দুটি কবিতা
পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায়
রেনেসাঁ
ওই নড়ে দ্যাখ, পায়ের নিচে মাটি।
ওই হলো ভাপ তেষ্টা মেটার জল।
ওই ভেঙে যায় বসতবাড়ির আশা।
বিশ্বে এখন পথ শুধু সম্বল।
পরিস্থিতির এই আধুনিক রূপে।
পাস যেখানে, উড়াস বসে ছাই।
সব কিছু কি মিথ্যে হয়ে গেছে?
সব কিছু কি মিথ্যে হয়ে যায়?
বলছি কথা মিথ্যেগুলোর সাথে।
দিচ্ছি আশা হাল ভাঙা বিশ্বাসে।
পাল ছেঁড়া মন এইটুকুতেই খুশি।
বাতাস সে তো যাচ্ছে পরবাসে।
তাই করি কি যুদ্ধবিলাস ছাড়া!
মন কেমনের কালচে সীমানায়।
আলোর শপথ, যার সাথে ফের আড়ি।
'ভাব' কি করে মিথ্যে হয়ে যায়?
ওই দ্যাখো রোজ খাচ্ছে মানুষ খাবি।
ওই দ্যাখো রোজ দিচ্ছে কাকে ধোঁকা।
এই জগতে বুদ্ধিমানের বেশে।
সবকটা লোক আচ্ছা বটে বোকা!
ওই কালিদাস কাটছে বসে ডাল।
যে ডালে তার পিছন পানে ঠাঁই।
সব বাঁচা কি তুচ্ছ হয়ে গেল?
সব বাঁচা কি তুচ্ছ হয়ে যায়?
তালবেতালে লকডাউনের পেট।
থাকছে ভুখা মধ্যিখানে বাঁয়ে।
ডানপাশে তার উন্নাসি প্রাণ চলে।
কৃচ্ছসাধন শব মাখে তা গায়ে?
পন্থা? সে তো মধ্য হবেই কারও।
তাই কেন তার টেকার উপায় নাই?
সব সোনা কি হয়রে পুড়ে খাঁটি?
যুদ্ধে কেবল ব্যর্থ হেরে যায়?
চল্ তোকে এক গল্প শোনাই এক।
এই জমানার লক্ষ বছর আগেও।
সভ্যতাকে ধ্বংস করে তবু,
কেউ পারেনি আনতে তাকে বাগে।
সেই তো আশা! সেই আশাতেই রোজ।
বন্দিদশার মুক্তিটাকে চাই।
সব কারাগার বন্দি নিয়েই খুশি?
বন্দি শুধু বন্দিশালায় যায়?
নবজাগরণের গল্প
রোজ রাতে
একটা করে ভোরবেলার খবর আসে।
প্রতিটি ভোর
দ্বিধা নিয়ে এগিয়ে চলে
আরও একটি দ্বিধা মলিন রাতের দিকে।
এ দুইয়ের মাঝখানে ঘটে যাওয়া
জীবনের মহাকাব্যগুলোকে
জীবনের গানের সঙ্গে মেশালে
তৈরি হয় এক একটা করে
নতুন দিনের জীবনী।
হৃদয়ে যুদ্ধ না থেকেও
প্রখর দৃষ্টি আছে যাদের,
তারা তা অনুভব করে।
বাকিদের বলে সাধারণ মানুষ।
সাধারণ মানুষের মুখে ঘাম।
হাতে দিন গুজরানের অস্ত্র।
আদুর গায়ে ধুলো।
ছরে যাওয়া পা রাজপথের উপর।
তারা মহাকাব্যের রচনা করে
অনুভবি শ্রমহীন রসিকের জন্য।
আমরা ছেঁদো কবিরা,
যাদের না আছে চালচুলো,
না আছে পরিচিতির স্পর্ধা,
তারা দু'চোখের আলাদা আলাদা দৃষ্টিতে
মহাকাব্যের রচয়িতা আর পাঠকদের দেখি,
আর ভাবি,
সভ্যতার শেষ সীমানা আর কতদূর।
কিছু ঝকঝকে বুদ্ধিমান লেখক বলেন,
'নিচুতলার নয়,
নীচুতার কথা লেখ হে চিরন্তন!
নীচুতার কথা লেখ!
মহত্বের সত্যযুগ
অনেক দিন আগে পেরিয়ে এসেছি আমরা বহুদিন আগে।
বাহাত্তুরে ধরা মহত্বের আঁতুরঘরে
এখন উইপোকা আর ঘুণপোকা কিলবিল করে।
তাদের চোখে ভাবলেশহীন হন্তার উল্লাস।
উচ্চাকাঙ্ক্ষায় খুনের লালসা।
তাদের কথা লেখ হে
চিরন্তন কালজয়ী!'
চিরন্তনের চোখে জল।
বুক ভারি।
হাতের শানিত কলম
পাশের ভেঙে যাওয়া কলমদানিতে রেখে সে বলে,
'আপনি যুগের যন্ত্রণায় কষ্ট পেয়েছেন!
এ আপনার পরম প্রাপ্তি তবে।
আসুন এখন থেকে বৈভবের ঠুলি চোখ থেকে খুলে, আমরা এক নৌকার সহযাত্রী হই দুজনে।
যারা মানবসভ্যতার অবতরণের শেষ দেখে ছাড়ে।
যুগে যুগে নতুনভাবে লেখে
নবজাগরণের মূর্ত দলিল।'
আমরা ছেঁদো কবিরা,
যাদের না আছে চালচুলো,
না আছে পরিচিতির স্পর্ধা,
তারা দেখি,
রোজ রাতে একটা করে ভোরবেলার খবর আসে।
আর প্রতিটি ভোর, দ্বিধা বুকে এগিয়ে চলে
ধুলোমলিন রাতের দিকে।
0 Comments