জ্বলদর্চি

তিনটি কবিতা/ রমণীকান্ত পাত্র

তিনটি কবিতা 

রমণীকান্ত পাত্র 


এই পাগলি 

মেয়েটি ঘুরে বেড়ায়
সীমাহীন নীল আকাশে
রোদ - ঝড় জলে
অর্ধ উলঙ্গ দেহে
ওই চৌরঙ্গী মোড়ে।
মোড় যেন ওর -
স্বর্গ,মর্ত ও পাতাল।

জাগ্রত কঙ্কালের মাথা থেকে
ঝুলে পড়া ঝুরি
ঢেকে রাখে বুকের উথল সম্ভ্রম।
ক্ষীণ কটি থেকে দোল খায়
রজ মাখা জীর্ণ বস্ত্র খন্ড।
ওটাই ওর-
স্থাবর ও জঙ্গম।

মেয়েটি কী খায় ?
কে জানে?
তবে,কচিদার চটি গিলে খাওয়া ড্রেনে
ঝরে পড়া হলুদ দানা
খুঁটে খাওয়া -
ওর খুব প্রিয়।

মেয়েটি কী বলে?
কে জানে?
গরম জলে চাল ফোটা শব্দ ওঠে
অধর আর ওষ্ঠে।
অদৃশ্য কারো সাথে বসন্তের কথা রেশে
খিল খিল করে শুধু হাসে।
পরক্ষণে,পাহাড় ভাঙা হিমগলা স্রোতে
ভেসে যায় -
চুড়ি ভাঙা প্রেম।

মেয়েটি রামের না রহিমের -
কে জানে?
নাম তার রাধিকা না লায়লা
নেই তার মনে।
শুধু,মারিয়ানা চোখ দুটো
সাড়া দেয় -
' এই পাগলি'- ডাকে।


পোস্টাপিস মোড়, পোস্টা পিস মোড়

'পোস্টাপিস মোড়, পোস্টা পিস মোড় - - - '
প্লাটফর্ম নামা সিঁড়ি শেষ ধাপে
রিকশার চাকা ছুঁয়ে
কোলাহল ছাপিয়ে, গলা ফাটে
ট্রেন থামার শেষ  বাঁশি সাথে।

সিঁড়ি বেয়ে নামে যত
ব্যাগ, চশমা আর জুতো।
সতীন টোটো মোড়ের আশে পাশে।
শাখী যত ছুটে চলে পিছে।
শুনসান স্ট্যান্ডে, অসহায়ের প্রতীক্ষায়
অসহায় গলা ফাটে
'পোস্টাপিস মোড়, পোস্টা পিস মোড় - - -'

মানুষের উপর আরাম চলে
উচু নিচু পা করে
জীবনের চাকা ঘুরে ফিরে আসে।
শরীরে নোনা ঝরে
শুষ্ক শীতের রাতে।
রোদ, ঝড়, বৃষ্টিতে
হাক দেয় যন্ত্রমানব
'পোস্টাপিস মোড়, পোস্টা পিস মোড়- - -'

রাত দুপুরে শেষ বাজারে
ঘামের মূল্য গামছা ভরে।
নিয়ে গেলে চলে পেট
জ্বলে চুলোর হাড়ি
রেশন চালের সাথে।

হেমন্তের শিশির পড়ে
চাঁদ উঁকি দেয় ওভার ব্রিজের শেষে।
মারি আজ নিয়ে গেছে তাকে অজানার দেশে।
হয়ত, ট্রেন থামবে শেষ বাঁশি দিয়ে।
আর কি শোনা যাবে?
'পোস্টাপিস মোড়, পোস্টা পিস মোড় - - -'।


দেখেছি যে তাকে

দেখেছি যে তাকে -.
দিশাহীন অন্ধকার সুড়ঙ্গের মাঝে
ফুরিয়ে যাওয়া প্রাণবায়ু শেষে।
অবশেষে, শেষ আলো রেখা ধরে
ফিরে এলাম আবার তোমাদের সাথে।

দেখেছি যে তাকে -
লে কিংবা কার্গিল সীমান্তে
বুলেটের মতো দুরন্ত গতিতে।
লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়ে কান ঘেঁষে যেতে
ফিরে এলাম আবার তোমাদের সাথে।

দেখেছি যে তাকে -
আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবন্ত জাহাজে
সদ্য ওঠা হ্যারিকেনের মাঝে।
লাইফ - বোটে ভেসে ভেসে থামি শেষে চেনা চরে
ফিরে এলাম আবার তোমাদের সাথে।

দেখেছি যে তাকে -
নীল আলো ছায়া পথে
ঘ্রানহীন, স্বাদহীন নিস্তেজ ইন্দ্রিয়ের ইঙ্গিতে।
হিমেল শীতের শেষে নব বসন্তে
ফিরে এলাম আবার তোমাদের সাথে।

দেখেছি যে তাকে -
অচেনা দানব বেশে অবচেতন মনের দেহমন্দিরে
জীবনের বাতিগুলো ফুঁ দিতে।
সহসা জ্বলে ওঠা বাতির সবুজ আলোতে
ফিরে এলাম আবার তোমাদের সাথে।

জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇


আরও পড়ুন 

Post a Comment

1 Comments