জ্বলদর্চি

কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় / সন্দীপ কাঞ্জিলাল

"এসো নীলাঞ্জনা মেঘ/ পিঁড়ি পাতা আছে/ দু'দণ্ডের জন্যে বসো/ যদি হাতে থাকে সময়/ জানো প্রবাসিনী/ দু'দণ্ডের সুখের চেয়ে/ দুঃখ খুবই, বড় অবিনাশী।" 
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় 
Shakti Chattopadhyay 
(২৫/১১/১৯৩৩- ২৩/০৩/১৯৯৫) 

সন্দীপ কাঞ্জিলাল

শীতের গভীর রাত একজন অবিন্যস্ত মাতাল সঙ্গে দুই সাকরেদ। যে মদ দোকানে নিজের শাল বন্ধক রেখে মদ খেয়ে এসেছে। সেই রাত্রে এক বন্ধুর বাড়ী খুঁজে বেড়াচ্ছে। সব বাড়ির নকশা এক রকমের তাই বাড়ি চিনতে অসুবিধা হচ্ছে। অনেকের বাড়িতে ধাক্কা মারছে বন্ধুর খোঁজে। প্রত্যেকের বাড়ির লোকজন বিরক্ত হচ্ছেন। রাস্তার কুকুর তাদের ঘিরে ধরে, ক্ষোভ আর বিরক্তি উগরে দিচ্ছে। সেই চিৎকার পাড়ার লোকজন চোর ডাকাত ভেবে তাদের ঘিরে ধরেছে। কারোর হাতে বাঁশ লাঠি লোহার রড। প্রহরারত দু'জন কনস্টেবল আসতে, সেই তিনজনের নেতা সেই পুলিশদের বড়কর্তার নাম ধরে ধমকানি দিতেই, তাঁরা পায়ের ধুলো নিয়ে কেটে পড়লো। অবশেষে বন্ধুর বাড়ি খুঁজে পাওয়া গেল। বন্ধু বেরুতেই জিজ্ঞাসা করলো, "ভাই, কোন জায়গায় থাকো তোমরা? অ্যাঁ- এখানে এতগুলো ভুল ভুল বাড়ি তৈরি করেছে কোন জাতের শ্যালকবৃন্দ?" এই তিনজন মাতালের নেতা হলেন কবি 'শঙ্খ ঘোষ' এর ভাষায়, "এই শহরের রাখাল"। বিশ শতকে যিনি টপকিয়ে গেছে উনিশ শতকের অনেক যুগান্তকারী কবিকে। কাব্যভাষা বিবর্তনের সমুদ্র সাঁতরিয়ে যাঁর কবিতা হয়ে উঠেছিল নতুন শতাব্দীর উপযোগী এবং চিরকালের তিনি কিংবদন্তি কবি "শক্তি চট্টোপাধ্যায়।" যিনি লেখেন, "ভালোবাসা পেলে সব লন্ডভন্ড করে, চলে যাবো/ যেদিকে দু চোখ যায়- যেতে তার খুশী লাগে খুব।" 
বাংলা কবিতার পরশুরাম। কুঠারকে নিজের রক্ত খাইয়ে সজীব করে রাখতেন। যাতে কবিতার ক্ষত্রিয়দের ধ্বংস করা যায়। তাই তিনি লেখেন, "....ঘর -বার সর্বত্র /একজনকেই খুঁজে বেড়াচ্ছি যে-ক্ষত্রিয় হয়ে/আমাকে তার ঘোর শত্রু করে তুলেছে।"
"ফিরে এসো মালবিকা
ও-পলাশে তোমাকে সাজাবো;
রাঙা ধুলো দিয়ে আমি তোমাকে সাজাবো 
ভালোবাসা দিয়ে আমি তোমাকে সাজাবো।            (ফিরে এসো মালবিকা)
উক্ত কবিতাটি সম্ভবত কবির জীবৎকালে প্রকাশিত শেষ কবিতা। এই কবিতাটিতে কবি জীবনানন্দের পঙক্তির ঋণ স্বীকার করেননি বলে অভিযোগ উঠেছিল- এ প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকার পর্বে কবি লিখেছিলেন- "আমি নামটা বদলে নিয়েছি। আর বিশেষ কিছু বদলাইনি। দু'তিন লাইন আমি প্রয়োগ করেছি জীবনানন্দ থেকে.... আমি সচেতনভাবেই ওঁকে অনুসরণ করি, আবার এক সময় অবশ্য ওঁকে উতরে যাওয়ারও চেষ্টা করি।" বাস্তবিকই, পূর্বসূরির সম্মোহন যেভাবে উৎসারিত হয়- কুশ্রীতা থেকে সৌন্দর্যে- প্রেম থেকে অপ্রেমে- মাটি ও আকাশময় ইথার লগ্ন থাকে যার স্পন্দমানতা,- তার দ্বারা উত্তরসূরী এভাবেই ছেঁকে নেন শব্দলীন উৎসকে। তারপরই শুরু হয় অতিক্রমণের আন্তরিক উদ্যোগ। মেধা ও প্রজ্ঞানিহিত এই চেষ্টার সফলতা ও অসাফল্যের দীন ব্যর্থতা, যা বর্ণনাতীত কষ্টের। এ হিসাবে শক্তি চট্টোপাধ্যায় যদি তাঁর পূর্বসূরি জীবনানন্দের অমোঘ, অতিক্রমনীয় সর্বগ্রাসী মায়া থেকে নিয়ে থাকেন প্রেমজাত অনুষঙ্গ- তবে তা কেবল সংস্কৃতি চেতনা সংক্রমণের ইতিহাস মাত্র। যা নিন্দার্হ নয়ই, বরং পুরাতন অনুষঙ্গের ভিটে-মাটিতে নতুন বাসার নব নির্মাণ। 
দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায় বহড়ু গ্রামে ২৫/১১/১৯৩৩ তারিখে জন্মগ্রহণ থেকে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর অতিথি অধ্যাপক হয়ে ২৩/০৩/১৯৯৫ তারিখে মৃত্যুদিন পর্যন্ত এক অদ্ভুত টানাপোড়েনের মধ্যে অতিবাহিত করেছেন কবি, শুধু কবিতার জন্য এই জন্ম। বন্ধু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিমত 'এতগুলো বছর ধরে শক্তি ওর জীবনকেই মিশিয়ে দিয়েছে কবিতার মধ্যে।" 

