জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -৭৭

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -৭৭


সম্পাদকীয়,
তোমরা যদি এই সময় পুরুলিয়ার বনাঞ্চলে যাও বুঝতে পারবে চারিদিক মহুলের গন্ধে ম-ম করছে। এই মহুলের ফুল এবং কচি ফল স্থানীয় মানুষের আকর্ষনীয় খাবার।পাকা ফল থেকেও পাওয়া যায় ভোজ‍্য তেল, এছাড়াও ঔষধি গুণ যথেষ্ট। মহুলের ছাল জয়েন্ট-এর ব‍্যাথায়, সরু ডগা দাঁতন হিসেবে, দাঁতের অসুখে, শুকনো ফুল পানীয় হিসেবে, কাশি নিরাময়ে এবং মৃগি রোগে বহুল ব‍্যবহৃত হয়। মহুলের খ‌ইল মাছ চাষ এবং কৃষিকাজেও ব‍্যবহার হয়। মহুল ফুল শুকিয়ে হালকা ভেজে ঢেঁকিতে কুটে চাল ভাজা বা সেদ্ধ তেঁতুল বীজ মিশিয়ে তৈরি হয় জঙ্গলমহলের নিজস্ব খাবার, মহুল লাঠা। বহুদিন রাখা যায়। দারুন পুষ্টিগুন এবং এনার্জেটিক। অবাক হচ্ছো তো? কোথা থেকে এলো এই মহুল সুন্দরী? ঐ যে রাকেশ আঙ্কেলের তোলা ছবিতে দেখছো না বাচ্চাদুটো মহুল ফুল জড়ো করছে? সেটা দেখেই তো এত এত কথা জড়ো করে লিখে ফেললাম। সুন্দরী মহুল ছাড়াও হলুদ সর্ষে ফুলও খুব মনোহরণী। সেটা বলেছেন সবিতা পিসিমণি। সর্ষে থেকেও তেল, খোল পাওয়া যায়। সর্ষে ফুলের বড়া, আহা। তোমরা ভাবছো মহুল আর সর্ষে থেকে কি কি তৈরি হয় তা জেনে তোমাদের লাভ কি? আরে তোমাদের মধ্যে থেকে কেউ যে জয়াবতীর গল্পের পুণ্যির মতো কোবরেজ হবে না তার কি মানে? আর কোবরেজ হলে তো এসব জানতে হবে আর অনেক অনেক খেতে হবে সেটা তো তৃষ্ণা আন্টি গল্পে বলেছে, নাকি! না থাক আর বলব না। আজ শুধু ফুল নয়, ব্রহ্মদেশের একটি ভয়ানক রূপকথার গল্প পড়ে নাও দীপক জেঠুর লেখা থেকে। আর ঐ যে ছবিতে দেখছো ভাই বোন দুটিতে মহুল তলায় ফুল জড়ো করছে,  এদিকে রেনেসাঁ জানিয়েছে ওর ভাই দি ডাকতে শিখেছে। আমি তো শুনে আনন্দে লাফিয়ে উঠেছি। আনন্দে চলে গেছি বাসবদত্তা আন্টির সঙ্গে পাখিদের কাছে। যারা যেতে চাও না তারা বসে বসে স্নেহা আর অহনার ছবি আঁকা দেখ।  -- মৌসুমী ঘোষ।


ধারাবাহিক উপন্যাস
জয়াবতীর জয়যাত্রা
নবম পর্ব
তৃষ্ণা বসাক
 
বিকেলবেলা
১৩
বিকেলবেলা কিচ্ছুটি খেতে ইচ্ছে করে না পুণ্যির। এই তো দুপুরেই এক থালা ভাত খেল সে। ঘি, শুক্তুনি, আমডাল, পলতাপাতার বড়া, ডালের বড়ার ঝাল, নিরামিষ ঝোল, ছানার ডালনা আর কাঁচা আমের চাটনি। এর সঙ্গে আবার এক বাটি সর আওটানো দুধ আর কলা। সে নিরামিষ খায় বলে ঠাকমা তাকে বারবার ফল আর দুধ খাওয়াবে। বলবে, কবরেজ হবি তো গায়ে বল লাগবে, নইলে রুগীরা মানবে তোকে নাকি? জয়াবতী এসব তো খেয়েইছে, তার ওপর মাছের ঝাল আর হাঁসের ডিমের ডালনা। এই খেয়ে উঠেই সে তেঁতুল মাখা নিয়ে বসে। পুণ্যিকেও দিয়েছে একটুখানি। তারপর বিকেলে যখন শসা, আদাকুচি আর বেলের পানা নিয়ে হাজির হল কালিন্দী, সে সবটাই খেয়ে নিল চোঁ চোঁ করে। খেতেও পারে বটে। জোরজার করতে পুণ্যি খেল দুকুচি আদা আর এক ফালি শসা। বেলের পানা ছুঁয়েও দেখল না। জয়াবতী শাড়ির আঁচল কোমরে জড়াতে জড়াতে বলল ‘এবার তো তুই ফুঁ দিলে উড়ে যাবি রে পুণ্যি। ভালো করে খা দা। একটা ব্যামো বাধালে তোর মাকে কি জবাবদিহি করব বল দিকি? গাঁয়ের সবাই তো বলবে বিদেশ বিভূঁইয়ে জয়াবতী বন্ধুকে দেকল না। আমার মুখটা কীরম পুড়বে ভেবে দেকেচিস?’

পুণ্যির ভারি রাগ হল। সবসময় বড়দের মতো পাকা পাকা কতা। কে আমার রাজাগজা এলেন যে ওনার মুখ পুড়বে?
সে ঝাঁঝিয়ে উঠে বলল ‘সবসময় জেঠামি করিস নি তো জয়া। আমি মোটেই কম খাচ্ছিনি যে ব্যামো হবে। আমার মা কী বলে জানিস তো? কম খেয়ে মানুষ মরে না, বেশি খেয়েই মানুষ মরে’
‘ওসব তো বলত তোকে ভোলাতে।
যকন তোর বয়সী সবাই গাণ্ডেপিণ্ডে খাচ্ছে তুই সেখেনে একটুখানি আলোচাল আর কাঁচকলা খাচ্ছিস, তাই তোকে বলে। ভালো কতা পুণ্যি, তুই একেনে আর একাদশী করবি নি কিন্তু বলে দিলুম।’



পুণ্যি একেবারে হতভম্ব হয়ে যায় জয়াবতীর এই কথা শুনে। একাদশী করবে না! কি অসম্ভব কথা। এসব কতা শুনলেও পাপ! সে বলে ‘এসব কতা বলিসনি খবরদার। শুনলেও পাপ হয়। আর এ বাড়ির কেউ শুনে ফেললে কি লজ্জার কতা। মাগো!’
সে বিছানায় শুয়ে পড়ে কাঁদতে শুরু করে। কেন যে মরতে এ মেয়ের সঙ্গে এল সে! এর জন্যে জীবনের সব শান্তি যেতে বসেছে তার।
জয়াবতী অমনি তার পাশে উপুড় হয়ে শুয়ে বলে ‘ভারি ছিঁচকাঁদুনে মেয়েমানুষ তো তুই পুণ্যি। কাঁদার কতা কী বললুম আমি? তুই ভেবে দেক আমাদের পাশের বাড়ির রাজু খুড়ো, খুড়িমা মরে গেল আগের ভাদ্দরে, দেকেচিস কোনদিন একাদশী করতে? উল্টে রোজ দেকবি হারান ঘটক ছাতি বগলে আসচে, পুজোর সময় গিয়ে দেকবি তার বে হয়ে গেচে, তারপর ধর কামারপাড়ার সতু কামার’
পুণ্যি কান্না থামিয়ে বলে ‘তুই কোন দেশে থাকিস বল দিকি? কে কবে শুনেচে পুরুষমানুষ বৌ মরলে আলোচাল আর কাঁচকলা খায়?’
‘কেন পুরুষমানুষ বলে কি মাথা কিনে নিয়েচে? ওদের দুটো পা, দুটো হাত, দুটো চোখ, দুটো কান আর সবচে বড় কতা একটাই মাতা ঘাড়ের ওপর, মেয়েমানুষ তো আরও বেশি। মেয়েমানুষের পেট থেকেই তো পুরুষমানুষ জন্মায়। কোনকালে শুনেচিস পুরুষের পেট থেকে মেয়েমানুষ জন্মেছে?’

কতা বলছে না তো, যেন লাঠি চালাচ্ছে। কোন কতাটাই ফেলে দেওয়া যাবে না। তবু, পুণ্যি ঠোঁট কামড়ে ভাবল, এসব কতা না বললেই ভালো। সে বলে ‘তুই যেন বামুনঠাকুর এলি, যে বিধেন দিবি। আমি যদি বলি  ঠাকমা আমি একাদশী করব না, আমাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেবে অমনি, এ আমি নিয্যস বলচি’
জয়াবতী অমনি ওর গলা জড়িয়ে বলে ‘শোন, তোর গঙ্গাজল ফস করে কোন কতা বলে না বুজলি, ঠাকমাই এসব বলচিল। বলচিল- ওইটুকু মেয়ে, কড়ে রাঁড়ি, ওর একাদশী করার কোন দরকার নেই কো। কে আবার  দেকতে যাচ্ছে? মেয়েটা সারাদিন জল না খেয়ে ছটফট করে, এ আমি দেকতে পারি না বউমা’
‘সত্যি বলচিস ?’
এর উত্তরে জয়াবতী কী বলতে যাচ্ছিল তার আগেই আবার কালিন্দি এসে হাজির হল। সে যেমন এসেছে থালা বাসন নিতে,  তেমনি এদের তাড়া দিতে।
‘কত্তামশাই মাঠে ডাকচেন তোমাদের। ঘোড়া দাঁড়িয়ে আচে’
ঘোড়ার কথায় একদিকে চুপসে যায় পুণ্যি আর অন্যদিকে উত্তেজিত হয়ে ওঠে জয়াবতী। সে বলে  ‘চল চল, তোর সবতাতেই ঢিলে, আরে আজ তো আর ঘোড়ায় চড়তে হচ্ছে না’
পুণ্যির হাতপা ঠান্ডা হয়ে যায়। নাই চড়ল, ঘোড়া হঠাৎ ক্ষেপে এসে যদি একটা ঢুঁ দ্যায় তো চিত্তির।
 (ক্রমশ)


ধাঁধাঁ

দীপক কুমার মাইতি

বহুদিন আগের কথা। ভুপিনাথ নামে এক যুবক ছিল। তার বাবা-মা তাকে গুরুদেবের আশ্রমে শিক্ষালাভ করতে পাঠিয়েছিলেন। গুরুগৃহে শিক্ষা সমাপ্ত হয়েছে। ভুপিনাথ মেধাবী। কিন্তু ভীষণ অলস। তার গুরুদেব ভুপিনাথকে নিয়ে খুব চিন্তিত।  সে জীবনে সাফল্য লাভ করতে পারবে তো ? শিক্ষান্তে ভুপিনাথ গুরুদেবের কাছ থেকে বিদায় নিতে এসেছে। গুরুদেব তার মাথায় হাত রেখে বললেন – পুত্র আমি  তোমাকে তিনটি উপদেশ দিচ্ছি। সারা জীবন এই উপদেশ মেনে চলবে। তুমি অচিরে সাফল্য লাভ করবে।
বিনীতভাবে ভুপিনাথ বলে – বলুন গুরুদেব। আমি আপনার উপদেশ চিরকাল মেনে চলব।
প্রথম উপদেশ -তুমি যদি অযথা বিশ্রাম না নিয়ে চলতেই থাকবে তবে সহজে তুমি নিজের গন্তব্যে পৌঁছাবে। দ্বিতীয় উপদেশ –মনে প্রশ্ন জাগলে তার উত্তর জানতে চেষ্টা করবে। না জানা অবধি হাল ছাড়বে না। তৃতীয় উপদেশ – অলস নিদ্রায় না থেকে জেগে থাকবে তবেই তুমি তোমার জীবন রক্ষা করতে পারবে।
গুরুদেবকে প্রণাম করে ভুপিনাথ নিজের বাড়ির দিকে যাত্রা শুরু করল। সে কিছুদূর চলার পর দেখল রাস্তা দুভাগে ভাগ হয়েছে। একটি রাস্তা তার বাড়ির দিকে গেছে। অপর রাস্তা নাগিনপুর গেছে। ভুপিনাথ ভাবলো বাড়ি না গিয়ে নাগিনপুর যাবে। সেখানে কাজ করে রোজগার করবে। অর্থ জমিয়ে মা-বাবার কাছে ফিরে যাবে। বাড়ি গেল থেমে যাওয়া হবে। গুরুদেব বলেছেন না থেমে চলতে, তবেই সে তার সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। বাড়ি না গিয়ে চলতে শুরু করল। একদিন নাগিনপুরে পৌঁছে গেল। এক মুদিখানায় খাতা লেখার কাজ পায়। কাজ করতে করতে ক্রেতাদের আলোচনা মন দিয়ে শুনত। মনে প্রশ্ন জাগলে তার উত্তর জানতে চাইত। সে বছর দেশে খরা। চাষ আবাদ নেই। লোকের হাতে অর্থ নেই। মাল কিনবে কী করে? সেদিন দুজন আলস ভাবে দোকানের বারান্দায় গল্প করছে। তাদের আক্ষেপ দেশে রাজা নেই বলেই দেশে আজ দুর্ভিক্ষ ও খরা। কিন্তু সমাধানের কোন রাস্তা নেই। ভুপিনাথ তাদের একজনের কাছে জানতে চায় – ভাই দেশে রাজা নেই কেন? তিনি কী সন্ন্যাস নিয়েছেন?
একজন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে –– সে এক করুণ কাহিনি।  রাজা, রানী, রাজকন্যা সব ছিল এ দেশে। তখন দেশে কোন দুঃখ ছিল না। একদিন রাতে রাজপ্রাসাদে একটি সাপ ঢুকে পড়ে। তার কামড়ে রাজা ও রানীর প্রাণ যায়। কিন্তু ভাগ্যক্রমে রাজকুমারী বেঁচে যান। মন্ত্রীরা দেশ শাসন করছেন। রাজা নেই তাই চারিদিকে ঘোর অমঙ্গল। রাজ্যোতিষী বলেছেন, রাজকুমারীকে বিয়ে দিতে। তার স্বামী দেশের রাজা হলে এই অমঙ্গল কেটে যাবে।

