জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -৩

ছোটোবেলা || তৃতীয় সংখ্যা 

প্রকাশিত হল তৃতীয় সংখ্যা। 
এবারের সংখ্যায় স্বনামখ্যাত ফোটোগ্রাফার সৌমেন শেখরের ফোটোগ্রাফি থাকলো, বিশেষ করে ছোট্ট বন্ধুদের জন্য। উপহার হিসেবে। 
চাইলে তোমরাও এমন ছবি তুলে পাঠাতে পারো আমাদের ঠিকানায় । 

আমরা চাই ছোটোরা আরও আরও লেখা ও ছবি পাঠাক। অভিভাবকদের কাছে আবেদন, তাঁরা যেন লেখা ও ছবি পাঠাতে সহযোগিতা করেন। মেল - jaladarchi@yahoo.in
   ফোটোগ্রাফি - সৌমেন শেখর 


স্বাধীনতা 

শতভিষা ঘোষ (সপ্তম শ্রেণি )

আজ স্বাধীনতা দিবস। স্কুল থেকে ফিরে মনটা হঠাৎ ভারাক্রান্ত হয়ে গেল।প্রতি স্বাধীনতা দিবসে আমার শুধুই মনে হয় যে, আজকের দিনে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছিল। সবাইতো স্বাধীনতা পেল , কিন্তু আমাদের মানে ছোটোদের সবসময় বাবা-মা অথবা বাড়ির লোকের অধীনে থাকতে হয় কেন? আমাদের একদিন স্বাধীনতা দিবস হওয়া উচিৎ। 

   দুপুরে খাওয়ার পর হ্যারি পটারের বই কোলে নিয়ে, চোখ বন্ধ করে এসব কথা ভেবে যাচ্ছি। হঠাৎ কেমন যেন একটা অদ্ভুত অনুভব হল আর চোখ মেলে তাকাতেই আমি হতভম্ব। ওমা ! এ যে হ‍্যারি পটার ! আমার মুখ দিয়ে তখন কোন কথাই বেরোচ্ছে না আর। আমার সামনে দাঁড়িয়ে হ্যারি পটার ? হাঁ করে দেখছি শুধু। চারদিক নিস্তব্ধ। হ্যারি পটারের গা থেকে রশ্মি বেরোচ্ছে। তিনিই প্রথম নিস্তব্ধতা ভাঙলেন। "আমি তোমাদের মত ছোট ছেলেমেয়েদের খুব ভালোবাসি। আমি চাই তোমাদের মত সব বাচ্চাদের জন্য একটা স্পেশাল ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে থাকুক ।তাই আমি গোটা পৃথিবীর বাবা-মাকে ভ্যানিশ করে দিচ্ছি।-- ভ্যানিশ ! "এই বলেই তিনি নিজেও ভ্যানিশ হয়ে গেলেন।

  রাস্তায় বেরিয়ে দেখলাম বড়দের সংখ্যা খুবই কম। ছোট বাচ্চাদের হাসিমাখা মুখগুলোয় সারা রাস্তা ভরে উঠেছে । কেউ খেলছে, কেউবা আবার স্কিপিং করছে, কেউ নিজের বাড়ির উঠোনে একে অপরের গায়ে জল ছেটাচ্ছে। তাই দেখে আমিও আনন্দে চলে গেলাম আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তিস্তার বাড়ি। ও বলল, যে ওর কাছেও নাকি হ্যারি পটার এসেছিল। ওর বাড়িতেও  ওর মা বাবা দিদি মানে বড়রা কেউ নেই। সারাটা দিন আমি আর তিস্তা  গল্প বই পড়লাম, খেললাম, দৌড়োলাম আরো কত কি করে রাত্রিবেলা বাড়ি ফিরলাম। তিস্তা বলছিল ওদের বাড়িতে থাকতে। কিন্তু আমার তখন  বাবা মা দাদার জন‍্য মন খারাপ শুরু হয়ে গেছে।ওরা এখন কি করছে,কোথায় আছে কে জানে ! এখন দাদা থাকলে ওর সাথে ব্যাডমিন্টন খেলতাম, বাবার কাছে আদর খেতাম, মায়ের সাথে খুনসুটি করতাম। বাবা-মা-দাদাকে গোটা বাড়িতে তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগলাম । পেলাম না। হে ভগবান ! কেন যে এমন স্বাধীনতা চাইলাম ?  হঠাৎ খুব কান্না পেয়ে গেল আমার। কাঁদতে কাঁদতে হ্যারি পটার কে স্মরণ করলাম। বললাম, আমার স্বাধীনতা চাই না --আমি আমার বাবা মা আর দাদাকে ফিরে পেতে চাই। আমার বাবা মাকে এনে দাও, প্লিজ।

