জ্বলদর্চি

উড়ন্ত সব জোকার আর টেলিভিশন সার্কাস/গৌতম বাড়ই

উড়ন্ত সব জোকার আর টেলিভিশন সার্কাস

গৌতম বাড়ই


দিনুদা, আমার বাজারের সেই অতি আপন দাদা।সেদিন দেখি খ্যা-খ্যা করে পাগলের মতন হাসছেন।মুখোশ ছেড়ে মাটিতে গড়াগড়ি খাবেন বোধ হচ্ছে।আমায় দেখে বললেন--ভাইয়া টিভিতে দেখবার মতন আর কিছু নেই। সব জোকারগুলো একজায়গায় এমনকি টিভির সঞ্চালক নিজেও একটা জোকার।আমি নাম দিয়েছি চ্যানেলের নাম তারপর টেলিভিশন সার্কাস। বুঝলে না তো ভাইয়া, এইধরো গিয়ে অলিম্পিক সার্কাস, মাঝখানে এনে দাও টেলিভিশন। অলিম্পিক টেলিভিশন সার্কাস। অলিম্পিক যদি টিভি চ্যানেলের নাম হয়। লোকের কি কোন দুঃখ-কষ্ট নেইরে! বলি বাপু তোরা তো এই পার্টিবাজী করে সবকটাই বেশ মাল্লুদার হয়ে গেলি? তা তোরা কোথায় এলি আর কোথায় গেলি এই শুনেশুনে আমাদের কী হবে? মানে কোন দলে অথবা কোন্দলেও? কানমাথা সব ঝালাপালা হয়ে গেল আর মানুষের দুঃখ সেই তিমিরে রয়ে গেল। আমরা টেরটি পেলাম না রাজনীতি করতে এসে কী সুন্দর ভাবে এমএলএ এবং এমপি হতে পারলেই পাঁচ বছরের জন্য কেল্লাফতে।একদম সরকারি চাকরি। পেনশন পাকাপাকি। আর সমস্ত সরকারি কর্মচারীদের পেনশন তুলে নাও। ষাটের পরে আরও বেশি করে ক্ষমতার চুঙ্গি খাও আর অন্যান্যদের পঞ্চাশে অক্ষম করে চাকরি থেকে বসিয়ে দাও। কেন না ওনারা দেশসেবা থুড়ি জনগণের সেবা করেছেন, আর তোমরা? কচু এবং ঘোড়ার ডিম।খবরের কাগজে পাতা জুড়ে থাকবেন সরকারি পয়সার অপচয় করে। আর অগুনতি মানুষ তাদের রুটি-রুজি-রোজগার হারিয়ে বসে আছেন। এইসব দেখতে দেখতে আমরা কিভাবে কখন যেন খুব স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিই। আমি মানতে পারি না তাই ঐ সব উড়ন্ত জোকারদের দেখে হাসি, মনে পড়লেই।
দিনুদা কিন্তু কিছুই ভুল বলেননি। দিনুদা এই আকালের বাজারেও আমার কাছে এক মনছুঁয়ে থাকা দর্শন। দিনুদার আব্দার এককাপ লাল চা অর্থাৎ লিকার চা এবং একটা বিড়ি।

একসময় বলা হতো আয়ারাম আর গয়ারামের খেলা।এখন তো এই বাংলাতেও সেই খেলের বেজায় চাষ।উর্বর সব বীজ। আচ্ছা এই ডুবতে ডুবতে নামতে নামতে আবার কবে এই তৃতীয় শ্রেণীর রাজনীতি থেকে মুক্ত হব আমরা? এরকম প্রশ্ন কী আপনার মনের ভেতরেও আসে? আসলে এই চাষের প্রতি উৎসাহ দেখিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রথিতযশা টিভি মিডিয়াগুলি, সংবাদপত্রগুলি। একসময় AIR বা অল ইন্ডিয়া রেডিও-কে অল ইন্দিরা রেডিও বলে ডাকা হতো, কারণ সেইসময় ডাকসাইটে প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীকে রেডিও সর্বস্ব যুগে এই প্রচার মাধ্যম নাকি তুলে ধরতেন। বিরোধীদের প্রচার ছিল তাই। তবে খবরের কাগজগুলি কিন্তু বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করতেন না বলে শুনেছি, গণতন্ত্রের পক্ষে।আজকাল তো এক-একটা উড়ন্ত জোকার টিভি দর্শনে দেখা যায়। খানিকক্ষণ টিভিটাকে মিউট মুডে রেখে দেখুন, আমাদের পূর্ব পুরুষদের খুব বেশি করে মনে পড়বে। দাঁত মুখের খিঁচুনি দেখে।

আইন-কানুন সব গুলিয়ে যায় জনপ্রতিনিধিদের বেয়াদপ আচরণ দেখে। আমরাও কেমন চুপচুপ টুপটুপ ভোট দিয়ে আসি ওদের-কে। মানুষ দেখে দেখে বা কোন কিছু না জেনেই দিয়ে আসি। জানিনা, আমরা জানতেই পারি না।

তাইতো বলি ঘাট হয়েছে এবার কবে সেই জাত-পাত-ধর্মের ঊর্ধ্বে আমাদের প্রকৃত ভোটটি দেব? আমদের জাগরিত করবে, যদি সত্যিকারের দেশের উন্নতি চায় ঐ সংবাদপত্র গোষ্ঠীগুলি, ঐ ই-মিডিয়াগুলি। সেই মানুষগুলো-কে বেশি দেখান যাদের মূল্যবান মতামত দেশের উন্নতিতে লাগবে। তাদের দেখাবেন না, যারা দূর্নীতিপরায়ণ জনপ্রতিনিধি। কারাবাস করেছেন আর সরাসরি অভিযুক্ত। সরকারের পৃষ্ঠপোষক হলে কলুদ বলদ হয়েই চলতে হয়। তাতে আখেরে এই যে আরও হাজারটা ভালকথা বলি তা মূল্যহীন হয়ে পড়ে।

আমাদের প্রজন্ম মানেই এই পৃথিবীর শেষ হয়।আগামী প্রজন্মের কথা ভেবে একটু প্রকৃত সৎ হইনা আমরা সবাই। আর এই সৎ লোকের সংখ্যা বাড়লেই একদিন যে সর্বনাশের বীজগুলো সচেতন ভাবেই বুনেছেন দাদা-দিদিরা অচিরেই তা বিনষ্ট হবে।

উড়ন্ত সব জোকার আর টিভির সার্কাস যেন তরুণ অপেরার সেই হিট যাত্রাপালার মতন দীর্ঘস্থায়ী না হয়! আমরা আশাবাদী, এই আশা নিয়েই বাঁচি।

আরও পড়ুন 

Post a Comment

1 Comments

  1. মনের কথা, প্রাণের কথা, অতি বাস্ত।। দুরন্ত লাগলো।। সত্যি।। এর জন্য কিন্তু আমার জনগণরাই দায়ী।। সব দেখে শুনেও না বোঝার ভাণ করি বা নিজের দায়বদ্ধতাএড়িয়ে যাই।। আর মিডিয়া তো এখন Too many cooks spoil the broth!!!

    ReplyDelete