
        থাকবো হয়েই বন্য।

বুদ্ধি বিদ্যা বেশ জমেছে,
        বেশ হয়েছি লায়েক।
সমাজ দিচ্ছে খোলা জ্ঞান,
        শিক্ষা শিক্ষা ভেক!

পড়াশোনায় ডিগ্রি নিয়ে,
        বিগড়াবো না আর মাথা।
জ্ঞান চোখের মাথা খেয়ে,
         করবো না শিক্ষকতা।

তাই আর নয় পড়াশোনা,
         আর নয় সময় নাশ।
চোখ বুজে শিখে নেবো,
         যতরকম সন্ত্রাস!

সোনাঝরা দিনগুলোতে,
        রক্ত আমি ঝরাবো না।
অধিকারের দাবিতে আর,
        মিটিং মিছিল করবো না।

ধর্মতলায় ঘাঁটি গেড়ে,
         বসন্ত যাপন করবো না।
খোলা আকাশ মাথায় করে,
         মরতে আর পারবো না।

স্কুল কলেজের গন্ডি আমি,
        পার হবো না কক্ষনো।
বাবা মা'কে কাঁদিয়ে আর-
         কাঁদবো না, সাফ জেনো।


আমানন্দ

আকাশের মুখ ভার, কালো মেঘ সার সার।
এক ঠাঁয়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ পেরিয়ে।
দূর ওই বাঁশ বনে, আঁধার ঘনায় দিনে।
বিদ্যুৎ খেলে গেল, ঐ এলো ঝড় এলো।
গাছদের মাথা নড়ে, পাতা খসে আর ওড়ে।
ঝুপ পড়ে তাল পাতা, আলুথালু সারকথা!
পাখি ওড়ে সাই সাই, ধুলো বলে কোথা যাই।
পুকুরের পাড় দিয়ে, ছোটে কেউ ছিপ নিয়ে।
শন শন বন বন, ঝেঁপে এলো বরিষন।
শুনশান পথঘাট, গরু ছোটে ছাড়ে মাঠ।
আম পড়ে ঝুপঝাপ, কুড়োই তা চুপচাপ
ভিজে নেয়ে একসা।আকাশ হলো ফরসা।।


পুঁটিমাছ

পুঁটিমাছ ছুটি চায়, কেটেকুটে ভেজে খায়।
ছোটাছুটি হলো সার, ছোটমাছ খায় মার।
রাঘব বোয়ালের হাঁ, কিছুতেই বোজে না।
খায় নেয় মহারাজ! দিনে দিনে বাড়ে ল্যাজ।
পুঁটিমাছের ক্ষণপ্রাণ! নাহি কোনো পরিত্রাণ।
বোয়ালের আলজিহ্বায়,কুচোমাছ ছটফটায়।
সময়ের ফেরে আজ, বোয়ালের নতুন সাজ!
চুনোরাও নতুন চালে, মাথা দেয় অবহেলে।
পুঁটিমাছ ধীরে ধীরে, হারালোই অগোচরে।
ছুটি পেল পুঁটি শেষে, বোয়ালের পেটে এসে।।

🍂

Post a Comment

0 Comments