জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা-২০

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -২০
সম্পাদকীয়
ছোট্টো বন্ধুরা, তোমরা কি জানো হুলো বেড়াল শুধু টুনটুনির ছানাকেই নয় ঘুঘুর ছানাদেরও খেতে খুব ভালোবাসে। ভাবতে পারছ, কি সাহস বেড়েছে হুলোটার? আমি তো ভাবতেও পারতাম না যদি না তোমাদের বন্ধু অস্মিতা গল্পটা বলত। আরে কত খাবার আছে খা তা নয় পাখির ছানাদের খেতে হবে! এই তো আমরা সবাই দই খেতে কত্তো ভালোবাসি। আর দই থেকে তৈরি লস্যি তো ইয়াম্মি লাগে তাই না? তার থেকেও বেশি ভালো লাগে আইসক্রিম। কিন্তু না করোনাকাল এখনো কাটে নি তাই আইস্ক্রিম এখনই নয়৷ তারচেয়ে লেবুর সরবত খেতে পারো। খাবার কথায় মনে পরে গেল, এবারের সংখ্যায় তোমাদের জন্য প্লেট সাজিয়েছেন সুস্মিতা সাহা। আর দই নিয়ে ছড়া লিখেছেন মুক্তি দাশ। ছোটোরাও কম যায় না। তোমাদের বন্ধু প্রবাহনীল লিখেছে গয়না-বড়ি নিয়ে ছড়া। আমন্ত্রিত ছড়াকার শুভেন্দু মজুমদার, মৌসুমী রায় ও মুক্তি দাশকে ধন্যবাদ। আর শিশু সাহিত্যিক দিলীপ কুমার মিস্ত্রী তোমাদের জন্য লিখেছেন একটি গল্প। সাতটি ভাষায় অনুদিত 'ছোট্ট একটি ইস্কুল' নামে বইএর লেখক দিলীপ কুমার মিস্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর প্রতিবারের মতো এবারও অপূর্ব প্রচ্ছদ পাঠিয়ে একটি ফুলের মতো শিশুর ছবি উপহার দিয়েছেন বলে নীলাব্জ ঘোষকে আমাদের কৃতজ্ঞতা জানাই। আর ছোটোরা তোমরা যারা কলম আর তুলির ছোঁয়ায় আমাদের আশা বাড়িয়ে চলেছ তাদের আমার বাসন্তী দিনের আনন্দ পাঠালাম। - মৌসুমী ঘোষ

