জ্বলদর্চি

তিনটি কবিতা / রমণীকান্ত পাত্র

তিনটি কবিতা / রমণীকান্ত পাত্র 

মুখে ভাত 

আজ খোকন সোনার মুখে ভাত।
পরিবারের রঘুনাথ শোভা পায়
কাঁকড়াজিতের মহাপ্রভুর পাশে।
হরিনাম সংকীর্তনে মৃদঙ্গ,করতাল সমমেলে
হরেকৃষ্ণ,হরেরাম - - - সুর ভাসে
গ্রাম থেকে গ্রামে।

আজ খোকন সোনার মুখে ভাত।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার হলো অবসান।
তুক তাক,জড়ি বুটি, ঢিল বাঁধা,তাবিজ বাঁধা
জল পড়া,জল ঢালা - - -
গন্ডা দুই ঠাকুরের মানত।
 শেষে খোকন এল, গরবিনী নন্দিনীর  কোল আলো করে।

আজ খোকন সোনার মুখে ভাত।
খোকন ,শিবরাত্রির সলতে।
সবার স্নেহের পরশ মাখে
মিষ্টি হাঁসির চাঁদ।
দূধ ছেড়ে আজ খোকন খাবে
মামার হাতে ভাত।

পরিণয়ের পরে পরে -
ভালোবাসার জোয়ারে
ভেসে ছিল দুটি প্রাণ -
মিলনের অমল আনন্দে ।
অচিরে ,নন্দিনীর শরীরের শিহরণ জাগে 
নতুন প্রাণের স্পন্দন।

আনন্দের সুর,তাল,লয় কাটে
অনাকাঙ্ক্ষিত গোলাপের কুঁড়িতে।
উত্তাল তরঙ্গের চাপে,
 ঘাত প্রতিঘাতে
 কুঁড়ির ছেড়া ছেড়া পাঁপড়ি
ঠাঁই পেল আস্তাকুড়ে
নির্মম অমানবিকতার সাথে।

আজ খোকন সোনার মুখে ভাত।
শুভ জন্মদিনে ,নন্দিনীর মনে উঁকি দেয়
বিবর্ণ পাতা ঝরা সেই দিন।
খোকনের বাবা,ঠাম্মা - -পরিবারের একে একে
ভুলে গেছে কালো দিন,
কাল স্রোতে কালের নিয়মে।
শুধু মনে আছে নন্দিনীর
খোকনের মা....
সব মায়েরই মতো,ভুলেনি,ভুলেনি - - -
সে যে মা,সে যে মা।

আজ খোকন সোনার মুখে ভাত।
মায়ের জীবনের মধু জ্যোৎস্নায়,তুঙ্গভদ্রা নদী বেয়ে
বয়ে যায় হিমগলা জল।
হয়ত,ফেলা আসা কোন রঙিন দিনে
খুকি ও তো ভাত খেত,ভাত খেত - - -
খোকন সোনার মতো।


রূপহারা পৌষ 

রূপহারা পৌষ।অর্ণবের মতো
জোয়ার ভাটা,তারও।

শহরে মুখে গাঁ। মজা নয়নজুলি ওপারে
হাঁটু জলে কৃষক,কৃষাণী আর কাস্তে - - - ।

পাড় ধসা পুকুর।জল - খেজুরের নাচ আকাল।
 'খেজুর রস চাই ' - ধোঁয়াশা চেরা হাক, সেকাল।

যত স্মৃতিসৌধ, মসজিদ,মন্দির - - 
সাদা চাদরে ঢাকে ক্যান্সার।মারি ও দোসর।

স্কুল, কলেজ বন্ধ। অনলাইনে
পড়ার সাথে কেউ নীল বা বসেন্তে।

শিয়রে হিম। পরিযায়ীর মেলা বিল,ঝিল, ডালে।
পথ খোঁজা পরিযায়ী মরে পথে পথে।

মাঠে মাঠে সার্কাস,মেলা,খেলা - - -
 হারিয়েছি অনেককে।আর না,আর না।

দূষণ আর কোভিডের জোড়া ফলা।সবাই ক্লান্ত।
শরৎ আর শীতের ঠেলায় অসহায় হেমন্ত।

শীত ঘুমে শীতল রক্ত।শ্রেষ্ট জীব উঠুক জেগে
অমার বুক চিরে ভোরের স্নিগ্ধ আলোতে।


দীর্ঘ পথ হেঁটে এসেছি 

দীর্ঘ পথ হেঁটে এসেছি -
ক্লান্ত পায়ে,ঘর্মাক্ত কায়ে
মেঠো পথ ধরে রাজপথে
গ্রাম থেকে শহরে
সাধন ক্ষেত্র ফেলে রাজনের দরবারে
বারোমাস্যা শোনাবো বলে।

দীর্ঘ পথ হেঁটে এসেছি -
দিনের প্রখর তাপে,রাতের কুয়াশা চিরে
অর্ধভুক্ত,অনাহারে
খোলা আকাশের নিচে
বসে আছি তোমার দুয়ারে
জীবন-জীবিকার কথা শোনাবো বলে।

দীর্ঘ পথ হেঁটে এসেছি -
আমরা কৃষক,সভ্যতার মূল
চাষা - ভুষা মানুষের দল।
ঘাম ঝরিয়ে ফলাই সোনার ফসল।
অসীম প্রতীক্ষা তোমার দুয়ারে
জীবন - গীতি শোনাবো বলে।

দীর্ঘ পথ হেঁটে এসেছি -
জীবন - যন্ত্রণার কথা ভেসে ওঠে মনে।
জর্জরিত ঋণভারে,অনাহারে - - -
অবশেষে , নীরব আত্মহত্যা।
বসে আছি তোমার দুয়ারে
দিনলিপি শোনাবো বলে।

দীর্ঘ পথ হেঁটে এসেছি -
ইতিকথা শোনাবো বলে।
সমস্যা,প্রতিকার, দাবী ও অধিকার- - -।
শত শত অবস্থান, মুখরিত দুয়ার
জগতের সংগ্রামী হাতিয়ার।
ইতিহাস ও একথা বলে।

জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇


আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments