জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা / আলোকরেখা

   ফোটোগ্রাফি- সৈয়দ স্নেহাংশু   


গুচ্ছ কবিতা 

আ লো ক রে খা 
                      
                          
আসছে উমা একটা বছর পর

কার ও মা, কেউ বা বলে মেয়ে, 
তবে অপেক্ষা সবার সমান।
একটি বছর পর,আসছে উমা মায়ের কাছে,
প্রতিবারের মতোই তাই 
যে যার মতো করে,
উঠেছে মেতে আনন্দেতে অতীত দুঃখ ভুলে।
আকাশে আদুরে শরতের মেঘ-
কাশফুল দল বসিয়েছে মেলা।
ভূমিতে লুটিয়ে শিউলি ঢেকেছে পথ,
 পদ্মপুকুরে তুলেছে মাথা হাজার শতদল।
প্রকৃতি পৃথিবীর সাজিয়ে দিয়েছে ঘর।
শুরু হয়ে গেছে আগমনি বেলা।
আসছে যে উমা একটি বছর পর!
দীর্ঘ সময়ে কত না বেদনা সয়েছে মানুষ
ঝড়েতে কার ও আশ্রয় গেছে ভেঙে-
কেউ বা পেয়েছে স্বজন হারানোর শোক।
তবু ও তোমাকে বরণ করবে বলে
হাত পা গুটিয়ে কেউ বসে নেই ঘরে।
শুধু  একটা কথা বলার আছে গো মা
হয় তো এবার  রোশনাই হবে কম-
তবে আদর যত্নে করবো না কার্পণ্য।
অভাব আমাদের স্বভাব সুলভ সঙ্গী 
অক্ষয় হয়ে জ্বলছে সর্বক্ষণ।
চারটি দিন তাই একঘেয়ে সব ভুলে 
তোমরা থেকো সারাটি মন জুড়ে-
খুশি মনে এসো, খুশি নিয়ে ফেরো ঘরে 
দেখা হবে যে সেই একটি বছর পরে।
আসবে উমা একটা বছর পর!

                     
 দুর্গা মায়ের জয়

এল যে পুজোর মাস-
আমি বলি-কার ও পৌষমাস তো কার ও সর্বনাশ।
কাকা গেলেন ক্ষেপে,
-সর্বনাশ টা হল কিভাবে শুনি?
আমি তো প্রমাদ গুনি।
এবার বুঝি বইবে বাড়িতে ঝড়-।
তবু ও সাহস করে 
বলি রাগ না করে কথাটা আমার শোন।
পুজোর নামে চলে যে প্রকাশ দম্ভের 
সর্বনাশের শুরু টা সেখানেই
নাহলে উৎসব তোমার-আমার 
সকলের কাছেই হত ভারী সুখের।
যেমন ধর চাঁদার ব্যাপার টা,
শুনে কাকা বলে,এটা অবশ্যই দোষের।
কেন রে বাবা 
যার যেমন ক্ষমতা তেমন করবি পূজো 
দরকার কি অন্যায় জুলুমের।
বুকে বল আসে 
সোজা হয়ে বসে বলি,
এরপর দেখো রাস্তা জুড়ে প্যাণ্ডেল-
বিপদ কিন্তু আসেনা সময় বলে।
ভুল কিছু বলেছি আমি,বলো?
মাথা নেড়ে বলে এমন না হওয়া ভালো।
তারপর আছে ক্ষমতা দেখানোর খেলা।
নকল বাড়িতে পোক্ত  ছাদ,আর আসল  ঘরেতে ফুটো চালা।
হয় তো বলবে এ তো চিরকাল চলে 
পুজোর সময় এলেই কি মনে পড়ে?
তা নয় আসলে পূজো তো সব্বার- 
তাই ঐ চারটি দিন যদি  বিভেদ ঘুচে সব হত একাকার।
অন্তত  দুর্গা মা কে খুশি করতে।
পারিনা কি আমরা নিজেদের পাল্টাতে।
কাকা বললেন বুঝেছি সবই
বলতে হবে না আর,
কবিগুরু কে মনে করা এইবার দরকার।
“জীবে দয়া তব পরম ধর্ম জীবে দয়া তব কই”
বিভেদ ঘোচাতে গিয়ে যদি বিভেদের জন্ম হয় 
সেটা ঠিক নয়।
তারচেয়ে সব ভুলে গিয়ে বল-‘দুর্গা মায়ের জয়!’
মা এর আশিসে কেটে যাবে ঠিক মনের সংশয়।
        
                    
 স্মৃতি তর্পণ

বাবি দ্যাখ কি এনেছি,
বহু কষ্টে চোখ মেলে অবাক মেয়ে,বলে-
শিউলি ফুল!কোথায় পেলে?
-সেসব পরে হবে এখন তো ওঠ!
আজ যে মহালয়ার ভোর।
-ছুটির দিন টা কোর না বাপি মাটি।
ঘুমোতে দাও আর গুছিয়ে রেখো ফুল 
লাগবে কাজে যখন করবো ফটোশ্যুট।

জানালার কাছে উদাস দৃষ্টি  মিমির!  
আচ্ছন্ন হয়ে চেনা এক সুর শুনে। 
মন ছুটে চলে জানা কোনো পথ ধরে 
থমকে দাঁড়ায় শিউলি গাছের কাছে।
হুটোপুটি করে কারা যেন কুড়োচ্ছে ফুল ।
খুবই চেনা মুখ ছুঁতে তার মন চায়।
অমনি বাবা ডাকে ,তাড়াতাড়ি খুকু আয় ।
রেডিও তে তখন চণ্ডীপাঠের সুর।
ধীরে সে এগোয়
আরও কিছু শোনার আশায়-।
ঐ তো দাদার গলা!রেডিওর পাশে বসে,
মিলিয়ে সুর বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র এর সাথে, বলছে দাদা, 
যা দেবী সর্ব ভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্হিতা,
নমোস্তস্যৈ নমোস্তস্যৈ নমোস্তস্যৈ নমো নমঃ।
চোখে জল তবু ও মিমি এগোয় 
আর একটু গেলে পৌঁছবে আটচালায়।
নিতাই কাকা ওখানে ঠাকুর গড়ে 
ছেলেদের দল ভীড় করে তাই দেখে।

পঞ্চমী তে মা আসে মন্দিরে 
লাল পেড়ে সাদা তসরের শাড়ি পরে,ঠাকুমা মা কে বরণ করে।
ঢাক বাজিয়ে হয় যে বোধন ষষ্ঠীর সন্ধ্যাতে
ঘর ভরে যায় আত্মীয়-স্বজনে,
সপ্তমীতে ব্যস্ত সবাই পূজোর আয়োজনে।

আয়োজনে কিছু ত্রুটি দেখলে পরে
বলত দাদু-ভুল মানুষ মাত্র করে,
তবে তা যেন না হয় মনের ভুলে, দুর্গা পূজো কে মহাপূজো বলে।
আড়ম্বর নয় মন টুকু দাও উজাড় করে।
ভোর ভোর উঠে বসে দাদু পুজোয়
সাথে তন্ত্রধারক আর অনেক জোগাড়দার
মহাস্নান থেকে সন্ধ্যা আরতি-
পূজো হবে চারবার
মনের মতো সাজিয়ে উপাচার।

হৈ হৈ করে কেটে যায় তিনদিন
সপ্তমী-অষ্টমী-নবমী।
নতুন জামা,ভোগের খিচুড়ি আর প্যাণ্ডেলে প্যাণ্ডেলে ঘুরে-
তারপরে আসে বিষাদের দশমী।
পূজো শেষেকেঁদে কেঁদে দাদু যখন বলে-
বিদায় জানাতে চায় না তো মন
তবু রাখতে তোমাকে পারবো না মা,
যেতে হবে যে স্বামীর ঘরে।
ছোট থেকে বড় সবার তখন চোখ ভরে ওঠে জলে।
এরপর আসে অপরাজিতা বাঁধার পালা,
ঠাকুমা আবার সাজায় বরণডালা
সিঁদুর আলতায় মা কে দেয় রাঙিয়ে,
জিলিপি হাতে দেওয়া হয় ঝুলিয়ে।
কৈলাস সে যে অনেক দুরের পথ-
ক্ষিদে পেলে মা গো সবাই খেও মনে করে।
কনকাঞ্জলি করে ঠাকুমা লুকোয় ঘরে।
মায়ের মুখ আর তো যাবে না দেখা!
ঠাকুমা কাঁদছে একা।
মিমি ভাবে প্রিয় ঠাকুমাকে সেই তো ভোলাতে পারবে।
মেঝেতে ছড়ানো শিউলির ফুল
যেই না দিয়েছে পা
হাত ধরে টেনে বলে উঠে বাবি, আগে আমার ফটোশ্যুট তারপর তোমার মা।

Post a Comment

6 Comments

  1. সহজ ভাষায় খুব সুন্দর হয়েছে
    আরো লেখো

    ReplyDelete
  2. অনেক ধন্যবাদ

    ReplyDelete
  3. খুব ভালো লিখেছেন

    ReplyDelete
  4. বেশ অন্যরকম ধারার ,মনকে ছুঁয়ে গেছে🥰🥰💖💖💖

    ReplyDelete