জ্বলদর্চি

সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত (২০০৯) কবি হার্টা মুলারের নির্বাচিত কবিতার অনুবাদ/ সৌম্যদীপ চক্রবর্তী

সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জীবনচর্চায় অনন্য অবদানের জন্য প্রতি বছর বিশিষ্ট লেখক, কবি, সাহিত্যিকেরা নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়ে থাকেন। নোবেল পুরস্কারের সাথে জড়িয়ে রয়েছে এক সুদীর্ঘ ইতিহাস। বিগত দুই দশকে নোবেল পুরস্কারের ইতিহাস ও পরম্পরা আরো সমৃদ্ধ হয়েছে, দীর্ঘায়িত হয়েছে সাহিত্যে নোবেল জয়ীর তালিকা। বিগত দুই দশকে সাহিত্যে নোবেল প্রাপকদের তালিকা থেকে 'সুইডিশ আকাদেমি' কর্তৃক প্রস্তুত মনোনয়ন, নির্বাচন ও স্বীকৃতি পত্রে 'কবি' হিসেবে উল্লেখিত চার জন বিশ্ববন্দিত কবির নির্বাচিত কবিতার অনুবাদ করার প্রয়াস রইলো এই পর্ব গুলিতে।

পর্ব: ৩ 

সৌম্যদীপ চক্রবর্তী

সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত (২০০৯) কবি হার্টা মুলারের নির্বাচিত কবিতার অনুবাদ


হার্টা মুলার: সংক্ষিপ্ত কবি-পরিচিতি

১৯৫৩ সালে রোমানিয়ায় জার্মান ঔপন্যাসিক, গদ্যকার ও কবি হার্টা মুলারের জন্ম। রোমানিয়ার সমাজতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় বড় হওয়া মুলার সমাজের বীভৎসতার কথা তুলে ধরেছেন তাঁর লেখায়। রোমানিয়ায় বসবাসকারী সংখ্যালঘু জার্মানদের নিপীড়ণের কথা বার বার ফিরে ফিরে এসেছে তাঁর লেখায়। মুলারের কবিতাতেও আমরা পাই রোমানিয়ার মধ্যভাগে তথা ট্রানসিলভ্যানিয়া অঞ্চলে বসবাসকারী সংখ্যালঘু জার্মানদের শ্রেণী-সংগ্রামের কথা; মুলারের কবিতা হয়ে উঠেছে এইসব মানুষের  জীবন-চর্যায় সম্পৃক্ত হয়ে থাকা সংঘর্ষের এক দলিল। সংখ্যালঘু মানুষের বাকস্বাধীনতা ও পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদার সপক্ষে মুলার জোরালো সওয়াল করেছেন তাঁর লেখায়।

২০০৯ সালে হার্টা মুলার নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। 'সুইডিশ আকাদেমি'-র প্রদান করা স্বীকৃতি পত্রে মুলারের রচনা-শৈলী ও কাব্য-শৈলী সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে - কবিতার গভীরতা ও গদ্যের লালিত্য দিয়ে তিনি ভিটে-মাটিহীন মানুষদের জীবনের এক সম্যক চাল-চিত্র তুলে ধরেছেন।
 

ধূসর রং
 
আমি বপন করি সময়, বীজ, ধূসর রং
আর জুড়ে যাই মরতে চলা দিনের ছায়াগুলিকে
তারা নির্মাণ করে এক নারী, আদতে এক মেয়ে
যে হারিয়ে গেছে সাগরে এক কণা মুক্তোর মতো
কুলের রাজহাঁসেরা উড়ে বেড়ায় আমার ওপরে
তারা কি আমার কাছে দু-দণ্ড জিরিয়ে নেবেনা!        
হয়তো এখন আমার পালা।
গভীর তুষারপাতে যেখানে আমার দৃষ্টি কখনো পৌঁছোবে না
চিতাবাঘটি যেখানে তার থাবার ছাপ ছেড়ে যায়
আর হঠাৎ এক লাফে মুক্ত করে দেয়
কবিতার সব ঐকতান       
হয়তো এখন আমার পালা।
হিংস্র পশুটি কখনো জন্মায়নি
যদিও সকালেই আমরা খাঁচার পরিকল্পনা করেছিলাম      
হয়তো এখন আমার পালা।
আমার একটি গল্প বলার আছে ঘন্টাটিও বাজাবো আমি
যখন তুমি বিশ্বাস করতে শুরু করবে
যখন তুমি শুনতে শুরু করবে
হয়তো এখন আমার পালা।

আজ-কাল আমি তোমায় নিয়ে ভাবিনা
কিন্তু ঝুল-কালিতে ভরে যাওয়ার পর
আমি বিস্মিত হতে শুরু করলাম কোথায় সেই
সন্ধেগুলো চলে গেল, সেই ঘুরে বেড়ানো
মায়াজালের পরিব্যাপ্ত প্রাঙ্গনে
যার অভিব্যক্তির লেশ মাত্র ছিলো না, যদিও
আমরা উদগ্রীব ছিলাম অর্থপূর্ণ কিছুর জন্য
প্রথম বেলার পাখিরা তাদের কীটগুলি পায়
আমি পড়ে থাকি আমার পুরোনো হাতঘড়ির নিরলস টিক-টিক শব্দে
গুনতে থাকি জমাট বাঁধা রক্তের স্পন্দন
শুনতে থাকি কীটগুলির তরে
তারা আমাদের সকলের মধ্যে রয়েছে
তারপর আমি হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যাই মাতৃজঠরের দিকে
যা আমায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলো অনেক পেছনে
আর খুঁজতে থাকি সেই অন্ধকার, সেই কালো গহ্বর
আমায় টেনে তোলার জন্য।


আমি তার প্রতি সদয় ছিলাম
সে আমার প্রতি সদয় ছিল
কেবল
আমাদের দরজাগুলো, আমাদের জানালাগুলো
বন্ধ রাখা হতো
শেষে আমরা পরস্পরের ঘ্রাণ নিলাম।                    

(রজার উডহাউস -এর ইংরেজি অনুবাদ অনুসরণে)

আরও পড়ুন
 

Post a Comment

2 Comments