জ্বলদর্চি

মারণবীজের আজব ধাঁধা /পর্ব ৬ /বাসুদেব গুপ্ত

মারণবীজের আজব ধাঁধা পর্ব ৬

বাসুদেব গুপ্ত

গোল টেবল। ছটি চেয়ার। ঘরটা ষড়ভুজ। লোকে বলে হেক্সাগন। পেন্টাগন আমেরিকার একটা বিশাল বিল্ডিং কমপ্লেক্স। হেক্সাগন একটি ঘর মাত্র। কিন্তু এখানেই ১৫০ কোটি মানুষের নিরাপত্তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আপৎকালে। আপৎকাল কি এসেছে? একটা উত্তেজিত আলোচনা চলছিল পাঁচজনে। ডেকে পাঠানো হয়েছে ষষ্ঠজনকে। 
ভূগর্ভস্থ গোপন রাস্তাটি বাদ দিলে ঘরে আসা যাওয়ার একটি মাত্র দরজা। নিরাপত্তা কমলা লেভেল। বায়োমেট্রিক ডাবল লক। আঙ্গুলের ছাপ আর চোখের মণির ছবি দুটোই না মিললে কেউ ঢুকতে পারবে না । সাউন্ড প্রুফ। বাইরে থেকে শব্দের কম্পন দরজা জানালা থেকে তুলে নিয়ে এক মাইল দূর থেকে শোনার যন্ত্র রাশিয়ানরা বানিয়েছিল বহু দিন আগেই। তাই এখানে প্রতিটি কথা হয় ইলেক্ট্রনিক্যালি। যেটুকু কম্পন বাইরে যায় সেটার শব্দ ক্যানসেল করে সাদা শব্দ বা হোয়াইট নয়েজ করে ছাড়া হয়। এরকম শব্দ ক্যানসেল প্রথম জনপ্রিয় করেছিলেন অমর বোস। তাঁর কম্পানী তিনি এম আইটি কে দান করেছেন এখন যার ব্যবসা প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার। তবে সরকারী মহলে তাঁর পরিচিতি নেই। তাঁর অনুসারী কম্পানীর তৈরী হেডফোন যখন ব্যবহার হয় তখন কেউ ভাবে না আমরা পরনির্ভর কেন। 
হেডফোন না থাকলে নিশ্ছিদ্র নীরবতা। এখানকার অন্তরজাল আবার সম্পূর্ণ গোপন প্রাইভেট নেট। ৪৪০ বিট এনক্রিপশান যা সবচেয়ে ফাস্ট সুপার কম্পিউটারের ভাঙতে লাগবে একশো কোটি বছর। 
পুরো মিটিংটা ডাকা, পরিচালনা করা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার জাতীয় সিকিউরিটি অধিকর্তা বি সি গয়াল। তাঁকে শত্রুরা ময়াল বলেও ডাকে। তাঁর ক্ষমতার ব্যাপ্তি ও প্রতাপ রাশিয়ার রাষ্ট্রপতির থেকে কিছু কম নয়। অনেকে তাঁকে নাম দিয়েছে গুপ্তচরের গ্রান্ডমাস্টার । 

হাজিরা দিচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সেক্রেটারী জিতেন চোপরা, তথ্যমন্ত্রী শ্রীমতী তিথি রাহানে, হোম সেক্রেটারী বিদ্যুৎবরণ চ্যাটার্জি বা বিবিসি, আর ভ্যাকসিন সম্রাট পদমজী টিকাওয়ালা। টিকাওয়ালা এঁর পারিবারিক পদবী, সেটা যে এমন মিলে যাবে কে জানতো। এখন দেশের ৮০% ও পৃথিবীর ৪০% টিকা বানানো হয় ওনার কারখানায়। দেশে পাঁচটি, বিদেশে দশটি ফ্যাকটরি। ইচ্ছে করলে যে কোন দেশের নাগরিক হতে পারেন কিন্তু উনি অসম্ভব দেশভক্ত। তাই সেকথা মনেও আনেন না। দুষ্ট লোকে বলে ১৫০ কোটির বাজার ছেড়ে দেবার মত বোকা তিনি নয়। হলে আজ কি তিনি এত বড় হতে পারতেন?

ডঃ বেরা দরজা দিয়ে ঢুকতেই তার মুখে এসে লাগল একটা কাগজের তাড়া। কেউ ছুঁড়েছে। ক্রুদ্ধ হয়ে। পাঁচজন বসে আছেন ভিতরে। এবং উত্তেজনার চোটে হেডফোন খুলে ফেলেই চলছে প্রবল তর্ক। মাস্ক ও হেডফোন দুয়েরই বড় অসম্মান। হাই পাওয়ার মানুষেরা চিরকালই মাস্ক খুলে ফেলেন জনগণের সামনে। অদৃশ্য একটা মাস্ক অবশ্য থাকে যেটা কেউ দেখতে পায় না। একটা সামান্য ভাইরাসকে তাঁরা ভয় পান জানলে বোধহয় জনগণ তাঁদের দুর্বল ভাবতে পারেন এই ভয়ে। আর গোপন সভায় যে তাঁরা মাস্ক পরবেন না এ আর আশ্চর্য কি?

সাদা চোখে দেখলে পৃথিবীটা এখন মোটেও নিরাপদ নয়। চারদিকে যুদ্ধ। কোন দেশ কোন দেশের বন্ধু আর কোন দেশের শত্রু সেটা প্রায় গুলিয়ে যায়। আমাদের বর্তমান শত্রু কে সেটা নিরূপণ করে তথ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়ার ভার মিঃ গয়ালের। সেখান থেকে ভোর চারটের আগে পৌঁছে যাবে সব কাগজের অফিসে, আর টিভি চ্যানেলে। দু একটা বিরোধী চ্যানেল এখনো আছে, তারা খুব উৎসাহ ভরে সরকারী মতের বিরোধিতা করে, জানে না তাদের বাঁচিয়ে রাখা হয় লোক দেখাবার জন্য। মাঝে মাঝে সংবাদের স্বাধীনতা নিয়ে হৈচৈ উঠলে কুমীরের ছানা দেখানো যায়। কিন্তু the news এর মত কিছু চ্যানেল নিয়েই হয় বিপদ। এরা কখনও ভালো বলে কখনো খারাপ। আর পুরনো চ্যানেল বলে এদের ফলোয়ারও অসংখ্য। কাজেই একটু নরমে গরমে ম্যানেজ করা হয় এদের। 
মণিকার কপালটা খারাপ। ডঃ বেরার ল্যাবে ও যা যা বলেছে সব যে গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া ভিজিটিং কার্ডে সাঁটা আলট্রা স্লিম মাইকে রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে সেটা মণিকার জানার কথা নয়। নিশা যে অনেক খবর লিক করছে সেটাও রেকর্ড হয়ে গেছে রিমোট সার্ভারে, যার পুরো কব্জা গয়ালের হাতে। 
দুজনেরই এনকাউন্টার এন্ড এলিমিনেট অর্ডারটা ইস্যু করেছেন স্বয়ং গয়াল। যেটা চলে গেছে লোকাল ক্লিনসিং সেলে। আর তারই ফলস্বরূপ জংগলের মধ্যে পাওয়া গেছে মণিকার গুলিবিদ্ধ দেহ। যখন আবিষ্কার হয় হাতে তখনও চিপসের ঠোঙা, দুটি কাঠবিরালী মনের আনন্দে সেগুলো খাচ্ছিল। কিন্তু নিশা বেঁচে গেল কি করে? নিশার দেহ পাওয়া যায় নি কোথাও। তার জন্যই গয়ালের এই অগ্নিমূর্তি। 

-কি করে হলো এটা? সামান্য একটা এনকাউন্টার যদি ম্যানেজ না করতে পারেন, দেশ চালাবেন কি করে? নিশা যদি বেঁচে থাকে, এই খবরটা যখন পাবলিক জানবে একটা কতবড় সিকিউরিটি রিস্ক হতে পারে একবারও ভাবলেন না। জানবেন বিদেশী শত্রুর থেকেও অনেক বেশি রিস্ক দেশের পাবলিক। বেশি খেপে গেলে কি হবে বলা যায় না। ফোন ট্র্যাক করেছেন? সেখানে থেকেও কিছু জানা যেত। 

