জ্বলদর্চি

রিকিসুমের পিশাচ(পর্ব-৫)/আবীর গুপ্ত

রিকিসুমের পিশাচ
পর্ব-৫
আবীর গুপ্ত

(নয়)
ভিনগ্রহীরা ওর মাধ্যমে করোনা ভাইরাসকে আবার সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে চাইছে। কোভিড-১৯ ভাইরাসকে পৃথিবীবাসী দু-দুবার রুখে দিয়েছে। দ্বিতীয়বারের আক্রমণ এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল যে ভারত সহ কয়েকটি দেশ নিজেদের নির্বুদ্ধিতার কারণে দ্বিতীয়বারের আক্রমণ ঠেকাতে বেসামাল হয়ে পড়েছিল। বহু মৃত্যুর পর অবস্থা বেশ খানিকটা আয়ত্ত্বে এসেছে। এই অবস্থায় তৃতীয় ঢেউ, তৃতীয় আক্রমণ, শুধু ভারত নয় সমগ্র বিশ্বকে শেষ করে দেবে। যেটা ওরা চায়। অর্থাৎ, পৃথিবীবাসীর বেসামাল অবস্থায় পুরো ক্ষমতা মঙ্গল গ্রহের প্রাণীদের দখলে চলে যাবে। এটাকে যেভাবেই হোক আটকাতে হবে। ওর দৈহিক যা অবস্থা, একটা ব্রিদিং ট্রাবলও শুরু হয়েছে, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, এই অবস্থায় ইমিডিয়েটলি অক্সিজেন প্রয়োজন অর্থাৎ হসপিটালে ভর্তি হওয়া প্রয়োজন। কী করনীয়? কোনো রকমে টলতে টলতে এসে ছোট খেলনা জিপের মত যানটায় বসে পড়ল। কয়েক মুহূর্ত, তারপর ও খেয়াল করল, ওর সমস্ত দৈহিক সমস্যা উধাও হয়ে গেছে, নিজেকে দারুন ফিট লাগছে। একী আশ্চর্য ব্যাপার! নিশ্চিত হবার জন্য ছোট্ট যানটা থেকে নামতেই দৈহিক সমস্যা ফেরত এলো। ভয়ের চোটে যানে উঠে পড়লো। ঠান্ডা মাথায় ভাবতে শুরু করলো। 
এই যানে এমন কিছু আছে যা ওর দেহ থেকে অসুখটাকে তাড়িয়ে দিচ্ছে অথবা করোনার প্রভাবে হওয়া দৈহিক সমস্যাগুলোকে চেপে দিচ্ছে। সম্ভবত দ্বিতীয়টা সত্যি। অর্থাৎ, ওর দেহে করোনা ভাইরাস ভালো মতন অ্যাকটিভ কন্ডিশনে রয়েছে। ওরাই ওর দেহে এই ভাইরাস ঢুকিয়েছে। কখন? সম্ভবত ভাইরাস চেক করার নামে। করোনা ভাইরাস প্রথমে গলায় বা নাকে তিন থেকে চারদিন থাকে  তারপর দেহের অভ্যন্তরে বিশেষত ফুসফুসে গিয়ে তা ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে। অথচ, এরা তিন-চার দিনের জায়গায় মাত্র এক ঘন্টায় তা ফাইনাল স্টেজে পৌঁছে দিয়েছে। এরাই তাহলে সমগ্র পৃথিবীতে করোনা ভাইরাসের দৌরাত্ম্যের জন্য দায়ী। হয়তো ওরই মতো কাউকে অতীতে চায়নায় পাঠিয়েছিল যার থেকে ছড়িয়ে পড়েছে এই মারণ ভাইরাস। এই ভাইরাস যে চীন দেশ থেকে সর্বত্র ছড়িয়েছে তা বিশ্বের সর্বত্র সবাই জানে। তাছাড়া, মেয়ে তিনটির মুখও চীনাদের মতন। হয়তো, এই ভাইরাস ছড়ানোর জন্য মেয়ে তিনটিকেই বেইজিং পাঠানো হয়েছিল। ওর এখন যা অবস্থা, নিজের কথা ভাবলে চলবে না। যানটি নিয়ে কোন হসপিটালে গিয়ে ভর্তি হলেও সমস্যা। শুধু ডাক্তার, নার্সই নয়, সমগ্র মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দেবে। হয়তো ওর শরীরের করোনা ভাইরাস আরো অনেক এডভান্সড্ আর আরো ভয়ঙ্কর প্রাণঘাতী ধরনের। তাই, লোকালয়ে যাওয়া যাবে না। কিন্তু, করবেটা কী? অনেক ভেবে শেষে একটা প্ল্যান ঠিক করলো। ওর যা অবস্থা তাতে যান থেকে নামলে মারা যাবেই, হয়তো মৃত্যু আসতে দু তিন দিন লাগবে। কিন্তু, সেই মৃত্যু হবে ভয়ঙ্কর কষ্টদায়ক। তাই, রুখে দাঁড়ানোটাই ভালো। তাতে হয়তো প্রাণ যাবে, কিন্তু সেই মৃত্যু হবে গৌরবের। 
নিজের ব্যাগ খুলে স্যানিটাইজারের বোতলটা বার করলো। সদ্য কেনা। ৪00 মিলি লিটার বোতলের খুব সামান্যই খরচ হয়েছে, কারণ আরও একটা প্রায় শেষ হওয়ার মুখে বোতল আছে। মুখে পড়ে নিল মাস্ক।  হাতের সোনালী ছোট্ট রডটা কন্ট্রোল প্যানেলে টাচ করে উপরের গুহায় যাওয়ার কথা বলতেই, যানটা চলতে শুরু করলো। তারপর, একটা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে পড়লো আকাশে। গাছের সারির মাথার উপর দিয়ে উড়ে গুহার সামনের চাতালের উপর এসে ল্যান্ড করলো। রাজেশ ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে ডান হাতে স্যানিটাইজার টা বাগিয়ে যান থেকে নেমে পড়লো। আশ্চর্য হয়ে গেল ওর দৈহিক অসুবিধাগুলো ফেরত এলো না দেখে। তার মানে এই চাতালের উপরেও ওই শক্তি, সম্ভবত রে- জাতীয় কিছু, যা যানের ভিতরে ছিল, তা অ্যাক্টিভ আছে। দেখলো, গুহার ভেতর থেকে মেয়ে তিনটি বেরিয়ে এল হাতে সোনালী রড নিয়ে। 

