জ্বলদর্চি

রিকিসুমের পিশাচ(পর্ব-৪)/আবীর গুপ্ত

রিকিসুমের পিশাচ
পর্ব-৪
আবীর গুপ্ত
(সাত)
মেটালিক ভয়েস শুনতে পেল –
আপনাকে জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। আমাদের যন্ত্র বলছে আপনার ইমিউনিটি সিস্টেম বেশ ভালো এবং কোভিড ভাইরাসের ক্ষতি করার সম্ভাবনা না থাকলেও আপনি নিজে ওই ভাইরাস ক্যারি করছেন। তাই, এটা করতেই হচ্ছে। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই কাজটা হয়ে যাবে। 
রাজেশ ঘড়ি দেখছিল, ঠিক পাঁচ মিনিট বাদে ওই স্বচ্ছ ঘেরাটোপ  অদৃশ্য হয়ে গেল। কিন্তু, শরীরে একটা অস্বস্তি। প্রথমে অস্বস্তি লাগছিল, পরে বুঝলো ওর দেহের ভিতরে কিছু একটা হচ্ছে। যেটা অস্বাভাবিক। ওরা থটরিডিং জানে, তাই কোন কিছু ভাবা ঠিক হবে না। কাউকে দেখতে পাচ্ছে না, তাই ফাঁকা ঘরকে উদ্দেশ্য করেই বললো –
  আপনাদের কাউকে দেখতে পাচ্ছি না, কিন্তু আমার অনেকগুলো প্রশ্ন আছে। আপনারা কে? এখানে কি করছেন? পৃথিবীর অভ্যন্তরে এত নিচে প্রচন্ড গরম হওয়ার কথা অথচ বেশ ঠান্ডা! কেন? 
ঠিক আছে, এক এক করে জবাব দিচ্ছি। আমরা পৃথিবীর বাসিন্দা নই, এসেছি প্রায় ৯০ বছর আগে অন্য এক গ্রহ থেকে। আপনারা যাকে মঙ্গল গ্রহ বলেন, আমরা সেই মঙ্গল গ্রহ থেকে এসেছিলাম পৃথিবীকে উন্নত করবো বলে। আসলে আমাদের বিজ্ঞান আপনাদের থেকে অনেক অনেক এগিয়ে। এর উদাহরণ তো সামনেই আছে, আপনার প্রশ্নের মধ্যেই আছে। পৃথিবীর এত নিচে যেখানে ভয়ঙ্কর গরম হওয়ার কথা সেখানে এত ঠান্ডা - এই ঠান্ডা করাটা, ঠান্ডা রাখাটা আমাদের কাছে কোন সমস্যাই নয়। আপনার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি, এবারে আমাদের কথা শুনতে হবে। আমাদের কথা মত চললে, মুক্তি পাবেন - কথা দিচ্ছি। সারা জীবন এখানে থাকাটা আপনি নিশ্চয়ই পছন্দ করবেন না। 
  বুঝলাম। আপনি বললেন – এসেছিলাম। তার মানে কি আপনারা বর্তমানে এখানে নেই, অন্য কোন জায়গা থেকে কথা বলছেন?
  আপনি বুদ্ধিমান জানতাম, কিন্তু এতটা বুদ্ধিমান! ঠিকই ধরেছেন। এখানে আসার পর আমাদের গ্রহের প্রাণীদের এক অজানা রোগে মৃত্যু ঘটে। মৃত্যু আসন্ন বুঝে, ওরা আমাদেরকে সৃষ্টি করে যাতে আমাদের গ্রহের বাকি বাসিন্দাদের অসুবিধা না হয়। এই পৃথিবী আমাদের গ্রহের থেকে বসতি স্থাপনের জন্য অনেক বেশি অনুকূল। আমরা সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি। 
তারমানে আপনারা প্রাণী নন! রোবট? 
  আপনাদের ভাষায় তাই। পৃথিবীতে পৃথিবীবাসীর সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে চাই। এ কারণেই আপনার সাহায্য দরকার। আপনি হবেন আমাদের দূত। 
আপনাদের গ্রহের প্রাণীদের মৃত্যু কীভাবে হল? কী অসুখ? 
  এক অজানা ভাইরাস। আসলে ভাইরাসের আক্রমণ ঠেকাতে গেলে তা ভাইরাস দিয়েই করতে হয়। যে কোন ধরনের ভাইরাস আমাদের বিজ্ঞানীরা বানাতে জানেন। সমস্যা হল সেই সব বিজ্ঞানীদের মৃত্যু হওয়ায়, প্রতিষেধক আর বার করা সম্ভব হলো না। 
আমাকে কী করতে হবে? 
  আমাদের কথা পৃথিবীর সর্বত্র বলতে হবে। আপনাদের যানবাহনে চেপে যে কাজ করতে এক বছর লাগবে, আমাদের জানে চেপে তা সাত দিনে হয়ে যাবে। 
যে তিনটি মেয়েকে দেখলাম, ওরা কারা? 
ওরা গবেষণার দিকটি দেখে। এখানকার সবকিছু দেখাশোনা করে। ওরাই আমার এখানকার প্রধান সহায়। 
আপনি কে? আপনি কি এখানেই আছেন? আপনি কি রোবট?
  আপনাদের ভাষায় রোবট হলেও আমার কিন্তু প্রাণ আছে। মঙ্গল গ্রহের বিজ্ঞানীরা মৃত্যুর আগে আমাকে সৃষ্টি করেন ওদের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য। আমি সেটাই করছি। 
অসম্পূর্ণ কাজটা কী? 
সেটা এমুহুর্তে আপনার না জানলেও চলবে। 
ওই মেয়ে তিনটে কি চৈনিক? নাকি জাপানি? আসলে নাকের গঠন –
একটা হাসির শব্দ তারপর উত্তর এলো –
ধরে নিন চৈনিক, চিনা - কী এসে যায় তাতে! প্রত্যেকের পরিচয় তার কাজ দিয়ে। ব্যাস, অনেক আলোচনা হয়েছে। এবারে, আপনাকে ওই মেয়ে তিনটি আপনার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবে। আশা করি আপনার দায়িত্ব আপনি সঠিকভাবে পালন করবেন।

(আট)
রাজেশ মেয়ে তিনটিকে ঘরে ঢুকতে দেখলো। প্রত্যেকের হাতে সেই সোনালী রড বা লাঠি। নেত্রী রাজেশকে বললো –
  আপনার এরোশিপ রেডি আছে। যাতে চেপে জঙ্গল থেকে এসেছি সেটা গুহার বাইরে আছে। ওতে চেপে আপনি জঙ্গলের যেখান থেকে যানে উঠেছিলেন, সেখানে পৌঁছাবেন। এরোশিপ ওখানেই রাখা আছে। আপনার ব্রেনের সঙ্গে ওটাকে এটাচ করে দেওয়া হয়েছে। আপনাকে আমার এই সোনালী রডটা দিচ্ছি। এটা এরোশিপের কন্ট্রোল প্যানেলে টাচ করে যেখানে যেতে চাইবেন এরোশিপ সেখানেই আপনাকে নিয়ে যাবে। আমাদের জেনারেলের আদেশ আপনি প্রথমে চিনের বেইজিং শহরের যাবেন। ওখানে আমাদের যারা আছে তারা আপনাকে সাহায্য করে দেবে, কী করতে হবে বলে দেবে। ওখান থেকে ওয়াশিংটন ডিসি হয়ে লন্ডন। তারপর, অবশ্য আপনি আপনার নিজের ইচ্ছামত আমাদের প্রচার চালাতে পারেন। 
মেয়েটি হাতের সোনালী রডটা রাজেশকে দিল। রডটা হাতে নিয়ে রাজেশ জিজ্ঞাসা করলো –
এটা দিয়ে আর কী কী কাজ করা যায়?
এটা একটা ইউনিভার্সাল রিমোট হিসাবে আপনি ধরতে পারেন। আপনি যা মনে মনে চাইবেন, এই রড সেটাকে ইম্প্লেমেন্ট করবে। 

  ভাল্লুক আর লেপার্ড তিনটে - ওগুলো কি রোবট?
আমাদের মতোই, ওদেরও প্রাণ আছে। তবে, জেনারেল সৃষ্টি করেছেন।
  রাজেশ গুহার এক কোণে নিজের কাঁধের ব্যাগটাকে পড়ে থাকতে দেখে নিয়ে নিল। বাইরে এসে চাতালের সঙ্গে লাগোয়া শূন্যে ভাসমান যানটায় উঠে রেলিংটাকে ধরতেই হাত আটকে গেল। এখানে কন্ট্রোল প্যানেল কোথায়! রডটাকে রেলিঙে ছোঁয়াতেই যানটা নড়ে উঠলো। যেখান থেকে রওনা দিয়েছে সেইখানে যাওয়ার কথা ভাবতেই, অদ্ভুত যানটা দ্রুত রওনা দিল। ঠিক সাড়ে তিন মিনিট লাগলো জঙ্গলের মধ্যে ওই ফাকা যায়গাটায় পৌঁছতে। ওখানে একটা বাচ্চাদের খেলনা জিপের মতো, একজন মানুষ বসতে পারে, এরকম একটা যান রাখা আছে রাজেশ দেখলো। এই   যানটাতেও কোনো চাকা জাতীয় কিছু নেই। রাজেশ যান থেকে নামতেই খেয়াল করল ওর ভীষণ শরীর খারাপ লাগছে, মাথা ঘুরছে, গলায় একটা ব্যথা। বেশ শীত শীত ভাব লাগছে। কপালে আর গলায় হাত দিয়ে মনে হলো ওর বেশ জ্বর হয়েছে। ওর ব্যাগে অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস থাকে, তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হল ডিজিটাল থার্মোমিটার আর ওষুধ। থার্মোমিটারে টেম্পারেচার দেখে আঁতকে উঠলো, 104° ফারেনহাইট! শরীর কাঁপছে।  একধারে একটা গাছের নিচে মাটিতে শুয়ে পড়লো। চিন্তাশক্তি ঠিক আছে। এরকম হঠাৎ জ্বর! তাহলে কি ভিনগ্রহীরা ওর দেহে কোন ভাইরাস ইঞ্জেক্ট করেছে? ভাইরাস তাড়ানোর নাম করে। গলায় ব্যথা, জ্বর, গন্ধ শক্তি চলে যাওয়া - এসবকিছু একটাই অসুখ ইন্ডিকেট করছে – করোনা। ও তাহলে এই মুহূর্তে করোনা আক্রান্ত। অর্থাৎ, এই অবস্থায় যে দেশে যে শহরে যাবে, সেই শহরে ছড়িয়ে পড়বে করোনা ভাইরাস। ওদের উদ্দেশ্য ধীরে ধীরে রাজেশের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে, আতঙ্কে শিউরে উঠলো।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments