জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা /স্বপন পাল

গুচ্ছ কবিতা 
স্বপন পাল


ভূমিকন্যা 

আমার দখল নাও বলে এক মেয়ে 
ঘরে এসেছিল, আলতার পায়ে।
কত ঋতু চক্র কেটে গেল
কত ঋতু ঘাম-ঘুম, হাঁচি-কাশি, 
কম্বলের ওমে কেটে গেল,
দেখেছি সে আমার দখল নিয়ে
ভূমিকন্যা হয়ে কৃষিকাজে নজর দিয়েছে।
কে বলেছে ঋতু শুধু বয়স চরিয়ে
ঘরে ফেরে, ঘর সেই অচ্ছুৎ প্রহর,
কে বলেছে ঋতু এক চক্রাকার পথ
ঘুরে চলে গ্রাহ্যহীন, ঘোরে অনর্গল ?
নিজের দখল দিতে চেয়ে
এসেছিল যে, তার মুখ মনে নেই আর
পুরোন অ্যালবাম তার স্মৃতিতেই বন্ধ রেখেছে,
দেখেছি সে ইশারায় ইচ্ছে মতো 
ঋতু ডেকে আনে, অচ্ছুৎ প্রহরগুলি
অঙ্গুলিহেলনে আজ শুদ্ধ হয়, কল্পতরু হয়।

                          
সময় সরিয়ে 

একটা তুই শোনার জন্য যখন কান
ব্যাকুল হয়, বুঝে যাই বয়স হয়েছে,
সময় বুঝিয়ে দেয়, যারা ছিল তারা কেউ নেই।
সন্ধ্যে উৎরে গেলে যারা বকতো ঘরের দরজায়
তারা বিদায় জানিয়ে চলে গেছে।
এখন ভুল করলে ধরিয়ে দেবার কেউ নেই
এ বড় সাংঘাতিক কাল, যখন সবাই প্রায়
সমস্ত বেচাল, ক্ষমা-চোখে দেখে।
একটা তুই ডেকে দেখতে পারো, ভুলে যাবো
গাঁটের ব্যথা, বাঁধানো দাঁতের পাটি,
হাতের লাঠিটা যেতে পারে আনুভূমিক তলে।
অমিয় বল্কলে সেজে লাফ দিয়ে নামতে পারি
পথে, শুধু একটা তুই, তারপর 
দেখবে হাউই হয়ে যাবতীয় দুঃখবর্ণ কথা
উড়ে চলে গেছে ইয়ার্কির দিনে।

                        
সন্দেহের দিন

একটা পাখির চোখে বিশ্বাস অবিশ্বাস
দু'টোই দেখেছি, ঠোঁটে সতর্কতা।
একটা মানুষ-চোখ শুধুই সন্দেহে ভারী
ওকে একটু হাসতে বললে দোষ হবে খুব ?
ওতো কাঁদতে জানে, এতো ছল কেন পোষে
যে ভাবে খিদের মধ্যে পরবর্তী খাদ্যের
সন্ধান ওঁত পেতে থাকে, সেভাবে সন্দেহ সব
ঝুঁকে থাকে সম্ভাবনায় ফুলে ওঠা পেটে।
দেখেছে যে চলে গেছে বিজ্ঞাপন পাশ কেটে
ছুতো করে রেখে গেছে সম্বর্ধনা মালা ও পশম
অবশেষ জরিজুতো খালি পা ফেরালে তখন
হেসে উঠবে সে সাহস আকাশ দেয়নি
বাতাস বলেনি, চলতে থাকবে যাওয়া আসা
মরা রোদ বলেনিতো, একটু অপেক্ষা করো
বেঁচে উঠে দেখাবো মরিনি, গাছে গাছে
সালোকসংশ্লেষে পেয়ে যাবে চূড়ান্ত খবর।
ছল নামে বিজ্ঞাপিত সব কিছু থেকে
ওই দূরে দেখা যায় স্বপ্ন ভেসে যায়।
                        

পঞ্চভূত কথা 

আগুন জানেনা, কার রক্ত শুদ্ধ কার নয়,
জল কোনদিন জিজ্ঞাসা করেনি
কে আর্য কে দ্রাবিড়,
বাতাস মোহন বাঁশি গর্জনের আশেপাশে
সুস্থ ধরে রাখে, ধরে রাখে 
পুতিগন্ধ পুতগন্ধ সাথে। 
মাটি সারসত্য জানে জন্ম-মৃত্যু কালের চাকায়
পুষ্ট হতে মাটি লাগে, মিশে যেতে মাটি।
আকাশ উদাস দেখে ওই কারা
ধুন্ধুমার বিদ্বেষ খুঁচিয়ে তোলে,
কারা খোলে প্রাচীন জানালা 
দরোজার আগল সরিয়ে টেনে নেয় ঘরে।
আগুন দহন জানে, জল জানে 
দ্রবণের অপূর্ব কৌশল,
বাতাস প্রাণের কথা বড় বেশি জানে
মাটি জানে মায়ের আদল।
দূরের আকাশ মাঝে মাঝে দিগন্তের মাঠে নেমে
জানতে চায় সব ভাল আছে তো এখনো ?
 
                          
ভাতের পৃথিবী 

পান্তাভাতেরও এক পৃথিবী রয়েছে
সেখানে তার সমাদর দেখার মতো,
কতো প্রাণ আনচান করে সকালে দুপুরে।
তবে সবার আগে ভাত চাই হাঁড়িতে
চাল ফুটলে তবেই না ভাত।
ভাতের গরম কিছুটা মানুষের গরমের মতো
পান্তা হতে সময় তো লাগবেই।
সবার আগে চাল চাই হাঁড়িতে,
এক পৃথিবী হামা টানে জলে কাদায়
এক পৃথিবী জানতে চায়না, শুধু টাকা দিয়ে
জানে চাল কেনা যায়, চালের আঁতুড়ঘর
বহুদূরে বিচ্ছিন্ন পড়ে থাকে।
কি জাদুতে এখনো পৃথিবী বলেনি
মানুষ নয় ইঁদুরেরা বেঁচেবর্ত্তে থাক।
মাঝে মাঝে ধাঁধা লাগে, মনে হয়
পান্তাভাত আর গরমভাত কে জিতবে
যদি দৌড় হয়, যদি বাজি ধরা যায় মাঠে ?

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇


                          

Post a Comment

0 Comments