জ্বলদর্চি

মেদিনীপুরের বিজ্ঞানী নারায়ণ চন্দ্র রানা : শূন্য থেকে 'শূন্যে' উড়ানের রূপকথা― (একাদশ পর্ব/)পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

বিজ্ঞানের অন্তরালে বিজ্ঞানী ।। পর্ব ― ৩০

মেদিনীপুরের বিজ্ঞানী নারায়ণ চন্দ্র রানা : শূন্য থেকে 'শূন্যে' উড়ানের রূপকথা― (একাদশ পর্ব)

পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা


১৯৯১ সাল। জানুয়ারি মাসের পাঁচ তারিখ। এক মহানক্ষত্রের আকস্মিক পতন ঘটে গেল। সাউরি'র আকাশে সেদিন ঘন কালো ছায়া। গ্রহণের ছায়া নয়। যাকে বলে ইন্দ্রপতন। প্রিয়জন বিয়োগ। সকলের প্রাণাধিক প্রিয় মাস্টার মশাই শ্রী মণীন্দ্রনারায়ণ লাহিড়ী স্যার আর নেই। হঠাৎ ক্যানসার কেড়ে নিল তাঁর প্রাণের স্পন্দন আর সাউরি এলাকার আকাশ দেখার স্বপ্ন। চিরতরে হারিয়ে গেল রূপকথার আকাশ। তিনি বিনা সাউরি আজ মণি হারা ফণী। জৌলুসহীন। গৌরবহীন। হতাশা আর বেদনায় পরিপূর্ণ। সম্পূর্ণ নিঃস্ব। তাঁর অকাল প্রয়াণে শোকস্তব্ধ রাতের তারা। ধূমকেতুর ছলছল নয়ন। বাকহীন সাউরি ভোলানাথ বিদ্যামন্দির। নিস্তব্ধ বকুলগাছ, স্কুলমাঠ, বাঁধানো পুকুরঘাট, ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক। আটপৌরে গৃহবধূ। লেখাপড়া না-জানা দিনমজুর। স্কুলের গণ্ডি পার না-হওয়া কৃষক রমনী। সাধারণ মানুষ সবাই।

  মণিবাবু ইহলোক ত্যাগের পর সাউরি'তে 'মণীন্দ্র নারায়ণ লাহিড়ী স্মৃতি বিজ্ঞান মন্দির' স্থাপিত হয়; ১৯৯২ সালের দোসরা মার্চ। প্রিয় স্যারের নামাঙ্কিত এ হেন বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা বৈজ্ঞানিক রানা'র এক বড় সার্থক পদক্ষেপ। তিনি হয়েছিলেন স্মৃতি মন্দিরের প্রেসিডেন্ট। প্রতি বছর মার্চে বাৎসরিক স্মৃতি-স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হত। অনুষ্ঠানে অনেক নামকরা বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকেন। এক গ্রাম্য স্কুল শিক্ষকের বিজ্ঞানের প্রতি নিষ্ঠা, অসীম ভালোবাসা আর নিঃস্বার্থ অবদান আলোচনায় ঠাঁই পেত। 
     
  
সময়টা ১৯৯৬ সালের ষোলোই মার্চ। সে-বার 'মণীন্দ্রনারায়ণ লাহিড়ী স্মৃতি বিজ্ঞান মন্দির'-এর বাৎসরিক স্মরণসভার দিন ধার্য্য হয়েছে। প্রিয় স্যারের চরণে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ করতে উপস্থিত থাকবেন তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ছাত্র ড. নারায়ণ চন্দ্র রানা। অনুষ্ঠানে যোগদান হেতু চোদ্দোই মার্চ গ্রামের বাড়ি রানা-নিলয়ে হাজির ড. রানা। এসে অব্দি নিস্তার নেই। আকস্মিক শরীর খুব অসুস্থ। তীব্র শ্বাসকষ্ট। নার্ভ বসে যাচ্ছে। মা নাকফুড়ি দেবী উদ্বিগ্ন। ছলছল নয়ন। ভাই সুজন চিন্তিত। টানটান উত্তেজনা! এমন সময় ভাইকে উদ্দেশ্য করে অনেক কষ্টে বললেন―
'পালস কমে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি অক্সিজেন নিয়ে আয়।'

  উদ্ভ্রান্তের মত অবস্থা। এখনকার মত যোগাযোগ ব্যবস্থা তখন ছিল না। গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ ঘটেনি। এলাকায় একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে ঠিকই, বড় জোর প্রাথমিক চিকিৎসা হতে পারে; তার বেশি নয়। অত্যাবশ্যক জরুরী পরিসেবা সম্পূর্ণ অমিল। অক্সিজেন সিলিন্ডার আশা করা সেখানে দিবাস্বপ্ন ছাড়া আর কি! সবচেয়ে কাছের শহর বলতে এগরা। সাউরি থেকে তেরো কিলোমিটার দূরে। এগরা টাউনে রয়েছে নার্সিংহোম। নাম 'নবজীবন নার্সিংহোম'। মোটর সাইকেল করে সেখান থেকে মাত্র পঁচিশ মিনিটে অক্সিজেন সিলিন্ডার আনা হয়। কিন্তু অক্সিজেন সিলিন্ডার চালানো হবে কীভাবে? গ্রামে তো বিদ্যুৎ নেই। কারেন্ট ছাড়া অক্সিজেন চালু করা যাবে না। একমাত্র ভরসা জেনারেটর। কৃত্রিম বিদ্যুৎ উৎপাদক। রানা-বাড়িতে জেনারেটর নেই। গ্রামের এক বর্ধিষ্ণু বাড়ি একশো মিটার দূরে। তাদের বাড়িতে জেনারেটর সরঞ্জাম আছে। চটজলদি সেখান থেকে জেনারেটর লাইন টানার বন্দোবস্ত করা হল। ইতিমধ্যে এগরা থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার এসে পৌঁছেছে। জেনারেটর-জাত কারেন্টের সাহায্যে অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু করা হয়।

  কীভাবে সংবাদ ছড়িয়েছে জানা নেই! কোত্থেকে খবর পেল সকলে? জনে জনে, দলে দলে গ্রামের মানুষ হাজির রানা-ভবনে। শয়ে শয়ে মানুষের ভীড়; ঘরের উঠোনে, পুকুরের পাড়ে, পাকা রাস্তার ধারে, বাঁশঝাড়ের তলায়, আমগাছের নীচে, অর্জুন গাছের ডালে। প্রত্যেকের চোখে মুখে গভীর উৎকণ্ঠা। অসহায় উদ্বেগ। 

  ভাই সুজন ঔষধ আনল। সে-ওষুধ খাওয়ানো হল অসুস্থ বিজ্ঞানীকে। কৃত্রিম অক্সিজেন চলছে। ঔষধ খাওয়ার পরে সমস্যা গেল বেড়ে। বুকে যন্ত্রণা আরও বেড়ে গেল। হার্টবিট আগের চাইতে বেশি। গা-হাত-পা ক্রমশ ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। এসময় শরীর গরম রাখা প্রয়োজন। শরীরের সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখা জরুরি। সেজন্য গরম স্যাঁক দেওয়া, গরম জলের পটি, শরীর গরম রাখার যাবতীয় কৌশল চেষ্টা করে দেখা হল।

  চোখ তুলে তাকালেন ভগবান। আধঘণ্টা পর আপাতত হালকা সুস্থ বোধ করলেন বৈজ্ঞানিক। ভয় পুরোপুরি কাটল না। তিনি মনস্থির করলেন আজই পুনে ফিরে যাবেন। 


(দুই)
'ষোলো তারিখের জন্য একটা স্পিচ রেডি করে ঘরে রাখা আছে। সেদিন অনুষ্ঠানে ও-টা পাঠ করবে। অনুষ্ঠান অ্যাটেন্ড করতে না-পারার জন্য, সবাইকে বলবে, আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত'―ভাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন বৈজ্ঞানিক।
'আচ্ছা'― ঘাড় নেড়ে সায় দিল সুজন।
দুরন্ত গতিতে ছুটছে ট্যাক্সি; ন্যাশনাল হাইওয়ে ধরে। উর্ধ্বগতিতে ছুটছে কলকাতা বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে। দমদম এয়ারপোর্ট থেকে বিমান। এরোপ্লেনে চড়ে সোজা পুনে, নিজের কর্মস্থলে। বিমানবন্দরে নিরাপদে পৌঁছে দিতে ভাই সুজন ছাড়াও সঙ্গে আছে গ্রামের তিনজন শুভানুধ্যায়ী। ট্যাক্সির ভেতর টুকটাক বাক্যালাপ চলছে। কথাবার্তা যেটুকু হচ্ছে, সবটাই বলছেন বৈজ্ঞানিক। বাকিরা মূলত শ্রোতা। 'হুম', 'আচ্ছা' শব্দগুচ্ছ প্রয়োগ করে সংক্ষেপে বক্তার সংলাপের ধারা অক্ষুন্ন রেখেছে তারা। বলতে বলতে হঠাৎ দার্শনিক হয়ে গেলেন তিনি। হঠাৎ করে নিরাসক্ত ভাবনা চিন্তা প্রকাশ পেল কথাবার্তায়। দর্শণের গভীরে প্রবেশ করলেন তিনি। জ্যোতিষ নির্ভর ভবিষ্যৎ বাণী প্রস্ফুটিত হল মুখে। স্বগতোক্তির সুরে আচমকা বলে বসলেন―
'আজকের ফাঁড়াটা মোটামুটি উৎরে গেল। পাঁচ মাস পর আরও একটা অ্যাক্সিডেন্ট হবে। সে-টা থেকে উৎরে গেলে, বেঁচে ফিরলে পরবর্তী পনেরো-কুড়ি বছর আপাতত নিশ্চিন্তি। তারপর সুস্থ থাকব অনেককাল। বিট্রে করবে না পেসমেকার। সুস্থ থাকবে হার্ট।' 

  তারপর এক সুগভীর দীর্ঘ নিঃশ্বাস পড়ল। ভেতরে ভেতরে দুশ্চিন্তা কুরে কুরে খাচ্ছে। শেষের কথাগুলো শুনে আঁতকে উঠল ভাই সুজন। এ যেন নিজের মৃত্যুর ঘোর যুদ্ধফল প্রত্যক্ষ করছেন বৈজ্ঞানিক! সাক্ষাৎ নিয়তির নিষ্ঠুর অভিশাপ! অথচ সাউরি'র তাঁকে প্রয়োজন আরও অনেক কাল। মাস্টার মশাই শ্রী মণীন্দ্রনারায়ণ লাহিড়ীর মৃত্যুর পর সাউরি'র ভাগ্যাকাশে বিশাল যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল, সে-মহাশূন্য ভরাটের উত্তর দায়িত্ব কে নেবে? যোগ্য উত্তরসূরী বৈজ্ঞানিক নারায়ণ চন্দ্র রানা। তিনি এক এবং অদ্বিতীয়। অথচ তাঁর মুখে মৃত্যুর বাণী? অসহায়তার চোরা স্রোত? নিয়তির সম্মুখে সমর্পণের করাল ছায়া? এ হেন স্বঘোষিত বাণী শুনে অন্তর কম্পিত সকলের। হৃদয়ের শূন্য খাঁচায় ছটফট করে মনপাখি। অচেনা শঙ্কায়।


(তিন)
'হেলথ ইনস্যুরেন্স সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি। আর সঙ্গে যাচ্ছে দু'হাজার আট শত টাকার ঔষধ, দুটো প্যান্ট, তিনটে শার্ট আর টুকিটাকি। এখন তাঁর কী ইচ্ছে তিনি-ই জানেন?'―চিঠিতে আক্ষেপ ঝরে পড়ে ড. রানা'র। 

  ১৯৯৬ সালের পনেরোই জুন। একমাত্র ভাই সুজনকে শেষবারের মতো চিঠি লিখলেন তিনি। সতেরোই জুন থেকে তাঁর বিদেশ সফর আরম্ভ। সতেরোই জুন থেকে তেইশে জুলাই পর্যন্ত মাসাধিক কাল তাঁর লম্বা ইউরোপ ভ্রমণ। ব্যস্ত কর্মসূচি। এবছর আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান কংগ্রেসের আসর বসবে হাংগেরী'র ভেসগ্রাদ-এ। আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে ভারতীয় প্রতিনিধি হিসাবে সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন তিনি। সেজন্যই তাঁর ইউরোপ ভ্রমণ। তাঁর প্রথম যাত্রা শিল্পকলার পীঠস্থান ফ্রান্স। তারপর ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করবেন তিনি। সম্মেলনের ব্যস্ত সূচির ভেতর সময় বার করে তিনি চষে বেড়ালেন সমগ্র ইউরোপ ভূখণ্ড― ফ্রান্স, রোম, এলবা, পোল্যান্ড, পোজনান, লন্ডন। সব শেষে বাকিংহাম সফর। লম্বা ট্যুরে প্রায়শই শরীর বেগড়বাই করেছে। আবার এও ঠিক― শরীরের নাম মহাশয়, যা সহাইবে তা-ই সয়। এই আপ্তবাক্য সম্বল করে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছেন তিনি। নিজের বাসনা চরিতার্থ করার জন্য বারেবারে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন দূরহ সব কাজে। শরীর, হার্ট, অসুখ, দুর্বলতা―সবকিছু উপেক্ষা করে। আগুপিছু না ভেবে। অথচ বিগত তিন-চার বৎসর কাল উত্তরোত্তর শরীরের অবনতি ঘটেছে তাঁর। 
    

  লম্বা সফর শেষ করে দেশের মাটিতে পদার্পণ করলেন তেইশে জুলাই। দেশে ফিরে পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়লেন তিনি। দিনকে দিন আরও খারাপ হল শরীর। সেরে ওঠার লক্ষণ নেই। অবস্থার ক্রমাবনতি কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলল। কপালের বলিরেখাপূর্ণ ভাঁজগুলি গাঢ় থেকে আরও গাঢ় হল। তিন হপ্তার বেশি সময় একটা ঘোরের মধ্যে কেটে গেল। আকাশকুসুম ঋণাত্মক ভাবনা গ্রাস করল। আঠারোই আগস্ট অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হল। রীতিমত বাড়াবাড়ি। খুব খারাপ অবস্থা। নার্সিংহোমে অ্যাডমিট করা ছাড়া অন্য গত্যন্তর নেই। তড়িঘড়ি পুনের কলমানগরে একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হল বিজ্ঞানীকে। তিনদিন আপ্রাণ চেষ্টা করল ডাক্তাররা। কোনও রকম ত্রুটি নেই । চতুর্থ দিনে ডাক্তারের শত চেষ্টা ব্যর্থ হল। ১৯৯৬ সালের বাইশে আগস্ট, সকাল আট-টা। বিজ্ঞানীর জীবন-প্রদীপ চিরতরে নিভে গেল। দিনের আলোকে রাতের তারা হয়ে আকাশে ঠাঁই পেল এক ক্ষণজন্মা বৈজ্ঞানিক। স্বল্পায়ু নারায়ণ চন্দ্র রানা আর নেই। শেষ হল তাঁর রূপকথার উত্থান। তাঁর স্বপ্নের বাস্তবায়নের মাঝে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল এই অকাল মৃত্যু। অনেক কাজ অসমাপ্ত থেকে গেল তাঁর। শেষ সময়ে মৃত্যু শয্যায় যারা উপস্থিত ছিলেন, তারা সকলে একবাক্যে স্বীকার করেছেন― মৃত্যুর দোরগোড়ায় পৌঁছে ড. রানা সত্যি সত্যিই বেঁচে থাকতে চেয়েছিলেন আরও কিছু কাল-বছর-দশক। কিন্তু সত্যি প্রমাণিত হল কবির উক্তি। তিনি বলেছেন―
              'যত বড়ো হও,
           তুমি তো মৃত্যুর চেয়ে বড়ো নও।'


(চার)
বুকফাটা হাহাকার! ওফ! কী যন্ত্রণা! কী যন্ত্রণা! এক হৃদয়বিদারক হাহাকার চারদিকে। ক্রন্দনের ঢেউ সর্বত্র। নিঃস্ব হল সাউরি, মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ। শোকের ছায়া আত্মীয় পরিজন, বন্ধুবান্ধব, ছাত্রছাত্রী আর বিজ্ঞান জগতে। রানা-ভবনে অশ্রুর সুনামি। মায়ের দুচোখে গঙ্গা-যমুনা বইছে অনবরত। কেঁদে কেঁদে ক্লান্ত মা। ভাই সুজন উদ্ভ্রান্ত। উদ্ভ্রান্ত আজ সাউরি'র মানুষ। তাদের সবার প্রিয় নারায়ণ আর নেই। অসহ বেদনায় বুক ফেটে চৌচির। শ্মশানের নিস্তব্ধতা স্কুল মাঠে। থম মেরে আছে সাউরি'র বাজারঘাট, চায়ের দোকান, খেজুরতলা, বাঁশগাছ। টেলিস্কোপের মন খারাপ। চোখে ঘন অন্ধকার।
      
