কবি গাঁজানন ও বাজারকথা
এর আগে আলু নিয়ে বাজারের ব্যাজার মুখের কথা বলেছিলাম। অবাক কান্ড আলুবাবাজী কি শুনতে পেল? নইলে চরচর করে দাম না চড়িয়ে নেমে এলো হাসিমুখের আলুসেদ্ধ পাতে। বাজার থেকে এ সপ্তায় ব্যাজার মুখে না এসে বললাম- গিন্নী এ বেলায় ঐ দেশী ফুলকপি আর আলুর একটা বেশ রসেবশে রসা তৈরী কর দেখি আর আলু-বেগুন দিয়ে মৌরালা মাছের চচ্চড়ি। গিন্নী আমার হাসিমুখ দেখেই খ্যাক করে উঠলেন- বাজারের ব্যাগ দেখেই বুঝেছি কর্তা আমার কেন জমিদার মেজাজে আছেন। কি গো বাজারের রেট কি কমেছে? অত ফুরফুরে মেজাজে থেকো না, সরকার আবার কখন এই মেজাজ দেখে টাইট দেবেন!
বাজারের দিনুদা, বাজারে ঢুকতেই বললে- দাদা একটু চেয়ে দেখো ঐ কোনে সাতসকালে কবি গাঁজানন বসে আছেন। কোত্থেকে যে এই ভবঘুরে গাঁজাখোরটা এসে জুটেছে কে জানে! এসেই বলে কিনা - "আমি কবি গাঁজানন। বিশ্বকবির পরেই এ অধম কবি। গোলেমেলের পৃথিবীটাকে আমরাই রস দেই"। এই বলে দিনুদা ফিকফিক করে হাসলেন। সারা দিনমান এই বসে- বসে কবিতা আউরাবে। কী যে ছাঁইপাশ বলে কিছুই বুঝিনা, বোঝে শুধু বাবা কবি গাঁজানন। বলে- "ভয়ানক এক বিপর্যয় আসছে। কেউ বাঁচবে না। বহুত অত্যাচার করেছ তোমরা এই পৃথিবীকে। এবার ধ্বংসের পালা তোমাদের। তেপান্তরের মাঠে ছাতিম তলায় মেঘের বাড়ি বানাব একমাত্র আমি"। গাঁজাননের দিকে তাকিয়ে আছি। দেখি সে-ও তাকিয়ে আছে আমার দিকে। এবার উঠে চলে এলো সোজা আমার দিকে। কাছে এসে বললে- কিছু শুনতে পাচ্ছেন? আমি অবাক হয়ে বললাম- না তো। কী ভাই?
-- আপনায় দেখে বোঝা যায় না, আপনিও দেখছি নিরেট মাথার মাল। এইসব ভোঁতা মাথা নিয়ে বেঁচে থেকে কী লাভ বলুন দেখি?
- তা বাবা গাঁজানন তোমার এই উর্বর মাথা নিয়ে বাজারের এককোনে বসে আছ কেন? তুমি তোমার এই মাথাটা কাজে লাগাও। এ ভাবেও বা বেঁচে থেকে কী লাভ শুনি?
কথাটা শুনে লাফিয়ে উঠল। তিড়িং- বিড়িং করে বলল- আমি বসে আছি এখানে? সারাদিন একশ কবিতা পড়ে শোনাই লোককে। আমি গুহা মানুষ, প্রাকৃতিক মানুষ। প্রকৃতিতে জন্ম নেওয়া। আমাদের আদিম চিন্তা- ভাবনা তোমাদের থেকে উন্নত। আমাদের ভাবনার পথেই তোমাদের আসতে হবে শেষে। নইলে ধ্বংস অনিবার্য। অনেক বকেছি এক ছিলিম গাঁজার দাম দাও দিকিনি।
এ যে সাতসকালে দিনুদার জন্য মস্ত ফ্যাসাদে পড়তে হল! দিনুদার একটা বিড়ি আর লাল চা আর এদিকে এক ছিলিম গাঁজা। মাঝখানে আমি। শিব ঠাকুরের আপন দেশে নেশা মাহাত্ম্যের মাঝে নেশাহীন আমি দাঁড়িয়ে। বাজারের ঢুকে আলু- সব্জীর দামে আরও একটু ফুরফুরে হলাম। সপ্তাহ ভালই যাবে।
পরের সপ্তাহে আবার নতুন কোন গল্প হবে। আর কিছু বলছি না।
পেজ-এ লাইক দিন👇
আরও পড়ুন
0 Comments