জ্বলদর্চি

বিশ্ব বসুন্ধরা দিবস(২২এপ্রিল)/দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

বিশ্ব বসুন্ধরা দিবস(২২এপ্রিল)
দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

আজ ২২শে এপ্রিল "বিশ্ব বসুন্ধরা দিবস"
ভাবতে অবাক লাগে যে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে সম্ভবত এই একটিমাত্র গ্রহ, আমাদের এই পৃথিবী বা বসুন্ধরা,যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব আছে। এই পৃথিবী বা বসুন্ধরা আজ সংকটের মধ্যে আছে, তাইতো প্রয়োজন পড়েছে বিশ্ব বসুন্ধরা দিবস পালন করার।

প্রতিবছর ২২শে এপ্রিল অর্থাৎ বিশ্ব বসুন্ধরা দিবসে আমরা পৃথিবীর পরিবেশ বজায় রাখার জন্য শপথ নিই,আর তারপরের দিনই ভুলে যাই এবং পরিবেশের ক্ষতি করতে থাকি। আসলে পরিবেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় মানুষের কর্মকান্ডের কারণে, এই বিশ্ব বসুন্ধরা দিবস উপলক্ষে এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত।

আমাদের পূর্বপুরুষরা পরিবেশগত বিশুদ্ধতার দিক থেকে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি ভাগ্যবান ছিলেন। আজ আমাদের বিশুদ্ধ মাটি, জল, বাতাস ও গভীর ঘুম নেই। যদিও আমাদের বাজারগুলি হাজার হাজার নিত্য প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় জিনিস ভরা থাকে, যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

বসুন্ধরা দিবস, পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য ২২শে এপ্রিল সারা বিশ্বে অনুষ্ঠিত একটি বার্ষিক অনুষ্ঠান,যা মার্কিন জেনেটার গেলর্ড নেলসান দ্বারা ১৯৭০ সালে একটি পরিবেশগত শিক্ষা উদ্যোগ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, বর্তমানে ১৯২টিরও বেশি দেশে প্রতিবছর পালিত হয় বিশ্ব বসুন্ধরা দিবস।

পরিবেশ সুরক্ষা, পৃথিবীর সংরক্ষণ এবং বিশ্ব উষ্ণায়ন সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে এই দিনটি পালিত হয়। এই দিনে বিশ্বে সারাদিন ব্যাপী পৃথিবী ও পরিবেশ বাঁচানোর সংকল্প নেওয়া হয়। এই দিনটি জলবায়ু সংকট ও পরিবেশের সংকটের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে l

১৯৭০ সালের ২২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো "বিশ্ব বসুন্ধরা দিবস"পালিত হয়। আমেরিকার পরিবেশবাদী গেলর্ড নেলসেনের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো। বিশ্ব বসুন্ধরা দিবসে পরিবেশ সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, এছাড়াও বিদ্যালয়ে বক্তৃতা, প্রবন্ধ, স্লোগান ও পোস্টার প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়।

মূলত, বিশ্ব বসুন্ধরা দিবস পালিত হয় পৃথিবী এবং পরিবেশ রক্ষার শপথ নেওয়ার দিন হিসেবে। ষাটের  দশকে নগর সভ্যতা উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে গাছ কাটা হতে থাকে, ফলে দূষিত হতে থাকে নদীর জল, বায়ু ও মাটি।ক্রমশ দেখা দেয় পরিবেশ ও সভ্যতার সংকট। ষাটের দশকেই আমেরিকা সহ বহু উন্নত দেশ পরিবেশের অবনতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য একটি অভিযান শুরু করেছিল। সেই অভিযানটি শুরু হয় বিশ্ব বসুন্ধরা দিবস নামে, আজকের দিন থেকে(২২শে এপ্রিল)। 

গত কয়েক বছর ধরে এই দিনটির জনপ্রিয়তা ভীষণভাবে বেড়েছে, কারণ গাছ কাটার জন্য বনভূমি হ্রাস পেয়েছে প্রতিনিয়ত, দূষিত হয়ে চলছে মাটি ,বায়ু, জল তথা পরিবেশ। পৃথিবীর ভারসাম্যের অবনতি ঘটছে। দূষণের মাত্রা বাড়ার জন্য পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এই বিষয়টি পৃথিবীর সব দেশের একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, ফলে এর ফলে মানব সভ্যতা সংকট থেকে সংকটময় হয়ে উঠছে।

