জ্বলদর্চি

জ্বলদর্চি : মেঘ ও আগুনের খেলা /ঋত্বিক ত্রিপাঠী

জ্বলদর্চি : মেঘ ও আগুনের খেলা

ঋত্বিক ত্রিপাঠী 

জ্বলদর্চি নিয়ে নানান পরিকল্পনা, অন্যদিকে "জীবনটা সিনেমা নয়।''-- পরিবারের এ অমোঘ বাণী। সিনেমা কি তাহলে জীবন থেকে আলাদা! উত্তর পেতে ১৯৯৭ সালে "সত্যজিৎ রায় ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউট"-এ ভর্তির জন্য প্রসপেক্টাস তুলে ফেললাম। বাধ সাধল আর্থিক সমস্যা। তার মানে জীবন সত্যিই সিনেমা নয়! অথচ,  ফর্ম তোলা থেকে ওই প্রসপেক্টাসটা আমার এখনও সঙ্গী। 

সামান্য হলেও এই ঘটনাটাই তো সিনেমার মতো। সুতরাং, কীভাবে একে জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করি! এতদিন বাদেও আমি আমার ভাবনা থেকে সরে আসিনি। তার মানে, জীবনটা যদি সিনেমাই হয়, তবে ক্ষতি কী! আসলে কলকাতার ভিড় আমার একাকীত্বকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। তাছাড়া, জ্বলদর্চি'র বীজ মুগবেড়িয়া গ্রাম ও মেদিনীপুর শহরেই অভিযোজিত হয়ে গিয়েছিল। সে কলকাতার জলবায়ু নেবে কী করে!

আজকের চরম বিকেন্দ্রীকরণের দিনেও সাহিত্য চর্চা কলকাতাকেন্দ্রিক। এ চরম ট্রাজেডি। জ্বলদর্চি'র নিজস্ব অহং এমনই যে, সে ওই ট্রাজেডির পায়ে মাথা নত করতে চায় না। সুতরাং কলকাতায় কোনও ঠিকানা!  না। কলকাতার কোনও পত্রিকা স্টলে আশ্রয়? না। কলকাতার কোনও সভাঘরে অনুষ্ঠান! না। অথচ ভাল লেখার সন্ধানে কলকাতা! হ্যাঁ। কীভাবে। সশরীরে! তাও না। তবে! ডাক ও কুরিয়ার। বিশেষ করে পোস্টকার্ড। প্রচুর পোস্টকার্ড। লিখতেই আছি। কিছু পৌঁছায়। কিছু ঠিকানা হারিয়ে উধাও হয়ে যায়। তবু সিদ্ধান্তে স্থির। কলকাতা যদি কেন্দ্র হয়, তার জন্য পরিধি (জেলা ও গ্রাম) থেকে একটা ব্যাসার্ধই তো যথেষ্ট। পোস্টকার্ড সেই ব্যাসার্ধের কাজ করে চলেছে আজও।

২.
২০১৩ সালে জ্বলদর্চি দপ্তরে 'লিটল ম্যাগাজিনের কথা' তথ্যচিত্রের শুটিং শুরু হল। পরিচালকের প্রশ্ন বাংলা সাহিত্যের সমস্ত নক্ষত্রের লেখা সংগ্রহ করেন অথচ কলকাতা যান না, কীভাবে সম্ভব! তাহলে এটাও একটা বিষয়! প্রশ্ন! প্রশ্ন ও উত্তর বন্দি হল ক্যামেরায়। তবে তো জীবনও সিনেমা।

৩.
জন্মলগ্নে জ্বলদর্চি  নিছক পত্রিকা। জীবন অভিজ্ঞতা সঙ্গে নিয়েই সে হতে চেয়েছে লিটল ম্যাগাজিন। লিটল ম্যাগাজিন হল বিশেষ দর্শন। নিরপেক্ষ ও প্রতিবাদী স্বভাব তার। আত্মজিজ্ঞাসায় নিরপেক্ষ, মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিবাদী। জ্বলদর্চি 'লিটল ম্যাগাজিনের কর্মী' পরিচয় পেতে চাইল। কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ শক্তিতে প্রাণ পেল। সে আর বিশেষ পত্রিকা থাকল না, সমস্ত লিটল ম্যাগাজিনের অংশ হিসাবে তার পরিচয়পত্র গড়ে তুলল। লিটল ম্যাগাজিনের সমস্যা নিয়ে সরব হল। শুধু পত্রিকা প্রকাশ নয়, পত্রিকা সংরক্ষণ, অসহায় সাহিত্যকর্মীর পাশে দাঁড়ানো ইত্যাদি সামাজিক কল্যাণকর বিষয়ে সময় দিতে চাইল। লিটল ম্যাগাজিনের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় পথে নেমে তথা সরাসরি আন্দোলনের পথে নামতে চাইল জ্বলদর্চি। স্বাভাবিক কারণেই 'জনপ্রিয় কবি'র থেকে সামাজিক কবিবন্ধু বেশি গুরুত্ব পেল। আসলে জ্বলদর্চি  লিটল ম্যাগাজিনের দর্শনে আশ্রয় পেতে চাইল।

আর চাইল আত্মজিজ্ঞাসায় প্রশ্ন খুঁজতে। তার প্রশ্ন: আজও কেন লিটল ম্যাগাজিনকে সংবাদপত্রের গোত্রে ফেলা হয়! পৃথক রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা নেই কেন! এই প্রশ্নও সংযোজিত হল তথ্যচিত্রে (পূর্বে উল্লেখিত)। এই প্রশ্ন আসলে স্বপ্ন। স্বপ্নপূরণের স্বপ্নে জ্বলদর্চি নিজেকে খুঁজে পায়। সিনেমায় যেমন দর্শক খুঁজে পায় তার সার্থকতা ও ব্যর্থতাকে।

 ২৯ বছর পার করে জ্বলদর্চির কাছে পুরো দেশটাই এখন পরিবার। পরিবারের অদ্বিতীয় বাণী আজও : "জীবনটা সিনেমা নয়”। জ্বলদর্চি'র সেই একগুঁয়ে উত্তর: জীবনটা যদি সিনেমাই হয়, তবে ক্ষতি কী! আসলে হ্যাঁ ও না --এর মধ্যেকার দূরত্ব সে খুঁজতে চায়। সে নিরপেক্ষ হতে চায়।


জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇


Post a Comment

1 Comments