জ্বলদর্চি

শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ সঙ্গীতামৃত - ১৪ / সুদর্শন নন্দী



শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ সঙ্গীতামৃত  

সু দ র্শ ন  ন ন্দী

পর্ব-১৪  

১৬ই অক্টোবর ১৮৮৩। স্থান দক্ষিণেশ্বর। কোজাগরী লক্ষ্মীপূর্ণিমা।বলরামের পিতা, বেণী পাল, মাস্টার, মণি মল্লিক উপস্থিত। ঠাকুর ভক্তদের সঙ্গে ঈশ্বরীয় কথা বলছেন। শুদ্ধাভক্তির আলোচনা হচ্ছে। আলচনা চলতে চলতে শ্রীরামকৃষ্ণ সমাধিস্থ হলেন। সমাধিভঙ্গের পর শ্রীরামকৃষ্ণ গান গাইলেন:
“হলাম যার জন্য পাগল তারে কই পেলাম সই...
তারপর রামলালকে গান গাইতে বললেন। রামলাল গাইলেনঃ
কি দেখিলাম রে কেশব ভারতীর কুটিরে,
অপরূপ জ্যোতিঃ, শ্রীগৌরাঙ্গ মূরতি..
গানটি ত্রৈলোক্যনাথ স্যান্যালের লেখা। কথামৃতে দেখি রামলাল ছাড়াও রচয়িতা ত্রৈলোক্য গেয়েছেন।  
১৮৮৩, ২৬শে নভেম্বর। ঠাকুর মণিলাল মল্লিকের বাড়ি গেছেন। ব্রাহ্মসমাজের বাৎসরিক উৎসব উপলক্ষে ঠাকুর তিনটি গান গেয়েছিলেন সেদিন। প্রথম গান- সেদিন কবে বা হবে?... রচয়িতা অজ্ঞাত। আরেকটি গান পূর্বে উল্লেখিত। তৃতীয় গান রামপ্রসাদ সেনের- ভেবে দেখ মন কেউ কার নয়... এই বহুল প্রচারিত গানটি। গানটি ঠাকুর একাধিকবার গেয়েছেন।  
এবারের গানের উল্লেখ পাই ১৮৮৩, ২৮শে নভেম্বর। অসুস্থ কেশবকে ঠাকুর দেখতে গেছেন। তাঁর কেন অসুখ তা বোঝাচ্ছেন ঠাকুর ঈশ্বরীয় কথায়। তখন রাজা নবচন্দ্র রায়ের রচনা “সকলি তোমারি ইচ্ছা মা ইচ্ছাময়ী তারা তুমি... এই বহুশ্রুত গানটি উল্লেখ করেন এবং পূর্ব উল্লখিত     
আয় মন, বেড়াতে যাবি।
কালী-কল্পতরুমূলে রে মন, চারি ফল কুড়ায়ে পাবি ৷৷ গানটি ঠাকুর শোনান। 
 
পরে গান ১৮৮৩, ১৪ই ডিসেম্বরে। দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুর খাটে বসে ঈশ্বরচিন্তা করছেন। মণি মেঝেতে বসে। রাখাল, লাটু, রামলাল ঘরে আছেন। ঠাকুর মণিকে বলছেন, কথাটা এই - তাঁকে ভক্তি করা, তাঁকে ভালবাসা। এবার ঠাকুর রামলালকে গান গাইতে বললেন। রামলাল গাইলেন পূর্বে উল্লেখিত কি দেখিলাম রে, কেশব ভারতীর কুটিরে... গানটি । 
এছাড়াও রামলাল শোনালেনঃ
         রাধার দেখা কি পায় সকলে,
রাধার প্রেম কি পায় সকলে...
 