পৃথিবীতে জীবন অর্থাৎ প্রাণ রক্ষার জন্য পৃথিবী ও তার পরিবেশকে বাঁচানো খুবই প্রয়োজন। এই বিশ্ব বসুন্ধরা দিবসে আমাদের সকলের পৃথিবীকে আরও সবুজ, আরো সুন্দর করার সংকল্প নেওয়া উচিত। আমাদের অঙ্গীকার করে গাছ লাগানো উচিত, তাতে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং পরিবেশ দূষণ কমবে। শুধু তাই নয়, বাঁচবে মানুষ এবং বন্যপ্রাণীও। এছাড়াও কিছু কিছু জিনিসের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা প্রয়োজন, যেমন- পলিথিন ব্যবহার করা চলবে না। নবায়ন যোগ্য শক্তি ব্যবহার না করে, আমাদের সৌরশক্তি, বায়ু শক্তি ও জলবিদ্যুৎ শক্তির মত শক্তিগুলোকে পুনর্নবীকরণযোগ্য সংস্থান গুলিতে মনোনিবেশ করা উচিত। 

প্রত্যেকটা দিবসের মতোই এই বসুন্ধরা দিবসেরও প্রতিবছর একটি করে থিম থাকে ।২০২৩ সালের থিমটি ছিল, *"আমাদের গ্রহে বিনিয়োগ করুন অর্থাৎ আসুন আমাদের পৃথিবীকে বাঁচানোর চেষ্টা করি"*। সমগ্র সৌরজগতের  মধ্যে শুধুমাত্র পৃথিবীতে প্রাণ আছে,যেখানে শ্বাস-প্রশ্বাস ও পানীয় জলের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সহ বিভিন্ন উপাদান আছে। পৃথিবীর অনুকূল পরিবেশের কারণে এখানে জীবন সম্ভব হয়েছে, কিন্তু স্বার্থান্বেষী মানুষের ভুলের কারণে এই পরিবেশ এখন নষ্ট হচ্ছে।

🍂

পৃথিবীতে জীবন রক্ষার জন্য এই পৃথিবী ও পরিবেশকে বাঁচানো খুবই দরকার। এই বসুন্ধরা দিবসে আমাদের সকলের সংকল্প করা উচিত, পৃথিবীকে আরও সবুজ, সতেজ ও সুন্দর করার এবং পরিবেশ দূষণ কমানোর।

বসুন্ধরা দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা পরিবেশবিদদের মাধ্যমে পরিবেশের ওপর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব সম্পর্কে জানতে পারি। জানতে পারি, পৃথিবীর বিভিন্ন দূষণ সম্পর্কে। বসুন্ধরা দিবস, জীবনকে রক্ষা এবং পরিবেশকে সুস্থ রাখার সচেতনতা তৈরি করে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রাকৃতিক সম্পদের উপর অপ্রয়োজনীয় বোঝা ফেলছে। সম্পদের সঠিক ব্যবহারের জন্য বসুন্ধরা দিবসের মতো কর্মসূচির গুরুত্ব বেড়েছে।

শুধুমাত্র বসুন্ধরা দিবস এবং পরিবেশ দিবসে আমরা পরিবেশ এবং পৃথিবী নিয়ে চিন্তা করব, তা নয়। আমাদের প্রত্যেক দিনই পৃথিবী এবং পরিবেশ নিয়ে চিন্তা করতে হবে, কারণ বর্তমানে পৃথিবীর উষ্ণতা বেড়ে চলছে। বহু জায়গায় জলের জন্য হাহাকার পড়ে গেছে, গরমে মানুষ এবং বন্য  প্রাণী মারা যাচ্ছে। আমাদের বসুন্ধরা আগের মত সবুজ, সতেজ ও সুন্দর করে তুলতে হলে একদিন নয়, প্রতিদিনের জন্য অঙ্গীকার করতে হবে, পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার এবং তা সংরক্ষণ করতে হবে ও আমাদের নিরন্তন প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এছাড়াও আশেপাশের মানুষদের সচেতন করতে হবে গাছ লাগানোর এবং পরিবেশকে কিভাবে দূষণমুক্ত রাখা যায়, সেই নিয়ে ছোট ছোট আলোচনা সভা করতে হবে এবং তার ব্যবহারিক প্রয়োগও ঘটাতে হবে। আমরা যদি এইভাবে চলতে পারি নিয়ম ও নিষ্ঠার সঙ্গে তবে আগামী প্রজন্মকে একটি নিরাপদ পরিবেশ আমরা দিতে পারব। আমাদের আজকের প্রচেষ্টা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একটি সুন্দর জীবন যাপন নিশ্চিত করবে।

Post a Comment

0 Comments