জ্বলদর্চি

চারটি প্রেমের কবিতা /অচেনা বর্মন

চারটি প্রেমের কবিতা  

অচেনা বর্মন


বেকার প্রেমিক 
   
বেকার প্রেমিক চাকরিহীন
যন্ত্রণা বাড়ে অহরহ, 
মনের মানুষ হারিয়ে ফেলে ,
জীবন যেন দুর্বিষহ। 

যত্নে গোড়া ভালোবাসা
হারায় নিয়ে বৃষ্টি ফোঁটা, 
ওই চোখেতেই স্বপ্ন আঁকা,
মিষ্টি প্রেম, সংসার ভিটা। 

বেকারত্বের জ্বালা মেটেনা 
বৃষ্টিতেই রাত্রি কাটে, 
মনে প্রেম চোখে স্বপ্ন নিয়ে-
মেধারা দেখো খাটছে মাঠে। 

ইন্টারভিউর পথে নিরন্তর হাঁটে 
হন্যে হয়ে ক্লান্ত প্রেমিক, 
ভাগ্য তাদের মীরজাফর 
ধ্বংসস্তূপ মানসিক দৈহিক।

বেলা বোসের জন্য উপহার 
কেনা হয়না একটিও, 
বেকার প্রেমিক সামর্থ্যহীন ,
প্রতীক্ষায় রয় প্রেমিকাও। 

বেলা বোসের বয়স বাড়ে 
তেইস থেকে পঁচিশ হয় 
প্রেমিকের জন্য প্রহর গোনে 
সম্বন্ধ গুলো ফিরিয়ে দেয়। 

বয়স যখন তার পঁচিশ ঘরে 
বিয়ের জন্য প্রবল চাপ, 
প্রেমিক তখনও চাকরিহীন 
মনের ঘরে নিম্নচাপ। 

শেষ রক্ষা হয়না তবু-
বেলা বোস‌ও নিরুপায়, 
'থেকে যাও' বলতে পারেনা 
বেকার প্রেমিক অসহায়। 

জড়িয়ে ধরার মানুষ হারায়, 
দৃষ্টি কোনে বৃষ্টি ছাপ 
বেকার জীবনে প্রেম কি তবে 
নিছকই এক অভিশাপ? 

হয়তো পরে চাকরি হবে, 
মিটে যাবে সংসার সমস্যা 
তবুও কি এই প্রেমিক তখন
ফিরে পাবে তার ভালোবাসা? 



যে পাখি ঘর বোঝেনা 
                               
যে পথ দিয়ে ফিরে এসেছিলাম
অন্তিম কথা গুলির পর, 
অধুনা উদগত ঘাসে সৃপ্ত তার চিহ্ন
পুরূ হয়েছে শুষ্কপত্রের স্তর। 

পাখিরাও তো চায় কলিষ্ঠ শাখা 
সুঠাম ভালো 'বাসা'র জন্যে, 
এক প্রকোষ্ঠের নিজের ঘর খুঁজে
আমিও কতবার হয়েছি হন্যে!

ছদ্মবেশী মিথ্যে মায়ায় যেদিন
সংবেদনহীন স্নায়ুর প্রতি কোষ, 
মত্ত চোখে সেই তাসের ঘরে 
থাকতে যাওয়া আমারই দোষ। 

স্বার্থপর বটেই, আগলে রাখতাম-
সদর দরজা রক্ষীর মতো 
কুঠুরিকে একার ভাবার নিদিধ্যাসে
হারানোর ভয় প্রতিনিয়ত। 

তারপর বেইমানি ঝড়ে বারবার 
সপাটে খুলত দ্বার নিমেষে, 
দ্বিষৎ দ্বিতীয়দের অবাধ যাতায়াতে
অভিসন্তাপ আমার নিশ্বাসে। 

বহুবার অতিক্রান্ত সহনের সীমানা
শক্তি ধৈর্য্যের সবটুকু হারিয়ে, 
একদিন আলো নিভে অনন্ত রাত্রি নামে শেষে, 
সে আঁধারে ঘর দিয়েছি গুড়িয়ে। 