গানটির রচয়িতা অজ্ঞাত। রামলাল ছাড়াও ঠাকুর এই গানটি ১১ই অক্টোবর ১৮৮৪তে দক্ষিণেশ্বরে গেয়েছিলেন তার উল্লেখ পাই কথামৃতে। 
ঠাকুর রামলালকে আবার বলছেন, সেই গানটি গা- গৌর নিতাই তোমরা দুভাই। রামলালের সঙ্গে এবার ঠাকুরও যোগ দিলেন-
গৌর নিতাই তোমরা দুভাই, পরম দয়াল হে প্রভু
      (আমি তাই শুনে এসেছি হে নাথ)
আমি গিয়েছিলাম কাশীপুরে, 
আমায় কয়ে দিলেন কাশী বিশ্বেশ্বরে,
                                                  
এই গানটির রচয়িতা অজ্ঞাত। গানটি কথামৃতে ছয়বার উল্লেখ আছে। রামলাল ছাড়াও ঠাকুর মণির সাথে একবার, নিজে আলাদা ভাবে এবং ত্রৈলোক্যনাথ স্যন্যাল ভক্তদের সাথে একবার গেয়েছিলেন তার উল্লেখ পাই। 
পরের দিন ১৫ই ডিসেম্বর ১৮৮৩ আরেকটি গানের উল্লেখ পাই।ঠাকুর দক্ষিণেশ্বরে প্রহ্লাদ চরিত্রের উপাখ্যান শুনে ভাবাবিষ্ট। ভাব কাটলে ভক্তদের বলছেন ঈশ্বরের প্রেমের একবিন্দু যদি কেউ পায় কামিনীকাঞ্চন তার কাছে তুচ্ছ মনে হয়। তার নামগুণ করার কথা বললেন ভক্তদের। বলেই তিনি নাচতে নাচতে গাইতে লাগলেন- 
সুরধনীর তীরে হরি বলে কে, বুঝি প্রেমদাতা নিতাই এসেছে। 
( নিতাই নইলে প্রাণ জুড়াবো কিসে) 
গানটির রচয়িতা অজ্ঞাত।গানটির উল্লেখ কথামৃতে একবারই পাই। 

১৮৮৩, ১৬ই ডিসেম্বর। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেব দক্ষিণেশ্বরে  মণির সঙ্গে পশ্চিমের গোল বারান্দায় বসে আছেন। সম্মুখে দক্ষিণবাহিনী ভাগীরথী। কাছেই করবী, বেল, জুঁই, গোলাপ, কৃষ্ণচূড়া প্রভৃতি নানা গাছ। ফুলে গন্ধে চারদিক সুরভিত। সময় বেলা ১০টা হবে।
ঠাকুর মণিকে দেখছেন আর গান গাইছেন:
তারিতে হবে মা তারা হয়েছি শরণাগত।
হইয়া রয়েছি যেন পিঞ্জরের পাখির মতো...
 
গাইতে গাইতে ঠাকুর সমাধিস্থ হলেন। খানিকপর বললেন মা সীতার মতো করে দাও। কেবল এক চিন্তা – কথায় রাম। 
গানটির রচয়িতা অজ্ঞাত।গানটি একবারই গাইতে উল্লেখ পাই কথামৃতে। 

এরপর ১৮৮৩, ১৮শে ডিসেম্বর একটি গানের উল্লেখ পাই- 
ঘরে যাবই যে না গো!
যে ঘরে কৃষ্ণ নামটি করা দায়। 
ঠাকুর দক্ষিণেশ্বরে গোপীপ্রেমের কথা বলতে বলতে  গেয়েছিলেন গানটি। পরে ২২শে ডিসেম্বর ১৮৮৩তেও গানটি গাইতে শুনি। পুরো গানটির উল্লেখ নেই।গানটির রচয়িতাও অজ্ঞাত।
---------------------------------------------------
প্রতি সোমবার  ও বৃহস্পতিবার নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে এই ধারাবাহিকটি। 
অভিমত পেলে ভালো লাগবে। 
jaladarchi@yahoo.in     

Post a Comment

0 Comments