ছোট্ট বন্ধুরা- এসো প্লেট সাজাই 
সুস্মিতা সাহা 

আজ কলম ধরলাম আমার প্রিয় ছোট্ট বন্ধুদের জন্য। এখন তো অনলাইনে ক্লাস চলছে সকলের, তাই তো? আর ক্লাসের ফাঁকে মনে হচ্ছে কি খাই কি খাই। ও হো, তোমরা তো এখন ঢকঢক কোল্ড ড্রিঙ্কসে চুমুক দাও। কিন্তু ক্লাসের ফাঁকে সামনে দেখলে মা বা বাড়ির বড়রা কেউ কাঁচের গ্লাসে এক গ্লাস দইয়ের সরবত বানিয়েছেন তোমার জন্যে - ওপরে বেশ খানিকটা বরফ কুচি। একটু একটু করে সিপ করছো আর বরফ গলে জল তোমার মুখের ভিতরে। সেই সঙ্গে দইয়ের মিষ্টতা ও হালকা বাতাস। কি, কেমন ক্লাসের ক্লান্তি উধাও তো?
   এসো এবার কোকের একটি রেসিপি শেখাই তোমাদের। বার্নার ছাড়াই পারবে নিজেরা করতে। প্রথমে মুসাম্বির রস করে নেবে কাঁচের অথবা ভালো ফাইবারের গ্লাসে। এবার তাতে গুড়ো করা চিনি মেশাও। ওপর থেকে অল্প কোক দিয়ে একটু গন্ধরাজ লেবু চিপে দাও। আর বিট লবণ পরিমাণমতো। ব্যাস জমে যাবে সরবত। ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল। 
এবার একটু স্যানক্সের গল্প হয়ে যাক। এখন তো বাইরের খাওয়া চলবে না। তাই রোজ রোজ একঘেয়ে পাউরুটি মাখন জ্যাম জেলি কেক মোমো পিৎজা বার্গার চলবে না আর। বেশ তো আজ হোক্ ঘরোয়া আলুর টিকিয়া। এটাতে অবশ্য মায়েদের হাত লাগাতে হবে।
   আলু সিদ্ধ করে ভালো করে মেখে নিতে হবে। এবার তার মধ্যে অল্প কর্ণফ্লাওয়ার ও সামান্য ময়দা দিয়ে এমন ভাবে মাখতে হবে যাতে হাতের চাপে ছোট ছোট টিকিয়ার আকৃতি দেওয়া যায়। ধনেপাতা কুচি – লঙ্কা কুচি – পেঁয়াজ কুচি ও লবণ মিশিয়ে নিন। চাইলে কারিপাতা ও গোলমরিচ দিতে পারেন। এবার টিকিয়ার আকারে গড়ে তাওয়ায় অল্প সাদা তেল মাখিয়ে সাবধানে বসিয়ে দিন। একপিঠ বাদামি হয়ে এলে উল্টে দিন। দু’ দিক হয়ে এলে নামিয়ে প্লেটে কাঁচা পেঁয়াজ ও সস/ লেবু সহযোগে সাজিয়ে দিতে পারেন। ছোট বাচ্চাদের জন্য ঐ আলুর পুরের বাটি তৈরি করে কুরোনো চিজ পুরে আবার হাতের চাপে কাবাবের আকারে গড়ে তাওয়ায় সেঁকে নিতে হবে।চিজ ভেতরে ভেতরে মেল্ট করে যাবে। শুধু বাচ্চা কেন – বড়োরাও খুশি হয়ে খাবে।
   সেদিন তোমাদের এক খুদে বন্ধুর মায়ের সাথে ফোনে কথা হচ্ছিল, বললেন, মেয়ে একদম মাছ খেতে চাইছো না। আমি বললাম, বেশ তো। একটু মাছের ঝুরি বানানো যাক্। বড় মাছের বিশেষ করে ভেটকি , কাতলা বা রুই মাছ হালকা ভেজে কাঁটা ছাড়িয়ে নিন মায়েরা। এবার পেঁয়াজ কুচি ভাজা গোল্ডেন ব্রাউন রঙ ধরলে তাতে ভাজা মশলার গুড়ো ও কাঁটা ছাড়ানো মাছ দিয়ে বেশ ভালো করে নেড়েচেড়ে নিতে হবে। এলাচের গুড়ো মিশিয়ে নিন অল্প। একটু চিনি পড়বে। তেল ছাড়তে শুরু করলে বুঝতে হবে মাছের ঝুরি তৈরি। কি মাছ খেয়ে মুখ ব্যাজার করে বসে আছে মেয়ে তবে এবারে একটু মিষ্টি মুখ হয়ে যাক্। ছানা ভালো করে মেখে কড়াইতে নাড়তে হবে। চিনি ও এলাচ গুড়ো মিশিয়ে একটি থালায় চেপে চেপে ছড়িয়ে দিতে হবে। উপর থেকে কাজুবাদাম কুচি ও পেস্তা কুচি ছড়িয়ে ঠান্ডা হলে কেটে কেটে পরিবেশন করুন আপনার খুদে সদস্যদের। সন্দেশ হোলো কিন্তু আপনার হাতের মায়ার স্পর্শে।

  কি রেসিপি গুলো কেমন লাগলো? খাবে তো এবার পেট পুরে মন ভরে? 