ভুপিনাথ বলে – তাহলে তো সমাধান রয়েছে। মন্ত্রীরা রাজকন্যার বিয়ে দিচ্ছেন না কেন? 
অপরজন বলে – সেটাই তো আসল সমস্যা।
প্রথমজন বলে – অনেকে এসেছে রাজকন্যাকে বিয়ে করতে। বিয়েও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিয়ের রাতেই সাপের ছোবলে বরের মৃত্যু হয়েছে। এখন তো রাজকন্যার বিয়ের কথা শুনলে যুবকেরা ভয়ে পালিয়ে যায়। 
ভুপিনাথ ভাবে গুরুদেবের দ্বিতীয় উপদেশ মতন প্রশ্ন করে উত্তর জানা হয়েছে। পরেরদিন সে রাজসভায় হাজির হয়। মন্ত্রীদের সামনে করজোড়ে দাঁড়িয়ে বলে – আমি রাজকন্যাকে বিয়ে করতে চাই। আপনাদের অনুমতি চাই।
মন্ত্রীরা তাকে বিয়ে করতে নিষেধ করে। ভয় দেখায় বিয়ে করলে তার মৃত্যু হবে। কিন্তু ভুপিনাথ অনঢ় থাকে। তাঁরা রাজি হন। ধুমধাম করে ভুপিনাথ ও রাজকন্যা ইন্দুমতীর বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের রাতে বাসরঘরে ঢুকে ভুপিনাথ দেখে ইন্দুমতী অঘোরে ঘুমাচ্ছে। সেও শুতে যায়। তার মনে পড়ে গুরুদেবের কথা। সে ঠিক করে আজ রাতে জেগে থাকবে। সে তার তাকিয়া ইন্দুমতীর কাছে রেখে চাদর ঢাকা দিয়ে দেয়। দেখে মনে হবে কেউ যেন ইন্দুমতির পাশে শুয়ে আছে। একটি তলোয়ার নিয়ে একটি থামের আড়ালে ভুপিনাথ লুকিয়ে থাকে। 
রাত গভীর। চারিদিক নিস্তব্ধ। ভুপিনাথ দেখে ছাদ ভেদ করে একটি বিশাল আকারের সর্প নেমে আসছে। চোখ দুটো থেকে আগুন বেরাচ্ছে। জিভ রাগে হিলহিল করছে। প্রকাণ্ড ফনা তোলে সর্পটি। বিছানায়  রাখা তাকিয়াকে  ভুপিনাথ ভেবে ছোবলের পর ছোবল মারতে থাকে। তীব্র বিষ ঢালতে থাকে। সুযোগ বুঝে ভুপিনাথ পিছন থেকে তরবারির এক কোপে সাপের মুণ্ডুচ্ছেদ করে দেয়। ইন্দুমতির ঘুম ভেঙে যায়। সে আর্তস্বরে চিৎকার করে ওঠে। তার চিৎকার শুনে প্রহরীরা ঘরে ঢোকে। ছিন্নভিন্ন সাপারে শরীর দেখে সবাই বুঝতে পারে রাজকন্যার স্বামীর হত্যাকারি কে ?
ভুপিনাথের রাজ্যাভিষেকে হবে। মন্ত্রী-পরিষদ আলোচনায় ব্যাস্ত। সিংহাসনে ভুপিনাথ বসে। ইন্দুমতী সেখানে হাজির হয়। চোখ তার জ্বলছে, ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে – মন্ত্রীগণ, আমি রাজকুমারী। আমি এক সাধারণ পুরুষকে বিয়ে করতে পারি না। আমি কোন রাজপুত্রকে বিয়ে করব। সেই হবে রাজা। এই ব্যক্তিকে রাজা হিসাবে মানতে পারব না।
মন্ত্রীরা নানাভাবে বোঝাতে থাকে। তাঁরা জানান, ভুপিনাথ সাহসের সাথে বিষধর সর্পকে মেরে তাঁর জীবন বাঁচিয়েছে। দেশকে অমঙ্গলের হাত থেকে মুক্তি দিয়েছে। তাকে বিয়ে না করলে অধর্ম হবে। দেশে আবার অমঙ্গল শুরু হবে। ইন্দুমতি বলে – আমার একটি ধাঁধাঁ আছে তার উত্তর ভুপিনাথ দিতে পারে তবেই আমি তাকে বিয়ে করব। না পারলে ওর মাথা কেটে ফেলা হবে। দেহকে টুকরো টুকরো করে চারিদিকে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। কাক ও শকুন খাবে। 
ভুপিনাথ উঠে দাঁড়ায় – আমি রাজি রাজকুমারী। আপনার ধাঁধা বলুন।

তাচ্ছিল্যের হাসি ইন্দুমতীর মুখে – ছাল ছাড়াতে হাজার/ তাকিয়া করতে হাজার/   ভালোবাসার লোকের হাড় / আজ যে খোঁপার কাঁটা। 
বলেই ইন্দুমতি বলে – আমি তোমাকে চল্লিশ দিন সময় দিলাম ভাবতে। সময় শেষ হলে আমাদের দেখা হবে।
ইন্দুমতি চলে যায়। গুরুদেব বলেছিল প্রশ্ন পেলে তার উত্তর খুজতে মানুষের কাছে জানতে চাইবে। ভুপিনাথ প্রথমে মন্ত্রীদের কাছে ধাঁধাঁর উত্তর জানতে চায়। তাঁরা উত্তর দিতে পারেন না। ভুপিনাথ ভাবে সে সারা রাজ্য ঘুরে জনে জনে মানুষের কাছে ধাঁধাঁর উত্তর জানতে চাইবে। গুরুদেব বলেছিলেন না থেমে চলতে থাকলে একদিন গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। তাই সে চলতে থাকে আর ধাঁধাঁর উত্তর লোকের কাছে জানতে চায়। দিন যায় কিন্তু ধাঁধাঁর উত্তর কেউ দিতে পারে না। আজ উনচল্লিশতম দিন। তার হাতে মাত্র আর একদিন। হতাশ হয়ে চলতে থাকে। তার খিদে পেয়েছে। একটা গাছের নিচে বসে। ঝোলা থেকে খাওয়ার বের করে খেতে থাকে। তার লক্ষে পড়ে,  দুটো কাক তার দিকে চেয়ে বসে আছে। ভুপিনাথের মনে হয় কাক দুটো ক্ষুধার্থ। সে কিছু খাওয়ার কাকেদের দিকে ছুঁড়ে দেয়। সে নিজে গাছের নিচে বিশ্রাম নিতে থাকে। চোখে তন্দ্রা লেগে গিয়েছিল। স্বপ্ন দেখে, গুরুদেব তাকে ঘুমাতে নিষেধ করছেন। চোখ খোলে সে। মনে পড়ে গুরুদেবের তৃতীয় উপদেশের কথা। সে চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকে। তখনই সে শুনতে পায় কাকেদের কথা। একটি কাক বলছে – আজ এই দয়াবান লোকটির থেকে খাবার পেলাম। কাল কী খাব?

অপর কাক বলে – চিন্তা নেই। কাল রাজকুমারীর হাতে ভুপিনাথ মরবে। তার মাংস ছড়িয়ে দেওয়া হবে। তাই খাব।
কিন্তু ভুপিনাথ যদি উত্তর দিতে পারে?
তাও মরবে। আমি ছাড়া এই ধাঁধাঁর উত্তর কেউ জানে না।
আমাকে বলবে না!
বর্তমান ইন্দুমতি আসল নয়। এক সর্পিনী তার রূপ ধরে আছে। যে সর্পটি মারা গেছে সে ছিল এই সর্পিনীর স্বামী। তাকে হত্যা করেছে ভুপিনাথ। সর্পিনী তার স্বামীর দেহ থেকে ছাল ছাড়াতে এক ব্যাধকে একহাজার স্বর্ণ মূদ্রা দিয়েছিল। একহাজার স্বর্ণ মুদ্রা দিয়ে সে চামড়া দিয়ে তাকিয়া বানিয়েছে। সর্পের হাড় দিয়ে খোঁপার কাঁটা বানিয়েছে। খুব গোপনে এই কাজ করেছিল সর্পিনী। 
উত্তর বলে দিলেও ভুপিনাথ মারা যাবে কেন?
সর্পিনী তার স্বামীর হত্যাকারীকে ছেড়ে দেবে? নিজের রূপ ধরে তাকে হত্যা করবে।
রাজকুমারী ইন্দুমতি কোথায় আছেন?
কাকটি বলে – সর্পিনীর পেটে। তাই তো সে রাজকুমারীর রূপ নিতে পেরেছে। সর্পিনীকে মেরে তার পেট থেকে ইন্দুমতিকে রক্ষা করতে হবে।
কাক দুটো উড়ে যায়। ভুপিনাথ পেয়ে যায় তার উত্তর, ফিরে আসে রাজপ্রাসাদে। 
চল্লিশতম দিন ভুপিনাথ সিংহাসনে বসে। দুজন রক্ষী নিয়ে হাজির হয় ইন্দুমতী – ভুপিনাথ তুমি কী আমার ধাঁধাঁর উত্তর দিতে পারবে?
মৃদু হাসে ভুপিনাথ – নিশ্চয়ই পারব। তবে তা শোনার জন্য আপনাকে আমার সামনে আসতে হবে। রক্ষীরা ওখানেই থাকবে।
ইন্দুমতি উঠে আসে সিংহাসনের সামনে। ভুপিনাথ কাকেদের কাছে যেমন শুনেছিল তেমনি বলে ইন্দুমতীকে। তার উত্তর শুনে নকল ইন্দুমতী রাগে কাঁপতে থাকে। কিন্তু ভুপিনাথ তাকে সুযোগ না দিয়ে নিজের তরবারির এক কোপে নকল ইন্দুবালার মুণ্ডুচ্ছেদ করে। তার দুই বিশ্বস্ত সহচরও সেই সময় রক্ষীদের মুণ্ডু্চ্ছেদ করে । দরবারের সবাই হাহাকার করে ওঠে। বিস্ময়ে সকলে তাকিয়ে দেখে ইন্দুমতি ও রক্ষীদের দেহ নয়, পড়ে আছে তিনটি সর্পিনীর দেহ। ভুপিনাথ তাড়াতাড়ি সর্পিনীর পেট চিরে ইন্দুমতীকে উদ্ধার করে। ঘুম থেকে যেন জেগে ওঠে ইন্দুমতী। সামনে ভুপিনাথকে দেখে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকে।
আজ ভুপিনাথ ও ইন্দুমতীর বিয়ে। এলাহি আয়োজন। ছোট্ট বন্ধুরা যাবে নাকি?  আমি তো যাচ্ছি।

       (ব্রহ্মদেশের একটি প্রচলিত রূপকথার অবলম্বনে গল্পটি লেখা হয়েছে।)


হলুদ ফুলের ঢেউ

সবিতা বিশ্বাস


ঢেউ উঠেছে সর্ষে ক্ষেতে হলুদ ফুলের ঢেউ
পরাগ ওড়ে স্বর্ণ গুঁড়ো দেখেছো নাকি কেউ?
পাতার আড়ে নজর কাড়ে হলুদ থোকা ফুল
হলুদ বরণ রাজকন্যের কানে সোনার দুল
 
পেরজাপতি সোহাগ মাখে ফুলের পরে বসে
ভরায় উদর সর্ষে ফুলের মিষ্টি মধুর রসে
হলুদ মাঠে বাতাস ছোটে সোনা রোদের গান
চোখ জুড়িয়ে মন ভরিয়ে জুড়ায় উতল প্রাণ
 
রাত নামলে মিহিন সুতো ছড়িয়ে দেয় জাল
ঝরতে থাকে শিশির ফোঁটা ভিজায় মাঠের আল
ভোরেরবেলা পাখির ডাকে ভাঙে মাঠের ঘুম
সর্ষে ফুলের কপালে দেয় উষার আলো চুম

এমনি করে খুশির ডানা ছড়িয়ে দিয়ে মাঠ
সর্ষে ফুলের সাথে বসায় হলুদ রঙের হাট
সূর্য্যমুখী হলুদ গাঁদা সবাই এসে জোটে
সাতসকালে সবুজ মাঠে হলুদ ঢেউ ওঠে।


হাসি
রেনেসাঁ গঙ্গোপাধ্যায় 
অষ্টম শ্রেণী, সেক্রেড হার্ট স্ক্যল, আদ্রা, পুরুলিয়া

হাসছে দেখো ছোট্ট খোকা
দৃষ্টি ফেরা দায়
ফোকলা দাঁতেও হাসিটি তার
মিষ্টি বাদল বায়। 

আমায় দিদি ডাকতে  গিয়ে
কেবল বলে - ডি
এক বছরও হয়নি তবু
শিখেছে এ  বি । 

নেড়া মাথা তাও দেখি সে
টেবিল থেকে তুলে
চিরুনখানি চালায় মাথার
একটি দুটি চুলে। 

নিজেই হাসে আপনমনে 
যেন খুশির ঢেউ,
সারা গায়ে কাতুকুতু 
দিচ্ছে তাকে কেউ।


স্মরণীয়
(যামিনী রায়)
কলমে - পীযূষ প্রতিহার


যামিনী রায় ১১ই এপ্রিল ১৮৮৭ খ্রীষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বেলিয়াতোড় গ্রামের এক জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন রামতারণ রায় ও মা ছিলেন নগেন্দ্রবালা দেবী। ১৯০৬ থেকে ১৯১৪ পর্যন্ত তিনি কলকাতা গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুলে ইউরোপীয় একাডেমিক রীতিতে চিত্রকলা বিষয়ে পড়াশোনা করেন। এখানে পড়ার সময়ই তিনি ইতালির শিল্পী গিলার্ডি ও অধ্যক্ষ পার্সি ব্রাউনের সান্নিধ্যে এসে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দেশগুলোর শিল্পকলা বিষয়ক কৌশলের সঙ্গে পরিচিত হন। ১৯১৪ সালে কলকাতা আর্ট স্কুল থেকে ফাইন আর্টসের ডিপ্লোমা সম্পুর্ন করেন। এইসময় কিছুদিন তিনি ফার্সি শিল্পীদের মতো চিত্র চর্চা করেন। তাঁর শিল্পী জীবনের প্রথম দিকে বিদেশি ভাবধারার কিছু ছবি আঁকলেও তিনি দেশীয় লোকসংস্কৃতির ও ভাবধারার ছবি আঁকতেই বেশি সাবলীল ছিলেন। দেশীয় সহজ সরল জীবনযাপন ও লৌকিক সংস্কৃতি তাঁকে ভীষণ আকৃষ্ট করত। আর্ট স্কুলের শিক্ষাস্বরূপ পাশ্চাত্যের পোস্ট ইম্প্রেশনিস্ট শিল্পী পল সেজান, ভ্যান গগ, পাবলো পিকাসো ও গগ্যাঁর প্রভাব ছিল তাঁর প্রথম দিকের ছবিতে। তাঁর স্টাইল ও মাধ্যম ছিল পোর্ট্রেট, ল্যান্ডস্কেপ এবং তৈলচিত্র। নিজস্ব ঢংয়ে এবং উদ্ভাবনী চিন্তায় তিনি শিল্পকলার জগতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছেন। কলকাতা আর্ট স্কুলের তখনকার অধ্যক্ষ, ভারতীয় আধুনিক শিল্পকলার দিকপাল অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রিয় শিষ্য হয়ে উঠেছিলেন তিনি। এইসময় তিনি পাশ্চাত্য চিত্রচর্চায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন ও দেশীয় চিরাচরিত রীতির শিল্পচর্চায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন। কলকাতার কালীঘাট মন্দিরের সন্নিহিত অঞ্চলে পৌরাণিক কাহিনী, ধর্মীয় বিষয় অথবা পশুপাখি জাতীয় গ্রামীণ চিত্রপট আঁকার যে কালীঘাট চিত্রকলার উদ্ভব হয়েছিল তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন তিনি। এই পাটশিল্পের প্রতি দুর্বার আকর্ষণে তিনি তাঁর জন্মস্থান বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়, ওড়িষ্যা, গুজরাট ও মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রাম থেকে তিনি প্রচুর পটচিত্র সংগ্রহ করেছিলেন। বাংলার লোকজ পুতুল, শিশুদের আঁকা চিত্র ইত্যাদি তিনি তাঁর ছবির 'ফর্ম' হিসেবে গ্রহণ করেন এবং আঁকার বিষয় হিসেবে বেছে নেন গ্রামবাংলার সরল-সাদাসিধে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখের চিত্র, ধর্মাশ্রয়ী কাহিনী যেমন - রামায়ণ, মহাভারত, শ্রীচৈতন্য, রাধা-কৃষ্ণের কাহিনী ও যীশুর কথা। এছাড়া বেলিয়াতোড়ের পাশাপাশি গ্রামের সাঁওতাল জীবনের ছবি তাঁর আঁকায় ফিরে ফিরে এসেছে বারবার।

     ১৯৩৮ সালে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া স্ট্রীটে তাঁর আঁকার প্রথম প্রর্দশনী হয়। এইসময় শিল্পী হিসেবে তাঁর কথা প্রচারিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন মার্কিন অফিসার ও সৈনিকদের মাধ্যমে তাঁর ছবির জনপ্রিয়তা বিদেশেও ছড়িয়ে পড়ে। তিনি চিত্রকলা শিল্পকে সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে দেশজ উপাদান ব্যবহারে জোর দিতে বলেন। রং হিসেবে ভুষোকালি, খড়িমাটি ও লতাপাতার রস ইত্যাদি ব্যবহার করেন। তাঁর আঁকা বিখ্যাত ছবিগুলো হল-'সাঁওতাল মা ও ছেলে', 'চাষির মুখ', 'পূজারিনী মেয়ে ', 'কীর্তন', 'বাউল', 'গনেশ জননী', 'তিনকন্যা', 'যীশুখ্রীষ্ট', 'কনে ও তার দুই সঙ্গী', 'ক্রন্দসী মাছের সাথে দুই বেড়াল', 'মাদলবাদনরত সাঁওতাল' প্রভৃতি।
      এই মহান শিল্পী ১৯৫৪ সালে তাঁর শিল্পকলার জন্য ভারতবর্ষের তৃতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক নাগরিক সম্মান পদ্মভূষণ পান। ১৯৫৫সালে প্রথম প্রাপক হিসেবে চারু শিল্পের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান ললিতকলা একাডেমি পুরস্কার পান। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৫৬ সালে যামিনী রায়কে সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।
      ১৯৭২ সালের ২৪ এপ্রিল এই মহান শিল্পীর জীবনাবসান হয়।


ধারাবাহিক ভ্রমণ
চলো যাই
( পাখিদের কাছে)
কলমে - বাসবদত্তা কদম

পর্ব ৬
-বাঁশের মাথায় বাসা! যাঃ তাই আবার হয় নাকি?
-হ্যাঁ গো হয়। সম্ভবত শত্রুর হাত থেকে ডিম ও ছোট্ট ছানাদের রক্ষা করতেই এরা মাটি থেকে অনেক উঁচুতে গাছের মাথায় বাসা বানায়। 
-আর এরা বেশ মিলেমিশে থাকতে পছন্দ করে। 
অনেকটা আমাদের মতন বলতে পারো 
-কি দিদি কি করছ? 
-কাকিমা কেমন আছো? 
-টুকটুকি আজ খেলতে আসবি না? একি হাসছ যে? ওদের কি কাকি মামী মাসি পিসি বন্ধু আর সবাই নেই নাকি! 
অনেকটা এরকমই, এরা সাধারণত নিজেদের একটা কলোনি বানিয়ে ফেলে কাছাকাছি গাছগুলোর মাথায়। এমনকি বাঁশঝাড়ের মাথায়ও বাসা বানায়। দুই একটা জোড়া একটু দূরে গিয়েও বাসা বানায়। আমার মনে হয় এই জোড়াগুলো হয় ঝগড়াটে, নয় হিংসুটে। তোমরা কি বল? পুরো দলটা যখন একটা জায়গায় আশেপাশে বাসা বানিয়ে আছে, তখন এত পাকামির কি দরকার? যদি চিলে বা সাপে আক্রমন করে তখন? বুঝবে বাবাজিরা ঠ্যালা!
এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর এরা ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে ছানা বের হতে তিন সপ্তাহের বেশি সময় লাগে। ডিম ফুটে বের হওয়া খুদে ছানাগুলোকে ওদের মা বাবা খাবার জোগাড় করে এনে খাওয়াতেই থাকে। ওরা খুদে ঠোঁটগুলো হাঁ করেই রাখে। সত্যি বলছি গো। ওদের বাসায় দূরবীন সেট করলে দেখে, এরকমই মনে হয়েছে আমার। তোমরা একবার দেখে দেখো দেখি, তোমাদের কী মনে হয়! 
ভেদানথাঙ্গলে ওদের সবার বাসা দেখবার জন্য বেশ কয়েকটা দূরবীন লাগানো আছে ওয়াচ টাওয়ারের মাথার বারান্দায়। 
সেই যে ছানাগুলো কপাত কপাত খেয়ে যাচ্ছিল, ওরা ছ সাত সপ্তাহের মধ্যে বেশ অনেকটা বড় হয়ে যায়। এবার ওরা শিকার ধরা শেখে। তবে ওদের পুরোপুরি বড় হয়ে উঠতে দু তিন বছর সময় লাগে। আর এই বড় হয়ে ওঠার সময়ে অজস্র ছোট পাখি, অন্য পাখি বা হিংস্র জন্তুর আক্রমনে মারা যায়। মনখারাপ কোরো না, এটাই ওদের জীবনচক্র। এভাবেই পৃথিবীর বুকে টিঁকে আছে ওরা।
হলদে বক (Yellow bittern) আমাদের দেশে এদের বগলা, কেঠো বক, কাঠবগ এরকম সব নামে ডাকা হয়। এরাও সেই আর্ডেইডি বা বক গোত্রেরই অন্তর্ভুক্ত। এদের দেখতে পাওয়া যায় খুব কম। এরা আকারে নিশি বকের মত অতটা বড় হয় না। আর স্থির হয়ে পরিবেশের রঙের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে বসে থাকতে খুব দক্ষ। এরা জলাভূমির সঙ্গে এমনভাবে মিশে যায় যে এরা হটাৎ করে উড়তে শুরু করলে তবেই এদের দেখা পাওয়া যায়। পক্ষী বিজ্ঞানীরা বলেন এদের এই স্বভাবের জন্য এদের সংখ্যা বুঝতে পারাও খুব কঠিন কাজ। খাবার এদেরও সেই একই। ওদের গোত্রের অন্যদের মতন। এরা কচুরিপানার পাতা, শালুক, পদ্ম, ঢোল কলমি,   পাতার উপর দিয়ে নিঃশব্দে চলাফেরা করে একা। আর তার নীচে মাছ বা ব্যাঙ নড়ে উঠলেই শিকার ধরে ফেলে।
এরা কিন্তু নিশি বকের মত, অমন গাছের মাথায় বাসা বানায় না। কচুরিপানা, জলের ধারের ঝোপ, এমনকি ধানের ক্ষেতের মধ্যেও বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিম পাড়বার সময় সাধারণত জুন জুলাই মাস। কখনো তা সেপ্টেম্বর মাসেও হয়। এদের ডিম ফোটা ছানাগুলো কিরকম পাকা ভাবতে পারবে না! ডিম ফুটে বেরিয়ে পনেরো বিশ দিন (১৫ – ২০) বাবা মায়ের এনে দেওয়া খাবার খেয়েই এরা সাবালক হয়ে বেরিয়ে পরে নিজেদের মতো। 
তবে এদের সম্বন্ধে অনেক কিছুই বোধহয় এখনও জানা যায় নি। আর সেটা এদের লাজুক স্বভাবের জন্যই।

ওয়াচ টাওয়ারের মাথার সেই যে দূরবীন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছিলাম আমরা। আমাদের একজন দেখি কাছে এসে ফিসফিস করে কি বলছে! চললাম তার সঙ্গে- বারান্দাটা গোল। প্রায় উল্টো দিকে যে দূরবীন বসানো আছে সেটায় চোখ ঠেকিয়ে দেখি -ওমা ইনি যে চামচ সুন্দরী! আমাদের বাংলায় এদের কোদালি বক, খুনতে বক, বলে বটে তবে কোদালের থেকেও এর লম্বা ঠোঁট দেখে আমার একে লম্বা একখানা চামচ বলেই মনে হোল বেশি। 
কোদালি বককে ইংরেজিতে বলে Spoon bill। তোমরা যাই বল, এ নামখানা আমার বেশি পছন্দ হয়েছে। আমি যখন দেখলাম সুন্দরী তখন ঠোঁট দিয়ে নিজের বুকের মাঝখান থেকে তেল নিয়ে নিয়ে পালকে মাখছেন। 
জানো নিশ্চয়ই পাখিদের সবার শরীরে একখানা তৈল ভান্ডার থাকে। কারুর বুকে, কারুর লেজের কাছে। সেইখান থেকে ঠোঁটে করে করে তেল নিয়ে, পালকে মাখিয়ে ওনারা সুন্দর হন। তেল চুকচুকে হন। বুঝলে তো তেল আমরা মানুষরাই মাখি না একা, ওরাও বেশ মাখে। 
এই কোদালি বক বা খুনতে বক আমি আমাদের কলকাতায় বা তার আশেপাশে কখনো দেখিনি। এদের কথা বললাম কেন বলত? এদেরকেও আমরা বক বলি। কিন্তু বক বললেও এরা মোটেই বকদের গোত্রের অন্তর্ভুক্ত নয়। এরা আর্ডেইডি গোত্রের নয়।
 এদের পরিবারের নাম থেরেসকিওর্নিথিডি (Thereskiornthidae) খুব খটমট নাম বাপু এদের পরিবারের। তবে এদের দেখতে খুব সুন্দর। কারুর দেহ পুরো সাদা পালকে ভর্তি, শুধু চামচ ঠোঁট কালো। কারুর বা পাখনায় একটু লালচে গোলাপি রঙ। কেউ বা পুরো কালো কুচকুচে, ঠোঁট দুখানা হলদে বা কমলা ঘেঁসা। এই পরিবারের কোনো কোনো পাখির আবার ঠোঁট দুখানা কাস্তের মত বাঁকানো। শিকার ধরার কৌশল বেশ মজার।


পাঠ প্রতিক্রিয়া
(জ্বলদর্চি ছোটোবেলা ৭৬ পড়ে বানীয়া সাহা,  বি.এ. তৃতীয় বর্ষ,
বেথুয়াডহরী, নদীয়া, যা লিখেছে।) 

প্রকৃতির নিয়ম মেনে হলুদ বসন্ত আপাতত তার লাগেজ গুটিয়ে বাড়ির দিকেই পা বাড়ানোর ফন্দি আটছে। আবার একটি বছরের অপেক্ষা। প্রিয় কিছু জিনিস যখন নিজেদের কাছ থেকে দূরে চলে যায় তখন স্বাভাবিক ভাবে একটু মন খারাপ হলেও ধীরে ধীরে সেই পরিস্থিতির সাথে ধাতস্থ হয়ে নিতে হয়। কেউবা আবার নতুন কোনো আশা নিয়ে সেই প্রিয় বিষয়টির জন্য অপেক্ষা করে যায় চিরকাল। ঠিক এরকমভাবেই আমার প্রিয় বসন্ত এবছরের মতো বিদায় নেব নেব করলেও তাকে আরেকটিবার কাছে পেতে, তাকে ভালোবাসতে, তাকে চোখ বন্ধ করে উপলব্ধি করতে বেশ ভালো লাগে। ভীষণ আশা জাগে আগামী বসন্তের ফাগুন হাওয়া গায়ে মাখার। আর আমার এই আশাগুলোর ক্যানভাসে "জ্বলদর্চি"র ৭৬ তম সংখ্যার প্রচ্ছদের গেরুয়া রঙের পলাশেরা রঙ ছড়িয়ে কোথায় যেন হারিয়ে দিলো আমাকে। আরেকটিবার নতুন করে অনুভব করলাম বসন্তকে। এইরকম একটা ফিলিংস আমাকে এনে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই মাননীয় চিত্রগ্রাহক নীলাব্জ ঘোষ মহাশয়কে। পত্রিকার ভিতরে যতই যেতে থাকি প্রতিটা অংশেই যেন একটা উজ্জ্বল আলো আমাকে অন্যরকম ভাবে চিনতে শেখায় নতুন কোনো পথ, পেরোতে শেখায় অন্ধকার। একটি মেয়ে হিসেবে নিজের দূর্বলতাগুলোকে অনেকখানি কাটাতে পারলাম যখন প্রখ্যাত লেখিকা, কথাসাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, শ্রদ্ধেয়া তৃষ্ণা বসাক ম্যাডামের "জয়াবতীর জয়যাত্রা" র অষ্টম পর্বটা পড়লাম। অত্যন্ত বুদ্ধিমতী, যুক্তিবান, ন্যায়পরায়ণ, তার্কিক একটি মেয়ে জয়াবতীর যে ভাবনাচিন্তা, তার যে জেদ, এই সমস্ত বৈশিষ্ট্য গুলো আমাকে বিস্মৃত করে। ইচ্ছে হয় জয়াবতী হতে। হয়তো এই জয়াবতীই পারবে নারীদের সমাজে জন্মানো কুসংস্কার গুলোকে উপড়ে নতুন আলোর বীজ বপন করতে। জয়াবতী আমাকে  শেখালো সবকিছুকে চোখ বন্ধ করে মেনে না নিয়ে সঠিকটাকে চিনতে , সাহসিকতার সাথে ভয়কে তোয়াক্কা না করে প্রতিবাদ করতে শেখালো এই ছোট্ট মেয়েটি। সত্যিই আমার কাছে এক অন্যতম অনুপ্ররেণা জয়াবতী। মেয়েটির প্রত্যেকটি কথার পিছনেই রয়েছে কোনো না কোনো বিশেষ একটি কারণ। এই পর্বের শেষে জয়া কেনো ঘোড়া গুলোকে পাহারা দিয়ে রাখতে বললো, তা জানার ইচ্ছে বেড়েই চলছে ক্রমশ। দারুণ জমে উঠেছে উপন্যাসটা। দেখা যাক পরের পর্বে লেখিকার হাত ধরে জয়াবতীর আর কোন কোন রূপ উন্মোচিত হয় মানুষগুলোকে প্রকৃত মানুষ করতে!
মানুষ যদি সত্যিই বুঝতো শান্তির মূল্য, তবে কি আর যুদ্ধে নামতো? বর্তমান কালের পরিপ্রেক্ষিতে এই যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিস্থিতিকে সামনে রেখে অপূর্ব একটা কবিতা উপস্থাপন করেছেন বিশিষ্ট কবি ভজন দত্ত মহাশয়। খানিক অস্থির হৃদয়টা নিমেষেই যেন শান্তির স্রোতে গা ভিজিয়ে নিলো কবিতাটির সাগরে। কবি স্মরণ করতে বলেছেন বুদ্ধকে। বুদ্ধের নামটাই এমন যে একবার উচ্চারণ করলেই মনটা কেমন শান্ত হয়ে যায়। কিন্তু এই অনুভব যতক্ষণ না যুদ্ধরত শরীরদের ভিতরকে স্পর্শ করবে ততক্ষণ তারা থামবে না। প্রার্থনা করি, শুভবুদ্ধি ঘটুক ওই সকল মানুষের চেতনায়। ছড়িয়ে পড়ুক কবির আকুতি,
"ও ফুল,আয়না আমরা স্মরণ করি বুদ্ধ
তিনিই তো শিখিয়ে গেছেন অহিংসা পরম ধর্ম।"
যুদ্ধেরই আরও একটি অতীত প্রেক্ষাপটকে ঘিরে উঠে এসেছে মাতৃভাষা দিবসের একটি সুন্দর গল্প "একুশে ফেব্রুয়ারী" জনপ্রিয় লেখক মাননীয় অমিত মজুমদার মহাশয়ের কলমে। গল্পটির যে জায়গাটি সবচেয়ে ভালো লাগলো তা হলো তিনটি জায়গায় ভাষাদিবস উদযাপনের অংশটি। সাধারণত এতদিন অবধি বিভিন্ন স্থানে তথা স্কুল, কলেজ, এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেই বেশিরভাগ ভাষা দিবস অনুষ্ঠিত হতে দেখেছি কিন্তু এইভাবে একই ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে একদিনে তিনটি জায়গায় ভাষাদিবস উদযাপন করার বিষয়টি আমার কাছে ইউনিক মনে হয়েছে। এমন ভাবেও যে মানুষদের এই দিনটির তাৎপর্যকে উপলব্ধি করানো যায় তা আমায় মুগ্ধ করলো এবং গল্পে অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচিত তৃতীয় স্থানটি অর্থাৎ ভিড় বাজারের মধ্যে শেষমেশ একজন প্রাক্তন সৈনিকের উপস্থিতি ও তার হাত ধরেই অবশেষে অনুষ্ঠানটির প্রকৃত মর্ম উপলব্ধি করার প্রচেষ্টা আমাকেও যেন তাদের দলে সামিল করছিল। এই ভিড়ের মধ্যেও এইরকম একটা পরিবেশ তৈরী করা সত্যিই অবিশ্বাস্য ব্যাপার। সমস্ত ঘটনাটা যেন চোখের সামনে দেখতে পেলাম। আমার দারুণ লেগেছে। তবে গল্পের একটি জায়গায় লেখা আছে যে "দেড় ঘন্টার মধ্যে গোটা তিনেক অনুষ্ঠান আমরা করে ফেলবো।" আমার প্রশ্ন হলো গড়ে যদি এক একটা অনুষ্ঠানের জন্য আধঘন্টাও ধরি বাস্তবে কি এই সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ করা সম্ভব? বেদিতে ফুল দেওয়া, প্ল্যাকার্ড বসানো, বক্তৃতা দেওয়া সবকিছু কি এই আধঘন্টার মধ্যে করে ওঠা সম্ভব? আবার র‍্যালি করে অন্য জায়গায় যেতেও তো কিছুটা সময় লাগবে। বাস্তবে এই দেড় ঘন্টায় কি সত্যিই সম্ভব হবে তিনটি অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ করার? 
অষ্টম শ্রেণীর ভানুপ্রিয়া খুব সুন্দর একটা ছড়া লিখেছে। এক এক জনের কাছে সায়েন্স যে এক এক রকম সেটাকেই ফুটিয়ে তুলেছে এই তরুণ কবি। বেশ ভালো লাগলো ছড়াটির শেষ লাইন দুটো
"প্রকৃতি থেকে কুড়িয়ে পাওয়া/ একরাশ ভালোবাসা।"
বড়োদের কাছ থেকে যতটা শিখেছি লেখালেখির বিষয়ে সেটার কিছু অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চাই যে এই ছড়াটির লাইনগুলোয় মাত্রা ও ছন্দ গুলো আরেকটু মসৃণ হলে হয়তো তা আরও বেশি প্রাণবন্ত হয়ে উঠতে পারতো। আমিও ভুল হতে হতেই শিখেছি। এখনও কখনো কখনো ভুল হয় আবার শিখি। এখনও শিখছি প্রতিনিয়ত। চেষ্টা করি একই ভুল বারবার না করতে। তাই ভানুপ্রিয়াকে বলবো এইদিকগুলোয় একটু লক্ষ্য রেখে আরও অনেক অনেক লেখালেখি করতে। তোমার লেখা আরও অনেক কবিতা পড়ার জন্য অপেক্ষা করে রইলাম।
এবারের সংখ্যায় স্মরণীয় বিভাগে মাননীয় পীযূষ প্রতিহার মহাশয়ের "পরশুরাম" পড়ে কিছু অজানা তথ্য খুঁজে পেলাম। এটা আমাকে বেশ কিছুটা সমৃদ্ধ করেছে। এই সকল বীরদের জীবনকাহিনী অনেক প্রেরণা দেয় জীবনে। তখন একটা কথাই মনে হয় যে, চেষ্টা করলে হয়তো আমরাও সেই জায়গাটয় পৌঁছতে পারবো। লেখকের এই ধরনের উপস্থাপনা আমাকে একটু হলেও মোটিভ করলো।
পত্রিকায় প্রকাশিত মাননীয় লেখিকা বাসবদত্তা মহাশয়ার ধারবাহিক ভ্রমণ বিভাগটি সত্যিই অনবদ্য। বাড়িতে বসেই যেন অনুভব করলাম এই বিভিন্ন শ্রেণির পাখিদের। অবাক হলাম নিশি বকদের কথা পড়ে। এদের বাসা জল থেকে যে বাঁশের মাথা পর্যন্ত উঁচু হতে পারে তা ভেবেই বিস্মিত হলাম। পাখি সমন্ধে অনেক নতুন নতুন তথ্য পেলাম। এমন আরও অনেক নতুন নতুন গল্প শুনতে ও সমৃদ্ধ হতে চাই আপনার কাছ থেকে।
পত্রিকার শেষ অংশে প্রকাশিত মাননীয় সাহিত্যিক মলয় সরকার মহাশয়ের "জ্বলদর্চি"র ৭৫ তম সংখ্যার পাঠপ্রতিক্রিয়া থেকে আরও কিছু শিখলাম। তাঁর পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ শৈলী খুবই ভালো লেগেছে আমার। 
শুধু লেখাই নয় ছোটোবড়ো সকলের আঁকাআঁকিও পত্রিকাটিকে রঙিন ছোঁয়ায় অরও সুন্দর ভাবে সাজিয়ে দিয়েছে। পত্রিকায় উপস্থাপিত ধারাবাহিক উপন্যাসটিকে ঘিরে অসাধারন একটি ডিজিটাল আর্টের প্রচ্ছদ উপহার দিয়েছে সুদীপ্তা আদিত্য। শিশুদের উপযোগী করেই আঁকা হয়েছে ছবিটি। ভীষণ পরিস্কার ও নিঁখুত অভিব্যক্তি প্রকাশ পাচ্ছে ছবিটিতে। সত্যিই অপূর্ব লাগলো আঁকাটি।
চতুর্থ শ্রেণীর এষণার মিষ্টি হরিণটি খুব সুন্দর লেগেছে আমার। বয়স অনুযায়ী এতটাই সুন্দর এষণার আঁকাটি সত্যিই তা প্রশংসনীয়।
চোখ আটকালো তুলি দাসের বুদ্ধের ছবিটি দেখে। রঙের মেশানো, আলোছায়া সহ প্রত্যেকটি টোনের ব্যবহার এতটাই সূক্ষভাবে করেছে যে ছবিটাকে আসল ভেবে ভুল হতে পারে। এতটাই জীবন্ত ছবিটা। এমন একটা প্রতিভাকে আমার কুর্নিশ জানাই।
শ্রীপর্ণা ঘোষের জলরঙের শহর কেন্দ্রিক ছবিটিও অসাধারণ। 
সবশেষে যার কথা না বললেই নয় শ্রদ্ধেয় সম্পাদক মৌসুমী দিভাই, তাকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একটি পত্রিকার মধ্য দিয়ে আমাদের ছোটোবেলাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। প্রতি সপ্তাহেই "জ্বলদর্চি" সুযোগ করে দিচ্ছে নতুন প্রতিভাদের আত্মপ্রকাশের। আর একদিন হয়তো ঠিক এই প্ল্যাটফর্মটার হাত ধরেই মানুষ খুঁজে পাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অসংখ্য সৃজনশীল ব্যক্তিত্বদের। গড়ে উঠবে নতুন আরেকটি অধ্যায়, যার ছাপ লেগে থাকবে জ্বলদর্চির প্রতিটা পাতায়।


আরও পড়ুন 
জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments