জ্বলদর্চি

ভোমরার প্রেম /অচিন্ত মারিক



 ভোমরার প্রেম
  অচিন্ত মারিক

ছেলেটি জুয়া খেলে, কিম্তু স্বপ্ন দেখে না। তবে সে শুনতে পায়, কেউ যেন একজন তাকে ভোমরা বলে ডাকে। কে ডাকে কে জানে। মেয়েলি গলা বলেই তার মনে হয়। কিম্তু শুধু ভোমরা বলেই ডাকে। আর কোনো ডাক পাড়ে না।

   জুয়াচ্চোরদের আড্ডায় এ প্রসঙ্গ সে ভয়ে তোলেনি, কারণ ওদের সব কিছুর শেষ কথা হোলো শরীর। মুখের গড়ন ছেড়ে তারা বুকের গড়নে বেশি কোলাহল করে। তাও ভালো, তাকে ভোমরা বলে যে ডাকে তার তো শরীরের চিহ্ন নেই। মুখ বুক কোমর নাভি উরুসন্ধি – এ সব কি প্রেমের উপকরণ ? 

   হতেই পারে না – যার শরীরের কোনো অংশই সে দেখেনি, তার শরীরের আগডুম বাগডুম গোলাকার গড়নের কথা ভাবলে কেন তার বুক কাঁপে, কেন কপালে ঘাম জমে ?

   তবু অনেকখানি সাহস কুড়িয়ে বাড়িয়ে সে জুযাচ্চোরদের কাছে জানতে চাইল তারা স্বপ্ন দেখে কী না ! আর দেখলে কী দেখে, কাকে দেখে ? এক-একজন কত কী বলল, কিম্তু প্রত্যেকেই নারী-শরীরের একটি কেন্দ্রবিন্দুতে যত্নবান হয়ে হুল্লোড় করার কথা নির্দ্বিধায় বলে ফেলল।  এবং এটাই নাকি সাচ্চা প্রেম, বাকি সব ঝুটা প্রেম। বিকলাঙ্গদের প্রেম। 
এই অপছন্দ কথাগুলি ভাবতে ভাবতে একদিন সে সত্যি স্বপ্ন দেখল। স্বপ্নেও তার নারীকে দেখল ভয়ে ভয়ে, শরীর থেকে শরীরহীনতায়, অপার্থিব ভালোবাসায়, অফুরন্ত প্রেমে। 

   পরের দিন থেকে ভোমরা জুয়া খেলা ছেড়ে দিয়েছিল।

Post a Comment

0 Comments