জ্বলদর্চি

বাবুমশায়,বেশি ভালবাসা ভাল নয় আর অতিভক্তি চোরের লক্ষণ/গৌতম বাড়ই

বাবুমশায়, বেশি ভালবাসা ভাল নয় আর অতিভক্তি চোরের লক্ষণ

গৌতম বাড়ই


এ যে ঠাকুর পরমহংসের সেই কথামৃতের গল্প-ই।
রাজনীতির অন্দর মহলে কুশীলবেরা এই ভাবেই দেখেন তাদের ভোটারদের।

বাজারের সেই দিনুদা বললেন-সবদেখে কী মনে হয়?বাঙলায় তাহলে মধু আছে। ভোট বাগাতে হলে স্রেফ মাটিতে বসে পাতপেড়ে খেয়ে নাও আদিবাসী বাড়িতে কী দীনদয়ালের বাড়ি। কত দরদ! আমি তোমাদেরই লোক, এই নামেই খ্যাতি হোক। আর পরিযায়ীদের পায়ের পাতায়, বুকের ভেতর, বলিদানের রক্ত যখন ঝরেছিল তোমাদের ভালবাসার শব্দগুলো তখন হারিয়ে গিয়েছিল? পরিযায়ীদের কত শতাংশ উচ্চবর্ণ আর কত শতাংশ দলিত-নিম্নবর্ণ? কেউ কোনদিন জানতে পারবে না। যেমন জানতে পারবে না সঠিক কত লোক বে-রোজগারে হল? কত পরিযায়ী মারা গেল?

এবারের ঠাকুরের কথকতার গল্প প্রসঙ্গে আসি---

সেই স্বর্ণকারের দোকানের গল্প। দোকানের মালিক কর্মচারীর কী সুন্দর বোঝাপড়া। সবাই বলে বটুবাবুর সোনার দোকান বড্ড বেড়ে! কী অমায়িক তার ব্যবহার। ঠাকুর দেবতার নাম ওদের মুখে মুখে।
দোকানে প্রবেশ করতেই ভেসে আসবে একদম ভেতর থেকে মালিক বটুবাবুর গলা-কেশব! কেশব!
টুলের ওপর ঘুমে ঢুলে থাকা লোকটি এরপর বলে উঠবে-গোপাল! গোপাল! তারপর ভেতর থেকে আরও একজন অতি তৎপর হয়ে বলে উঠবে হরি! হরি! বটুবাবুর পুত্রের মুখে শেষে আরও একবার দেবতার নাম--হর! হর!

বেশিরভাগই জানেন কথামৃতের এই গল্পটি। আমি আমার মতন করে মূলগল্পটি অবিকৃত রেখে বললাম।এই গল্পের সারবস্তু হল, অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ।দেবতার নাম উচ্চারণের আড়ালে ছিল ওদের প্রকৌশলগত শব্দের উপস্থিতি। যেমন-কেশব মানে কে সব? গোপাল মানে গোরুর পাল বা বোকা, হরি হরি মানে চুরি করি? চুরি করি? আর শেষের হর হর শব্দের আড়ালে চুরি কর, চুরি কর।

এই গল্পটা এবারে আজকের সমাজ, অর্থনীতি আর  রাজনীতিতে মিশিয়ে নিন। ঐ গোপালেরা আমরা।জনগণ গোরুর পাল আর ভেড়ার পাল। ভোটের পর ভবিষ্যতের মোয়ার আশায় ভোটাররা ভোট দেয় আর শেষে মোয়া খায় কে? উত্তরটা সোজা। আপনি জানেন আর আমিও জানি। রাজনীতিতে এখন এই বটুবাবুদের ছড়াছড়ি। কী সুন্দর করে বলেন আইন আইনের মতই চলবে। দেখতে তো পাই যত আইন সাধারণ জনগণের ওপর তার প্রয়োগ। একজন নেতা শূন্য থেকে শুরু করে কিভাবে কোটিপতি হল সেই বিষয়ে বিচার বিশ্লেষণ হবে না। হাওয়া থেকে এই টাকা ধরবার কেরামতি তো সবাই জানতে চায়।

কেন্দ্রীয় কৃষি এবং পণ্য আইনটি কী? কেন এত উত্তাল দেশ? আমরা তো জানতে চাই তা। কথায় বলে আশায় মরে চাষা। আমরা সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রামে দেখলাম তা। চাষী জমি দিতে গিয়েও মরেছে আবার জমি ফেরত নিয়েও মরছে। অর্দ্ধাহার আর অনাহারে।আমরা রাজনীতিকে আর বিশ্বাস করি না আবার আমরা রাজনীতিকে খুব বিশ্বাস করি। কিছু বুঝলেন?সেই সোনার পাথর বাটির মতন। আমাদের দু'হাত ভরা অভাব। তাই কেউ হাতে এক টুকরো কিছু দিলে আমরা তার হয়ে গলা ফাটাই। ভোট দেই। এই অভাব আরও বেশি করে তৈরী করতেই যদি কৃষি আইনটি ঘুরপথে তৈরী হয়? বিশ্বাস কী করে করি বলুন!

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ এসেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত ধরে। আর ইন্ডিয়া যদি আবার একটি বা দু-চারটি কোম্পানি সর্বস্ব দেশ হয়? বন্দোবস্ত দেখে তাই তো মনে হয়। কৃষিপণ্যের বিরাট বাজারেও এইসব কোম্পানির নজর পড়েছে। সরকার ও সত্যি কৃষকদের ভাল চায়? না এইসব দেশীয় দৈত্যাকৃতি শিল্পপতিদের ? এগুলো ভাবতেই হবে আজ আমাদের। কৃষকদের আত্মহত্যা নিয়ে সরকার যতটা উদাসীন ঠিক ততটাই আগ্রহী নয়া কৃষি আইন বলবৎ করতে। আশঙ্কা এখানেই।আমাদের দু-এক পুরুষ আগেই আমরা সবাই কৃষক ছিলাম আর ভারতবর্ষ কৃষিপ্রধান দেশ, এ ভুললে চলবে না।

তাইতো বলি, অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ। নিজের বিবেক জাগ্রত করেই ভোট দিতে হবে। টিভির বচন এখন আর বিশ্বাস যোগ্য নয়। রাজনীতির তাবড় অসৎ লোকেদের দেখা যায় ওখানে।নেতারা এখন খুব পিরীতি দেবে। আনন্দ সিনেমার রাজেশ খান্নার সেই সংলাপ মনে আছে তো--বাবুমশাই, বেশি ভালবাসা ভাল নয়, বাবুমশাই!

আরও পড়ুন 

Post a Comment

2 Comments