জ্বলদর্চি

প্রচলিত গল্প ও আজকালকার শিশুদের মনে তাদের প্রভাব/ অগ্নিমিত্র


প্রচলিত গল্প ও আজকালকার শিশুদের মনে তাদের প্রভাব 

অগ্নিমিত্র 

বাংলার প্রচলিত গল্পগুলি দারুণ। আমাদের ছোটবেলার অনেকটা জায়গা জুড়ে রয়েছে এই লোককথা, রূপকথা ইত্যাদি। এগুলি এক ভাবে দেখলে বাংলার কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সাথে শিশুমনের পরিচয় করিয়ে দেয়। তবে  বর্তমান সময়ের শিশুমনে আর প্রচলিত কথাকাহিনীগুলি তেমন একটা প্রভাব ফেলে বলে আমার তো মনে হয় না। অন্তত শহরাঞ্চলের শিশুদের ক্ষেত্রে তাদের তেমন কোনই প্রভাব নেই। তার কারণ শহুরে শিশুরাও যে আজকাল খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাদেরও যে এ সব গল্প শোনার বা গল্পের বই পড়ার একেবারে সময়ই নেই। মুঠোফোন, অনলাইন অফলাইন ক্লাস, পোকেমন, নোবিতা, মোটু- পাৎলু, ছোটা ভীম ইত্যাদিতে তাদের সময় কেটে যায়।
দৈবাৎ সময় পেলে তারা একটু ফেলুদা বা পান্ডব গোয়েন্দা পড়ে হয়তো। তাও সেই সংখ্যাটা খুবই নগণ্য ও দিনকে দিন কমে আসছে। গল্পের বই পড়ার অভ্যাসটা বলা যায় চলেই গিয়েছে । বাংলা বই বা রূপকথা আর কে পড়ে ? সবাই ভাবে যে বাংলা বই বা ছড়া বা রূপকথা পড়ে কী হবে ? কাজে তো লাগবেই না।..  হয়তো এর জন্য আমরাও কিছুটা দোষী। আমরা তাদের বাংলা গল্প বা কবিতা বা রূপকথা পড়তে উৎসাহ দিই না মোটেই। আগে জন্মদিনে বা উপনয়নে শিশু ও কিশোরদের গল্প বা লোককথার বই উপহার দেওয়া হতো। এখন সে চলই উঠে গিয়েছে। আর সংযুক্ত পরিবার ভেঙে যাওয়ার ফলে গল্প শোনানোর মতো ঠাকুমা দিদিমারা কাছে নেই। সবাই ফ্ল্যাটে থাকে, নিজের নিজের দুনিয়ায় তারা মশগুল। তাই আর ব্যঙ্গমা ব্যঙ্গমী বা সাজু- রুপাইয়ের গল্প কেউ জানে না। এমনকি আরব্যরজনী, হিতোপদেশ বা আলিবাবার গল্পও তাদের অজানা। এসব তারা শোনেইনি কখনো কারোর কাছে। যেটুকু বাংলা পাঠ্যবইয়ে আছে সেটুকুই তারা পাখি পড়া করে মনে রাখে, তারপর ভুলে যায়। তাই তাদের আদবকায়দা সবই যেন অন্য রকম। তাতে বঙ্গের প্রচলিত গল্প ও লোককাহিনীর বিন্দুমাত্র প্রভাব নেই! বরং আছে স্পষ্ট পশ্চিমী প্রভাব। 

  তবে গ্রাম বাংলায় এখনও চিত্রটা একটু হলেও আলাদা। আজও বাংলার গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা রাতে ঘুমোবার সময়ে মা- ঠাকুমা- দিদিমার কাছে ঠাকুরমার ঝুলি, পক্ষীরাজ ঘোড়া, ব্যঙ্গমা ব্যঙ্গমী, বুদ্ধু- ভুতুম বা ক্ষীরের পুতুলের গল্প শোনে। এই ধারা এখানে বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। আজও তারা 'পথের পাঁচালী', 'রাজকাহিনী ', 'রাজসিংহ' বা  'বুড়ো আংলা'-র মতো লেখা পড়ে সোৎসাহে ও পড়ে রোমাঞ্চিত হয়। অনুষ্ঠানে বই কেনা বা উপহার দেওয়ার রীতি এখনো চলে আসছে গ্রামে। তাই প্রচলিত বাংলা গল্পের প্রভাব এখনো তাদের মধ্যে ও তাদের মননে বা আচার আচরণে বেশ ভালো ভাবেই লক্ষণীয়। হয়তো ভবিষ্যতের বাংলা সাহিত্যের স্রষ্টারাও মূলত গ্রাম বাংলার থেকেই উঠে আসবে। বলা যায় বাংলা সাহিত্যের পাঠকের জগতকে তারাই একরকম বাঁচিয়ে রেখেছে ।

জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇

আরও পড়ুন। ক্লিক করুন।

Post a Comment

0 Comments