জ্বলদর্চি

কন্যাভ্রূণ হত্যা /সুমিত্রা ঘোষ

কন্যাভ্রূণ হত্যা 

সুমিত্রা ঘোষ 

বিপাশা আর কুনাল কলেজে পড়ার সময় থেকে একে অপরকে ভালোবাসে। উভয়ের ভালোবাসার পর্ব একসময় গভীর পর্যায়ে পৌঁছে যায়। বিপাশা ধনী পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান। মেয়েকে নিয়ে মা-বাবা অনেক স্বপ্ন দেখতে থাকেন। কথায় বলে দৈব নির্বন্ধ কেউ খণ্ডাতে পারে না। বিপাশার জীবনে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত এক ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে গেল। কুণালের চাপে পড়ে বিপাশা মা বাবার অমতে কাগজে-কলমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নতুন জীবনে প্রবেশ করে। বিপাশার শাশুড়ি মা ভাবলেন আজ হোক বা কাল হোক বিপাশার বাবার সব সম্পত্তি আমাদের হস্তগত হবেই। তিনি বিয়ে মেনে নিলেন।

 প্রকৃতির নিয়মে বিয়ের এক বছরের মধ্যেই বিপাশা সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়ে। বিপাশার স্বামী কুনাল এবং শাশুড়ি মা খুশি হয়। শাশুড়ি মা আভাসে ইঙ্গিতে বিপাশাকে বলে দেন বংশের প্রদীপ স্বরূপ তিনি অতি অবশ্য পুত্র সন্তান প্রত্যাশা করেন। এই কথা শুনে বিপাশা আতঙ্কিত হয়ে স্বামীকে বলে, মায়ের মন থেকে ভ্রান্ত ধারণা স্বরূপ কুসংস্কার মুছে ফেলতে বলো। সন্তান ছেলের হাতের মোয়া নয় যে চাইলেই মা সন্তানের হাতে ধরিয়ে দেবে। কুনাল স্ত্রীকে বলে মায়ের সিদ্ধান্ত মেনে না নিলে ঘোর অশান্তি হবে। আমি মাকে কিছু বলতে পারব না। 
বিপাশা চোখের জলে বুক ভাসায়। এদিকে বিপাশার গর্ভস্থ ভ্রূণ বাড়তে থাকে। এই সময় ভাবী মায়েরা আগত সন্তান কামনায় সুখস্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকে। তাকে নিয়ে কত না কত স্বপ্নের জাল বুনে চলে। বিপাশার জীবনে স্বপ্ন-সৌধ অকালে ধ্বস খেয়ে তাকে পঙ্গু করে দিল। সময় এগিয়ে চলায় বিপাশাকে নার্সিং হোমে নিয়ে যাওয়া হয়। গর্ভস্থ ভ্রূণ পরীক্ষা করা হবে। বিপাশা অজানা আতঙ্কে শিউরে উঠল। নার্সিংহোমে বিপাশার  সোনোগ্রাফি টেস্টে জানা যায় ওর গর্ভে কন্যা ভ্রুণ বেড়ে উঠছে। যদিও সরকারি আইন বলবৎ আছে গর্ভস্থ ভ্রূণ ছেলে না মেয়ে সে কথা জানানো আইনবিরুদ্ধ, তবু এক শ্রেণীর অসাধু লোক সরকারি আইনে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কার্যসিদ্ধি করে চলেছে। 

এক শ্রেণীর মানুষ জঘন্য নারী-ধ্বংসের কাজ করে  চলছে। 

বিপাশাকে জঘন্য প্রথার সাক্ষী হতে হলো। বিপাশা শাশুড়ি  মায়ের পা জড়িয়ে ধরে অনেক কান্নাকাটি করল, কিন্তু কোন লাভ হল না। তিনি বলেন এ ঝামেলা রাখা যাবে না, এখানেই উপড়ে ফেলতে হবে। এবোরশন করানো হলো। ডাক্তারবাবু এমন জঘন্য কুকর্ম করে মাতৃঘাতীর সাক্ষী হয়ে রইলেন। আজ গর্ভস্থ ভ্রূণ ভবিষ্যতে ভগিনী-জননী -জায়া ছাড়া আরো অনেক কিছু হয়ে উঠতে পারে। বেডে শুয়ে জ্ঞান ফেরার পর বিপাশা বুঝতে পারল, তার চারিদিকের শূন্যতার ভাষা ছাড়া আর কিছু নেই। সে ভাবল বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সুফল প্রথাকে গর্ভস্থ কন্যাভ্রূণ ধ্বংসের কাজে ব্যবহার করে সমাজে জঘন্যতম কাজের নজির সৃষ্টি করছে। এদের কঠোরতম শাস্তি হওয়া দরকার।

জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇



আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments