Jalal-ad-Din Muhammad Rumi and his Poetry- 3
কবি জালালুদ্দিন মুহাম্মদ রুমি ও তাঁর কবিতা-৩
তৌ ফি ক হো সে ন
রুমি বা মৌলানা জালালুদ্দিন রুমি বা জালালুদ্দিন বাল্খি ছিলেন অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও কিংবদন্তিসম পার্সি সুফি কবি। সেই সময়ের পারস্য সাম্রাজ্যের আফগানিস্তানের বালখে ১২০৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি জন্মেছিলেন। তাঁর পিতা বাহাউদ্দিন ওয়ালাদ ছিলেন একজন অতীন্দ্রিয় সাধক, তত্ত্বজ্ঞানী ও ধর্মীয় গুরু। বিভিন্ন দেশ ঘুরে তাঁরা স্থিতু হন তুরস্কের কোনিয়ায়। পিতার মৃত্যুর পর তিনি সেখানকার দরবেশ সম্প্রদায়ের দ্বায়িত্ব নেন। তাঁর অভিন্ন-হৃদয় বন্ধু শামস্-ই-তবরিজ তাঁর জীবন ওই দর্শনকে সম্পূর্ণ বদলে দেন। শামস্-এর প্রভাবেই বিশ্ববাসী রুমির মতো একজন বিশ্বকবিকে পেয়েছেন। 'মসনবি' তাঁর শ্রেষ্ঠ তথা বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ। এই 'মসনবি'কে পার্সি ভাষার কোরান বলা হয়। যাপন, দর্শন ও কাব্যে তিনি যাবতীয় প্রচলিত বেড়াজাল ভেঙে দিয়েছিলেন। তাঁর সৃষ্টি সমগ্র মানবজাতির আদরের সম্পদ।
তিনি প্রয়াত হয়েছিলেন ১২ ডিসেম্বর,১২৭৩।
কোলম্যান বার্কসের ইংরেজি অনুদিত রুবাই সংগ্রহ 'বার্ডসঙ' থেকে কবিতাগুলি নেওয়া হয়েছে।
প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে গেছে ১০ টি করে কবিতা। এবার অন্য ১০ টি কবিতা থাকলো এই তৃতীয় পর্বে।
আপনাদের অভিমত পেলে ভালো লাগবে।
তৃতীয় পর্ব
-------------
একুশ
বসন্ত চমকায়, কবিতা
পাঠ হয় সুরে। বাদ্য
থেমে যায়, কিন্তু
কণ্ঠগুলি থামে না।
প্রেমের দেবী উপস্থিত হয়
সঙ্গীতের জন্য উপহার নিয়ে।
বাইশ
এই সময় বন্ধুর সঙ্গে থাকার,
আবছা হচ্ছে শরীর। হৃদয়ের আলো
হচ্ছে আরো তীব্র।
শুরু হয়েছে বজ্রের অট্টহাস্য,
এবার কাঁদছে ঝোড়ো মেঘ সব।
সর্বত্র নামছে ভারি চোখের জল,
মাটিতে লাগছে বেয়াড়া সুড়সুড়ি।
তেইশ
মৃত্যুর ফেরেস্তা হাজির হয়,
লাফিয়ে উঠি আনন্দে।
কেউ জানেনা কে আসে আমার কাছে
যখন আমি আর সে কথা বলি!
চব্বিশ
যখন তুমি ফিরে আসো আমার বুকে,
কি আসে যায় কতো পথ আমি ঘুরেছি,
আমি মুখ তুলে চাই পথের দিকে।
যদি তুমি আসো জীবনের শেষে,
শেষ শ্বাসের আগে, আমি উঠে বসে গান ধরবো।
পঁচিশ
তোমার দরজায় আমি ডাক দিলাম,
'সাধক সব জড়ো হচ্ছে
রাস্তায়। বাইরে এসো!'
'আমাকে একা থাকতে দাও।
আমি অসুস্থ।'
'আমি মাথা ঘামাই না তুমি মরে গেছো কিনা!
যীশু এখানে আছেন, আর তিনি
কাউকে আবার বাঁচাতেই চান!'
ছাব্বিশ
সারাজীবন আমরা খুঁজেছি
পরস্পরের মুখে।
আজকেও।
কিভাবে গোপনে রাখি আমাদের প্রেম?
আমরা কথা বলি চোখে চোখে
শুনি বন্ধ বন্ধ চোখে।
সাতাশ
গত রাতে আমাদের মধ্যে দেওয়া -নেওয়া হোল স্রোতের বেগে
যা এখন বলাও যাবেনা লেখাও যাবেনা।
শুধু আমি যেহেতু বয়ে যাচ্ছি
রাস্তা জুড়ে, আমার আবরণ যেহেতু
ভাঁজে- ভাঁজে খুলে বাতাসে,
কেউ কি পড়তে পারবে
গতরাতের আমাদের দেওয়া -নেওয়া
ফুটন্ত ফুলের পাপড়ি - পাতাগুলি।
আঠাশ
যখন মনে পড়ে তোমার প্রেম
আমি কাঁদি আর যখন আমি শুনি
মানুষ তোমার কথা বলছে,
আমার বুকের মধ্যে,
যেখানে এখন আর কিছুই ঘটে না,
যেন ঘুমের মধ্যে কি একটা নড়ে ওঠে।
ঊনতিরিশ
যখন সত্তা সমুদ্রে পরিণত হয়
কণাগুলি ঝলমল করে।
দেখ কিভাবে এই ক্ষণিক বাতির
শিখায়
তোমার যাপিত সব মুহুর্তগুলি ঝাপসা হয়ে যায়।
তিরিশ
এক পথ আছে বাঁচার
যা লজ্জার ও দমবন্ধ হওয়ার।
আরেক পথ আছে মরণের,
এক প্রেমের শ্বাস যা তোমাকে মুক্ত
করে অনন্তে।
------------------------------------------------
প্রতি বুধবার প্রকাশিত হচ্ছে এই অনুবাদ সাহিত্য বিভাগ। অভিমত জানাতে পারেন।
jaladarchi@yahoo.in
0 Comments