   এর পরের বার সুযোগ পেলে আরো অনেক অনেক রান্না নিয়ে আসবো আমার এই ছোট্ট মিষ্টি বন্ধুদের জন্য।


এক দিন রাতে

মৌসুমী রায়

ঘুটঘুটে রাত্তির বিদঘুটে একা
মা মা কত ডাকি মার নাই দেখা।
বাগাডুলি ডাংগুলি খেলে খেলে বোর
ওরে বাবা, কত রাত,কবে হবে ভোর!
মাঠ কোথা ? খাট এতো।যাচ্চলে ধুর
মিছিমিছি জ্বালাতন  কড়া রোদ্দুর!
একি কেস ,স্যুটকেস ! সব ঘেঁটে ঘ'
মাঠে দেখি বাপি ছোটে বলে বাড়ি চ'।
ধ্যাৎতেরি,ধুর ছাই, দিন নাকি রাত
সব কিছু গোলমাল একি উৎপাত!
সিঞ্চন ডোরেমন সব্বাই ঘুম 
আমি শুধু একা জেগে টাকডুমডুম।

শুভেন্দু মজুমদারের দু'টি ছড়া 

১.
এই মেয়েটা কী নাম তোর ? কী বললি --- রিন্টি ?
আকাশ-জুড়ে রামধনু রঙ বাজছে খুশির বীনটি ।
মেধাবী সে পড়াশুনায় ---
থাকে বোধহয় সরশুনায় 
গবেষণার বিষয় যে তার 
ডাইনোসরের জিনটি !

২.
মিন্তিমাসি মিন্তিমাসি কোথায় তুমি চললে গো ? 
মিন্তি বলে , খ্যান্তা পিসির বড় মেয়ের নাতির পো ----
সেই যে দিল বিদেশ-পারি
ফিরলো না আর নিজের বাড়ি
শুনছি এবার ফিরছে বাছা সঙ্গে নিয়ে মেমকে গো !

নেপোর দই-বিলাপ
মুক্তি দাশ

বিয়ের নেমতন্নে এসে
পড়ল চোখে দৈবাৎ-
কোর্মা-পোলাও সবই আছে
মিষ্টি এবং দই বাদ!
আর কোথাযায়!নেপোর দেখি
মেজাজ হল খাপ্পা!
বললে, “আমায় খেতে ডেকে 
এই অপমান, ধাপ্পা!
এইযে ভোলা, পটলা, হাঁদা
ডাক তো কনে-কর্তাকে, 
পালিয়ে কোথায় যাবে ব্যাটা
ছুট্টে গিয়ে ধর তাকে!
…ও এই তো, শুনুন মশাই, 
আপনি কনের পিতা তো?
পালিয়েপালিয়ে বেড়ান কেন?
ব্যাপারটা যে কী তা তো
যায় না বোঝা! যদিও দেখি
মুখখানি বেশ বিনীত,
আপনার মতো লোকগুলোকে
হাড়ে হাড়ে চিনি তো!
দাম বেড়েছে না হয় মিষ্টি,
কিংবা ধরুন সন্দেশের-
তাই বলে কি দইটাও বাদ?
এসব রীতি কোন দেশের?
আমি না হয় মুখ্যু মানুষ,
আপনিও কি ছোঁন নি বই?
সেই যেখানে স্পষ্ট করে
লেখা, ‘নেপোয় মারে দই’?
নেপো হয়েও জুটবে না দই
আমার পোড়া ললাটে?
তবে জানেন, এই শহরের
দইটা বড়ই ঘোলাটে!
দইয়ের আসল অর্থটা কী?
দেখুন খুঁজে অভিধান-
ভালোজাতের দই পাওয়া যায়
কোথায় তা কি শুনতে চান?
শুনলে এখন উঠবে নেচে
মনটা খুশির মাতনে-
ফাস্টো কেলাস দইটি পাবেন
মেদনীপুরের দাঁতনে!
আরে ওকি! চলেন কোথায়
মুখটা অমন বেঁকিয়ে?
ঠিক আছে যান, সময় এলে
আমিও দেব দেখিয়ে!”

