জ্বলদর্চি

২২ শে শ্রাবণ/ শুভজিৎ মুখার্জি

২২ শে শ্রাবণ 
শুভজিৎ মুখার্জি


গভীর শব্দের গভীরতা কতটা, তা অনুভূত হয় কবিগুরুর নাম স্মরনে, উচ্চারণে, আলোচনায় অথবা নিছকই, দৈনন্দিন জীবনে কোন ছোট-বড় ঘটনা যা হৃদয় ও মননকে আলোড়িত করে, তার পরিপ্রেক্ষিতে । ধরা যাক মুক্তোর কথা ! সমুদ্র গভীরে শুক্তির বুকে যার জন্ম, বেড়ে ওঠা --- তবুও মানুষ নিরলস প্রচেষ্টায় তাকে তুলে এনে নিজের বুকে স্থান দেয় মালা রূপে । অথচ প্রবাল প্রাচীর ? বহুবর্ণ রঞ্জিত সেই অসীম সুন্দর জাগতিক তথা প্রাকৃতিক শৈলী দেখতে পাওয়া যায় কেবল মাত্র সমুদ্রের গভীরে ডুব দিয়েই।

আমার জীবনে, আর শুধু আমার জীবনেই বা কেন --- বহু, বহু মানুষের জীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সেই রকম এক সমুদ্র ! অত্যন্ত গভীর ! যিনি তাঁর সমগ্র জীবন ব্যাপী লেখনীজাত করে গেছেন অসংখ্য মণিমুক্তোরাজি --- সৌন্দর্যের প্রতিভূ, অনুভূতির বাঙ্ময় প্রকাশ! সে গভীর সমুদ্রের তলদেশে জীবনের হ্যানো কোন বোধ, সুখ-দুঃখ, শোক-আনন্দ, প্রেম-ভক্তি, দেশপ্রেম, প্রকৃতি অথবা ষড় রিপূৎসজাত কোন অভিব্যক্তিই বা অন্যান্য কিছুই বাদ যায় নি ---- যা তিনি কোন না কোনভাবে বাস্তবে একাধিক ভাবে প্রকাশ করে যান নি তাঁর রচনায়। তাই তাঁর দৈহিক প্রয়াণেও আমাদের বুকে তিনি চির অবিনশ্বর, অন্তহীন, অসীম --- আমরা শুধু রোজকার চলার পথে হাতড়ে বেড়াই নিজের সঙ্গে মিলে যাওয়া অথবা মিলিয়ে লিখে রাখা কবিগুরুর কোন নির্দিষ্ট রচনা বিশেষ।

আসা যাক মরণের কথায় । জাগতিক নিয়মে মরণ অর্থাৎ এই দেহের জীবতাবস্থা থেকে জড়ে রূপান্তরিত হওয়া, যা মনীষীদের ক্ষেত্রে আমরা বলি প্রয়াণ । কিন্তু সত্যি কি তাই ? জাগতিক নিয়মে এই দেহ একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে । শুধু থেকে যাবে তাঁর নাম, কর্ম, তাঁর চিন্তা, ভাবধারা, তাঁর ত্যাগ, তাঁর সার্বজনীন প্রেম --- তাই, কাল-চক্রে আবর্তিত হয়ে যখন এ জীবনে ফিরে ফিরে আসে তাঁদের প্রয়াণ দিবস, আমরা শ্রদ্ধাবনত চিত্তে পালন করি । যেমন আজ - বাইশে শ্রাবণ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮১ তম প্রয়াণ দিবস পালিত হচ্ছে বাংলা তথা বিশ্বের সর্বত্র।

রবি ঠাকুরের উপর গবেষণা হয়েছে বিস্তর। স্বীকার করতে লজ্জা নেই, পড়া হয়ে ওঠেনি তার ভগ্নাংশও। আর শুধু তাই বা কেন ? তাঁর রচনাই বা কতটুকু  পড়ে উঠতে পেরেছি ? বা পরলেও হৃদয়ঙ্গম করেছি ? সমুদ্রের কথা বলছিলাম না ! তাকে যেমন একসাথে অন্তরস্থ করা যায়না, কোন বিশেষ ঘটনার বিষয়ে বা উদাহরণ খুঁজে বেড়াতে হয় ডুব দিয়ে --- তেমনই, কবিগুরু সম্বন্ধে যদি কেউ সারা জীবন ধরেও লিখে যান, তারপরও মনে হবে আরো কত কিছু বলা বাকি রয়ে গেল । তার থেকে আমার তো মনে হয়, আপন অন্দরে ও অন্তরে, মনশ্চক্ষু উন্মীলিত করে, ধ্যানস্থ অবস্থায় শুধুমাত্র তাঁকে অনুভব করাই একমাত্র পরম আনন্দ লাভের উপায়।

আজ এই বিশেষ দিনে, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য জ্ঞাপন প্রয়াসে, আমি তাঁর কাঁধেই ভর করে একটি কবিতা আপনাদের কাছে তুলে ধরছি । কবিতাটি মোট ১৮ লাইনের --- তিনটি স্তবকযুক্ত, প্রতিটিতে ৬টি করে লাইন করে আছে । যার প্রথম তিনটি লাইন কবিগুরুর থেকে ধার নেওয়া, আর পরের তিনটি লাইন এই অধমের ক্ষুদ্র ভাব প্রকাশ- প্রচেষ্টায় রচিত।

তুমি শুধু, তুমিই

" প্রলয় নাচন, নাচলে যখন 
হে নটরাজ --- 
জটার বাঁধন পড়ল খুলে!"
অসম্ভবের প্রচেষ্টাতে 
মেতেছি আজ ----
নতুন কিছু সৃষ্টি করার মনের ভুলে ।

" আলো যবে ভালোবেসে
মালা দেয়, 
আঁধারের গলে --- 
সৃষ্টি তারে বলে ।" 
সেই অনুভবে আজি মোর মন 
ফুল দেয় তব চরণের তলে,
লেখনি পূজার ছলে ।

"তোমার, আশীর্বাদের মালা নেব কেবল মাথে
আমার ললাট ঘেরি ---
আমার আর হবে না দেরি।" 
অজ্ঞানতার আঁধার ব্যাপী তোমার ও রূপ, 
মনশ্চক্ষে হেরি ---
মায়ার বাঁধন-মুক্ত সে প্রেম করব ফেরি ।

আরও পড়ুন 
রবীন্দ্রসংগীত-এ লিঙ্গভেদ
শু ভ জিৎ  মু খা র্জী 




Post a Comment

0 Comments