তখনই পরিচিত গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম!" কিরে, ওঠ! বিকেল গড়িয়ে সন্ধে হয়ে গেল যে ! ওঠ। ব‍্যাডমিন্টন খেলবি না ? স্কুলে বুঝি খুব ছোটাছুটি করেছিস আজ? ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাঁদছিলি কেন? স্বপ্ন দেখছিলি? " গলাটা চিনতে আমার একটুও অসুবিধে হলো না। দাদা ! বাবাকে দেখতে পেলাম বারান্দায়, মা রান্নাঘরে। মনে মনে ধন্যবাদ দিলাম হ্যারি পটারকে । থ্যাঙ্ক ইউ, হ‍্যারি পটার। আমি আর কোনোদিন  স্বাধীনতা চাইবোনা তোমার কাছে। আমি বাবা মাকে ছেড়ে কিছুতেই থাকতে পারবোনা। আমি  আমার প্রিয়জনদের আদরে আর শাসনেই থাকতে চাই।
আমন্ত্রিত লেখা
---------------------
ছবি থেকে মানুষ!

পা র্থ  সা র থি  চ ক্র ব র্তী 

তিয়াস সত্যিই এখন কিছুটা বিরক্ত। আর ভাল্লাগে না। এভাবে কতদিন আর ভাল লাগে! ক্লাস ফোরে উঠে স্কুলের মুখ দেখতে পারেনি। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয় না, খেলা যায় না। অনলাইন ক্লাসেও কি আর মন বসে! তবে অনলাইনে দাবা খে'লে অনেকটা সময় তার কাটে। মাও অনেক সময় দেয়। বাবাও আগের থেকে বেশি। তবে বন্ধুদের সে বড্ড মিস্ করে।
তবে ইদানীং সে আবার ছবি আঁকতে শুরু করেছে। মায়ের অনুপ্রেরণায়।

বিখ্যাত মানুষদের ছবি আঁকার চেষ্টা করছে। প্রথম দিন সে নেতাজীর ছবি আঁকে।  মা-বাবা সবাই দেখে খুব খুশি হয়। বেশ ভাল হয়েছে। রাতে ঘুমের মধ্যে সে নেতাজীকে স্বপ্নে দেখে। আজাদ হিন্দ বাহিনী নিয়ে বীরদর্পে ইংরেজদের মোকাবিলা করছেন। পর দিন স্বামী বিবেকানন্দর প্রতিকৃতি আঁকে তিয়াস। ওমা! সে রাতে তিয়াস যেন পৌছে যায় শিকাগোতে। 'আমার আমেরিকাবাসী ভাই ও বোনেরা' - ঘুমের মধ্যেই হাততালি দিয়ে ওঠে তিয়াস। যেমনটা মায়ের কাছে গল্প শুনেছিল। কি অদ্ভুত! সে মাকে বলে। মা ও খানিকটা অবাক হয় বটে! তবে কিন্তু এসবে তিয়াস ভয় পায় না।  ওই বস্তুটি তিয়াসের অভিধানে ছোট্ট বয়স থেকেই যেন নেই! এ নিয়ে বাবা-মার চিন্তাও বিস্তর।

এরপর থেকে একে একে অনেক স্মরণীয় ব্যক্তিত্বদের আঁকে তিয়াস। ঋষি অরবিন্দ, ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেলসন ম্যান্ডেলা, মাদার টেরিজা, কে নেই! গতকাল সাহস করে ম্যাগনাস কার্লসেনকে এঁকেছিল। আর ঘুম থেকে উঠে সে কি কান্না! ভুল চাল দিয়ে চেকমেট হয়ে যাবার দুঃখে। মা শান্ত করতে গিয়ে গলদঘর্ম!
আজ ভেবেছে কোন বিখ্যাত ব্যক্তিকে আঁকবে না। সে মন গড়া একজন বয়স্ক মানুষের ছবি আঁকছে মন দিয়ে। কোন বিশেষ বা চেনা কেউ না! যেমন খুশি তেমন! মা দেখে বলে 'বেশ হয়েছে বাবা। এখন ঘুমোতে চলো......'।
মায়ের সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ে সে।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মাকে তিয়াস বলে, ' মা, কাল রাতে একজন বয়স্ক লোক আমায় আশীর্বাদ করেছে'।
মা কিছুটা ভেবেও বিশেষ পাত্তা দেয় না। রোজ স্বপ্ন দেখা কি ভাল নাকি! 
মুখে বলে 'হয়েছে। এখন উঠে পড়ো শিগগির।'
'আচ্ছা মা, আমি তো ঠাকুর্দাকে দেখিনি। উনি কি আমার ঠাকুর্দা ছিলেন? '
চমকে উঠে মা। বলে 'হতে পারে। ঠাকুর্দা আমার তিয়াস সোনাকে আশীর্বাদ করেছে।'

তিয়াস আর এটা বলে না যে, ওই ছবিটা আঁকার সময় গতরাতে সে একবার ঠাকুর্দার কথা ভেবেছিল বই কি!
মনটা খুশিতে ভরে উঠল তিয়াসের।

রূপকথা

মো না লি সা  পা হা ড়ী

শিস্ দিয়ে ডাকছে মধুর ছেলেবেলা
পড়ছে মনে নানান রঙিন মজার খেলা।
ভাইবোনেরা সবাই মিলে উঠোনটাতে
চু কিতকিত, রামসীতাতে দারুণ মাতে।
দুপুর বেলায় চুপিচুপি আড্ডা মারা
হয় যে চুরি এর ওর বাড়ির আম পেয়ারা।

শরৎ এলে লাগে মনে খুশির দোলা
কাশ শিউলির ও রূপ দেখে হৃদয় ভোলা।
স্কুলে ছুটির ঘন্টা বাজে ঢং ঢং ঢং
আগমনীর সুরে ছড়ায় আজ কত রং।
মা আসছেন বছর পরে বাপের বাড়ি
নতুন জামা কাপড় পরি রংবাহারী।

সবাই মিলে পুজো দেখা, দারুণ মজা
ফুজ্কা ট্রফি আইসক্রিম আর খাস্তা গজা।
অষ্টমীতে অঞ্জলী দান ভুলতে পারি?
চোখের জলে শুভ বিজয়ার প্রনাম সারি।
ছেলেবেলার দিনগুলো সব রূপকথা ঠিক
পড়লে মনে চোখদুটো হয় জল চিকচিক।


লোভ

মা ন ব  কু মা র  প্রা মা ণি ক

আমি Lord Clive
পড়ি  Class Five
স্কুলটি বড্ড বড়
হরেক রকম ছাত্র হয় জড়
সবাই ডাকছে আমার নাম
কেউ দেয় না দাদার সম্মান
দুঃখ হলেও বসে ভাবি
সতীর্থ ছাড়া বড় সবাই
দাদা হওয়ার বাসনা যত
মন দিয়ে পড়ছি তত
করলে Pass Class Five
Six Class এ পাবো Life 
এমনি করে ফি-বছর পেরিয়ে Class
উচুঁ Class এর দাদা হলে মিটবে মনের আশ।


Post a Comment

1 Comments

  1. Patrikar lekhaguli khub upadeya o samaya upojogi hayaechhe. Kishor bayaser chhelera prerana pabe lekha lekhi karar janya.

    ReplyDelete