জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা/(উৎসব ১৪২৮)/ নিমাই জানা

গুচ্ছ কবিতা 
নিমাই জানা 


মহাজনপদ অথবা দ্বাপর যুগের নারী

শ্বেত কল্পকালের সাদা পোশাক পরে নেমে আসছেন দ্বিমুখী ব্রাহ্মণ
অনেকটাই আনফ্রেন্ড নোটিফিকেশনের মতোই দীর্ঘতর কবিতা হলো রুদ্রকাল
মন্বন্তর ডেকে যায় এই ছিয়াত্তর শতকে ও
আমি দ্বাপর যুগের কোন এক অযপা নারীকে ঠোঁটের কাছে মৃদু কম্পনে অনুভব করি নেশা
ঝুলিয়ে রাখি মৃত গাছের ডাল থেকে
আমি তার নিম্নাংশ পড়ছি কলমের ডগা দিয়ে কোন রাষ্ট্রের ওপর মৃদু ভূকম্পন হয়নি তারপর , রিকটার স্কেলের কালো মৈথুন দাগের পাখিরা আজন্মকাল হারিয়ে ফেলে তাদের পর্যায় বৃত্ত অনুভূমিক গতিপথ
এমন রাতের অন্ধকারে মহাজনপদ ভেঙে ফেলছে উদয়াস্ত কোন গিরিপথ সন্ন্যাসী ,
কাশ্যপ , দীর্ঘদেহীর ধূসর মৃত্তিকায় এ লালন
পেন্সিলের কান্না আর ড্রোটাভেরিন অনেকটাই স্নিগ্ধতার নিরাময় মাদক
আমাদের জটিল অংকের উপর নীল রঙের ছত্রাক বেড়ে উঠছে জ্বর ও জটিল চারাগাছ সংসারে স্বেদবিন্দুর পাহারায়



প্রবাল কথা অথবা ব্রণ ফুল

মায়ের এই পরজীবী রান্না ঘরে মৃত মাছেরা খলবল করে এগিয়ে যায় বাবার ভেজা বিছানার দিকে
এ সমুদ্রে কত রঙিন প্রবাল ফেলে গেছে তাদের সঙ্গম শেষের খোলস , সায়ানাইড বিষের মতো উচ্ছিষ্ট দাগ পরিচ্ছদে
আমি অসহ্য এক হাফ হাতা পাঞ্জাবির ভেতরে রোমকূপ খুঁজে চলি অদৃশ্য পাতাবাহার কুচির আদলে , উষ্ণময় কুটিরে ব্রণ খুঁটে কোন নারী
শিমুলের পাতায় আমি জোনাকির আর্তস্বর শুনে বসে পড়ি নিজের বিছানার ওপর
কে কার সাথে সহবাস ঘরের কবিতা লিখে চলে আমার পরজীবী অভাব নিয়ে
আকাশের মতো নির্ভার মন্ত্র শিখে ফেলি পালক ময় ইছামতি কবির কাছে
হলুদ বুকের জ্বর নিয়ে নৌকাটি উন্মুক্ত প্রায়
আমি মধ্যরাত্রিতে নারীর কাছে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ি পরজীবী বৃক্ষের মতো
আমার শরীরে বাঁশি অথবা ঔরসের কোন রসায়ন সংকেত ছিল না



চাঁদ অথবা সিসিফাস

বৃক্ষের মতো আমার সব শ্বাপদেরা বেরিয়ে পড়ে ঘনত্বহীন দেওয়াল থেকে
অন্ধ পুরুষেরা যেভাবে গান্ধারীর নশ্বর ছেলেদের শরীর নিয়ে নেমে যায় মহাভারত পর্ব যজ্ঞের ভেতর,
স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ি বিদুরের পশ্চাদ্দেশে
আমি কোন ধূলিময় রাজপথ নয় , আমি কোন কাঙ্ক্ষিত দুর্লভ সিসিফাস নয়
আমার শরীরের অদৃশ্য জনুক্রম ভেঙে যায় ক্রমান্বয়ের মৌলিক সংখ্যার পারদ
নিজেকে ভেঙে ফেলি রেডিয়াম নারী ও চাঁদের মতো কলঙ্কময় পাথরের উপর
কোন অদৃশ্য নরকের কথা বলিনি যাকে দেখেছি নিয়তাকার অবিন্যস্ত মৃত্যু আর চিতা কাঠের উপর থরে থরে অঙ্গুরীমাল
শুধু ভাসিয়ে রাখি অবিনশ্বর চতুর্দশী রাত
অন্তর্বাস খুলে রেখে শরীরে কৃষ্ণকায় তুলসী পাতা জড়িয়ে নিলাম ব্রাহ্ম মুহুর্তের স্নানে



সমর্পণ অথবা ঈশ্বর বালক

ঈশ্বর বালকের মতো উলঙ্গ করে ফেলেন আমাদের দেহাবশেষ
রক্তবিন্দু আর পাথর থেকে বেরিয়ে আসে অস্থিমজ্জা আর অবৈধ ঋতুচক্রের রক্ত রস
আমার অবৈধ জিন কোন ঈশ্বর নয়
এক জন্মের জন্য হাপিত্যেশ বসে আছি চুরাশি জনুক্রমের পবিত্র পরম আয়ু নিয়ে
কৃষ্ণ ঘরের ভেতর থেকে নাভি বিন্দু বয়ে চলে প্রবাল পাথরের দিকে
আমি এক অপরিচিত পুরোহিতের কাছে নিজস্ব সমর্পণ শিখে ফেলি ইদং , দদানি মন্ত্রে
শুধু মৃত্যু স্তুপের কথা ভাবতে ভাবতে অপরিচ্ছন্ন গণিতের ক্ষেত্রফলে এঁকে চলি ত্রিকোণমিতি উপর আমি কিছু
স্থানাঙ্কের ভেতর বধির পুরুষকে রেখেছি কালো পালকে ঢেকে
আমাদের তৃতীয় জন্মদিনের পাখি উড়ে যায় ফেরিওয়ালার অদ্ভুত আগুন খেয়ে
আমি কেবল থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বারের  উপর বরফ জমা করি



ভেজা ঘাম অথবা কারক বিভক্তি

বাবা কখনো ঘামের গণিত করে না ভেজা ক্যালকুলাস দিয়ে
মা কখনো রান্নাঘরের ভেতর আগুনের দহন মাত্রা জানে না ব্যাকরণের কারক বিভক্ত দিয়ে
সারা জীবন পুড়ে গেছে কালো বিটুমিনাস কয়লার মতো নিরবিচ্ছিন্ন বাহু বাধা মেলে
তাদের দুটি পায়ের তলা থেকে জন্ম নিচ্ছে ঝিম-ধরা স্নায়ুর ক্ষতের ক্ষেত্রফল
নিরাময় পোশাকের অদ্ভুত মায়া অন্ধকার আরো এক অন্ধকার পুরুষের ভেতর নিজেকে দহন করে চলে
বাবা কিছু দশমিক বিন্দু রাখে আসন্ন মানের উপর চকচকে ফুলের মতো
আমার কোন পূর্বপুরুষ অথবা পরপুরুষ নেই আমি কেবল একটি আজন্ম ছায়ার দিকে চেয়ে আছি নক্ষত্র রাতে
দুটো ডাহুক ডেকে গেল আমার বিছানার কাছে আমি এক অদৃশ্য পুরুষ মানুষকে দুই হাত দিয়ে
ধরে ফেলার চেষ্টা করি তরুক্ষীর অথবা ধান ফুলের মত


জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments