আষাঢ়ে গল্পের আল ধরে - তিন
তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য
গল্পগাছা
এই হল ষষ্ঠীতলা যেখান থেকেই ঘর মুখো যাইনা কেন সবার আগে এই বট গাছই আমায় সুস্বাগতম বলে।এই নিয়ে আমার আবেগ কখনো ঢলে পড়েনি।ঐ হল আমাদের লুকোচুরি খেলার জায়গা।অরণ্য ষষ্ঠীর দিন নতুন জামাইদের ওখানেই দেখা যায়।কেউ সেখানে আড্ডা মারে কেউ বা জিরোয় ,অনেকে আবার শুকনো পাতা কুড়িয়ে নিয়ে যায় জ্বাল দেয় হয়তো! গাছ আছে গাছের মতো আমি আছি আমার মতো ভাববার কিছু ছিলনা।যখন গেছো কথা বলতে বসেছি তখন কারণ তো আছেই।লোকে বলে বৃদ্ধ বট ...একটু লেখাপড়া জানা বিজ্ঞরা বলেন বুড়ো গাছ তো নয় আস্ত এক খানা ইতিহাস বই। মুঘল আমল, ইংরেজ শাসন সবই হয়তো দেখেছে এই গাছ।দেখুক কিংবা না দেখুক ....দেখে তো বৃদ্ধ মনে হয়না।নবীন কচি কচি পাতা যেন শরীর নিয়ে কত আহ্লাদ! কত পাখির বাস এ গাছে কে বা জানে?
কখনো কখনো এ ছায়া কে বড়ই গম্ভীর মনে হতো
যেন বেশি কথা বললেই নিজের রাশ আলগা হয়ে যাবে।কখনও স্নেহ শীতল ছায়াতে কেমন যেন আরাম অনুভব করতাম। মানুষ ও কিন্তু এরকমই। চল্লিশ পার হলেই যেখানেই যাই না কেন মনে হয়ে
কোন এক প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে যেন এসেছি।
আর কোথাও কারোর কখনো যেন বয়স বাড়েনা
আমি ই যেন বার্ধক্যের বোঝা নিয়ে এগিয়ে চলেছি।
কী প্রচন্ড দিদি দিদি রব! আপনি বলার ধুম কচি খোকা,খুকী দের।অন্তঃসলিলা ফল্গু হয়ে তাঁরাও যে বয়সে বাড়ছেন নিশ্চয়ই বাড়ছেন ..সেই স্বীকারেই কেমন যেন একটা বেজার মুখের ছায়া।অথচ সম্মান কুড়োতে যেন বাড়বাড়ন্ত কুমড়ো লতা....
অথচ সেই খানে আমি কত ছোট ওদের চোখে!
এই হল মানুষের সময় কে কাল কে অস্বীকার করার প্রবণতা। এই যে বেলা বয়ে যায়....কিন্তু আমার মন তো সেই কিশোরী তেই আছে।
অঙ্ক কষে তো অনেক কিছু মিলে যায় যোগফল ,বিয়োগফল ,ভাগফল....কিন্তু আমার তাতে কী? এসব যদি বেশি করে নিজের ভেতর জানান দিই .... তাহলে সব আনন্দ সুখ সাইড করে হরি দিন তো গেল বলতে হবে।কিন্তু তা কেন? আমি কী কেবল বয়সের ভার বইতেই পৃথিবী তে এসেছি? পরিবারের কিছু মানুষ বাদ দিয়ে আমরা একে অপর কে নাম ধরে ডাকতে বা address করতেই পারি! বিদেশিরা কিন্তু বয়স নিয়ে অত মাথা ঘামায় না ...একজন ব্যক্তি মানুষের সম্মান ,তাঁর গুণের সম্মান।আবার এ কথাও ঠিক একটু বয়স্ক মানুষরা তাঁদের বয়স টা বাড়িয়ে বলেন ....এর মানে আজ ও বুঝে উঠতে পারিনি।
কখন কোন সময় মানুষ কে কোথায় নিয়ে যায় কে জানে ? আমার হৃদয়ে আমি যদি অপার আনন্দ খুঁজে পাই . এর থেকে ভালো কিছু নেই।..ইচ্ছে করলে প্রত্যেক মানুষ সেই আনন্দ ধামে বাস করতে পারেন। একথা হলফ করে বলতে পারি কেউ কোনো দিন বৃদ্ধ হয়না।সমাজ বৃদ্ধের ঠুলি বা মাস্ক পরিয়ে দেয় ..... যে বাঁচতে চায় আনন্দ নিয়ে কারা যেন তাকে অসহায় করে দিচ্ছে! অপার প্রাণ শক্তি সকলের আছে। সুন্দর ভাবে নিজের সৃষ্টির ভেতর কাজের ভেতর দৌড়ে যান।দেখবেন সত্যি আপনি যুবক যুবতির মতো কেমন রঙে বর্ণে সেজে উঠেছেন।একটি লম্বা পাটকাঠির আগাতে একটু কাঁঠালের আঠা লাগিয়ে আমিও দৌড়ে বেড়াই ফড়িং ধরতে .......... আমার ভালো লাগে। সারা দুপুর কাঁচা আম, পেয়ারা চিরুনী তল্লাশি করি আগানে বাগানে। বন জঙ্গলের বুনো গন্ধ ,ভাঁট ফুলের মিষ্টি গন্ধ ছুটিয়ে নিয়ে বেড়ায়। ফুল ফোটার শব্দের মত আমার বাড় বাড়ন্ত বয়স আমি দেখতে পাইনা। আমি শুধু জানি ফুলের মতো সুন্দর আমার মাটি আঁকড়ে বেঁচে থাকা ।
আত্ম পরিচয়ের সঙ্কট identity problem মানুষের
যেন আজীবনের সমস্যা। শৈশব থেকে কৈশোরে বা যৌবনে পা দিলে আমরা বলি এই বড়ো হয়ে গেছ বাচ্চাদের মতো কর কেন? আবার একটু পরিণত কথা যদি কোনো কারণে বাচ্চারা বলে তখন বলি এক টুকু বাচ্চা মুখ টিপলে দুধ বেরবে পাকা পাকা কথা বোলোনা তো! প্রসঙ্গত বলি আমি আমার ছোট দিদা কে বাচ্চা বয়সে অনুরোধ করেছিলাম আমাকে যেন আপনি বলে ... দিদা জীবনের লেষ দিন অবধি আমাকে আপনি বলতো।ঠিক এই ভাবে , টুকু দিদি ভালো আছেন তো?.. সবাই হাসলেও দিদা কখনো হাসতো না কারণ আমি দুঃখ পাব। আচার আমসত্ত্ব ,আমুল দুধ ,দানাদার ,নাড়ু ,কদমা এগুলো ছিল প্রাইজ ....যদিও তখন আমি পেলাইজ বলতাম ..... এমন প্রাণ ভরা আদর কে দেবে? .. সম্পর্ক সবসময় নির্মল হলে তার জন্যে কোনো রঙ লাগাতে হয় না। আমরাই একটা অনিশ্চয়তার ভেতর মানুষ কে ঠেলে দিই। কোনো মানুষের সঙ্গে পরিচয় হলেই আগেই মানুষ জানতে চায় তিনি কী করেন? আগে কথা তার সঙ্গে দুচারটি হলেই ঠিকই বুঝবেন
তারপর না হয় জানুন সে কী করে? আরেকটি কথা চেহারা দেখেই ভেবে ফেলি এ শিক্ষিত অশিক্ষিত এ কোন ধরনের ভাবনা? আপনার সব পোশাকের রঙ কী এক ? মানুষের রূপ ও বিভিন্ন রকমের।সৌন্দর্য তো সকলের ভেতরে আছে , সে এক খনি মণি .... সে সন্ধান সবাই পায় না।সবসময়ই শুধু প্রমাণ করে যেতে হবে আমি কত বিশাল এক পাহাড় !নিজেকে ভালো রাখার ভেতরেই কিন্তু অন্যকে ভালো রাখার বীজ রোপণ করা আছে।
কখনো কোনো কাউকে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সে যেই হোন কেন মনে হয় দুটো কথা বলি ...এই তো মিলে গেছে আমার ভাবনা অনুভূতির সঙ্গে কী সুন্দর মানুষ! কত কী শিখতে পারি ...কত সুন্দর মন!
বেশি কাছে গেছে গেলেই মনে হয় ..কেন এলাম এত কাছে? দূরত্বের একটি মেদুর গন্ধ আছে ,অচেনার আনন্দ আছে সেইটে বরং ভালো।
তাঁর লেখা বই কিংবা নাচ ,গান ,নাটক ,সিনেমা ,আঁকা অথবা সুন্দর করে কথা বলা শিল্প , তার ভেতরেই থাক আমার নিত্য চলা ,কথা বলা। প্রত্যেক মানুষের ভেতরে এক পরম শক্তি আছে তিনি অপরূপ বা অপরূপা তাঁকে আহত করবেন না। আপনার বাণিজ্যিক প্রসার হয়তো অনেক কিংবা দারুণ চাকরি ...কিন্তু মনের ভেতরে যে বাণিজ্য চলে সেখানে আপনি কেন হেরো ?হিরো হতে হবে আপনার আত্মার কাছে বিবেকের কাছে। অন্যের চর্চা সমালোচনা না করে নিজেকে ফিল্টার করুন।শরীর থাকলে দুঃখ আনন্দ রাগ আসবে ...রোগ ও আসবে...প্রয়োজন মতো সব কিছু কাঁচি দিয়ে ছেঁটে ফেলার দায়িত্ব আপনার।
ঐ যে ষষ্ঠীতলার বট গাছের মতো নবীন থাকুন।
ছায়া দিন মায়া দিন ...দিয়ে যান যতটুকু পারবেন। ভুলেও কিছু আশা রাখবেন না ভীষণ ভালো থাকবেন... শান্তিতে ঘুমোবেন ...নতুন সূর্য আপনাকে আর্শীবাদ করবে। ক্রমশ.....
0 Comments