ছেলেবেলার খোঁজ

দিলীপকুমার মিস্ত্রী

রাধানগর গ্রাম শহরের মর্যাদা পেয়েছে মাত্র পনেরো বছর আগে।  জেলাশহর থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরে রাধানগর এই সেদিনও ছিল একটি নিবিড় গ্রাম। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে সে নিজেকে আমূল বদলে ফেলেছে।  শতকরা তিরিশ ভাগ পুকুর এরমধ্যেই  হাপিস। চল্লিশ ভাগ চাষের জমি গায়েব। পঞ্চাশ ভাগ বড় বড় গাছপালা লা-পাতা। সরকারের খাস-জমি হিসেবে চিহ্নিত চোদ্দটি খেলার মাঠের কয়েকটিও নিখোঁজ।
           এসব নিয়ে কারও তেমন মাথা ব‍্যথা নেই। না থাক, কিন্তু বারোনম্বর ওয়ার্ডের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দেবব্রত চট্টোপাধ্যায় এনিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। তাঁর বাড়ির উঠোন লাগোয়া মাঠটাও এখন  নিখোঁজ তালিকায় ঢুকেছে। যে মাঠে সে নিজে একদিন ফুটবল খেলেছে,যাত্রা-থিয়েটার করেছে। তার তিন ছেলেমেয়ে দশ বছর আগেও এই মাঠে খেলাধুলা করেছে।  আজ সেখানে মোবাইল টাওয়ারের মেলা। সবে ইসকুলে পা রাখা নাতি দুটো এখন সেই মাঠে ঢুকতেও পারেনা। তাই বৃদ্ধের মনের মধ্যে জমে উঠেছে কঠিন দুঃখ। সে  কিছুতেই নিজের কষ্টকে আর সামলাতে পারছে না। তাই  শেষমেশ  রাস্তায় নেমেই পড়লেন একা।
        কিন্তু তাঁর কথা শুনবে কে। পুরসভায় গেলে, সেখান থেকে তাঁকে এককথায় বিদায় দিয়েছে। সঙ্গে উপহার একরাশ উপহাস। বৃদ্ধ  থানা,  এসডিপিও, এসডিও অফিস ঘুরে, ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরেছেন । কিন্তু তাঁর জেদে ভাটা পড়নি। নাতি দুটোর মুখে তাকালেই তাঁর জেদটা যেন আরও বেড়ে যায়।
           একদিন সে সকাল সকাল বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল। অটো-ট্রেন ধরে সোজা চলে গেল জেলাশাসকের দপ্তরে। দপ্তরের সামনে বসে বসে বিকেল হল। কিন্তু ভেতরে যাবার অনুমতি মিলল না। বৃদ্ধ ধৈর্য হারিয়ে জোর করে ভেতরে ঢুকতে চেষ্টা করলেন।  বেঁধে গেল ঝঞ্ঝাট। চেঁচামেচি শুনে, জেলা শাসক নিজেই বেরিয়ে এলেন। তাঁকে দেখেমাত্র পরিস্থিতিটা শান্ত হল। বৃদ্ধের সঙ্গে  কথা শুরু হল তাঁর।
  -বলুন, কোথা থেকে আসছেন, কী প্রয়োজন ?
-রাধানগর হাইস্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক দেবব্রত চট্টোপাধ্যায়। আমার এলাকায় একটি মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ জানানোর জায়গা নেই। পুরসভা, থানা, এসডিপিও,  এসডিও-অফিস; কেউ আমার কথা শুনতে চায়নি। বরং সবাই উপহাস করেছে- আমি নাকি পাগল ! 
-আপনার অভিযোগটা ঠিক কী ?
স‍্যার, রাধানগর নতুন শহর হয়েছে।  এটা খুবই আনন্দের বিষয়। কিন্তু শহর উন্নয়নের দোহাই দিয়ে, সাধারণ মানুষের সবকিছু  কেড়ে নিচ্ছে সরকার। মানুষের মনের কথা কী সে মোটেও শুনবে না ?
আপনার কী কেড়ে নেওয়া হয়েছে ? জমি, পুকুর, বাগান, না ঘর-বাড়ি ?
বৃদ্ধ ছলছল চোখে, জেলাশাসকের সামনে হাতজোড় করে বললেন,
-না স‍্যার, সেসব নয়। সরকার আমার, আমাদের সমাজ থেকে জোর করে, চিরকালের মতো ছেলেবেলাকে কেড়ে নিচ্ছে !
         বৃদ্ধের কথা শুনে  জেলাশাসক  স্তম্ভিত। কয়েক মুহূর্তের জন্য তিনি নিজেই যেন অন্য কোথাও হারিয়ে গেলেন। তারপর, ফিরে এসে বৃদ্ধের হাত-দুটো ধরে বললেন,
-সত্যি, কী ভালো লাগছে আমার। আমাদের সবকিছু এখনো হারিয়ে যায়নি। সমাজে, আজও তার কিছু অবশিষ্ট রয়েছে। মাষ্টারমশাই, আপনি ভেতরে আসুন। 

গয়না

প্রবাহনীল দাস
ষষ্ঠ শ্রেণী, একমি একাডেমী, কালনা, পূর্ব বর্ধমান

ছাদের উপর রোদের তলায় কয়েক হাজার ভরি
হলদেটে রং, ছোপ বাদামি
গয়না হলেও, নয় তো দামি!
হয় তা চুরি। বাঁদর করে –
তাই থেকে যাই ছাদের ঘরে।
তরকারীদের দেয় সে শোভা। নামটা – গয়না বড়ি।

স্বর্ণর পাখি পোষা

স্নেহাদৃতা রায়
পঞ্চম শ্রেণি, সরোজিনী দেবী সরস্বতী শিশু মন্দির, সিউড়ি, বীরভূম

স্বর্ণ পাখি পুষতে খুব ভালোবাসে। সে দুটো চন্দনা, তিনটে পায়রা আর চারটে টিয়া পুষেছে। তার যে এত পাখি তার খাঁচা ও তো কম নয়। এরপর স্বর্ণ আবার বায়না ধরেছে একটা কাকাতুয়া পুষবে। কিন্তু স্বর্ণর মা-বাবা নতুন করে আর পাখি পুষতে রাজি নয়। কিন্তু যদি পাখি না পোষা হয় তাহলে আবার স্বর্ণর পড়ায় মন বসবে না। তাই পাখি পোষার ব্যাপারে স্বর্ণর বাবা-মাকে রাজি হতেই হল।

  একদিন সকালে স্বর্ণ আর তার বাবা বাজার থেকে পাখি কিনে আনল। কিন্তু শুধু পাখি কিনলেও তো নয় তার জন্য চাই আবার নতুন খাঁচা। খাঁচাও কেনা হলো। এরপর স্বর্ণ খুব খুশি। 

  সে পাখিদের খুব যত্ন করে। এবার ধীরে ধীরে স্বর্ণর পরীক্ষা এগিয়ে এলো। পড়ার চাপে এখন আর পাখিদের যত্ন করতে পারছে না। এর মধ্যেই ঘটে গেল একটা দুর্ঘটনা। স্বর্ণ যে চারটি পোষা টিয়া ছিল তার মধ্যে দুটো টিয়া হঠাৎ করেই মারা গেল। স্বর্ণর তো খুব কষ্ট।  কিন্তু সামনেই তার অংক পরীক্ষা। মন খারাপ করে স্বর্ণ পড়াতে মনোযোগ দিতে পারলো না। তাই স্বর্ণর পরীক্ষাও খুব একটা ভালো হলো না। 

  সব পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার পর স্বর্ণর মা-বাবা তাকে বোঝালো। "স্বর্ণ তুমি যে পাখি পুষেছো তারা নিশ্চয়ই খুব কষ্ট পাচ্ছে। কারণ, তুমি যেমন তোমার বাড়িতে মা-বাবার সাথে রয়েছো তেমনি পাখিদেরও তাদের বাড়িতে থাকতে দাও। ওদের বাড়ি হলো প্রকৃতি। বনে-জঙ্গলে, খোলা আকাশে ওদের ডানা মেলতে দাও। তোমায় যদি কেউ সারাদিন খাঁচায় ভরে রাখে তাহলে তোমার কেমন লাগবে? খুব খারাপ লাগবে। তাই তো? তাহলে মিছিমিছি তোমার ভালো লাগার জন্য ওদের কষ্ট দিচ্ছ কেন? তুমি পাখিগুলোকে মুক্ত আকাশে ছেড়ে দাও।"