তথ্য মন্ত্রী মণিকার কল লিস্ট প্রিন্ট করে দেখাতে গিয়েছিলেন তাই দেখে রেগে ওটা ছুঁড়ে দেন ময়াল। আমলা ও শামলাধারীদের কাছে ওনার মেজাজ বিখ্যাত । পুতিন দি টেরিবলের মত উনিও দুর্দ্ধর্ষ সিক্রেট এজেন্ট ছিলেন এবং গুলি চালাতে সিদ্ধহস্ত। যখন হাঁটেন একটা হাত সব সময়ে পকেটের কাছে থাকে। পকেটা কি আছে সেটা অবশ্য জানা নেই। 
গুলির বদলে কাগজ গিয়ে লাগল বেরার নাকে। উনি হকচকিয়ে গিয়ে নাকটা ভিজে স্যানিচাইজড টিস্যু পেপার দিয়ে আলতো করে মুছলেন কিছুক্ষণ। ঠাণ্ডা মেন্থল দেওয়া আছে, তাড়াতাড়ি ঠাণ্ডা হয়ে গেল। 
স্বাস্হ্য সচিব হাত তুললেন, আমার কিছু বলার ছিল, বলি? গয়াল সাহেব জানেন তাঁকেই বলা হচ্ছে, বিরক্ত মুখে বললেন, -বলুন শুনছি। শর্টে বলুন। 
- দেখুন আপনারা কেবল সিকিউরিটি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন। আমি মানি সেটা খুব দরকারী। কিন্তু এখন দেশের এমারজেনসীটা সিকিউরিটি নিয়ে নয়। কোন বিদেশী আমাদের দেশ আক্রমণ করে নি বা করার ইচ্ছেও দেখায় নি। করোনা আর রুশ ইউরোপ যুদ্ধে সবাই ধুঁকছে। আমাদের দেশে কোন অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ নেই। সবাই সরকারী ডোলের জন্য এপলিকেশন ভরে ফোনে এপ চালাতে ব্যস্ত। সবাই এখন বিগ এপ। দেশের বেশির ভাগ লোক এই এপ চালাতে গিয়েও হাঁপিয়ে যায়, ভুল করে, তারপর আবার সরকারী অফিসে ধর্ণা লাগায়। ফলে অফিসের লোক জন থেকে দালাল মানে ঐ এজেন্টদের একটা সুন্দর ইকনমি চালু হয়েছে। কোথাও অশান্তি নেই। 
- তা আমরা জানি। সেটা হোম মিনিস্ট্র্র্রর কৃতিত্ব। বাজে বকবক না করে আপনার কি বলার আছে বলুন। 
- আমরা করোনার পরে এমন একটা অদ্ভুত ভাইরাসের খোঁজ পেয়েছি যা পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এখনো যায় নি। এই ভাইরাসের সবচেয়ে সাংঘাতিক ব্যাপার হল, এর ফেটালিটি ভীষণ বেশি। কোন সিমটম নেই সিমটম যখন ফুটে উঠছে, চোখে দেখা যাচ্ছে, ততক্ষণ অনেক দেরী হয়ে যাচ্ছে। আর কিছু করার থাকছে না। আমি ডঃ বেরাকে বলব আরেকটু বিশদ বুঝিয়ে বলতে। ডঃ বেরা। 

কথা শেষ করে স্বাস্থ্যসচিব একবার ভীষণ জোরে গাল চুলকিয়ে মুখ বিকৃত করে ওঠেন। এটা ওনার একটা অসুখ। মাঝে মাঝেই সারা শরীর বিচ্ছিরি চুলকে ওঠে। গুরুদেবের দেওয়া আয়ুর্বেদিক মন্ত্রপূত লংকার গুঁড়ো এর একমাত্র ওষুধ। সেটাই উনি লাগান। স্বয়ং স্বাস্থ্যসচিবকে এলোপ্যাথি করার পরামর্শ দেওয়ার সাহস কার হবে? 
ডঃ বেরা চশমাটা খুলে একবার পরীক্ষা করে একটা হলুদ মাইক্রো ফাইবার দিয়ে একটু মোছেন। আবার নাকের ডগায় লাগিয়ে কথা শুরু করেন। হাতে তাঁর কয়েকটি লুজ শীট, ইচ্ছে হলে অবশ্য তাঁর ফোন থেকে সোজা বিপরীত প্রান্তের দেওয়ালেও প্রজেক্ট করতে পারেন। কিন্তু অভিজ্ঞতায় জানেন এই সব মিটিঁংএ বেশি তথ্য বা অঙ্ক দেখালে কোন লাভ হয় না। কথার চমক ও গমকেই দেশ চলে। তিনি শুরু করেন:
_ আমরা একটা নতুন ভাইরাস স্ট্রেন ডিটেক্ট করেছি। এবং আমাদের ধারণা এটা আগের জানা সমস্ত ভাইরাসের থেকে ভয়ংকর, আমরা কোভিডের যে ফেটালিটি দেখেছি এটি তার থেকে অনেক বেশি। প্রায় ৭০%। 
সকলের গলাতেই একটা চাপা অস্ফুট চীৎকার বেরিয়ে আসে - সে কি? এত সাংঘাতিক? শুধু টিকাওয়ালার মনোযোগ আরো বেড়ে যায়। নতুন স্ট্রেন মানে নতুন টিকা। মানে আরো ব্যবসা। এমনিই তো চলছে দু তিন বছর। উনি বিচলিত হন না। মনোযোগ দিয়ে শোনেন। 
-এই ভাইরাসের একমাত্র টারগেট আমাদের অপটিকাল সিস্টেম। ইনকিউবেশান ২ দিন। তারপর সিমটম দেখা দেয় একটাই সিমটম। চোখ ঠেলে বেরিয়ে আস্তে থাকে। আধ ঘণ্টার মধ্যে ব্রেন হেমারেজ হয়ে পেসেন্ট মারা যায়। 
লক্ষ্য করেন সবাই একবার চোখে হাত দেন, আলতো করে ঠিক আছে দেখে নিয়ে হাত নামান। 

-ভাইরাস আলাদা করা গেছে? জেনেটিক কোড বার করা গেছে! ভাইরাসটা কি স্পাইক প্রোটিন ব্যবহার করে? 
প্রচুর প্রশ্নবাণ চারদিক থেকে ধেয়ে আসে। মহামারীর দৌলতে সবাই এখন ছোটখাটো বিশেষজ্ঞ।
-আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ২৪ ঘন্টা কাজ চলছে। সব রিসার্চ অফিসারের ছুটি বাতিল। নিশ্ছিদ্র গোপনীয়তার পর্দা বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদি কোনভাবে বাইরে খবর যায় তাহলে বোঝেন তো, অনেক সমস্যা হতে পারে। 
-কি অসুবিধে? গয়াল একটু ঝুঁকে বাটারফ্লাই গোঁফটা চুমরে প্রশ্ন করে, 
উত্তরটা দেন বিবিসি। হোম সেক্রেটারী। হোম মিনিস্ট্রি পি এম ও দেখেন। তাই বিবিসি সব মিটিঁংএ আসেন। 
-প্রথমেই শেয়ার বাজার পড়ে যাবে। তারপর আমাদের মানুষের বা গুডস চলাফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা বসে যাবে। যদি আমাদের জেনেটিক কোড বার করতে দেরী হয়, আমাদের বৈজ্ঞানিক ক্ষমতায় সন্দেহ বাড়বে, ফলে আমাদের টিকার মার্কেট মার খেতে পারে। চীনের মত দেশ প্রতিশোধমূলক প্রচার করতে পারে যে এই ভাইরাসটা আমাদেরই ল্যাব থেকে বেরিয়েছে, আমরা হয় বায়ো ওয়েপন বানাচ্ছি বা আমাদের ল্যাব নিরাপদ নয় এখনই বন্ধ করে দিতে হবে। 
- কিন্ত আপনাদের টারগেট আর কতদিন? এর মধ্যে আর কত মানুষ মারা যেতে পারে? আর খবর যে আবার বেরিয়ে যাবে না বা মণিকা কাউকে জানায় নি নিশ্চিত হওয়া তো যাবে না। গয়াল গম্ভীর হয়ে সোজা বিবিসির দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলেন। 
- আপনাদের সবথেকে জরুরী কাজ হলো নিশাকে লোকেট করা। 
- আমি কিন্তু মনে করি ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং করাটা বেশি জরুরী। নিশা না থাকায় আমাদের কাজ জোর ধাক্কা পাবে,
বেরা জোর আপত্তি জানায়। 
- ঠিক আছে, ঠিক আছে, আপনি আপনার কাজ করে যান, আমাকে শেখাবেন না। নিশা না থাকলেও কাজ চলবে। আপনার এসিস্টেন্টদের প্রতি স্পেশ্যাল ইন্টারেস্টের কথা আমি জানি। আমার কাছে সব খবর আসে। 
মুচকি হাসেন তথ্যমন্ত্রী। 
বেরার কান লাল হয়ে যায়। তিনি আবার চশমাটা খুলে কিছু একটা দেখতে থাকেন কাঁচে, ধুলো বা কাঁকর। 
 -আপনাকে কিন্তু আমরা একটু সারভাইল্যান্সে রাখবো। যদি নিশা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাদের ফলো আপ করতে হবে। কোন rogue এলিমেন্ট যেন আমাদের এই শান্তিপূর্ণ শাসন ব্যবস্থার ক্ষতি না করতে পারে সেটা দেখা আমাদের সবার কর্তব্য। কি? 
গয়াল আঙ্গুল উঁচিয়ে বুঝিয়ে দেন, নইলে ব্যাপারটা ভাল হবে না। বেরা যত বড় বিজ্ঞানী হোন না কেন। 
-সিকোয়েন্স হয়ে গেলে ভ্যাক্সিন আমরাই বানাবো তো? টিকাওয়ালা ব্যাপারটা পরিষ্কার করে নিতে চায়।
- এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে এই ভাইরাসের সংগে করোনার শতকরা পঞ্চাশ ভাগের বেশি তফাত। আর এর কোন স্পাইক প্রোটিন নেই। ওর চেহারার ঐ খেলনার বলের মত না, লম্বা বুলেটের মত। এটা অত সোজা হবে না। 
অবজ্ঞার সংগে হাত নাড়িয়ে নস্যাৎ করে গয়াল বলেন,
- ভালো করে খাটুন। এটা এমন কোন ব্যাপার না। আমরা সাবজেকটটা বুঝি না বলে আপনারা আরো ফান্ডা দেখান আর ফান্ড টেনে যান। দু মাস সময়। আমি পি এম ও কে কথা দিচ্ছি। 
কোন আপত্তি ধোপে টেকে না। গয়ালই ডি ফ্যাকটো সব ঠিক করেন। পৃথিবী এখন ভীষণ ইনসিকিওর। কখন আবার যুদ্ধ বাঁধে কে জানে। সিং নয় সিক্উরিটি ইস কিং। 
সভা ভংগ হয়ে যায়। বেরা খুব চিন্তিত মুখে বেরিয়ে যান। গয়াল ফাটকেকে একান্তে বলেন 
-আমাদের এণ্টি ভাইরাস বাংকারটা তৈরি আর কতদূর?
-হয়ে এসেছে। শুধু ভাইরাস নয় এণ্টি নিউক্লিয়ারও বটে। টেসলা কম্পানীর লেটেস্ট। এখন ওরা তো এই বেচেই পাঁচ ট্রিলিয়নের মালিক। দারুণ বানানো হয়েছে। স্পেসিয়াস। পুরো ক্যাবিনেট স্টাফ নিরাপদে এক বছর থাকতে পারবে । আপনি ভয় করবেন না গয়াল সাব। আমরা ঠিক টিকে থাকবো। 
দুজনেই হা হা হা করে হেসে ওঠেন। এই লেভেলের লোকদের ছুটকো ভাইরাসে ভয় হয় না। 
সবাই বেরিয়ে যাচ্ছিলো, কিন্ত যাবার আগে এলার্মের লাল আলো জ্বলে ওঠে হঠাৎ। দেওয়ালে ঘুমিয়ে থাকা স্ক্রীনটা জীবন্ত হয়ে ওঠো জরুরী খবর ভেসে ওঠে। রাষ্ট্রপতির গাড়ী একসিডেন্ট করেছে। ড্রাইভার ডেড। 
ক্র্যাশ প্রুফ গাড়ী। রাষ্ট্রপতির কোন আঘাত লাগেনি। সবাই হতবাক হয়ে পর্দার দিকে তাকায়। 
সবাই তাড়াহুড়ো করে বেরোতে শুরু করে। বিবিসিকে এক্ষুনি কন্ট্রোল রুমে ছুটতে হবে। বেরোতে বেরোতে গয়াল বলে যায় 
-নিশাকে খুঁজে বার করুন, দেশের প্রতিটি মোবাইল দরকার হলে স্ক্যান করুন। আর দেখুন মণিকার শেষ কন্টাক্ট কে? যদি কিছু ক্লু পেতে পারি। 
বেরা বাইরে বেরিয়ে গাড়ীতে ওঠেন। এসি চালিয়ে ঘাম মোছেন ভাল করে। মনে হচ্ছে হাড় অব্দি ভিজে গেছে ঘামে। 
 -ক্রমশঃ-

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
 

Post a Comment

0 Comments