পারিবারিক কবিতা
জ্যোতি পোদ্দার
১
মাস শেষের পকেট ফাঁকায় ফাঁকায় পূর্ণ।
তখন গিন্নীই লক্ষ্মীভাণ্ড।
বউয়ের কাছ থেকে ঋণ নেবার সুবিধা অনেক।
এখানে সুদ বা সার্ভিস চার্জের কোন ঝামেলা নেই।
নেই সোমবারে কিস্তি দিবস।
উপরন্ত নেই পাওনাদারের অযাচিত তাগদা।
আহা!
কী সুন্দর নিষ্পাপ পারিবাবিক ধারাবাহিক সিরিয়াল।
গিন্নীর হাত সাফাইয়ের টাকা ঘুরপথে
আমার পকেটেই প্রত্যাবর্তন।
তবে সিরিয়ালে যা হয় আর কী!
কতিপয় সুবিধার পাশে লকেটের মতো
ঝুলে থাকে
একটি মুশকিল...
কিস্তির পর কিস্তির টাকা দেবার পরও
গিন্নীর ঋণ জাল থেকে বের হতে পারছি না।
লক্ষ্মীভাণ্ড গিন্নী আমার ম্যাইক্রো ক্রেডিট
গ্রামীণ ব্যাংক
ঋণে জড়িয়ে রেখে আমাকে নিজ
পায়ে দাঁড় করাচ্ছে।
২
পূর্ণগ্রাস লেগেছে শরীর জুড়ে কোথাও কোন আলো নেই।
এ বড় আন্ধার
ইস্টক নির্মিত পারিবাবিক প্রাচীর।
মায়া ও মায়াবী নিয়ে কুহক যাপন কুহকের ভেতর।
ছড়ালেই জড়িয়ে যায় আরো।
ঘোলা হয় গুদারা ঘাটের স্বচ্ছ জল।
আমারই হাত থেকে বারবার ফসকে পড়ি আমি।
ফসকে পড়ি মায়া ও মায়াবীর ষোলগুটির
ঘরের কার্নিশ থেকে।
আমার আর কোথাও যাবার নেই।
ইস্টক নির্মিত পারিবাবিক প্রাচীরে
আমিহীন আমি এবার
মরতে গিয়েও ফিরিয়ে দেবো মৃত্যুকে।
৩
দেয়ালের পেরেকে ঝুঁলে থাকা বাঁধানো ফটোর জীবনের মতো
বৈবাহিক জীবন।
দুলছি আর দুলছি
বেলী ফুলের মৌতাতে দুলছি
যেন ক্রুশবিদ্ধ জেসাস কিংবা হাঁড়িকাঠের পাঁঠা।
ওম এ্যতো গন্ধে পুষ্পে ধুয়া স্বাহা
ওম এ্যাতো আত্মোৎসর্গ নিবেদনে স্বাহা
ওম পরিবার কল্যাণে স্বাহা
ওম জগত কল্যাণে স্বাহা
ওম পুরহিত দক্ষিণায় নিবেদনে স্বাহা।
৪
প্রজাপতিটি উড়তে পারল না। অপরিপক্ক হাতের জলরঙের ভারে
লেপ্টে আছে প্রসারিত সাদা জমিনে।
বিবর্ণ প্রজাপতি জলরঙ ক্যানভাসে দিশাহীন গোবরে পোকা
কিলবিল কিলবিল করছে প্রাঙ্গনের
একে দেয়া ফ্রেমের ভেতর।
প্রজাপতিটির কোথাও যাবার পথ নেই।
সঙ্গীহীন কারাগার জীবন।
প্রজাপতির পাখনায় শিশির ছিল
রোদ ছিল
ছিল বুটিবুটি তারা।
তবু প্রজাপতিটি বাতাসের ভেতর সাঁতার কেটে উড়তে পারল না।
ছোপ ছোপ জলরঙের ভারে প্রজাপতিটি
মুক ও বধির আর দিশাহীন।
বাবা--আমাদের কোন বাগান নেই
আছে শুধু বেড রুম আর ড্রয়িং রুম।
রেলিঙ জুড়ে যে অর্কিড বাগান করেছিলাম গতবর্ষায়
ফুল ফোটার আগেই পোকায় কেটেছে পাতার শরীর।
চল বাবা একটা মাঠ খুঁজি।
চল বাবা একটা বাগান খুঁজি।
শহর ছেড়ে বাগানে যাই।
প্রজাপতিদের দেশে যাই।
ওর কাজিনেরা নিশ্চয়ই ওকে চিনবে।
বাগানে গেলেই আমার প্রজাপতির মন
ভালো হয়ে যাবে।
চল বাবা একটা মাঠ খু্জি।
৫
সেভেন প্লাস প্রাঙ্গণের বই সংখ্যা দশ।
কী সুন্দর গড়গড়িয়ে
দেশ-মূদ্রা- রাজধানী- আয়তন পড়ে!
আহা! শুনতেই ভালো লাগে।
বাহ্! ছোটদের কম্পিউটার ল্যাবও আছে দেথছি
যদিও কী বোর্ডচিনে না-- তাতে কী এসে যায়
আউটপুট ইনপুট ডিভাইসের নাম
বলতে পারে বেশ।
আরো আছে বার'শ স্কয়ার ফিটের স্কুলবাড়ি
পাটভাঙা ইউনিফর্ম
কোচিং সেন্টার
আর খাতার পর খাতায় সি ডাব্লুউ এইচ ডাব্লুউ
ধরে ধরে গুড এক্সিলেন্টের লাল রঙের স্টার।
যদিও প্রাঙ্গনের কোন মাঠ নেই।
নেই হুড়োহুড়ি লুটোপটি গড়াগড়ির মেঝে
আছে শুধু তিন ফিট বাই দশ ফিটের ঝুল বারান্দা।
চকে আঁকা ক্রিজে রঙ্গন বোলার প্রাঙ্গণ ব্যাটসম্যান।
রেলিঙ ছুঁলে চার বাইরে গেলে ছয়।
প্রাঙ্গণ স্কুলে জলরঙের মাঠ আঁকে;
ছোপ ছোপ সবুজে সবুজ ঘাসের মাঠ।
ক্যানভাস ছাড়িয়েও বহুদূর প্রসারিত একটা কালারফুল মাঠ।
চল বাবা মাঠে যাই।চল বাবা মাঠে হাটতে যাই।মাঠে খেলতে যাই।
খালি পায়ে হাটতে হাটতে আমি খুঁজব
আমার চারু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
আর নাক বেয়ে ঠোঁটের কাছে জমা হওয়া রূপালি
রঙের নরম সর্দির শৈশব
এখনো জিবের ডগায় লেগে আছে নাকের পেটা
আহা ! কী ভীষণ স্বাদের শৈশব
তুই বরং সূর্য ওঠার আগেই ঘাসের ডগায়
এঁকে দে রঙিন শিশিরের জলভরা পুঁতিদানা।
জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇
আরও পড়ুন
0 Comments