  প্রথমে রাজি না হলেও অবশেষে স্বর্ণ রাজি হল। সে পাখিগুলোকে খোলা আকাশে ছেড়ে দিলো। তখন সে দেখল পাখিগুলো মনের আনন্দে গাছে গাছে শিস দিচ্ছে আর ঘুরে বেড়াচ্ছে। তখন স্বর্ণের মন খুশিতে ভরে উঠল। সে তার ভুল বুঝতে পারল। এরপর থেকে স্বর্ণ আর পাখি পোষার বায়না করেনি।

প্রকাশিত 
দুই পাখির গল্প

অস্মিতা ঘোষ
দ্বিতীয় শ্রেণী, সেন্ট জেভিয়ার্স ইনস্টিটিউশান
পাণিহাটি, উত্তর ২৪ পরগণা


আমাদের ঘরের ছোট লাইটের ওপর দুটি ঘুঘু পাখি বাসা বেঁধেছে।পাখি দুটির নাম জামমিন আর হবি।একদিন জামমিন দুটো ডিম পাড়ল।ক'দিন পর যখন ডিম ফুটে বাচ্চা বেরোল  তখন তাদের নাম রাখল সোনালী আর রূপালী।
       
   একদিন রাতে এক ভয়ানক কালো কুচকুচে হুলো বেড়াল বাচ্চা দুটিকে খেতে এল।তখন জামমিন খাবার আনতে অনেক দূরে গেছিল।তাই সে অন্ধকারে ফিরতে পারেনি।তাই হবি বাচ্চা গুলোকে দেখছিল।কিন্তু সে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে।এই সুযোগে কালো হুলোটা এক লাফ দিয়ে লাইটের ওপর উঠে পড়ল। বিড়ালের পায়ের থপথপ  আওয়াজে আমার ঘুম ভেঙে গেল।তখন আমি একটা মজবুত লাঠি নিয়ে বিড়াল টার গায়ে দিলাম এক ঘা।বিড়াল টা মার খেয়ে লাইটের ওপর থেকে লাফ দিয়ে দিল এক ছুট।তারপর আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।পরদিন রাতে বিড়ালটা দলবেধে এল প্রতিশোধ নিতে।দুটো বেড়াল আমার দিকে তেড়ে এল আর দুটো গেল বাচ্চা গুলোকে খেতে।আমি সেই লাঠি দিয়ে ওদের সাথে প্রাণপন লড়াই চালাতে লাগলাম।লাঠি র বারি খেয়ে  বেড়াল গুলো পালিয়ে গেল।আর কোনদিন তারা আসেনি।এর পর জামমিন আর হবি তাদের বাচ্চাদের নিয়ে সুখে বাস করতে লাগল।

সাঁতরাইচেঙ্গার রহস্যময় সাতকাহন
পর্ব- ১০
গৌতম বাড়ই

সর্বনাশ বলতে কী হল আবার? 

আমরা ভাই- বোনেরা বাবার সর্বনাশের বিবরণ শুনব বলে দুরুদুরু বুকে অপেক্ষা করে আছি। বাইরের ঘরে মিনুবেড়ালের লাফের শব্দও কানে এল। বাবা ঘরে ঢুকে তক্তপোষের ওপর ধপ করে বসেই বলতে শুরু করলেন-- দেওয়ানির বাড়িটাই হাফিস। লোকগুলোও হাফিস। ওর বাড়ির পাশে গাছতলার নীচ থেকে এতক্ষণ ঐ আলোর ভেল্কীবাজি চলছিল। দেওয়ানির বাড়িতে তা নাই- নাই করেও তেরো চোদ্দজন লোক। তারা গেল কোথায়? পুরোশূন্য জমিজমা বসত বাড়ি। 

  মাকে উদ্দেশ্য করেই বাবা কথাগুলো বলছিলেন। মা বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ে বলে উঠলেন- সাংঘাতিক কান্ড! কী বলছো? 

  বাবা বললেন- হাঁ। পুলিশও গাড়ি নিয়ে এসেছে। বিডিও ছিরিং সাহেব ও খবর পেয়ে আসছেন এখানে। ওসি দেওয়ানির বাড়ির সামনে শূন্যস্থানের ঐ  জায়গা থেকে দেওয়ানির নাম ধরে অনেক হাঁকডাক করলেন। কিন্তু কোথায় কী? যা শুরু হয়েছে গ্রামের মধ্যে আর একমুহূর্ত এখানে বাস করতে ইচ্ছে করছে না। তোমাদের ভাবছি আপাতত ফালাকাটা বন্দরে ঘরভাড়া করে রাখব। কোনদিন কী হয় কে জানে! 

  মা বললেন বাবাকে-- এত তাড়াতাড়ি ভয়ে ভেঙ্গে পড়ো না তো। হঠাৎ করে কোন সিদ্ধান্ত নিতে হবে না। তোমায় একলা এখানে রেখে আমরা শান্তি পাব না, না তুমি একলা থেকে শান্তি পাবে? একটু দেখো। আমরা সবাই একসাথেই থাকব। আর সবাই তো রয়েছে গ্রামে। আমরাও থাকব। সময় আবার ভালো হয়ে উঠবে দেখবে।

 মায়ের কথা শুনে সেদিন ঐ রাতে আমাদের সাদামাটা অল্পকথার  মাকে দুগ্গা- মায়ের মতন মনে হচ্ছিল। আজও তাই বুঝি মায়েরা কেন দেশে- দেশে পূজিত হয়। মায়ের স্থান কেন সবার আগে।

  ঘরের ভেতর জমাট অন্ধকার। আমি শুয়ে আছি আমার ঘরে। সারাগ্রাম যেন আজ গভীরভাবে ঘুমিয়ে পড়েছে নানা কান্ড- কারখানার পর। এরকম নিস্তব্ধ রাত জীবনে খুব কম আসে। রাতজাগা পাখিদেরও হাঁকডাক নেই। ডানার ঝাপটানি নেই। আমাদের গোটা বাড়িটাও ঘুমিয়ে পড়েছে। সবাই গভীর ঘুমে। আমি অন্ধকারে জানলায় চেয়ে রয়েছি। হঠাৎ মনে হল আমার মাথার পাশে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। মশারি বেশ করে মা গুঁজে দিয়েছে খাটের তলায়। কয়েকমাস আগে আগের কাপড়ের মশারি পুরোনো হয়ে যাওয়াতে বাবা ক্যালিপসো- নেটের দুটো মশারি দু- ঘরের জন্য বানিয়ে ছিলেন। বাবার মুখে ঐ ক্যালিপসো- নেটের এতবার সেইকথা  শুনেছিলাম যে আজও মনে আছে। আমি লাফিয়ে উঠে মুখ সোজা করে মাথার দিকে তাকালাম। দেখি আমার তিন ভিনগ্রহী বন্ধু দাঁড়িয়ে আছে। ইলু- বিলু- তিলু । আমায় বললে ওরা- বন্ধু দেওয়ানিটা একটু পাকাগোছের ছিল। গ্রামে খুব মাতব্বরি করে। পুরো বাড়িঘর জমিজমা পরিবারের লোকজন সহ আমরা অদৃশ্য করে দিয়েছি। ঘাবড়াবে না। কিছু হয়নি। আবার কাল সকালে ওদের ওখানে দেখতে পাবে সবাই। তবে দেওয়ানি আপাতত দু- দিন অদৃশ্য থাকবে। ওকে আমরা দূরে পাহাড়ের মাথায় জঙ্গলে এক কাঠের বাড়িতে রেখে এসেছি। পাহারাদার আছে। একটু ভালো মানুষ তৈরী করতে চাই দু- দিনেই। এবার শোন- আমরা কী দেখি? এই যেমন অন্ধকারেও তুমি আমাদের দেখতে পাচ্ছ, আর আমরা  তোমাকে।  আমাদের ওপর আলো এসে পড়েছে। সেই আলো দেখছ। আমরাও তাই। তোমায় ঐ পাওয়ার বা শক্তি আমরা দিয়েছি। অন্যরা আমাদের দেখতেও পারে বা না দেখতেও পারে। সব আমাদের ইচ্ছের ওপর। আজ তোমাদের ঐ  বিডিও আর পুলিশের দল যতই সার্চ- লাইট আর জোরালো আলো ফেলুক ওখানে, এক মহাশূন্য গহ্বর দেখবে শুধু আজ। আমাদের আলোকশক্তি তোমাদের থেকে অনেক যোজন দূর এগিয়ে। আমরা তোমাদের যে কোন মুহূর্তে এই তিনজন মাত্র, তোমাদের  গোটা গ্রামটাকে আর তার লোকজনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। তবে করব না। বাবাকে সকালে ঘুম থেকে উঠে কালকে আগেই জিগ্গেস করবে--- বাবা দেওয়ানির বাড়িতে কী দেখেছিলে?

  দেখবে বাবা উত্তর দেবে-- এক মহাশূন্য স্থান । এক গভীর খাদ।

 পরদিন সকালে ঘুম থেকে চোখ খুলেই দেখি বাবা পায়ে চামড়ার স্যান্ডেল গলিয়ে বেরোবার তোড়জোড় করছে। আমি সামনে গিয়ে বলে উঠলাম-- ও বাবা তুমি রাতের বেলায় ওখানে মানে দেওয়ানি কাকার বাড়ির জমিতে কী দেখেছিলে? এক গভীর খাদ?

  --  হ্যাঁ। মস্ত এক গভীর খাদ। কিন্তু তুই জানলি কী করে? তোকে তো আমি এসব বলিনি? এই বলে বাবা আমার মুখের দিকে তাকালেন।

  আর বাইরে খুব জোরালো হৈ- চৈ চলছে সকাল বেলায়। একটা গাড়ির আওয়াজ পেলাম ঘরের ভেতর থেকে আর পেলাম তারপর বিডিও ছিরিং সাহেবের ডাক। বাবার নাম ধরে ডাকছেন। 

  বাবা বাইরে বেড়িয়ে গেলেন ডাক পেয়ে তড়িঘড়ি করে। 

  এর পরের পর্বে আবার-----

আজকের বিষয় :  ভারতের কিছু বৃহত্তম স্থানের নাম।

১. ভারতের বৃহত্তম মন্দিরের নাম কি?
২. আমাদের দেশের বৃহত্তম নগরীর সম্মানে ভূষিত কোন স্থান?
৩. ভারতবর্ষ ধর্ম বিশ্বাসী দেশ। এই দেশের বৃহত্তম গুহা মন্দির কোথায় অবস্থিত?
৪. আমাদের দেশের বৃহত্তম জেলা কোনটি?
৫. ভারতবর্ষের বৃহত্তম মসজিদ কোথায় অবস্থিত?
৬.ভারতের বৃহত্তম মরুভূমি কোনটি?
৭.আমাদের দেশের বৃহত্তম সমাধি সৌধর নাম কি?
৮. ভারতের বৃহত্তম জাদুঘর কোথায় অবস্থিত?
৯. ভারতের নামকরা এই জাদুঘরের নাম কি?
১০. আমাদের দেশের বিখ্যাত ও বৃহত্তম উদ্ভিদ উদ্যান কোনটি?

গত সপ্তাহের উত্তর
১.মুম্বাই ২.মুম্বাই ৩. ভারতের নাগপুর ৪.ভারতের কোচি৫. কোলকাতা ৬.ভারতের ম্যানঞ্চেস্টার ৭.মিশর ৮.ভারতের মশলার বাগান ৯.শিকাগো ১০. ভারতের মাদুরাই।

পেজ-এ লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments