পরিষ্কারের পরিষ্কার কথা
কমলিকা ভট্টাচার্য
অনেকদিন পর আজ মধুবাবু ও কল্যাণী দেবী দিল্লি যাচ্ছেন—এক আত্মীয়ের মেয়ের বিয়েতে।
ফ্লাইট সকাল ১১টার, কিন্তু এয়ারপোর্টের যাত্রাপথ, চেক-ইন, নিরাপত্তা—সব মিলিয়ে তাঁরা বেরিয়ে পড়েছেন ভোর ছ’টায়।
মধুবাবু ডায়াবেটিসের রোগী। নিয়মিত জল খেতে হয়, ফলে ঘন ঘন টয়লেটেও যেতে হয়।
তাঁর একটা অভ্যাস আছে তিনি ব্যবহার করা রেল নীর বা বিশ্লারির বোতল ফেলেন না যত্ন করে রাখেন। এই নিয়ে কল্যাণী দেবীর সঙ্গে হাজারো অশান্তি হয় কিন্তু তিনি যত্ন করে রাখেন।আর বাড়ি থেকে কোথাও বের হলে সবসময় নিজের সঙ্গে এক লিটার জল নিয়ে বের হন।
আজও অন্যথা হল না। সকালে উঠে নিজে হাতে একটি পরিষ্কার বোতলে জল ভরলেন।
এয়ারপোর্টে পৌঁছে সিকিউরিটি চেকিং-এর ঠিক আগে মধুবাবু বোতলটা কল্যাণী দেবীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
“তুমি তোমার ব্যাগে ভরে নাও কল্যাণী, মহিলা লাইনে সাধারণত কিছু বলে না। ওরা চাইলে একটু জল খেয়ে দেখিয়ে দিও।”
কল্যাণী দেবী চোখ কুঁচকে বললেন,
— “অ্যাঁ? জল লাগবেই কেন? এখানে তো সবকিছু একদম ঝকঝকে! শপিং কমপ্লেক্স,এয়ারপোর্ট আজকাল কোথাও তো নোংরা দেখি না।”
মধুবাবু রহস্যময় ভঙ্গিতে বললেন,
“ও তুমি বুঝবে না...”
কল্যাণী দেবী মুখে আর কিছু না বললেও চোখে-মুখে বিরক্তি স্পষ্ট।
শেষমেশ মধুবাবুর অনুরোধে বোতল ব্যাগে ভরে সিকিউরিটি পেরিয়ে এলেন।
গেটের সামনে এসে বসতেই মধুবাবু বললেন,
“জলের বোতলটা দাও তো, টয়লেটটা ঘুরে আসি।”
এবার কল্যাণী দেবী রীতিমতো বিরক্ত।
“আচ্ছা, বলো তো! এটা কি মাঠঘাট না বাজারের সুলভ শৌচাগার, যে হাতে করে বোতল নিয়ে টয়লেটে যাবে!
এই তো দেখো চারপাশ ঝকঝকে। ঐ দেখো, সাফাই কর্মী হাতে কাপড় নিয়ে ঘুরছে, কতো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন!”
🍂
মধুবাবু এবার গম্ভীর গলায় বললেন,
“তবে তোমাকে পরিষ্কারের একেবারে পরিষ্কার কথাটা বলেই দিই...”
কল্যাণী দেবী কৌতূহলী হয়ে তাকালেন।
মধুবাবু একটু গলা ঝেড়ে শুরু করলেন,
“এর আগের বারে আমেদাবাদ যখন যাচ্ছিলাম। টয়লেটে ঢুকেছি। এক সাফাইকর্মী বলল, ‘স্যার একটু দাঁড়ান। পরিষ্কার করে নিই।"
আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম। দেখি সে কাপড় দিয়ে টয়লেট সিট থেকে প্যানের ভিতর পর্যন্ত পরিষ্কার করল,
তারপর সেই একই কাপড় দিয়ে ভিতর থেকে শুরু করে বাইরের দরজা, বেসিন, ট্যাপ, এমনকি সোপ ডিসপেনসার পর্যন্ত মুছে দিল!
তারপর হাসিমুখে বলল, ‘স্যার একদম পরিষ্কার করে দিয়েছি, যান নিশ্চিন্তে।’”
কল্যাণী দেবী মুখ হাঁ করে শুনলেন।
মধুবাবু আবার বললেন,
“তখন থেকে আমার একটা নিয়ম হয়েছে—জলের বোতলটা সঙ্গে রাখি। অন্তত ট্যাপের নলটায় হাত দেওয়ার আগে একটু ধুয়ে নিতে পারি।”
এই বলে তিনি শান্তভাবে বোতল হাতে টয়লেটের দিকে রওনা হলেন।
কল্যাণী দেবী চুপচাপ বসে সাফাই কর্মীর দিকে তাকালেন।
সে তখন কাপড় হাতে খুব যত্ন করে সিট মুছে চলেছে। মনে মনে যেন মধুবাবুর গল্পটা আবার চলতে লাগল...
ঠিক তখনই সাফাইকর্মী মহিলা এসে বলল,
— “ম্যাডাম, একটু সরে বসুন, সিটটা পুঁছে দিই।”
কল্যাণী দেবী তড়িঘড়ি বলে উঠলেন,
“না না, দরকার নেই!”
কর্মীটি বিরক্ত গলায় বলল,
“আপনি না বললেও পরের প্যাসেঞ্জার বলবে, দরকার আছে। আমাকে তো পরিষ্কার করতেই হবে, ম্যাডাম।”
কল্যাণী দেবী ভিতরটা তখন ঘিন ঘিন করছে তবু একটু কুঁচকে বসলেন ,
আর মনে মনে বললেন,
0 Comments