জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা - ২৮


সম্পাদকীয়
গরমকালে কার না ভালো লাগে পুকুরে বা নদীতে ডুবে চান করতে? ও হো তোমরাতো আবার  আজকালকার দিনে পুকুরে বা নদীতে নয়, ভালোবাসো পুরী বা দীঘার সমুদ্রে চান করতে। তর্ক বিতর্ক সবেতেই আছে তবে এটা তো ঠিক গরমকালে ডুবে চান করতে, তরমুজ খেতে সবাই ভালোবাসি আমরা। তাই প্রচ্ছদের এমন প্রাণবন্ত চানের ছবিটা উপহার দেবার জন্য অপু পালকে ধন্যবাদ। তরমুজের রেসিপি পাঠানোর জন্য বন্দনা সেনগুপ্তকেও ধন্যবাদ। আর সব ঋতুতেই আমরা যা শুনতে সকলেই ভালোবাসি তাহল রূপকথার গল্প আর ছড়া। তাই সুনেত্রা সাধু ও সঞ্জয় কর্মকারকে কৃতজ্ঞতা জানাই। এবার যে কথাটা বলার জন্য ছটফট করছি সেটা বলেই ফেলি। এবারের সংখ্যা থেকে নতুন ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস ' ফুলকুসুমপুর খুব কাছে' লিখছেন শিশু সাহিত্যিক রতনতনু ঘাটী। আমি জানি তোমরা শুনেই লাফিয়ে উঠেছো। আর আমি তো প্রথম ভাগটা পড়েই ছটফট করছি কখন তোমরা সেটা পড়বে আর আনন্দে দ্বিতীয়বার লাফিয়ে উঠবে সেটা ভেবে। শুধু উপন্যাসই নয় অমিত মজুমদার একটি কিশোরদের গল্প লিখেছেন। রতনতনু ঘাটী মহাশয়কে শ্রদ্ধা ও অমিত মজুমদারকে ভালোবাসা।  এসো পড়ো ছোটো বড়ো সকলের লেখা আর লিখে পাঠিয়ে দাও তোমাদের মনের কথা।।  -  মৌসুমী ঘোষ

শুরু হল নতুন ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস

ফুলকুসুমপুর খুব কাছে 

রতনতনু ঘাটী

আজ রোববার। ফুলকুসুমপুর গ্রামের ইচ্ছে প্রসন্ন ত্রিপাঠীর বাড়িতে সকালে জরুরি মিটিং বসেছে। বাড়ির ছোটোদের তিনি ইচ্ছেদাদু! ইচ্ছেদাদুর ডাকে সব কাজ ফেলে বাড়ির বড়রা সকলে হাজির হয়েছেন। মিটিং বসেছে এই সকালবেলা দোতলার বারান্দায়।
   ইচ্ছেদাদু আরামচেয়ারে বসে আছেন। ফতুয়া গায়ে, ধুতি পরা। মিটিংয়ে চা দেওয়া হয়ে গেছে। সকলের সামনে সেন্টার টেবিলে রাখা হয়েছে গরম-গরম পেঁয়াজি। ইচ্ছেদাদুর পাশের হাতলওলা কাঠের চেয়ারে লাল-পাড় সাদা শাড়ি পরে বসেছেন অনিচ্ছেঠাকুরমা। 
   বিয়ের আগে অনিচ্ছেঠাকুরমার অন্য একটা নাম ছিল। ইচ্ছেদাদু একদিন সকলকে শুনিয়ে বলেছিলেন, ‘তোদের ঠাকুরমা যখন এ বাড়িতে নতুন বউ হয়ে এল, ওর ‘টুনি’ না ‘টগর’ এরকম একটা বড্ড সেকেলে নাম ছিল। দিলাম সে নামটা পালটে।’ সেই থেকে ত্রিপাঠীবাড়ির  ঠাকুরমার নাম ‘অনিচ্ছেঠাকুরমা’। 
   তিন্নির বাবাকে তিন্নিসুদ্ধ বাড়ির ছোটরা ‘বড়বাবু’ বলে ডাকে। এমনকী, বড়রাও ওই নামেই ডাকেন। ও নামটা দাদু রেখেছিলেন। তাই আর পালটানোর প্রশ্ন ওঠেনি। আজকের মিটিংয়ে বড়বাবু আছেন, গল্পকাকা আর শুধুকাকা আছেন। আর এখনই এসে যোগ দিয়েছেন তিন্নির মা, ওঁকে ছোটরা ‘জেম্মা’ বলে ডাকে। তিন্নিও। বিন্নির মাকে বিন্নি ছাড়া সকলে ডাকে ‘করবীকাকি’, বুম্বার মাকে তিন্নি-বিন্নি ডাকে ‘বকুলকাকি’ বলে। বড়দের সকলকেই আজকের মিটিংয়ে হাজির থাকতে হবে ইচ্ছেদাদুর নির্দেশ ছিল। তাই এখন রান্নাঘর খালি করে সকলেই এসেছেন।  
   আজ রোববার বলে ছোটদের পড়াশোনার ছুটি। তারা এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছিল। তাদের এই মিটিংয়ে এন্ট্রি নেই। ইচ্ছেদাদু সকালেই বলে দিয়েছেন, ‘ছোটোরা শোনো, তোমাদের এই মিটিংয়ে থাকার দরকার নেই!’  কথাটা তো ঠিকই। বড়দের মিটিংয়ে ছোটোরাই বা থাকবে কেন?   
   উঠোনের পাশের মোহনবাঁশি আমের গাছটায় দুটো বুলবুলি পাখি বসে আছে। তিন্নি ক্লাস ফোরে পড়ে নৈবেদ্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কয়েকদিন ধরে দেখছে তিন্নি, সকাল থেকেই পাখি দুটো সব কাজ ফেলে আম গাছের এ ডালে ও ডালে ওড়াউড়ি করে। তিন্নি কুইজে স্কুলে ফার্স্ট হয়। ছোটোকাকুকে জিজ্ঞেস করেছিল তিন্নি, ‘শুধুকাকা, ওটা কী পাখি গো?’ ছোটকাকুকে ওরা ডাকে ‘শুধুকাকা’ বলে।

   শুধুকাকা আম গাছের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ও তো বুলবুলি পাখি! মনে হয় বাসা বানাবার তাল করছে।’
 তিন্নি আজও দেখল বুলবুলি দুটোকে। বুম্বাকে ডেকে দেখাল, ‘দ্যাখ বুম্বা! কী সুন্দর দুটো বুলবুলি পাখি!’ বুম্বা শুধুকাকার ছেলে, তিন্নির স্কুলে পড়ে, ক্লাস টু। কোনটা কী পাখি সে অত চেনেটেনে না। পাখি দুটোকে দেখল পিটপিট করে। তারপর বুম্বার কী মনে হল কে জানে! বারান্দা থেকে চেঁচিয়ে বলল, ‘পাখি হুশ!’ পাখি দুটো উড়াল দিল দূরের গাছগাছালির দিকে।
   তিন্নি বলল, ‘দিলি তো পাখি দুটোকে উড়িয়ে?’
   এমন সময় মেজোকাকুর মেয়ে বিন্নি এসে হাজির। মেজোকাকুকে তিন্নি আর বুম্বা বলে ‘গল্পকাকা’। বিন্নি ক্লাস থ্রি-তে পড়ে। অঙ্কে দারুণ। পরীক্ষায় একশো ছাড়া পায়ই না। সে এসেই তিন্নির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তিন্নিদি, রান্নাঘরে এক্ষুনি মার কাছ থেকে শুনলাম, আমাদের বাড়ির নামটা নাকি গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বইতে উঠে যাবে! দেখে নিস!’
   তিন্নি জিজ্ঞেস করল, ‘কেন রে বিন্নি? আমাদের বাড়িটা কী করেছে? গিনেস বুকে নাম তোলাতে গেলে শুনেছি বড় কিছু ব্যাপার করতে হয়। মানে ধর, বাড়ির প্রতিটি লোক একই দিনে রাজ্য সরকারের লটারি জিতবে। নয়তো ধর, বাড়িক সকলে এভারেস্টে উঠেবে। আমাদের বাড়িতে কেউ লটারির টিকিটও কাটে না। শুনলে ইচ্ছেদাদু ভীষণ রাগ করবেন। আর এভারেস্টে? ধুস, ইচ্ছেদাদু আর অনিচ্ছেঠাকুরমা কি এভারেস্টে উঠতে পারবেন নাকি?’
   বিন্নি বলল, ‘শুধু ওঁদের কথাই বা বলছিস কেন? বুম্বা, তুই বা আমি, আমরাও কি এই বয়সে এভারেস্টে উঠতে পারব নাকি? কিন্তু তবে কী এমন ঘটবে যে আমাদের বাড়ির খবর গিনেসে বেরোবে?’
   ছোটরা দোতলায় বারান্দা লাগোয়া টিভিরুমে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। ওরা শুনতে পেল ইচ্ছেদাদুর গম্ভীর গলা, ‘আজকের মিটিং তা হলে এবার শুরু করা হোক।’
(এর পর আগামী রোববার)


বসন্ত সুখ 
                  
সঞ্জয় কর্মকার 

      কৃষ্ণচূড়া রাধাচূড়া 
      অশোক ফোটা বন,
      ইচ্ছে রঙে মেঘের খেলা
      উদাস করা মন।

     নতুন পাতায় উজার করা
     আম মুকুলের ঘ্রাণ, 
     কোকিল ডাকার ব্যস্ত বিকেল
     আবির মেখে স্নান।

    নৌকা অচল নদীর চরে 
     শূন্য খেত আর বিল,
     বসন্ত সুখ ছড়ায় ঠোঁটে 
     উড়ন্ত বক চিল।

      দুঃখ দিনের চিহ্ন তো নেই
      চাদ্দিকে উৎসব,
      বাংলা জুড়ে বসন্ত রোদ
      প্রাণের কলরব।


যদি হয় রূপকথা 

সুনেত্রা সাধু 

তারায় মোড়া গহীন কালো বসন গায়ে দিয়ে, চুল এলিয়ে শুয়ে থাকে আকাশ নগরের রূপবতী রাজ্যকন্যে বিভাবরী। শ্বেতবরণ কন্যে তার আগুনবরণ চুল।  খসে পড়া তারার স্বর্ণ আভা ছড়িয়ে থাকে তার কেশ জুড়ে।   রাজকন্যে চুল খুলে দিলে দিনের আলোয় ভাসতে থাকে পৃথিবী আর পরিপাটি করে চুল বেঁধে ফেললে পৃথিবীর বুকে রাত নামে।  তার দিঘির মতো চোখে কৃষ্ণ গহব্বরের হাতছানি, কত পথিক সেথা পথ হারায়, তাদের আর ফেরা হয় না। রাজকন্যে তাই ঘুমিয়ে থাকে। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সে পৃথিবীর স্বপ্ন দেখে। ফুল, নদী আর গাছপালা দিয়ে ঘেরা  এক নীল সবুজ পৃথিবী। 

সে কি জানতো তার তারায় ঘেরা অলীক সাম্রাজ্যে পৃথিবী নামের এক ক্ষুদ্র গ্রহে এমন প্রাণের উল্লাস আছে! সে গ্রহে  রঙীন রঙীন সব ফুল ফোটে,  পাখিরা মিঠে সুরে গান গায়, বৃষ্টি পড়লে সবুজ গাছে ঢাকা পৃথিবীটা আরও একটু সবুজ হয়, নীল সাগরে উথাল-পাতাল ঢেউ ওঠে, বসন্তে কোকিলের ডাকে মনটা হু হু করে! আকাশ নগরের রাজকন্যের বড় সাধ হয় তারার বসন খুলে ফেলে পৃথিবীতে নেমে e.
 এসে মাটি ছুঁতে, রোদ্দুর মাখতে আর বৃষ্টিতে ভিজতে।

 আকাশ নগরে কখনো বৃষ্টি দেখেনি সে। মেঘের গালচে তে হেঁটে বেড়িয়েছে এ মুলুক থেকে সে মুলুক কিন্তু বৃষ্টিতে ভেজা হয়নি। স্বপ্নে সে বৃষ্টি ভেজা মাটির সোঁদা বাস পায়। বুক ভরে সেই গন্ধ নিয়ে লুকিয়ে রাখে মনের কুঠুরিতে। রাজকন্যের  ইচ্ছে করে সেই রাজপুত্তুরকে খুঁজতে  যে তাকে পৃথিবী নামের নীল সবুজ গ্রহের স্বপ্ন দেখিয়েছিল। এক অচিন যানে চেপে সেই রাজপুত্তুর বিভাবরীর আকাশ নগরের পথে পথে ঘুরপাক খেত।  রাজপ্রাসাদের জানলা দিয়ে দেখতে পেত সে।  আর তারপর একদিন সেই রাজপুত্তুরের সাথে বিভাবরী খুব বন্ধুত্ব হল। সেই রাজপুত্তুর বিভাবরীকে  জল আর মাটির গল্প শোনাতো। সে শুনত অবাক হয়ে। 

সবার সময় বাঁধা থাকে। সেই রাজপুত্তুরেরও ছিল, সেও আকাশ নগর ছেড়ে চলে গেল একসময় । বিভাবরীকে উপহার দিয়ে গেল এক রঙীন পশমের গোলা। থমকে যাওয়া সময়ের রাজত্বে ঘুম ভাঙলে রাজকন্যে সেই পশমের গোলা নিয়ে খেলতে বসে, আর জেগে জেগে স্বপ্ন দেখে। পৃথিবীতে তখন কত বসন্ত পার হয়ে যায়, রাজকন্যে টেরও পায়না। সে শুধু স্বপ্ন স্বপ্ন খেলে, সেই স্বপ্নে  এক নীল সবুজ পৃথিবী তাকে হাতছানি দেয় । বিভাবরী সেই ডাকে সাড়া দিয়ে মনে মনে ছুটতে থাকে। ভাগ্যিস স্বপ্নের রাজ্যে কেউ কখনো হারিয়ে যায় না....
            
গাছগুলো 

অমিত মজুমদার 

১ 
সুমনের কথাটা শুনে খুব ভালো লাগলো অনুর। বললো, "তোমরা কবে থেকে গাছ লাগাতে শুরু করেছো ?"
     "সপ্তাহ খানেক হবে দিদি। ক্লাসে অনন্ত স্যার সবাইকে পাঁচটা করে গাছ বাড়িতে লাগাতে বলেছেন। স্যার প্রতি ক্লাসে বুঝিয়েছেন গাছ কাটার জন্য আমাদের পৃথিবীতে দূষণ বাড়ছে। তাই বলেছেন গাছ লাগাতে। পৃথিবীর অসুখ সারাতে গাছ লাগানোর কোনো বিকল্প নেই।"
        "বাহ খুব ভালো। গাছ কিনছো কোথা থেকে ?"
        "গাছ তো কিনছি না দিদি। আশেপাশের জঙ্গলে চোখ ফেললেই প্রচুর আম জাম পেয়ারা মেহগনি গাছের চারা দেখা যায়। সেগুলো তো কিছুদিন পরে মরেই যায়। আমরা সেই চারা তুলেই বিভিন্ন জায়গায় লাগাচ্ছি। নিয়মিত জল দিচ্ছি। আমাদের দায়িত্ব এই গাছগুলো বাঁচানোর।"
        "বাহ খুব ভালো তো।"
        "দিদি আমরা স্কুলের সবাই যদি পাঁচটা করে গাছ লাগাতে পারি তবে কতগুলো গাছ হবে ভাবো তো ?"
        কথাটা অনুর মনে ভীষণভাবে দাগ কাটলো। সুমনের সঙ্গে আরো দুজন আজ পড়তে এসেছে। সে ইংরেজি পড়ায়। প্রাইভেট টিউটর না৷ তবে তার বাড়িতে এখন অনেক ছেলেমেয়ে আসে ইংরেজিটা দেখিয়ে নিতে৷ সে কোনো টাকা নেয় না তার জন্য। সুমন নিয়মিত আসে। অনু সুমনকে বলল "একটা কাজ করলে হয় না ? ভেবে বলবে।"
        "কি কাজ দিদি ?"
        "পাকা রাস্তার ধারে তো কোনো গাছ নেই। ওখান দিয়ে আমরা যদি কিছু গাছ লাগাতে পারি তাহলে সেই গাছগুলো বাঁচাতে পারবো না ?"
        "অবশ্যই দিদি পাকা রাস্তার ধার দিয়ে যাদের বাড়ি আছে তাদের বলে দেবো গাছগুলোর দিকে নজর রাখতে।"
        "আচ্ছা বেশ।"
        "গাছ যোগাড় করবো দিদি ?"
        "না না৷ গাছ আমি নার্সারি থেকে কিনে আনবো। তোমরা সঙ্গে থেকো। শাবল আমাদের বাড়িতেই আছে। পাকা রাস্তার দুই পাশে একটু দূরে দূরে গাছগুলো লাগিয়ে দেবো।"
        "গাছগুলোতে বেড়াও দিতে হবে দিদি৷ না হলে ছাগলে খেয়ে নেবে। বেড়া নিয়ে ভাববে না দিদি। ওই দায়িত্ব আমাদের। গাছের শুকনো ডাল দিয়ে বেড়া দিয়ে দেবো।" 
        "বেশ বেশ। এবার একটা একটা কাজ করো। গাছ লাগানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে দশটা সেনটেন্সে একটা আর্টিকেল লেখো তো৷"

 ২ 
একদিন সকালে গাছ লাগানো শুরু হলো। ছেলেরাও চলে এসেছে। অনু একশোটা গাছের চারা কিনে এনেছে। পরে লাগলে আরো আনবে। সেগুন, অর্জুন, দেবদারু, মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া এমন অনেক গাছের চারা৷ খুব উৎসাহ নিয়ে চারা লাগানো শুরু হলো। অন্য কেউ হলেই মোবাইলে ছবি তুলে পোস্ট করে দিতো। কিন্তু অনু সেটা করলো না। একটাও ছবি তোলা হলো না। একদিনে একশোটা গাছ লাগানো সম্ভব না। প্রায় সাত দিন লেগে গেলো সবগুলো গাছ লাগাতে। পঞ্চাশ মিটার দূরত্বে গাছগুলো লাগানো হলো। প্রায় আড়াই কিলোমিটার জুড়ে লাগানো হলো গাছ। কয়েকদিন খুব পরিশ্রম গেলো সকলের। তবে ছেলেরা খুব খুশি। প্রতিদিন ভোরে এসে রোদ ওঠার আগে তারা নিজের হাতে রাস্তার ধারের জঙ্গল পরিস্কার করেছে। মাটিতে গর্ত করেছে। গাছ পুঁতেছে। যে যার বাড়ির সামনে লাগানো গাছে সকালে বিকেলে জল দিচ্ছে। পরিচর্যা করছে। বড় হলে এই রাস্তার চেহারা পাল্টে যাবে। 

 ৩ 
গাছগুলো বেঁচে গেছে। একটাও মরেনি। এখন অনেকটা সতেজ। নতুন পাতা এসেছে। ছেলেরা গাছগুলোর ঘিরে সুন্দর বেড়া দিয়েছে৷ ওদের নিয়ে অনুর লড়াই সফল। আজ তার খুব আনন্দিত হবার কথা। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। বরং খুব কষ্ট হচ্ছে। ছেলেগুলো বলেছিলো ছোটো ছোটো আর্ট পেপারের টুকরোয় প্রতিটা গাছের নাম, বিজ্ঞানসম্মত নাম, প্রজাতি সুন্দর করে লিখে নিয়ে আসবে৷ অনু খুশি হয়ে বলেছিল সেগুলো ল্যামিনেশন করে দেবে৷ বেশ কিছু কার্ড রেডিও হয়ে গেছিলো। আজ সকালে ছেলেদের নিয়ে গাছগুলোতে সেই কার্ড লাগাতে গিয়ে দেখলো রাতারাতি প্রতিটা গাছের বেড়ার গায়ে আগে থেকেই লাগানো আছে একটা ছোট্ট বোর্ড। তাতে লেখা নীলকন্ঠপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সৌজন্যে।

তরমুজ 

বন্দনা সেনগুপ্ত

এই গরমে শুধু ঠান্ডা আর জল খেতেই ভাল লাগে। আর, যখন গলা শুকিয়ে যায়, তখন তরমুজের চাইতে আরামপ্রদ আর কি আছে! তাই বন্ধুরা এসো, আজ একটু তরমুজ নিয়ে গল্প করা যাক।

তরমুজ বিশেষ করে গরম কালেই পাওয়া যায়। এদের বিভিন্ন আকার হতে পারে। কোথাও কোথাও খুব বড় বড় তরমুজ পাওয়া যায়। সে এক একটা এত বড় যে তাকে টেনে বাড়ি নিয়ে আসা মুস্কিল। আবার কোন কোনটা বেশ ছোটোও হয়। মাঝারি সাইজের তরমুজ এর চাহিদা বেশি। সাধারণত আমরা তরমুজের শাঁস লাল রঙেরই পেয়ে থাকি। কিন্তু, এটি হলুদ বা কমলা রঙেরও হতে পারে।

আমরা সাধারণত তরমুজ কেটে কেটে খেতেই ভালবাসি। অবশ্য বীজ ছাড়ানো না থাকলে খেয়ে অত আরাম হয় না।  আর, যদি সামান্য ঠান্ডা করে খাওয়া যায়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা।

আর খেতে পারি জুস। এখন তো খুব সহজেই বানানো যায়। বীজ বাদে টুকরো করে কেটে মিক্সিতে  দিয়ে দাও, জুস তৈরী। যদি চাও একটু আইস দিয়ে দাও, আর কি চাই! 

তরমুজ দিয়ে একটা মজার রান্না বলি। 

একটা প্লেটে কয়েক টুকরো নিজের পছন্দ মত সাইজ করে কাটা তরমুজ নাও। 
একটা বড় বাটি তে একটু বেসন, একটু ময়দা, একটু চাল গুঁড়ো, সামান্য গোল মরিচ, এক চিমটি বেকিং পাউডার ভালো করে মিশিয়ে নাও। 
অল্প অল্প করে জল দাও।
ভালো করে ফেটিয়ে একটা গোলা বানাও। খুব পাতলা হয় না যেন। স্বাদ মতন নুন দাও।
এবার একটি একটি করে তরমুজের টুকরো এই ব্যাটারে ডুবিয়ে ছাঁকা তেলে ভেজে নাও। 
তেল ঝরিয়ে একটু টমেটো কেচাপ বা সস দিয়ে খেয়ে দেখ। বাইরে নুন ঝাল, ভেতরে মিষ্টি। 
আমার তো ভাল লেগেছে। বন্ধুরা, তোমাদের কেমন লাগল জানিও কিন্তু।

শেষ করার আগে তরমুজের খাদ্য গুণ দেখে নিই। 

তরমুজের বেশিটাই, 90-92%, হল জল। তাই জন্যেই এই ফলটি আমাদের তৃষ্ণা মিটাতে এত সাহায্য করে।

100 গ্রাম তরমুজে মাত্র 30 ক্যালোরি পাওয়া যায়। তাই এটি মিষ্টি হলেও এটি খেয়ে সহজে কেউ মোটা হয়ে যাবে না। তাই বলে বেশি বেশি খেও না যেন। হজমের সমস্যা হতে পারে।

এতে ফ্যাট, প্রোটিন ও ফাইবার সামান্য মাত্রায় থাকলেও নানা রকম ভিটামিন, মিনারেল ও মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট আছে যারা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটির নিয়মিত ব্যবহার মানসিক চিন্তা ও চাপ কমাতে সাহায্য করে। অনিয়মিত  রক্ত চাপ ও কোলেস্টেরল জাতীয় সমস্যার সমাধানে সাহায্য করতে পারে তরমুজ।

ছোটোবেলা
সুখময় বিশ্বাস 
দশম শ্রেণী, পাটিকাবাড়ি উচ্চ মাধ্যমিক, বিদ্যালয় নদীয়া

মস্ত একটা বিকেল জুড়ে
মাঠের ওপর ছোটাছুটি।
সন্ধে হলে ঘরে ফিরে
মায়ের কোলে লুটোপুটি ।

খাওয়া সেরে দাওয়ার ওপর
গল্প শোনায় ঠাম্মা যখন,
চুপটি করে বসে পাশে
গল্প শোনা আমার তখন।

রাত্রি বেড়ে গভীর হলে 
বাবার বুকে ঢলে পড়া।
মায়ের হাত আমার মাথায় 
তখন ছিলো খোদাই করা। 

আজ‌ও বিকেল আসে ফিরে 
মাঠের ওপর নিয়ম ধরে।
‌হয়না আমার ছুটোছুটি 
ছোটবেলার মতো করে।

ইন্টারভিউ

অনন্বয় গোস্বামী
অষ্টম শ্রেণী, টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ পাবলিক স্কুল
হুগলি

এই ঘটনাটা আমি আমার দাদুর কাছ থেকে শুনেছিলাম । আমার দাদু ভারতের অনেক জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছেন , অনেক ধরনের চাকরিও করেছেন কিন্তু কোথাও মন বসাতে পারেননি । 
   একবার তিনি আসামের সাংবাদিকতার কাজ করতে গিয়েছিলেন । সেখানে তিনি তাঁর এক পুরোনো কলিগের বাড়িতে ওঠেন । তার কাছেই তিনি খোঁজ পেলেন এক সময়কার বিখ্যাত অসমীয়া নায়ক তপন কুমারের বাড়ির । তপন কুমার কুড়ি বাইশটা ফিল্মে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তারপর তিনি সিনেমা জগৎ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন । গত 30 বছরে তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি । খবরের কাগজে বা ম্যাগাজিনে তাঁর দেখাও পাওয়া যায়নি । 
   ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে বেশ খানিকটা রাত হয়ে গিয়েছিল । তপন কুমার-এর বাড়িটা শহর থেকে বেশ খানিকটা বাইরে । তাঁর বাড়ি থেকে বেরিয়ে দাদু কোন গাড়ি পেলেন না ।  গাড়ি না পেয়ে দাদু হাঁটতে লাগলেন । হঠাৎ খুব হাওয়া বইতে লাগল , বিদ্যুৎ চমকাতে লাগল ।  কিছুক্ষনের মধ্যেই বৃষ্টিও আরম্ভ হয়ে গেল । রাস্তায় কোথাও দাঁড়াবার জায়গা নেই । তার ওপর রাস্তাটাও খুব নির্জন । দাদু তাই বৃষ্টির মধ্যে হাঁটতে লাগলেন । 
    হঠাৎ কে যেন দাদুকে পেছন থেকে ডেকে বললেন - শুনছেন , এত বৃষ্টির মধ্যে কোথায় যাচ্ছেন ? রাস্তার পাশেই আমার বাড়ি । আসুন একটু বসবেন , বৃষ্টি কমলে চলে যাবেন ।
   উপায় না দেখে দাদু লোকটার সঙ্গে তার বাড়িতে গিয়ে বসলেন । বাড়িটা বেশ বড় কিন্তু বাড়িতে আর কেউ থাকে বলে মনে হলো না ।  লোকটা দাদুকে সোফায় বসতে বলে বললেন - কী খাবেন - চা না কফি? 
দাদু বললেন - চা ।
একটু পরে লোকটা ট্রেতে করে দু'কাপ চা এবং নিমকি বিস্কুট নিয়ে হাজির হলো । 
দাদু বললেন - আপনার নামটা তো জানা হলো না ।
লোকটা তার উত্তরে বললেন - আমার নাম অজয় শর্মা রায় ।
 দাদু বললেন - আমার নাম বিজয় রায় । হাসতে হাসতে বললেন আপনার নামের সঙ্গে আমার নামের বেশ মিল আছে । অজয় বাবু দাদুকে জিজ্ঞেস করলেন - আপনি এখানে কোথায় এসেছিলেন ?
দাদু বললেন - আমি এক অভিনেতার সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলাম ।
- মুচকি হেসে অজয় বাবু বললেন - অভিনেতা ? মানে সিনেমার ? নামটা জানতে পারি ?
দাদু উত্তরে একটু হাসলেন ।
 অজয় বাবু বললেন - বুঝেছি , আপনি নামটা গোপন রাখতে চাইছেন । আসলে আমিও একসময় ফিল্ম লাইনে কাজ করতাম কিনা । অথচ দেখুন আমার বাড়ির কাছেই একজন সিনেমা স্টার থাকেন , আমি জানতামই না ।
    ইতিমধ্যে বৃষ্টিটা একটু কমেছে । দাদু বললেন - আজ তবে উঠি ।
অজয় বাবু বললেন - বৃষ্টি এখনও পুরোপুরি কমেনি , ভিজে যাবেন । এই ছাতাটা নিয়ে যান ।
দাদু বললেন -থ্যাঙ্ক ইউ !
ছাতাটা নিয়ে দাদু বেরিয়ে গেলেন । সেদিন দাদুর ফিরতে ফিরতে রাত দুটো বেজে গিয়েছিলো । 
   পরের দিন সকালে দাদু ছাতাটা অজয় বাবুর কাছে ফেরত দিতে যান । অজয় বাবু বললেন - মনটা খারাপ হয়ে গেল । এইমাত্র কাগজে পড়ে জানতে পারলাম  যে , বিখ্যাত অভিনেতা তপন কুমার পরিচয় গোপন করে আমার পাশের পাড়াতেই থাকতেন । গতকাল সকালে তিনি মারা গেছেন । অথচ ভাবুন একবার , আমি এসব ব্যাপারে কিছুই জানতাম না ।
 চমকে উঠলেন দাদু । বললেন - সেকি আমি যে গতকাল সন্ধ্যায় তাঁর ইন্টারভিউ নিয়েছি , ছবি তুলেছি। 
    অজয় বাবু বললেন - কিন্তু যিনি মারা গেছেন তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়া কী করে সম্ভব ?
দাদু গম্ভীর হয়ে বললেন - আমার কাছে প্রমান আছে । আমি ছবি তুলেছি , আমাদের কথাবার্তা রেকর্ড করা হয়েছে । এর মধ্যে আমি ফিল্মটা ডেভেলপ করতেও পাঠিয়ে দিয়েছি ।
 গভীর উৎকণ্ঠা নিয়ে দাদু ছুটলেন স্টুডিওতে । কিন্তু সেখানে গিয়ে শুনলেন যে , রিলে কোনো ছবি ওঠেনি - সব ফাঁকা । বাড়ি ফিরে দাদু তখন শেষ অস্ত্র হিসেবে টেপ রেকর্ডার টা চালালেন । কিন্তু সেখান থেকে একটা খসখস শব্দ ছাড়া আর কোন কিছুই শুনতে পাওয়া গেল না। 

প্রকাশিত। ক্লিক করে পড়ুন 

পাঠ প্রতিক্রিয়া ১
(জ্বলদর্চির ছোটবেলা সংখ্যা-২৭ পড়ে সুহেনা মন্ডল, চতুর্থ শ্রেণী, দিল্লী পাবলিক স্কুল, নর্থ কলকাতা, যা লিখল)

জ্বলদর্চির বিশেষ ছোটবেলা সংখ্যা-২৭ পড়লাম। প্রচ্ছদটি খুব সুন্দর হয়েছে। আমার খুব ভালো লেগেছে কারণ প্রচ্ছদে একটি বাচ্চা ছেলে খেলছে।আমরা তো এখন কোভিডের জন্য বাইরে তেমন বেরোতে পারছি না।সৌপর্ণ সেনের ছবিটা খুব ভালো আঁকা হয়েছে।এতো সুন্দর রং করেছে যেন মনে হচ্ছে একদম সত্যি কারের। মুক্তি দাশের "অঞ্জলি ও  কাঠবেড়ালী"গল্পটি পড়ে জানতে পারলাম কাজী নজরুল ইসলাম সেই বিখ্যাত কবিতা"খুঁকি ও কাঠবেড়ালী" কেন লিখেছিলেন। গল্পটা খুব ভালো লেগেছে আমার। সন্দীপ বিশ্বাসের ছবিটি দেখে গ্ৰামের সুন্দর পরিবেশ মনে পড়েছে। জানোতো গ্ৰামের গাছপালা, ঘরবাড়ি আমার খুব ভালো লাগে।শাঁওলী দের লেখা গল্প"টুংটাং,সুখী রাজপুত্র ও একটি ইচ্ছে পূরণের গল্প"আমার সবথেকে ভালো লেগেছে।এটা পড়ে আমি বুঝতে পেরেছি যখন কোন গরীব মানুষের সাহায্যের দরকার হয় তখন আমাদের সাহায্য করা উচিৎ।আর আমরা যেন সবাই টুংটাং এর মতো সাহায্য করতে পারি।দীপরাজ ঘোষের ছবিটা আমার বেশ রঙীন লেগেছে।হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা "সামনে দেখে যাও"কবিতাটি পড়ে একটা জিনিষ শিখলাম। আমরা যেন সবসময় সামনের দিকে এগিয়ে যাই,কখনো যেন পিছিয়ে না পড়ি। খুব ভালো লিখেছে। শুভেন্দু মজুমদারের ছড়াটি বেশ মজার। এইরকম মজার ছড়া আমার খুব ভালো লাগে।প্রজ্ঞা দত্তর ছবি খুব সুন্দর।কি সুন্দর রং করেছে!ছবিটা দেখে মনে হচ্ছে আমিও এই মেয়েগুলোর সাথে কানামাছি খেলা করি। নম্রতা সাঁতরার লেখা গল্প"মাতৃভাষা" পড়ে মনে হলো আমরা বাঙালিরা এখন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ইংলিশ শুনে শুনে পড়ে পড়ে আমাদের মাতৃভাষাই হারিয়ে ফেলছি। ভাষাটা যেন হারিয়ে না যায় তাই আমরা যেন বাংলায় কথা বলি,পড়ি,লিখি। এতে আমাদের মাতৃভাষা হারিয়ে যাবে না।তাই তো আমি জ্বলদর্চি পড়ি। ছোট্ট রায়ান জ্যোতির আঁকা পেঙ্গুইন টা খুব ভালো হয়েছে। তোমার আঁকা খুব মিষ্টি রায়ান।"অস্মিতার ভ্রমণের ডায়েরী থেকে সত্যি কারের গল্প" লিখেছে অস্মিতা ঘোষ। গল্পটি খুব রোমাঞ্চকর লাগলো। গল্পটা খুব ভালো লেখা হয়েছে। গল্পটা পড়ে আমার সেদিনের কথা মনে পড়ে গেল। সেদিন আমিও বেশ ভয় পেয়েছিলাম।দীপনারায়ণ শাসমলের ছবিটা ভালো হয়েছে তবে একটু প্র্যাকটিস করতে হবে।প্র্যাকটিস কর ।আরো ভালো হবে। আমার মা বলে প্র্যাকটিস মেকস ম্যান পারফেক্ট।গৌতম বাড়ই এর লেখা ধারাবাহিক বেশ ভালো।আর একটা কথা, এই জ্বলদর্চি পত্রিকায় মনোজিৎ বেরার প্রশ্ন থেকে কত কিছু জানতে পারি। জ্বলদর্চি না পড়লে জানতেই পারতাম না।আমি যেন এইরকম গল্প, কবিতা, ছড়া সবসময় পড়তে পারি ও ভালো ভালো ছবি দেখতে পারি। এগিয়ে চলুক জ্বলদর্চি। এইরকম একটা পত্রিকা আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য মৌসুমী আন্টিকে ধন্যবাদ।


পাঠ প্রতিক্রিয়া ২
(জ্বলদর্চির ২৭ তম ছোটবেলা সংখ‍্যা নবম শ্রেণীর সোমরাজ দাস যা লিখল)

গত একমাস ধরে মা জ্বলদর্চি পত্রিকার কথা বলছে।ছবি আঁকতে বলেছে আমায়,ভাইকে।আমি শুধু একটাই আবদার করেছি আমায় পড়ে শোনাতে হবে।আমিও পড়বো,তবে মা পড়লে শুনতে ভালো লাগে।

এই সংখ‍্যাটা আমার কাছে বিশেষ প্রিয় কারণ আমার দুই ভাইয়ের ছবি আছে এখানে।সৌপর্ণ আর দীপরাজের।খুব সুন্দর এঁকেছে ওরা। আমার খুব ভালো লেগেছে।একটা ছোট ভাই নামটা মনে নেই একটা পেঙ্গুইন এঁকেছে।মনে হল ও খুবই ছোট কিন্তু খুব ভালো রঙ করেছে একটুও বাইরে যায়নি।সবার ছবিই ভালো হয়েছে।

এবার বলি গল্পের কথা।নজরুল ইসলামের খুকু ও কাঠবেড়ালি কবিতাটা পড়েছিলাম কিন্তু মনে ছিলনা।মা মনে করিয়ে দিল।তারপর  অঞ্জলী ও কাঠবেড়ালি গল্পটা খুব ভালো লাগলো কিন্তু টুংটাং এর গল্পটা সেরা।ওর সাহায‍্যের মনোভাব আমায় ছুঁয়ে গেছে।টুংটাং এর মা,বাবা,আঙ্কেল সবাই খুব ভালো।হরিৎ মামার কবিতা খুব ভালো লেগেছে।আজীবন মনে রাখবো সামনে এগোতে হবে।আশ্চর্যান্বিত হয়েছি ঐ ভনভন,বনবন,কনকন কবিতাটি পড়ে।কি সুন্দর মিল দেওয়া কবিতা।স্কুলের কবিতার বাইরে এই কবিতাদুটি আমার খুব ভালো লাগলো।মার কবিতা খুব কঠিন বুঝিনা ভালো।

মৌসুমী মাসিমুনি আমার বানান খুব ভুল হয় আর হাতের লেখাও খুব ভালো না তাই মা একটু রাগারাগি করলেও আমার খাতায় লেখা মনোভাবটি সংশোধন করে পাঠিয়ে দিচ্ছে।আমার খুব ভালো লাগছে এই পত্রিকা।একটা বেড়ানো অভিজ্ঞতা লেখার চেষ্টা করবো।জ্বলদর্চি জিন্দাবাদ।
 

পাঠ প্রতিক্রিয়া ৩
(জ্বলদর্চির ২৬ তম ছোটোবেলা সংখ্যা পড়ে কবি বিপ্লব চক্রবর্তী যা লিখলেন) 

ওয়েব ম্যাগাজিন আমি পড়তে অভ্যস্ত নই। মোবাইল সেটে পড়তে চোখে পীড়া দেয় বলে পড়িও কম। ফলে ওয়েব ম্যাগাজিনে লিখতেও খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করলেও লিখি।
 আমার ধারনাটা যে অনেকটাই ভুল, সেটা মৌসুমী ঘোষ সম্পাদিত, ওয়েব ম্যাগাজিন  জলদর্চির  ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা পড়েই আমি বুঝতে পারলাম। তীক্ষ্ণ এবং পরিমিত লেখায় যে একটি ওয়েব ম্যাগাজিনও পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষন করতে পারে,সেটা মৌসুমী দেখিয়ে যাচ্ছেন।প্রতিটি সংখ্যা আমি গুরুত্ব সহকারে পড়ি।শিশুদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে সম্পাদকের এই দায়িত্বপূর্ণ প্রয়াস অভিনন্দন যোগ্য।
 আমি ছোটোবেলা ২৬ তম সংখ্যা নিয়ে কয়েকটি কথা না‌ লিখে পারলাম না। প্রথমেই ভালো লাগায় চমকে উঠলাম,সুদীপ পাত্রের তোলা পলাশশিশুর  কভার ছবি দেখে।অনবদ্য, অসাধারণ ছবি ধরা পড়েছে।
 যে কোন পত্রিকার সম্পাদকীয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।এই সংখ্যাতেও  শিশুর মনবিকাশের সাম্প্রতিক মাধ্যমকে আলোচনায় এনে পত্রিকার বিষয় নিয়ে একটি সংক্ষেপিত  রূপরেখা দিয়েছেন,যা পাঠকের মনযোগ আকর্ষণ তৈরি করেছে।
অনন্যা দাসের  "রিমি আর মার্গারেট" গল্পটি ভালো লেগেছে। কম্পিউটারে গেম খেলতে খেলতে টাইম মেশিনে সওয়ারি রিমি পৌঁছে গিয়েছিল ১৮৭৮ সালের আয়ারল্যান্ডে।সেখানে দাদু আর দিদার সঙ্গে থাকা শিশু মার্গারেটের শিশুবেলাটা দেখতে পেল। গল্পকার টাইম মেশিন টাকে যথার্থ ব্যবহার করে,পাঠককে একটি ঐতিহাসিক সত্যের সামনাসামনি নিয়ে গেছেন, শিশু মনের রঙে লাগিয়ে। লেখক জানার আগ্রহটাকে বাড়িয়ে দিয়েছেন, রূপকের আশ্রয়ে।সাবাস  অনন্যা দাস আপনাকে।
প্রভাত মিশ্রও সুন্দর  দায়িত্ব সচেতন ছড়া কবিতা, "আমপাতা জামপাতা" লিখেছেন। শিশুর শিক্ষক ভীতি আমরা এখনও দূর করতে পারিনি,অথচ রঙ্গোলির মতো টিভির অনুষ্ঠানে শিশুরা হাজার বকা খেয়েও যেভাবে মিশে যায় ; সেই বৈসাদৃশ্যকে সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন প্রভাত মিশ্র।
রীতা মজুমদারের হাসি গল্পটির কোথায় যেন বাস্তবতার খামতি রয়েছে। নৈহাটি ব্যাণ্ডেল একটা ট্রেনই সারাদিন আপডাউন করে।ঐটুকু পথে হারাবার ক্ষেত্রে যুক্তিটি বলিষ্ঠ মনে হয় নি। নিতান্তই  নিজের মত লিখলাম।
বানীয়া সাহার "আঁকাআঁকি " প্রয়োজনীয় সংযোজন এই সংখ্যার।এই লেখায় এমন অনেক ইনফরমেশন আছে, যা ভাবী অঙ্কনশিল্পী শিশু, ও শিশুদের অভিভাবকরা সমৃদ্ধ হবেন। বানীয়া সাহার এই লেখাটি প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হলে আরো অনেক পাঠক সমৃদ্ধ হোত।
খুব আনন্দ পেলাম প্রবাহনীল দাসের বিতর্ক ছড়াকবিতাটা পড়ে। মুরগি এবং পায়রার বিতর্ককে তুরস্ক পর্যন্ত নিয়ে গেছে অপুর্ব মুন্সিয়ানায়। কে নেই তার এই বিতর্কে; শালিখ, ফিঙ্গে, কাকাতুয়া, বুলবুলি,আর আছে সেই গেছো দাদা।কী চিনতে পারছেন না গেছোদাকে, না চিনতে পারলে প্রবাহনীলের ছড়াটা  অবশ্যই পড়ে নিন।
আর এক মিষ্টিলেখক সাঁঝবাতি কুণ্ডু।পিকলু এবং গুবলুর ডিগবাজি খাওয়া বাঁদর খেলনা নিয়ে টানটান উত্তেজনার গল্প লিখেছেন এই ক্ষুদে গল্পকার।। আমার খুউব ভালো লেগেছে।সাঁঝবাতি যেন আরও লেখে, সম্পাদকের প্রতি আমার অনুরোধ থাকলো।
শেষ হয়েছে গৌতম বাড়ই এর ধারাবাহিক, "সাঁতরাইচেঙ্গার  রহস্যময় সাতকাহন"  দিয়ে। বাংলা সাহিত্যে, ভুটানপাহাড় আর উত্তরবঙ্গ  রহস্য রোমাঞ্চের বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লেখক সেটাই টুকরো টুকরো পরিবেশন করে চলেছেন।
সম্পাদক মৌসুমীকে  পুনরায়  ধন্যবাদ জানাই, কেননা তিনি তাঁর সম্পাদনাকে আমাকে  দিয়ে পড়িয়ে নিচ্ছেন। নমস্কার।

আজকের বিষয় : কিছু খেলার সংশ্লিষ্ট বিখ্যাত মাঠ।

১. যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন কোথায় অবস্থিত?
২. ইডেন গার্ডেন এর মাঠ কোন খেলার সাথে যুক্ত?
৩. বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম কোন দেশে অবস্থিত?
৪. বরবাটি স্টেডিয়াম কোথায় অবস্থিত?
৫. চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম ভারতের কোন রাজ্যে অবস্থিত?
৬. চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম কোন খেলার সাথে যুক্ত?
৭. মুম্বাই এর একটি বিখ্যাত ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নাম বলো।
৮. ইংল্যান্ড এর হারলিংটন স্টেডিয়াম কোন খেলার সাথে যুক্ত?
৯. রেস কোর্স স্টেডিয়াম কোথায় অবস্থিত?
১০. রেস কোর্স স্টেডিয়াম কোন খেলার সাথে যুক্ত?


গত সপ্তাহের উত্তর:
১.ফুটবল ২.ফুটবল ৩.ক্রিকেট ৪.দাবা ৫.এয়ার রেসিং ৬.বিলিয়ার্ড ৭.বাস্কেটবল ৮.ফুটবল ৯.ক্রিকেট ১০.গল্ফ

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

1 Comments