তারপর,বাগানের গোলাপ গাছ থেকে, 
ঝরে গেছে মুকুল এক একটি, 
শুকিয়ে গেছে, রোপণ করিনি আর
ভয় পাই যে-ঐসব দশ দিকে মেলা দৃষ্টি।।



ভালো মন্দ 
                           
কিছুক্ষণ আগে রেললাইনে ঝাঁপ দিল এক মেয়ে 
সবার অলক্ষ্যে নয়, কিছুজন দেখেছে চেয়ে 
ওদেরই মধ্যে কেউ একজন চিনতেন তাকে,
বললেন, প্রেমই ধ্বংস করেছে মেয়েটাকে।

প্রেম বুঝি খারাপ জিনিস? 
এভাবে করে দেয় ফিনিশ!

আমিই বা কেন ভাবছি এসব! লাভ তো কিছু নেই 
লোকাল এসেছে আমি বরং উঠে গন্তব্যে যাই। 
জানালা দিয়ে দেখি মানুষের ভিড় 
রেল জংশন যেন জীবিকার নীড়। 

প্রতি সকালে শহর সাজে, 
ঘুম শেষ ,ব্যস্ততা কাজে। 

এক প্রবীণ দম্পতি এসে বসেছেন সামনের সিটে, 
দেখে মনে হয়,ভদ্রলোক সত্তরে,মহিলা ষাটে। 
বৃদ্ধাকে শালে জড়িয়ে বৃদ্ধ বললেন'গায়ে দাও'
প্রত্যুত্তরে 'তুমি এবেলার ওষুধটা খেয়ে নাও। 

বয়সের ভার পড়েনি সম্পর্কে, 
সম্পর্ক স্থায়ী যত্নের মোড়কে। 

আসলে ভালো বা মন্দ বিচার ব্যবহারের নিরিখে, 
যা ধ্বংস করে তা সৃষ্টিরও ক্ষমতা রাখে। 
অপব্যবহারে যেমনভাবে গঙ্গা দূষিত, 
বিজ্ঞানও সেভাবে অভিশাপে ভূষিত।।



ভালো ফসলের ভরসা মাটি
                                
তখন জীবন চেরাপুঞ্জি যেনো
প্রায় বৃষ্টি পূর্বাভাস ছাড়া-
কিংবা একটা ভাঙা-চোরা ঘরে
খসে খসে পড়া পলেস্তারা। 

পূর্ব যাত্রী অন্য সঙ্গী পেয়ে-
ফেলে গেছে যে সড়কের মাঝে, 
ওই রাস্তায় যেতে চাইনি আর 
কাঁটা যদি আবার বিঁধে পাছে। 

সেদিনও আকাশে মেঘ করেছিল খুব, 
হঠাৎ তখন তোমায় আবিষ্কার। 
একই রাস্তার দুই অভিমুখ দেখি, 
তারপরে ঠিক জীবন চমৎকার। 

মধু লোভী মধুকর আমি নই, 
সুখ পাখি আমি শুধু সুখই চাই, 
যেমন করে একসাথে হাসি,তেমন
কাঁদলে সুখ তোমায় জড়ালে পাই। 

দেখতে দেখতে বাইশ বছর গেলো
তোমার সাথে একইভাবে আছি, 
দায়িত্ব শুধু বেড়েছে সংসারে, 
বিবাদ শেষে ভালোবাসায় বাঁচি। 

আগের মতোই দেখি তোমার চোখ
রাখিনা কোনো লোকলজ্জার ভয়
সবাই বলে বেহায়া প্রেমিক আমি, 
ওরা বোঝেনা ডুবেছি নয়নতারায়। 

তুমি আমায় বুঝিয়ে দিলে সত্যি
এ দুনিয়ায় সবাই মন্দ নয়-
সঠিক মাটির সন্ধান করো আগে 
যে মাটিতে ফসল ভালো হয়।।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇


Post a Comment

2 Comments