জ্বলদর্চি

চারটি কবিতা /অর্ণব মিত্র

চারটি কবিতা

অর্ণব মিত্র

মনে পড়ে 
             
   বর্ষা এলেই  মনে পড়ে সেই  
   পুরনো পাড়ার অন্ধকার, 
   মনে পড়ে জনতা মার্কেটের 
   বন্ধ দোকানের নিস্তব্ধতা,
   মনে পড়ে সেই রেশন দোকানের সামনে 
    গোলবাড়ি,
 
  বর্ষা এলেই মনে পড়ে ভেজা দুপুরের রাস্তা দিয়ে
  স্কুল থেকে ফেরা,
 মনে পড়ে সাদা জামা খাকি  প্যান্ট,
 সাইকেলের কেরিয়ারে  সেই বহুব্যবহৃত খাতা 
 আর খাতার কাটাকুটির মাঝে 
 এককোণে লেখা এ+আর,
 
 বর্ষা এলেই মনে পড়ে কত কিছু, 


মনে পড়ে লাল মাটির বুকে সবুজ ঘাস
 
রেল কোয়ার্টার-এর ধারে ধারে,
 তার উপর সাইকেলের চাকার দাগ 
 কেমন অন্ধকারে ডুবে আছে,
 
 মনে পড়ে সন্ধাবেলা বলখেলার মাঠে
 গোল হয়ে দাঁড়ানো বন্ধুদের মাঝে 
 সদ্য প্রেম হারানো 
 অমিতের মুখ,

 চায়ে চুমুক ও সউল্লাস সিগারেটের টান।



মনে পড়ে-২
      
         
               মনে পড়ে বৃষ্টির সন্ধেগুলো ,
                 আর মনে পড়ে সূর্যসেন মূর্তির উপর সারারাত না-নেভা আলো।
                
       মনে পড়ে ঝাপেটাপুরের বাসরাস্তা 
       আর
      
      অন্ধকার মাঠের ধারে স্কুল বাড়ির 
      
       ফাঁকা  ফাঁকা ঘরগুলো।   
      
                

                মনে পড়ে সেই চা আর পানবিড়ির দোকান, 
                আর বৃষ্টির সন্ধায় 
       অন্ধকার মূর্তির মত
      দোকানে  হিন্দি গানের সুরে  
       কয়েকটি কিশোর ছেলের উল্লাস।
            
      মনে পড়ে বৃষ্টির পর ভেজা লাল মাটি 
       আর
       তার উপর হলুদাভ জ্যোস্না 
       বৃষ্টির কুয়াশার সাথে কেমন গিয়ে 
       মিশে যায় দূরে ,  
         
          মনে পড়ে বৃষ্টিভেজা হাওয়ায়
      কাঁপতে  থাকা 
      গাছের পাতাগুলো,
      আর
      বৃষ্টির পর রাস্তা জুড়ে 
      ভেজা ও রঙিন আলো।
      
    মনে পড়ে রেললাইনের পাশে  ধানক্ষেত। 
    মসজিদের পুকুরে চাঁদ 
    আর রাত্রির নিঃস্তব্দতা,
         আর 
     মনে পড়ে
     বৃষ্টির পর বাড়ি ফেরা
    
     বুকে নিয়ে এক
     নির্জন রাস্তার মত শূন্যতা।


 নবান্ন 

শীতের রাতে মনে পড়ে 
জ্যোস্না  মাখা গ্রামের বাড়ির উঠোন, 
ধান ঝাড়াইয়ের পর বিকেলবেলা যে উঠোন গোবর দিয়ে লেপে দেওয়া হয়েছিল,
কুয়াশা মাখা রাতে খড়ের স্তুপের আশেপাশে ও চটের উপর 
খেলে বেড়াতো চারটি কুকুরছানা, 
ও শেষে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়তো তারা।
দিনের বেলা দেখা যেত গোবর নিকান উঠোনে 
মায়ের স্তন থেকে তাদের দুধ খাওয়ার চঞ্চলতা।
রাতে একটু দূরে পুকুরের জলে মৃদু হওয়ায় জোনাকির মাঝে চাঁদের প্রতিবিম্ব দেখা যেত,
শোনা যেত কোন উচ্ছল মাছের ঘাই মারার শব্দ,
চালতা গাছ,জাম গাছ থেকে বাদুড়েরা উড়ে যেত চাঁদের জ্যোস্নায়।

সকালে পেয়ারা ও আম গাছ থেকে পড়ে থাকা শুকনো পাতা ঝাড় দিতো 
কোন এক কালো সাঁওতাল মেয়ে এসে।
ভানুমতী নয় তো!
ট্রেন লাইনের ওপার থেকে একদল সাঁওতাল এসেছিল
মাঠে ইঁদুর ধরতে,
সন্ধা হয়েছে, 
তারা ফিরে গেছে আলপথে 
কেলেঘাই নদীর ধারে শুকনো পাতার আগুন জ্বেলে উৎসবে মেতেছে তারা,

বাড়ির দেওয়ালে আঁকা আছে আলপনা, 
হিমেল হাওয়ায় সাথে গ্রামের বাড়ি থেকে ভেসে আসে 
ভিজে চাল ও গুঁড়ের গন্ধ। 

এরকমই এক তিরিশ বছর আগের রাতের স্বপ্ন থেকে জেগে উঠি  
দু’হাজার বাইশের কুয়াশামাখা 
নবান্নের ভোরে।

 স্বপ্ন 

অনেক দিন তারায় ভরা আকাশ ও
হাওয়ায় ভাসা ধানক্ষেত দেখিনি,
অন্ধকার আকাশে অনেক নক্ষত্র ও তার মাঝে একটি কালপুরুষ 
বিস্ময় ভরা চোখে 
দেখিনি বহুদিন।
আর
নিচে 
এই পৃথিবীর বুকে -এই বাংলার
ধানক্ষেতের মধ্যে দিয়ে 
লাল মাটির পথ জ্যোৎস্না বুকে নিয়ে
কেমন দূরে চলে যায় 
দেখিনি বহুদিন। 

অনেকদিন মেঘলাদিনে ছায়ায় ঢাকা পুকুর দেখিনি,
শুনিনি দুপুরজুড়ে কোকিলের ডাক বহুদিন, 
ও 
কার্তিক মাসের রাতে পুকুরের উপর
হলুদাভ জ্যোস্না- বিস্তৃত  জলের ঢেউয়ে 
আর
পুকুরের কোণে কোণে জোনাকির ঘোরাফেরা 
দেখিনি  বহুদিন।


জ্যোস্নায় পুকুরের পাশে পায়ে চলা পথ দেখা যায়,
চলে গেছে শুকনো বাদামী পাতার মধ্যে দিয়ে,
নিম-আম-চালতার বনে, 
বহুদিন হেটে যাইনি ওই পথে। 


অনেকদিন নিস্তব্ধ রাতে, 
পুকুরের নীরবতায় দাঁড়িয়ে 
শুনিনি কোনো উচ্ছল মাছের ঘাই মারা্‌,

পুকুরের জলে ঝুঁকে  আছে জবাফুলের গাছ, 
কার্তিক মাসের হাওয়ায়
জবাফুলের পাপড়ি কেমন  হেলে পড়ে 
আর
ঠান্ডা জল ছুঁয়ে আসে বার বার-
দেখিনি বহুদিন।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
 

Post a Comment

1 Comments

  1. আহা আহা , কি দেখলাম , কি পড়লাম , থাক সব মনের গহীনে , অনন্তকাল

    ReplyDelete