(দশ)
রাজেশের হারাবার কিছু নেই, কারণ ও ধরেই নিয়েছে ওর আয়ু শেষ। অত্যন্ত কষ্টদায়ক মৃত্যু লেখা আছে ওর কপালে। কিন্তু, যাদের জন্য ওর এই অবস্থা, তাদের ও ছাড়বে না। ও জানে না এতে কোন ফল হবে কিনা কিন্তু এই মুহূর্তে এছাড়া যে অস্ত্র ওর কাছে আছে সেটা হল ছোরা। ছোরা দিয়ে এদের কোনো ক্ষতি করা যাবে না। যান থেকে নামমাত্র মেয়ে তিনটির মধ্যে যে প্রধান সে জিজ্ঞাসা করলো –
কী ব্যাপার! আপনি যাননি?
ভয়ঙ্কর শরীর খারাপ হয়ে গেল, তাই ফেরত এলাম। 
ওটা প্রথম অবস্থায় হয়, পরে একদম ঠিক হয়ে যাবে। 
কথা বলতে বলতে রাজেশ মেয়েটির সামনে চলে এসেছিল, হঠাৎ হাতের স্যানিটাইজারটা থেকে মেয়েটির মুখে আর দেহে স্প্রে করতে শুরু করলো।
রাজেশ অবাক বিস্ময়ে দেখলো, মেয়েটি প্রথমে যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গেলো, ছটফট করতে করতে মেঝেতে শুয়ে পড়লো - মেয়েটির দেহ দ্রুত ধোয়ার পরিণত হল। এক মুহূর্তের জন্য মেয়েটির পরিণতি দেখে থমকে গিয়েছিল, পরমুহূর্তে দ্বিগুণ উৎসাহে বাকি দুটো মেয়ের উপরও স্যানিটাইজার স্প্রে করা শুরু করলো। ওই মেয়ে দু'টোরও একই পরিণতি হল। ওর মনে একটা জিনিসই ঘুরপাক খাচ্ছিল, সেটা হল মেয়ে তিনটির স্যানিটাইজারের প্রভাবে এরকম পরিণতি হলো কেন! তাহলে কি?
দূর থেকে মেটালিক ভয়েস উত্তরটা দিল –
হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। এই মেয়ে তিনটি আসলে লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি, কোভিড-১৯ ভাইরাস দিয়ে তৈরি, যা আপনার স্যানিটাইজারের আক্রমণ সহ্য করতে পারে নি। এই অ্যালকোহল বেসড্ স্যানিটাইজার আমাদের প্রধান শত্রু। এবারে তো আপনি দেখছি তৈরি হয়েই এসেছেন! মুখে মাস্ক, হাতে স্যানিটাইজার থাকলেও আপনার দেহে যে হাইলি ডেভেলাপড্ করোনা ভাইরাস রয়েছে, সেটার মোকাবিলা করবেন কী করে? এর ওষুধ একমাত্র আমাদের কাছেই আছে। আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করুন, তাহলে সেই ওষুধ আপনাকে দেব। ওষুধের বদলে আমাদের কয়েকটি কাজ করে দিতে হবে। 
কী কাজ?
বলছি। আগে স্যানিটাইজারটাকে বিদায় করে তারপর গুহায় ঢুকুন।  তা না হলে আলোচনা করা যাবে না। 
রাজেশ কোন কথা না বলে স্যানিটাইজারটা ছোট জিপের ভিতর রেখে কাঁধের ব্যাগটাকে দুকাঁধ থেকে এক কাঁধে ঝুলিয়ে গুহার ভিতরে ঢুকে পড়লো। মন থেকে সব রকম চিন্তা দূর করে রাখা বেশ কষ্টকর ব্যাপার। এটা ওকে করতেই হবে, তা নাহলে এই ভিনগ্রহীরা ওর ভাবনা বুঝে ব্যবস্থা নিয়ে নেবে। ওরা যে আবার থটরিডিং জানে। গুহার ভিতরে ঢুকে অবাক হয়ে গেল, ভিতরের অ্যারেঞ্জমেন্ট পুরো বদলে গেছে। যে চৌকো জায়গা দিয়ে বহু নিচে নেমে ছিল সেই জায়গাটা বদলে হয়ে গেছে একটা ঘর। মনে মনে ভাবলো দারুন সুন্দর ক্যামোফ্লেজ, কেউ ঢুকলে বুঝতেই পারবে না এখানে দুই-তিন কিলোমিটার নিচে নামার জন্য একটা লিফ্ট লুকানো আছে। একটা হাসির শব্দ, মেটালিক ভয়েস বললো –
একদম ঠিক ধরেছেন। নাঃ, আপনার বুদ্ধিকে আন্ডারএস্টিমেট করা উচিত হয়নি। আপনি অপেক্ষা করুন, আমরা আসছি।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments