জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা / ( উৎসব ১৪২৮)/তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়


গুচ্ছ কবিতা 

তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়


শাডেনফ্রয়ডা

বাঁপাশে হেঁটে যাওয়া মধ্যবিত্ত শিক্ষক, 
ডানপাশে ঝাঁ-চকচকে, বিলাসবহুল গাড়িতে- 
প্রখ্যাত চিত্রাভিনেত্রী। 
দুজনেই সরিয়ে রাখেন আমায়, 
একজন বুদ্ধিবলে, একজন অর্থবলে। 
আজ এসেছে সময়। 
উঁচুতে এখন আমি, 
দুজনের থেকেই, 
বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন, পালোয়ান লড়িতে বসে। 
দুজনেই  যাচ্ছেন নিরাপদ ব্যবধানে। 
কাকে চাপা দিয়ে পালালে- 
‘ইতর-আনন্দ’ জাগবে বেশি! 



বুলিয়ান জীবন

‘হয় সাদা, নয় কালো চাই’- তা- 
গোপনে অব্যাহত রাখতে, 
কিছু পাপ ধূসর করে রাখো। 
‘হয় প্রেম, নয় অপ্রেম চাই’- তার- 
সবিকল্প মোহপথ আমুক্ত রাখতে,
যাকে মিথ্যে দোসর করে রাখো;
হয় আর নয় - এর মাঝে,
আছো আর নেই - এর মাঝে,
দ্বিধাগ্রস্ততায়, অধিক্রমণে;
বিভ্রান্ত করে রেখেছ তাকে এতদিন। 
সীমা থাকে সব অপেক্ষার, সব উপেক্ষার।  
দুঃখিত! 
আমিও জেগে উঠেছি, হেসে উঠেছি আজ- 
বুলিয়ান সংখ্যায়। 



জন্মজট

পিতৃবংশের এবং মাতৃবংশের বংশলতিকা সাজাই, 
বাবা, ঠাকুরদা, প্রপিতামহ, বৃদ্ধ প্রপিতামহ, 
তাঁরও পূর্বপুরুষ বেয়ে অতিক্রম করি হাজার বছর। 
মা, দাদু, প্রমাতামহ, বৃদ্ধ প্রমাতামহ, তাঁরও পূর্বপুরুষ... 
আরও দূর দূর যেতে যাই। 
তিন পুরুষের পিছনের তথ্য হালকা হতে থাকে ক্রমশ। 
জানতে চাই কেমন ছিলেন তাঁরা স্বভাব-চরিত্রে, 
বেশি মিল আমার সাথে কার ! 
যাঁর সাথে মিল বেশি, তাঁর- 
আমি হয়ে আসার সম্ভাবনা খুঁজি প্রবলভাবে। 
এভাবে সময়যাত্রা করি মনে মনে। 
এমনই পুরুষতন্ত্র- 
পিতৃপুরুষ এগিয়ে থাকেন মাতৃপুরুষের থেকে, 
প্রমাতামহী অবহেলিত হন প্রপিতামহীর চেয়েও বেশি। 



মিথ্যে অভিমান

মেঘের সঙ্গে ঝগড়া হয় রোজ, 
সে এসেও বৃষ্টি না দিয়ে উড়ে যায় অন্য কোথাও; 
হালকা হতে। 
“কেন যাবে?”- এ প্রশ্ন শুধু তোমার। 
মেঘের তাতে নেই মাথাব্যথা। 
তুমি সেই একা ঘরের কোণে, 
জানলার পাশে বসে, 
নীরবতা পালন করো। 
হালকা হওনা, হতেও চাওনা! 
যেন অমন জেদি অভিমানেই স্বচ্ছন্দ্য তুমি। 
যেখানে শুশ্রূষা, যাও সেখানে বুক পাতো, 
বাইরে এসো, কথা বলো, মেশো। 
তোমার হয়ে কেউ কথা না বলার জন্য, 
তোমার পাশে কেউ না থাকার জন্য- 
দায়ী তুমিই। 





বিবাহ অথবা সহবাস

মতানৈক্য হলেই মনে হবে- 
তোমার প্রেমের যোগ্য অন্য কেউ। 
যোগ্য ভাববে যাকে, 
অসহ্য লাগবে তার বর্তমান প্রেমিককে। 
যতো মনে পড়বে আইবুড়ো বয়সের বন্ধুদের মুখ, 
এই যোগ্যতা-অযোগ্যতার লুকোচুরি চলবে। 
যেন নির্ভেজাল প্রেমসুধা তুমিই; 
যেন খুব ভুল হয়ে গেছে। 
স্বপ্নে চাইবে তাদের- 
এক এক দিন, 
এক এক করে, 
নিজের পাশে, 
কতোনা সম্ভাব্য সুন্দর পরিণতির কথা ভাববে। 
পথে বাঁক নেওয়া গেলে বুঝি ভালো হতো! 
তবু ফিরে আসবে রাতে। 
ফিরতে হবেই। 
প্রজাপত্য বা গান্ধর্ব বিবাহ এমনই।
যত অসহিষ্ণু হয়ে উঠছো,
তত প্রিয় হচ্ছে প্রতিশ্রুতিবিমুখ, দায়িত্ববিমুখ সহবাস।



অনাসৃষ্টি

যাঁরা কবি হওয়াকে প্রশ্রয় দিয়েছিলেন- 
তাঁরা কেউই আর বেঁচে নেই। 
কবি একা। 
কবিতার এখন অনেক প্রেমিক... 


জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 


Post a Comment

0 Comments