  বুকে পাথর-চাপা কষ্ট। পিতৃপ্রতিম বড় ভাইয়ের মৃত্যু-কষ্ট হৃদয়ে গেঁথে রেখে শোক সম্পৃক্ত ভাই সুজন পাড়ি দিল পুনের উদ্দেশ্যে। মৃত দাদার সৎকার হেতু। সঙ্গী গ্রামের সমাজসেবী শিক্ষক শ্রী নারায়ণ চন্দ্র মাইতি। এদিকে, পুনের ছাত্রছাত্রী এবং IUCAA-এর অধিকাংশের মত―বৈজ্ঞানিক নারায়ণ চন্দ্র রানা'র শেষকৃত্য পুনে'তেই হোক। তাদের ইচ্ছার পূর্ণ মর্যাদা রাখলেন ভাই সুজন। পুনে'তে অন্তিম কৃত্য সম্পন্ন হল ড. রানা'র। স্মৃতি হিসাবে দাদার ব্যবহৃত কিছু সামগ্রী সাউরি নিয়ে এলেন। সে-সব স্মৃতি-সামগ্রী যত্ন সহকারে সাউরি'তে রয়েছে।


  বৈজ্ঞানিক রানা'র মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সাউরি'ত শেষ হল সিলেবাস বহির্ভূত একটি অধ্যায়। পাঠ্যপুস্তক বহির্ভূত যে-চ্যাপ্টার অলংকৃত করত টেলিস্কোপ, রাতের তারা, গ্রহ, নক্ষত্র, ধূমকেতু এবং তাদের উত্থান-পতন। যে-পরিচ্ছদের পরতে পরতে ছিল স্বপ্নকে ছোঁয়ার দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা। কল্পনাকে বাস্তবায়িত করবার অদম্য প্রয়াস। সর্বোপরি, রূপকথার আকাশ নেমে এসেছিল সাউরি'র ধুলাবালিতে। রাতের অন্ধকার অথবা চন্দ্রালোকিত ভর-রাতে ধুলি ধূসরিত সাউরি'র মাঠঘাটে খেলা করত গগনচ্যুত যে তারকারাজি, কোনও এক অলৌকিক ক্ষমতাবলে পিশাচী হাওয়ায় অন্তর্হিত হল সব। মৃত্যু ঘটল আকাশ দেখার স্বপ্নের। জোড়া মৃত তারকার অবর্তমানে ক্রমশ দূরে সরে গেল মিল্কি-ওয়ে, অ্যান্ড্রোমেডা গ্যালাক্সি। (চলবে)


তথ্য সহায়তা :
'নিউটনের আপেল ও নারায়ণ'― ড. সন্তোষ কুমার ঘোড়াই,
'মেদিনীপুরের বিশ্বজয়ী ড. নারায়ণ চন্দ্র রানা জ্যোতির্পদার্থ বিজ্ঞানী'― বাদল চন্দ্র দে
বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক-শিক্ষক শ্রী অতনু মিত্র
বিশিষ্ট শিক্ষক শ্রী অশোক ভৌমিক
শ্রী গোপাল চন্দ্র লাহিড়ী―শ্রী মণীন্দ্রনারায়ণ লাহিড়ীর ভাইপো
'বিস্মৃতপ্রায় বাঙালি জ্যোতির্বিজ্ঞানী নারায়ণচন্দ্র রানা'― নন্দগোপাল পাত্র,
'N C Rana : Life and His Contribution on Astrophysics Science'― Utpal Mukhopadhyay and Saibal Ray,
'মেদিনীপুরের বিজ্ঞানীদের কথা'― ভাষ্করব্রত পতি,
উইকিপিডিয়াসহ বিভিন্ন ব্লগ

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments