জ্বলদর্চি

জালালুদ্দিন রুমি (Poet Jalal-ad-Din Muhammad Rumi and his poetry)

Jalal-ad-Din Muhammad Rumi and his Poetry

কবি জালালুদ্দিন মুহাম্মদ রুমি ও তাঁর  কবিতা



তৌ ফি ক  হো সে ন 

এটা অনুবাদের বিভাগ। সপ্তাহে একবার অনুবাদ সাহিত্য দেওয়ার চেষ্টা থাকবে। প্রাথমিক পর্যায়ে থাকবে কয়েকজন পার্সি ভাষার বিখ্যাত কবিদের কবিতা। অনুবাদক এই ভাষায় পুরোপুরি অজ্ঞ, অগত‍্যা ইংরেজি থেকে অনুবাদ। সর্বাগ্রে রুমির রুবাইয়ের কয়েকটি পর্ব। তাঁর কবিতার বিশ্বজনীন আবেদন নিশ্চয় ভালো লাগবে।
  রুমি বা মৌলানা জালালুদ্দিন রুমি বা জালালুদ্দিন বাল্খি ছিলেন অন‍্যতম শ্রেষ্ঠ ও কিংবদন্তিসম পার্সি সুফি কবি। সেই সময়ের পারস‍্য সাম্রাজ্যের আফগানিস্তানের বালখে 1207 খ্রিষ্টাব্দের 30 সেপ্টেম্বর তিনি জন্মেছিলেন। তাঁর পিতা বাহাউদ্দিন ওয়ালাদ ছিলেন একজন অতীন্দ্রিয় সাধক, তত্ত্বজ্ঞানী ও ধর্মীয় গুরু। বিভিন্ন দেশ ঘুরে তাঁরা স্থিতু হন তুরস্কের কোনিয়ায়। পিতার মৃত্যুর পর তিনি সেখানকার দরবেশ সম্প্রদায়ের দায়িত্ব নেন। তাঁর অভিন্ন -হৃদয় বন্ধু শামস্-ই-তবরিজ তাঁর জীবন ঔ দর্শনকে সম্পূর্ণ বদলে দেন। শামস্-এর প্রভাবেই বিশ্ববাসী রুমির মতো একজন বিশ্বকবিকে পেয়েছেন। 'মসনবি' তাঁর শ্রেষ্ঠ তথা বিশ্ব সাহিত‍্যের অন‍্যতম শ্রেষ্ঠ কাব‍্যগ্রন্থ। এই 'মসনবি'কে পার্সি ভাষার কোরান বলা হয়। যাপন, দর্শন ও কাব‍্যে তিনি যাবতীয় প্রতিষ্ঠিত বেড়াজাল ভেঙে দিয়েছিলেন। তাঁর সৃষ্টি ও সুফি মতাদর্শের উত্তরাধিকার সমগ্র মানবজাতির আদরের সম্পদ। তবু আক্ষেপ, তাঁর তথা অপরাপর সুফি সাধকদের সুফিবাদ ও মানবতার আদর্শ যদি মুসলিম তথা গোটা মানব সমাজ একটু বেশি করে গ্রহণ করতো তাহলে হয়তো আমরা সন্ত্রাসবাদ, মৌলবাদ, হিংসা, অসহিষ্ণুতায় এতো নগ্নভাবে পীড়িত হতাম না। তিনি প্রয়াত হয়েছিলেন 12 ডিসেম্বর,1273। রুমির শেষ যাত্রায় পাঁচ ধর্মের অগণিত মানুষ সামিল হয়েছিলেন।
  কোলম‍্যান বার্কসের ইংরেজি অনুদিত রুবাই সংগ্রহ 'বার্ডসঙ' থেকে কবিতাগুলি নেওয়া হয়েছে।


এক

যেমন কাকেদের, তেমন তোমার পছন্দ 
শীতের শিরশিরানি আর আদুড় অঙ্গ,

এখন দেখ এটা ওটা ভরিয়ে দেয়
নতুন পাতায় আর গোলাপের উদ্বোধনে
আর রাতের পাখির গানে,

তোমার প্রেমকেও ঢেলে দাও
এই মরশুমী মুহূর্তে,
নয়তো প্রেম শেষ হয়ে গেলে
তুমি প্রদীপের পর প্রদীপ ক্রয় করতে থাকবে 
প্রেমকে খুঁজতে!


দুই 

বাতাসে ওঠে ঢাকের আওয়াজ 
এর স্পন্দন, আমার হৃদয়।

ঝংকারের মধ্যে থাকা এক কণ্ঠ বলে,
'আমি জানি তুমি ক্লান্ত 
তবু এসো। এটাই পথ।'


তিন 

তারাগুলি পরিষ্কার পুড়ে যায় 
সারা রাত, ভোর পর্যন্ত।

ওটা নিজে করো, তারপর এক বসন্ত
উঠে আসবে অন্ধকারে 
তোমার গভীরতম তৃষ্ণার জল সহ।


চার

এখন ঘুমিও না।
ঘূর্ণায়মান রাত্রিকে চক্কর খাইয়ে দাও এই বৃত্তে।

তোমার ললাট, চাঁদ,
এই লন্ঠন নিয়ে আমরা বসে আছি।

জেগে থাকো এই বাতিগুলি নিয়ে।
ঘুমিও না।


পাঁচ 

যদি তুমি চাও যা দৃশ‍্যমান বাস্তবতা দিতে পারে,
তবে তুমি কর্মচারী।

যদি তুমি চাও না-দেখা জগত,
তবে তুমি সত‍্যের সঙ্গে বসত করছো না।

দুই ইচ্ছাই বোকা -বোকা,
তুমি যা চাও তা
ভালোবাসার বিভ্রান্তিকর আনন্দ -
এটা ভুললেই তোমার ক্ষমা।


ছয়

যদি তুমি সত্যি মানুষ হও
প্রেমের জন্য সবকিছু উড়িয়ে দাও।

নয়তো, এই ভিড়
ত‍্যাগ করো।

অর্ধহৃদয়বত্তা মহত্ত্বে পৌঁছায় না।
তুমি ঈশ্বরকে খুঁজতে বেরিয়েছো
আর তারপর 

থামছ দীর্ঘসময় 
নীচমনা পান্থশালায়।


সাত

দ্রুতগতির খাঁড়ি অভিমুখে থাকা নৌকায় থেকে 
মনে হয় গাছগুলি দৌড়াচ্ছে তীরে।

আমাদের চারপাশে যা পাল্টাচ্ছে বলে মনে হয় 
তা আসলে আমাদের ন‍ৌকার বেগ
এই জগতকে ছেড়ে যাওয়ার সময়।


আট

এটা কী যা আনন্দ দেয় এক রূপে 
আর যখন দেয় না 
তখন হয়ে যায় নিষ্প্রভ, ছায়াময়?

কী এটা যা পিছলে পালায় অনন্তে
তারপর পাল্টা আঘাত করে 
ধরে অন্য রূপ?


নয়

আমি বললাম, 'আমি তোমার হাত থেকে তুলে নেব,
পারাবতের মতো।' তুমি বললে--

'এটা আমার ভালোবাসা 
যা আলগা করবে তোমার ডানা,'

আমি বললাম, 'সর্বাঙ্গে বিনম্র হয়ে পড়ে থাকবো
তোমার পায়ের কাছে, সারমেয়র মতো।'

তুমি বললে,
'তোমার কী গৌরব!'


দশ

আত্মাকে সহ‍্য করতে হবে গোপনীয়তাগুলি
যা বলা যায় না, প্রকাশ‍্য অবমাননা, 
মানুষের ঘৃণায় উল্লেখ।

যখন তুমি একজন মানুষ 
ঘৃণার ভেতরে থাকো। ওখানে কাজ করো
নীরবে অন‍্যদের সঙ্গে।

যখন তুমি বিশুদ্ধ আত্মা,
পালাও, দ্রুত!
_____________________________________
অলংকরণ- ররবীন্দ্রনাথ কপাট  
_____________________________________

প্রতি বুধবার।  প্রকাশিত হবে। 
অনুবাদ সাহিত্য / তৌফিক হোসেন

মতামত জানাতে পারেন --
jaladarchi@yahoo.in 
        

Post a Comment

2 Comments