Spoken language of the fishing community of East-Medinipur district / Bimal Mondal
পূর্বমেদিনীপুর জেলার মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কথ্যভাষা
পঞ্চম অধ্যায় || শব্দ ভাণ্ডার (Vocabulary)
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের
কথ্যভাষার শব্দভাণ্ডারের উপাদানগত পরিচয়:-
১.সংস্কৃত উৎসজাত শব্দ
মান্যচলিত বাংলা ভাষার মতো এই জেলার মৎস্যজীবীদের কথ্যভাষা সংস্কৃতমূল শব্দকে তিনভাগে ভাগ করা হয়।যথা-
১.১ তৎসম শব্দ—
এই জেলার মৎস্যজীবীদের কথ্যভাষায় সাধারণত তৎসম শব্দের ব্যবহার তেমন দেখা যায় না। তবে বেশ কিছু তৎসম শব্দ এখানে অবিকৃতভাবে উচ্চারিত হতে দেখা যায়।এছাড়া এই শব্দের পরিবর্তনও দেখা যায় ধবনিতাত্ত্বিকগত দিক থেকে। এখানকার কথ্যভাষায় যেভাবে তৎসম শব্দ ব্যবহার হতে দেখা যায় তা হল—
ক. বাউ<বায়ু — পেটের বেথা হোলে খালি বাউ উঠে।( পেটের ব্যথা হলে শুধু বায়ু ওঠে।)
খ. ঘাশ<ঘাস- তোরমনে গেড়িয়াধারনু চাটি ঘাশ কাটি লিয়া আসবু।( তোরা পুকুর ধার থেকে কিছু ঘাস কেটে নিয়ে আসবি।
গ.ফ<ফল— টকাটা নৌকায় জ্বরে শুইয়া আছে সউজানে দুটা ফ লিয়া যাইটি।( ছেলেটা নৌকায় জ্বরে শুয়ে আছে তাই তার জন্য ফল নিয়ে যাচ্ছি।)
ঘ. পাথোর<পাথর— তোনে নদীতে পাথোর দেখিয়া জাল ফেলাইবু।( তোরা নদীতে পাথর দেখে জাল ফেলাবি।)
ঙ.ঘর— কি খাবা তা ঠিক নেই, আবার ঘর-টর করিয়া কি হবে?( কি খাব তা ঠিক নেই আবার ঘর করে কি হবে?)
চ.মাউশ <মানুষ — তোনে যা করুটু মনে হটে আর মাউশ হবুনু।(তোরা যা করছিস মনে হচ্ছে আর মানুষ হলি না।)
ছ.নউকা< নৌকা — নউকাটা অনেকদিন থেকিয়া খেরাপ হয়য়া পড়িয়া আছে।( নৌকাটা বহুদিন থেকে খারাপ হয়ে পড়ে আছে।)
জ.বিসনা<বিছানা — রাইত হটে নউকায় বিসনাটা করি লিয়া শুই যা।( রাত হচ্ছে নৌকাতে বিছানা করে শুয়ে যা।)
ঝ.গাড়িয়া<গেড়িয়া<পুকুর —তুই গাড়িয়া ধারনু কি লাঠিটা লিয়া আসবু? ( তুই পুকুর থেকে লাঠিটা কি নিয়ে আসবি?)
ঞ.বিশ<বিষ— বিশ খাইকি বউটা মরি গেলা।( বিষ খেয়ে বউটি মারা গেল।)
১.২ অর্ধ- তৎসম শব্দ
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কথ্যভাষায় অর্ধ - তৎসম শব্দের ব্যবহার দেখা যায়। তবে পদের আগে কিংবা পরে 'আ' কিংবা 'অ্যা' স্বরের ব্যবহার দেখা যায়। কখন কখনও সংযুক্ত ব্যঞ্জনের উচ্চারণে অল্পবিস্তর বিকৃতি করে উচ্চারণ করা হয়।'অ' - স্বরের রূপান্তর সাধারণত 'ও' স্বরে রূপান্তর বা তার বিপরীত প্রক্রিয়া। পদান্তে মহাপ্রাণ ধ্বনির পরিবর্তে অল্পপ্রাণ ধ্বনি অঘোষ ধ্বনির ঘোষবৎ উচ্চারণের প্রবণতাও দেখা যায় এই সম্প্রদায়ের কথ্যভাষায়।কখনও আবার পদের আদিতে 'র' -কারের লোপ বা আগম কিংবা 'র' বা 'ন' ধ্বনির 'ল' ধ্বনিতে রূপান্তর দেখা যায়।আবার য-ফলা ও যুক্ত ব্যঞ্জনে অপিনিহিতির মতো স্বরাগম, ব্যঞ্জন ধ্বনির দ্বিত্ব প্রভৃতির কারণে তৎসম শব্দগুলি এই জেলার মৎস্যজীবীদের কথ্যভাষায় প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু বিকৃতি বা পরিবর্তন লাভ করে অর্ধ- তৎসম শব্দে পরিনত হয়েছে। তবে এই জেলার মৎস্যজীবীদের কথ্যভাষায় তৎসম শব্দের মতো অর্ধ- তৎসম শব্দাবলীর সংখ্যাও খুব বেশি নেই। আসলে বেশ কিছু অজ্ঞাতমূল শব্দাবলী আঞ্চলিক শব্দ হিসেবে ব্যবহার দেখা যায়।
অর্ধ-তৎসম শব্দের নিদর্শনঃ
(বর্ণানুক্রমিক অর্ধ- তৎসম শব্দ)
ব্যবহৃত শব্দ মূল শব্দ
অত্ বা এখন
অসার চাওড়া
আনিজ আনাজ
আইনা আয়না
আইসো এসো
আঁঠিলা এঁটেল
ইঁটা ইট
ইলচি ইঞ্চি
উঁচা উঁচু
উধার উদ্ধার
উতরা উত্তর
এঠি এখানে
ওষুদ ওষুধ
ওঁঠ ওঠ
ওউটা এইটা
কুমা কোন দিকে
কেঁচুয়া কেঁচো
কাই কোথায়
কল্লা করলা
কুটা খড়
খঁড়া খোঁড়া
খৎ গোবরে পচানো হয় যা
খাঁড়িয়া খেড়িয়া
খুসামদ খোশামোদ
গইরা গভীর
গেঁড়া শামুখ
গসাঁই গোসাঁই
গেড়িয়া পুকুর
গত্ত গর্ত
ঘসি ঘুটে
চেরাক্ প্রদীপ
চিনা চিহ্ন
চড়ি পাখি চড়াই পাখি
ছামু সামনে
ছেই ছাগল
ছেনা ছানা
ছেঞিজাল ছেকি জাল
জমি জমিন
জামি জামাই
জালি জেলে
জেগিয়া জায়গা
জিসা জিজ্ঞাসা
জনি পোকা জোনাকিপোকা
জন- রাত জ্যোৎস্না রাত
ঝেইরি ঝিয়ারি
ঝলমলিয়া ঝলমলে
ঝোউড়ি ঝিউড়ি
ঝাপাঝুঞা সাঁতারকাটা
টুকুসের একটুখানি
টাঁউক টাঁক
টুই খড়েরচাল
ট্যাঁসা আধা পাকা
ঠোট ঠোঁট
ঠালা ঠেলা
ডুমরা মাছ ডোমর্যা মাছ
ডাঙান মার
ডিবা ডেবে
ঢিলা ঢিলে
ঢোউ ঢেউ
ঢেকা ঢেকা
তারুয়া তরল
তামসা তামাসা
তিলোচন ত্রিলোচন
তবড়ি তুপড়ি
তফরগাদি তুফানগাজি
থুত্থুরিয়া থুত্থুরে
থেপ/থোপ থুথু
থাবড়ি থাপ্পড়
থফা আল্পনা
দাউলি কাটারি
দুলা দোলা
দড়া দড়ি
দাড়িয়া দাঁড়া
ধুঁয়া ধোঁয়া
ধুয়া ধুলো
ধবা ধোবা
নাঙ স্বামী
নঙ্গর নোঙর
নুঞি লুঞি
ন্যাজ লেজ
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মৎস্যজীবীদের কথ্যভাষায় ব্যবহৃত যে সব অর্ধ- তৎসম শব্দ সমীক্ষায় উঠে এসেছে তা পরবর্তী পর্বে বর্ণানুক্রমে সেই শব্দগুলি আলোচিত হবে।
জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন
0 Comments