আতরঙ্গি রে : মনস্তাত্বিক আবহে ঘেরা কুসুম প্রেম
রাকেশ সিংহ দেব
পরিচালক - আনন্দ এল রাই
অভিনয় - সারা আলি খান, অক্ষয় কুমার, ধনুশ।
মুক্তি – ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১ । ডিজনি প্লাস হটস্টার।
রেটিং – 4/5
প্রেমে পড়লে হৃদয়ের প্রোলোভনে মানুষ অগ্রাহ্য করতে চায় মস্তিষ্কের মন্ত্রণা। আবেগ তাড়িত মানুষ যুক্তি তত্ত্বের বেড়াজাল ছিন্ন করে ছুটে চলে প্রেয়সীর টানে। পরিচালক আনন্দ এল রাই জীবনের এইসব ছোট ছোট সাধারণ আবেগকে জীবনের আকাঙ্খার চেয়ে বড় করে গল্প বুনতে ওস্তাদ। আনন্দ এল রাই সর্বদা তার সিনেমায় অন্য যে কোনো উপাদানের চেয়ে আবেগকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তবে ২০২১-এর প্রেক্ষাপটে প্রেমের গল্প বলা সহজ নয়। কারণ আর পাঁচটি বিষয়ের মতো প্রেমও এখন বেশ জটিল। ওটিটি এর দৌলতে স্বাদবদল ঘটে গেছে দর্শকদের। তাই তিনি আলাদা ফ্লেভার নিয়ে এসেছেন বলিউডি প্রেমের গল্পে। প্রাথমিকভাবে আতরঙ্গি রে ছবিটি আর পাঁচটা ত্রিকোণ প্রেমের গল্প বলে মনে হলেও, বিভিন্ন টুইস্ট অ্যান্ড টার্ন রয়েছে গল্পে।
রিঙ্কু (সারা আলি খান) তার প্রেমিক সজ্জদকে (অক্ষয় কুমার) খুঁজতে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। রিঙ্কুর বিশ্বাস সজ্জদ তার জন্য অপেক্ষা করছে। রিঙ্কু তার ভালোবাসাকে পাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করাটাকেই একমাত্র উপায় বলে মনে করে। তিতিবিরক্ত রিঙ্কুর পরিবারের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিয়ে রিঙ্কুর একপ্রকার জোর জবরদস্তি তামিল ব্রাহ্মণ ছেলে বিষ্ণু বা বিশুর (ধনুশ) সঙ্গে বিয়ে দেয়। এদিকে বিষ্ণু তার প্রেমিকা কলেজের অধ্যক্ষের মেয়ে ম্যান্ডি ওরফে মন্দাকিনীকে বিয়ে করবে বলেই মনস্থ করেছিল। কিন্তু, ভাগ্যের পরিহাসে জোর জবরদস্তি ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিষ্ণুর বিয়ে হল রিঙ্কুর সঙ্গে। এরপরই রিঙ্কু-বিষ্ণু-সজ্জদের মধ্যে ত্রিকোণ অচেনা প্রেমের সৃষ্টি হয়। রিঙ্কু ও বিষ্ণু দম্পতি হতে চায় না। ঠিক হয়, বিয়ের পরে দ্রুত সম্পর্কটা শেষ করে দেবে তারা। এদিকে কাহিনিতে এরপরই এন্ট্রি নিতে দেখা যায় অক্ষয় কুমারকে। রিঙ্কু রীতিমতো বিভ্রান্তে পড়ে যান বিষ্ণু না সজ্জদ কাকে তার জীবনে রেখে দেবে। আর এই নিয়েই চলে সিনেমায় টুইস্টের পর টুইস্ট। প্রথমার্ধের আপাত সরল ত্রিকোণ প্রেমের সমীকরণ, দ্বিতীয়ার্ধে বদলে যায় জটিল মনস্তাত্ত্বিক ধাঁধায়। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে দর্শক জেনে যায়, রিঙ্কুর কল্পনায় রয়েছে সজ্জাদ, রক্ত-মাংসের মানুষ সে নয়। দু’দিনের বিয়ের বন্ধনে বিশু প্রেমে পড়ে যায় রিঙ্কুর। কিন্তু কেনই বা সজ্জাদকে হ্যালুসিনেট করে রিঙ্কু? কী ভাবেই বা রিঙ্কুকে সত্যি জানাবে বিশু? বাকি ছবিতে রয়েছে এর উত্তর।
অক্ষয় কুমার–সারা আলি খানের মাঝে দাঁড়িয়েও ‘অতরঙ্গি রে’তে সরল স্বাভাবিক অভিনয় দিয়ে মন চুরি করেছে ধনুশ। সারা আলি খান এবং ধনুশের কেমিস্ট্রি বেশ হটকে। তাদের মাপা খুনসুটি ছবিতে নজর কেড়েছে। বিশুর চরিত্রে ধনুশের আকুতি, তার প্রেম নিবেদন, হোঁচট-খাওয়া গল্পকেও এগিয়ে দেয়। কঠিন চরিত্রে সারা আলি খান উতরে গিয়েছে বলা যায়। তবে অভিনয়ের দিক থেকে এখনও অনেকটা পথ চলা বাকি তার। অতিথি শিল্পী হিসেবে অন্য মেজাজের অভিনয়ে অক্ষয়কুমার ছক ভেঙেছেন। ছবির শেষ দৃশ্যে আক্কির অভিনয় চোখে জল এনে দিয়েছে দর্শকদের।
পরিচালক আনন্দ এল রাই এবং চিত্রনাট্যকার হিমাংশু শর্মা একেবারে ভিন্ন চরিত্রদের এক বিন্দুতে এনে দাঁড় করিয়েছেন। প্রেমের গল্পের প্লট হিসেবে ছবিতে নতুনত্ব রয়েছে। রিঙ্কুর সমস্যার সঙ্গে জড়িয়ে ‘ফাদার কমপ্লেক্স’-এর মতো জটিল মানসিক বিষয়। অচেতন মনে বাবাকে ‘সারোগেট লাভার’ (প্রতিবর্ত প্রেমিক) হিসেবে ধরে নেওয়ার মতো সমস্যা সাধারণত মূল ধারার হিন্দি ছবিতে দেখা যায়নি আগে। বিশুর সাথে থাকতে থাকতে রিঙ্কু আবার তার প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু বিশু তার এই মানসিক সমস্যা সারিয়ে তাকে নিজের করে পেতে চায়। সে চায়না রিঙ্কু সজ্জাদের কথা বলুক বা তাকে কল্পনা করুক। সজ্জাদকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বললে, রিঙ্কু বলে সারা ভারতে যদি কোনও মেয়ে পতি আর প্রেমিককে একসাথে পায় তাহলে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হবে! ছবির কনসেপ্ট অভিনব এবং খানিকটা জটিল। এই ছবিতে গল্পের প্রয়োজনে গান ব্যবহার করা হয়েছে। এ আর রহমানের সুর দুরন্ত। শ্রেয়া ঘোষালের চুলবুলি কন্ঠে দর্শকের মোস্ট ফেভারিট হয়ে উঠেছে 'চকা চক' গানটি। এছাড়াও একাধিক শ্রুতিমধুর গান রয়েছে ছবিতে। সে অর্থে ছবিকে খানিক মিউজ়িক্যালও বলা যায়। গানগুলির দৃশ্যায়নও সুন্দর। যা অবশ্যই এই ছবির প্লাসপয়েন্ট। পরিচালক ছবির শেষে যে টুইস্টটি ব্যবহার করেছেন, সেটিই আতরঙ্গি রে-কে আরও বিশেষ করে তুলেছে। এই বৃষ্টিভেজা মরসুমে অন্য স্বাদের প্রেমের গল্প দেখতে চাইলে দেখে ফেলুন আতরঙ্গি রে।
রেটিং
5 – অসাধারণ
4 – বেশ ভালো
3 – ভালো
2 – দেখতে পারেন
1 – না দেখলেও চলবে
0 Comments