"প্রতিটি মহল আমি ঘুরে দেখি- প্রতিটি পাথর/ নখ দিয়ে তুলে দেখি- সিঁড়ি বেয়ে উঠি আর নামি...' কবি শক্তি'র কবিতার এই চরণটি থেকেই বোঝা যায় জীবনের পালাবদলের মধ্যে অনন্ত আস্বাদের তৃষ্ণা। শৈশবের সাত বয়সে 'টুলো পণ্ডিত' বাবাকে হারিয়ে শিক্ষক ও হোমিও চিকিৎসক মাতামহর অভিভাবকত্ব ছাড়িয়ে পনেরো বছর বয়সে গ্রাম্য পরিবেশ থেকে উঠে আসেন কলকাতা শহরে মামার আশ্রয়ে। কিন্তু আজীবন বহড়ুর গ্রাম্যপ্রকৃতি দাদামশায়ের কাছে সংস্কৃত শিক্ষার অভিজ্ঞতা তাঁর 'চিরন্তন সন্ন্যাসরূপ' শক্তিকে আবিষ্ট করে রেখেছিল।" 

পড়ে চমকে উঠেছিলাম "আসলে কেউ বড় হয় না, বড়র মতো দেখায়।" সত্যিই তো গাছের কাছে গিয়ে দাঁড়ালে বোঝা যায়, "দেখবে কতো ছোটো"। আমি তখন সবেমাত্র কবিতা পড়া শুরু করেছি, এমন সব পঙক্তি মাথার ভিতর থেকে গিয়েছে। আজো এত বছর পর লেগে আছে অমলিন স্মৃতির পাতায়। তিনি সহজ করে বলতেন ভালোবাসার কথা। আলো-আশার কথা। সমুদ্র-ভ্রমণে গিয়ে মনে পড়েছে "সমুদ্রের কাছে এসে বসে আছো বিড়ালের মতো।" তাঁর সমূহ উচ্চারণ আমোঘ। অভিযোগ তিনি অনেক কবিতা লিখেছেন। না লিখলেও চলতো এত বা মাত্র চারটি বই লিখলেই হত। আমার সে সব মনে হয় না। আমি তাঁর কবিতা পড়ে আনন্দ পাই- আশ্রয় পাই। যে ভালোবাসা হারিয়ে গিয়েছে তা-ও খুঁজে পাই। তিনিই বলেছেন "মনে রেখো, ভালোবাসা বাঁচায় ও মারে।" 
১৯৪৮ এ শক্তি কলকাতায় এসে বাগবাজারে কাশিমবাজার পলিটেকনিক স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হলেন, প্রবেশ করলেন 'হাঁ করে' থাকা মহানগরের গর্ভে। শক্তি টের পেলেন এই কলকাতার 'ক্ষিদে সাংঘাতিক'। স্কুল জীবনের মাত্র পনেরো বছর বয়সেই শক্তি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন শোভাবাজার লোকাল কমিটিতে। 

মেধাবী ছাত্র হওয়ার সত্ত্বেও পঠন পাঠনের শৃঙ্খলা বাঁধতে পারেনি শক্তিকে। ম্যাট্রিক পাশ করার পরেই শক্তির পা চলে যায় সাহিত্যের আকর্ষণে। সিটি কলেজে কমার্স পড়া ছেড়ে আই.এ. তে ভর্তি হলেন প্রেসিডেন্সি কলেজে। ভালো রেজাল্ট করলেন। পঁচিশ টাকা বৃত্তি পেলেন। তারপর প্রথমে ইংরাজী ও পরে বাংলায় অনার্স নিয়ে পড়তে আসা প্রেসিডেন্সির ছাত্রটি অনিয়মিত ক্লাস করার জন্য বি.এ. পরীক্ষায় বসতে পারলেন না। পরে অবশ্য বহিরাগত ছাত্র হিসাবে স্নাতক হয়েছিলেন। বুদ্ধদেব বসু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্যে ভর্তি করে দিলেও শক্তি বিনাকারণে অচিরেই তা ছিঁড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন নিজস্ব জীবনযাপনের চোরা স্রোতে। 
ম্যাট্রিক পাশের পরে পরেই একদিকে যেমন স্ফুলিঙ্গ সমাদ্দার ছদ্মনামে শুরু করলেন গদ্য লিখতে, ঠিক পাশাপাশি শুরু তাঁর মদ্যপানের নিয়মিত অভ্যাস। ক্রমে 'গরল' হয়ে উঠলো তার কাছে 'প্রকৃত পানীয়'। এরই মধ্যে রাজনৈতিক বন্ধন শিথিল হতে শুরু করেছে। মেতে উঠেছেন আট বন্ধু মিলে পত্রিকা প্রকাশে। 'বহ্নিশিখা' নামে সেই পত্রিকায় ছদ্মনামে স্বনামে গদ্য পদ্য লেখা শুরু হয়েছে। বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত 'কবিতা' পত্রিকায় প্রকাশিত হয় শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম সনেট 'যম'।
আশির দশকের মাঝামাঝি। কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় ও বন্ধু সৌমিত্র মিত্র এবং আরো অনেকে সন্ধেবেলা এক সঙ্গে আড্ডা মারতেন। একদিন বিকেলে হঠাৎ উধাও শক্তি চট্টোপাধ্যায়। ফোন করে বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া গেলো না। তখন বন্ধু সৌমিত্র মিত্র খোঁজ করতে গিয়ে দেখতে পেলেন, প্রেস ক্লাবের দিকে 'মনোহর দাস' তড়াগের গম্বুজে বসে আছেন শক্তি এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। রাস্তায় শক্তির সঙ্গে হঠাৎ দেখা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ে'র। গাড়ি থেকে খেরোরখাতা বের করে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়  শক্তিকে কবিতা শোনাচ্ছে। নির্দিষ্ট শ্রোতা শক্তি মাঝে মাঝে কিছু বলছেন, আর তখনই ঠিক হলো শক্তি লিখবেন নতুন কাব্যনাট্য। পাঠ করবেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানের সব আয়োজন যখন তুঙ্গে, শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কাব্যনাট্য লেখা হয়নি। তিনি কলকাতায়ও নেই। এক সন্ধেয় থিয়েটার রোডে যদিও বন্ধু সৌমিত্র মিত্র দেখা পেলেন, শক্তি'র ভাব যেন কিছুই হয়নি। দেখামাত্র বললো 'কাব্যনাট্য তো? লিখে দেব'। পরদিন কর্নেল বিশ্বাস রোডের বাড়িতে 'কাব্যনাট্য' পাওয়া গেল- 'একা গেলো'। যার কয়েকটি লাইন- "গ্রহণ করিনি আগে ভুল হয়ে গেছে/ চুম্বন করিনি আগে ভুল হয়ে গেছে/ তেমন বাসিনি ভালো ভুল হয়ে গেছে।" 
পঞ্চাশের দশকে প্রেসিডেন্সি কলেজের একঝাঁক তরুণ প্রতিভাবান ছাত্ররা মিলে তৈরি করলেন 'কৃত্তিবাস' পত্রিকাগোষ্ঠী। সেখানে শক্তি সুনীল শরৎ দীপক নিত্যপ্রিয় শঙ্খ আলোকরঞ্জন সমরেন্দ্ররা ফুটে উঠলেন তাদের সৃজনশীলতা নিয়ে কৃত্তিবাসী আকাশে। সমীর রায়চৌধুরীর সঙ্গে আলাপের পর সেই সময় থেকেই শুরু হয় শক্তির চাইবাসা পর্ব। প্রকৃতির প্রেমে হারিয়ে যেতে চাইলেন শক্তি। অজস্র কবিতা জন্ম নিতে শুরু করলো তাঁর কলমে। চাইবাসা হয়ে উঠলো শক্তির উন্মেষভূমি। একের পর এক চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন আর ছাড়ছেন। শিল্পীবন্ধু পৃথ্বীশের সঙ্গে ইংরাজি শিক্ষক হিসাবে খুললেন টিউটোরিয়াল হোম। কিন্তু কিছুতেই শহর তাঁকে বাঁধতে পারে না। ছিনিয়ে নিয়ে যায় পাহাড় জঙ্গলের আলো-আঁধারি। 

সাহিত্যে গদ্যলেখক হিসেবেই শক্তির প্রথম উপার্জন। আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয় পাতায় "বিশাখাপত্তনমের রাওসাহেব" গল্পের জন্য পান পনের টাকা। তাঁর কিছুদিন পরে দেশ পত্রিকায় তাঁর 'পারিপার্শ্বিক' কবিতাটি ছাপা হলে পেলেন দশ টাকা। ১৯৬১ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'হে প্রেম হে নৈঃশব্দ্য'।
খালাসিটোলা, চাঁইবাসার থেকেও তিনি বেশি আক্রান্ত ছিলেন মধ্যরাতের কলকাতার শাসনে। তাই মাঝরাতে গোলদীঘির স্তব্ধ সুইমিং পুলে নেহাৎ পলকা রেলিং টপকে জলের প্রায় বুকে বসে 'কোথায় যেতে চাই বা আর কোথায় যেতে চাই না/ এ নিয়ে মরি অসুখে সুখে/ তোমায় কাছে পাই না।" আওড়াতে গিয়ে পুলিশের তাড়া খাওয়া। 
মনে হয় বেঁচে থাকার সঙ্গে যে লেখা যুক্ত নয়, তা ঠিক লেখা নয়। এবং তা পড়তেও ভালো লাগে না।
"মানুষ বড় কাঁদছে" বুঝতে পারি কেবল আমি নই, কেবল কবি নন, আরো অনেক মানুষ বড়ো কাঁদছে। তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। তাদের চোখের জল কে মোছাবে? আবার মানুষ-ই ফাঁদ পাতছে- সন্দেহ, ঈর্ষা, দ্বেষ, লোভ। আমরা ভালো নেই। কীভাবে ভালো থাকতে পারি, তা মরমী কবিই আমাদের দেখিয়েছেন। কবি শক্তির কবিতায় মানসিক আশ্রয় পাই, যেমন আশ্রয় পাই রবীন্দ্রনাথের গানের ভিতর।
আসলে শক্তি চট্টোপাধ্যায় নামের মানুষটিই ছিলেন এক দুর্জেয় রহস্যের আধার। এত বৈপরীত্যে ছিল তাঁর চরিত্রে ভাবা যায় না। দুর্মর রোমান্টিকতা দিয়ে যার শুরু শেষ করেছেন বাস্তবতা দিয়ে। একদিকে যেমন ছিলেন চরম বেহিসেবী বিপরীতে হিসেবীও যে ছিলেন না জোর করে তাও কি বলা যাবে। এরকম 'সংসারে একদিকে সন্ন্যাসী লোকটা, অন্যদিকে গৃহী মানে গেরস্ত "সুখে আছি'র পাশাপাশি যে 'সে বড়ো সুখের সময় নয়, সে বড় আনন্দের সময় নয়" কখনো চরম শক্তি সাধক আবার কখনো পরম বৈষ্ণব। এভাবে সম্পূর্ণ বিপরীতার্থক শব্দ বা বিশ্বাসের এমন জলজ্যান্ত উদাহরণ আর একজন ভূমণ্ডলে খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। এমনকি কাব্যগ্রন্থের নামকরণে ও সেই একই দ্বিধা 'ধর্মেও আছো জিরাফেও আছো।'

তিনি জীবনে অনেক পুরষ্কার পেয়েছেন। তার মধ্যে আনন্দ পুরষ্কার-১৯৭৫ সালে। সাহিত্য অকাদেমি পান "যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো" কাব্যগ্রন্থের জন্য -১৯৮৩ সালে।এই "যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো" কাব্যগ্রন্থটি ইংরেজি এবং মৈথিলী ভাষায় অনুবাদ হয়েছিল। ১৯৭৪ সালে পূর্ণেন্দু পত্রী'র পরিচালনায়  ছেঁড়া তমসুক" ছবিতে শক্তি চট্টোপাধ্যায় অভিনয় করেছিলেন। তাঁর স্ত্রী-এর নাম মীনাক্ষি এবং সন্তান তিতি চট্টোপাধ্যায়। 

তাঁর কাব্যগ্রন্থ- "হে প্রেম হে নৈঃশব্দ্য"-১৯৬১, "ধর্মে আছো জিরাফেও আছো-১৯৬৫,"অনন্ত নক্ষত্রবীথি তুমি, অন্ধকারে"-১৯৬৬ ইত্যাদি। তিনি মোট ৪২টি কাব্যগ্রন্থ,১০টি উপন্যাস, গল্প-১টি,অনুবাদ গ্রন্থ-১২টি।
উনি পাঠককে ভালোবেসে কবিতায় টেনে এনেছিলেন। চেয়েছিলেন যন্ত্রণা পীড়িত, নিরাশ্রয় মানুষকে আশ্রয় দিতে। তাই তিনি লেখেন "মনে হয়,তোমরা বাস্তু পাবে।" আবার শক্তি চট্টোপাধ্যায় যখন লেখেন "ও চিরপ্রণম্য অগ্নি আমাকে পোড়াও,তখন ঐ চিরপ্রণম্য অগ্নিই যেন আসলে কবিতা।যাতে নিজে ছারখার হয়েছেন পাঠককে ছারখার করেছেন। 

অদ্ভুত একটা কবিতা। যাকে বলে অসচরাচর।কবিতার নাম 'অবাস্তব মার্চ মাস'। এ কবিতার কথা এইজন্য বললাম,"যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো" বলেও এই মার্চেই তিনি আমাদের কাঁদিয়ে চলে গিয়েছিলেন।আসলে 'কেউ কথা রাখেনি'।

২৩/০৩/১৯৯৫-এ তিনি ফিরে এলেন শান্তিনিকেতন থেকে। ট্রেনের কামরায় শোয়ানো। কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় কথা বলছেন না। বলবেন না ও আর।ততক্ষণে চাঁদেও চোখের জলে জোয়ার লেগেছে। সেই নীরব নিভে যাওয়া,অনেক দূর দেশে পাড়ি দেওয়া কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় যেন বলছেন, "মানুষ যেমন কাঁদায়, তেমন মানুষ আদর করে.…..."।

আরও পড়ুন 

Post a Comment

1 Comments

  1. শক্তি স্মরণে। পড়ে মন মুগ্ধ আর আদ্র হল। শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইলো। প্রিয় কবির প্রতি রইল শ্রদ্ধার্ঘ।

    ReplyDelete