জ্বলদর্চি

সতু ঠাকুরের গল্প /শ্রীজিৎ জানা


সতু ঠাকুরের গল্প

শ্রীজিৎ জানা


আস্ত গ্রামটার চোখেমুখে ছেয়ে গেল বিষাদ ও বিস্ময়ের গাঢ় রঙ! মৃদু ভুকম্পনের মতো করে নড়ে উঠল এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। আজকাল মৃত্যু যেন মুড়িমুড়কির মতো হয়ে গ্যাছে। এক দেড় দশক আগে অব্দি গাঁয়ে মরত বুড়োবুড়িরা। তাও তারা সহজে মরতেন না। সেঞ্চুরি পার করে দিতেন কেউ কেউ। নতুন করে দাঁত গজাতো কারুর। দু'চারটে পরিবারের নাতিনাতনির দল তো তাদের দাদু ঠাকুমার অন্নপ্রাশনের আয়োজনে মেতে উঠতো ধূমধাম করে। আর মৃত্যু হত রোগজ্বালায়। কিন্তু হালে ছেলে ছোকরা মায় দুগ্ধপোষ্য বাচ্চা অব্দি হুটহাট করে মায়ের কোল শূন্য করে চলে যাচ্ছে। বুক ভারী হয়ে যায় এমন মৃত্যু সংবাদে। যদিও গাঁ-গঞ্জ মৃত্যু নামক রাক্ষুসে নিয়তিকে ভয় পায় না যেন আজকাল। এমনকি তার গায়ে লেগে থাকা বিষাদের রঙটুকু ফিকে হোয়ে যাচ্ছে । কেউ সেভাবে আলোড়িত হয় না। ক্যামন যেন গা সওয়া হয়ে গ্যাছে সবার।
কিন্তু সত্যরঞ্জন কারকের মৃত্যু গাঁয়ে সবার মুখে মুখে ফিরতে থাকে।মানুষটা  আসলে আর পাঁচজনের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বয়েস কত আর হয়েছিল তার। সবেমাত্র পঞ্চান্ন পেরিয়েছে। আজ অব্দি কারো সাথে তার কোন ঝগড়াবিবাদ হয়েছে বলে কেউ মনে করতে পারবে না। দিনমান খাটাখাটনি আর ধর্মকর্ম নিয়েই পড়ে থাকে সত্যরঞ্জন। 
সত্যরঞ্জন গাঁয়ের লোকের কাছে সতু ঠাকুর। ব্রাহ্মণ বংশে তার জন্ম নয়। জাতে মাহিষ্য। কিন্তু তার কাজকর্মে স্বভাব চরিত্রে যেকোনো ব্রাহ্মণকে লজ্জায় ফেলবে। গাঁয়ে কারো বাড়িতে পুজোপাট হওয়া মানেই ডাক পড়বে সতু ঠাকুরের। পুজো বাড়ির অর্ধেক ভাবনা আপনা থেকেই নিয়ে নেবে সতু ঠাকুর। গৃহপ্রবেশ, সত্যরনারায়নের সিন্নি,লক্ষ্মী,কালী, সরস্বতী, বিঁশ্বকর্মা, হরিবাসর সবের ফর্দ তার কন্ঠে জলবৎ তরল। হোসেনপুরের সতু ঠাকুরকে চেনে আশেপাশের সব পুরুতমশাইরা। কোন যজমান তার পুরুতঠাকুরকে পুজোর নেওতা দিতে গেলে গাঁয়ের প্রথা মতে সুপুরি দিতে হয়। তা দেওয়ার পরেই পুরুতমশাই জিগ্যেস করবেন,
---তা কী পুজো করবে বাড়িতে?
----আজ্ঞে একটু সিন্নি দেব ভেবেছি।
---তো সতুকে ডাকবে তো?
---তাকে তো গাঁয়ে কেউ এসব কাজে এড়িয়ে যায় না পুরুতমশাই। আপনি তো সবই জানেন।
---বেশ তাহলে কোন চিন্তা নেই। ফর্দও লাগবে না। সতুকে নিয়ে সব কেনাকাটা সেরে নিও খন। আমি ঠিক সমযে হাজির হয়ে যাব।
যজমান প্রণাম সেরে বেরিয়ে আসে। এবার যেতে হবে তাকে সতু ঠাকুরের বাড়ি। তাকেও একটা সুপুরি  দিয়ে আসতে হবে। গাঁযে তাকে এই সম্মানটুকু দিয়ে আসছে সবাই। সুপুরি হাতে পাওয়া মানেই সতু ঠাকুর তার স্বভাবসিদ্ধ ভরসামাখা গলায় বলে উঠবে,
---তাহলে পুজার জগাড়যন্ত লিয়ে তমাকে কিছু ভাবতে হবেনি। বেনা বাজার আর ফলমূল কবে কিনতে যাবে বলবে। তবে ভোজন পারপাশে মোকে কিন্তু পাবেনি।
যজমান নিশ্চিন্ত মনে বাড়ি ফিরে যায়।

পেটে সতু ঠাকুরের অরুচি। প্যাঁটরা বাঁধতেও লোভ নেই তার। নিরামিষ খায় বারোমাস। পুরুতঠাকুরকে গামছায় সব বেঁধে দিলেও বাড়ির জন্য একটু বেলপাতা ছাড়া কোন কিছু নেওয়াতে পারবে না তাকে। তিন ভাইয়ের সংসার তাদের।  সত্যরঞ্জন বাড়ির বড় ছেলে।বাপ-ঠাকুর্দার রেখে যাওয়া জমিজমা নেহাত কম নয়। এক পরিবারেই হেসেখেলে আছে সবাই। তার দুই ছেলেই থাকে নিজেদের ভূষিমাল দোকানে। সত্যরঞ্জনের বাকি দু'ভাই জানে তাদের দাদার মনটা বেলপুকুরের জলের মতো স্বচ্ছ,ধবধবে। নীচ অব্দি যেন চোখ চলে যায়। সেখানে কাদা-পাঁকের নামগন্ধ নেই।শুধুই নরম বালির আস্তরণ। সত্যরঞ্জনের উপর কখনো তারা চড়ে কথা বলে না। সত্যরঞ্জনেরও ভাইদল অন্ত প্রাণ। ঘরের সবাই জানে মানুষটা পরের জন্য জানপ্রাণ দিয়ে দিতে পারে। গাঁয়ে কেউ যদি তাকে বলে,
---ঠাকুর, তুমি লোকের জন্নে এত কর,কম পুন্ন কোচ্ছ! দেগবে পরের জম্মে আরও বড় মানুষ হয়ে জম্ম লিবে তুমি!
---আরে ইসব আবার ক্যামন কথা! মানুষ হইচি, যদি লিজের লিজের করেই কাটালম,তাইলে কিসের মানুষ জনম।

শুধু পুজাপাব্বণে নয়,সতু ঠাকুরের ডাক পড়ে দাহকাজে।তবে আজ পর্যন্ত তাকে ডাকতে যেতে হয়নি।গাঁয়ে কোন  বাড়িতে মরা মরেছে শুনলেই সব কাজ ফেলে সেখানে ছুটে যাবে সতু ঠাকুর। একাই হাঁকডাক করে লোক জড়ো করতে লাগবে। কিছুদিন আগেও তো গাছ ফেলে কাঠ কেটে মড়া দাহ হত। সতু ঠাকুর এর ওর বাড়ি থেকে কাটারি কুড়ুল চেয়ে নিয়ে গাছ ফেলানোর তোড়জোড়ে ব্যস্ত হোতো। মাঝে একবার খালি বাড়ির লোককে জিগ্যেস কোরতো,
--কোন গাছটা উচ্ছুগ্গু করবে বল দিখি। আর মুখাগ্নি করবে কে?
পাশ থেকে কেউ হয়তো বলবে,
---কেন অদের বাড়ির বড় ছ্যানা।
ব্যাস্, বড়ছেলেকে ডেকে গলার স্বর নামিয়ে স্বান্ত্বনা দিয়ে বলবে,
---বড় ছ্যানা তুই, অত ভেঙে পল্লে চলবেনি। মধুন ভেঙে গেলে ঘর টিকবে! মা-বাপ সবার সবদিন থাকবেনি। কাজ ত তোকেই সারতে হবে। চল্ গাছটায় বাঁ-হাতে কুড়ালটা ধরে পথমে তিন চোট দিয়ে দিবি। আর কুনু কিছু করতে হবেনি।
গাঁয়ে সকলে জানে দাহকাজে সতু ঠাকুর মেইন কাঁধকাট। তার কথাই শেষ কথা।গাছ ফেলানোর নিয়ম,ক'হাতের তলকাট,শিরকাঠ,গোড়া লাগবে সব তার নির্দেশ মতো হবে। প্যাকাটি কত লাগবে,শুকনো বাঁশ কত লাগবে,জুন,তুলসী,গঙ্গাজল,ধূনা,নতুন হাঁড়ি,সরা,নতুন বস্ত্র -সবের ফর্দ গড়গড় করে বলে কিনতে লোক পাঠাবে সে। তারপর অগ্নিকর্তা মানে যে মুখাগ্নি করবে তাকে সাথে নিয়ে সতু ঠাকুর যাবে শ্মশানে। সেখানে শ্মশানের সাড়ে তিনহাত জমি কিনতে হবে অগ্নিকর্তাকে। আগে কড়ি দিয়ে কেনার রীতি ছিল। এখন ষোলআনা মানে একটাকা দিয়ে কেনা হয়। কোন্ কথা বলে কিনতে হবে তাও বলে দেবে তাকে সতু ঠাকুর। জমি প্রস্তুত হলে সাত বোঝা কাঠ আনাবে শ্মশানে। চিতা সাজাবে নিজের হাতে। তাকে সাহায্য করবে হয়তো দু'একজন। মড়ার মাথা কোন দিকে থাকবে!চিৎ নাকি উপুড় করে মড়াকে শোয়াতে হবে! ঘি মাখানো হবে কি হবে না। আম পাতার ঠুঙিতে তিনবার জল নিয়ে মড়াকে স্নান করানো হবে কি হবেনা!এসব নিয়মের কোন হেরফের হতে দেবে না সতু ঠাকুর। এরই মাঝে যদি নামসঙ্কীর্তনের দল হরিনাম থামিয়ে দেয় তো সতু ঠাকুরের মাথায় যেন চিতার আগুন দপ্ করে জ্বলে উঠবে।
--তরা বুড়া হয়ে মরতে যাচ্ছু এখনো কিছু শিখলি নি।যত হরিনাম কোরবি মড়ার আত্মা তত শান্তি পাবে। সগ্গের দিগে যাবে।
বলেই চেঁচিয়ে উঠবে সে--বলো হরি হরিবো-ও-ও -ও-ল।
ছেলে ছোকরা কিম্বা দু'চারজন বুড়োরা মদ গিলে ভয় লুকিয়ে সাহস দেখাতে চায়। কিন্তু সতু ঠাকুর ওসব জন্মে ছুঁয়েও দেখে না। কিন্তু চিতা যতক্ষণ জ্বলবে তার মুখ থামবে না।
---জানু, অ্যাকে লিয়ে কতগুলান মড়া পুড়ালম!আগে কত যে বেগ পেতে হোতো কি বোলবো। এখন ত কেনা কাঠে,লোহার ফেরেম করা আছে শ্মশানে কুনু চাপ নাই। বেরষার সময় ভিজে ভিজেই তিরপল আড়াল করে রাতে মড়া পুড়িছি। তরে হলে ভয়েভরে ছেড়ে পালি যেতু।
এতসব কথার মাঝখানে দু'চারটে ভয় দেখানো গালগল্পও শোনাতে ছাড়ে না সতু ঠাকুর। আর প্রত্যেকবারের মতো শেষে আবেগঘন গলায় বলে,
---দ্যাক্, এই মরাডাঙা শশানেই মেদের সবার পুব্বাপুরুষ পুড়েছে। মোকেও তরা এখিনেই রাখবি। নাহলে আমার আত্মা শান্তি পাবেনি কুনু দিন।

মনে মনে শান্তির খোঁজ করত সতু ঠাকুর। অনেক পুরাণ তার মুখস্থ ছিল। পাশের গ্রামের যোগপীঠ আশ্রমে প্রায়ই যেত সে। একবার তো অরুণদাকে বাড়িতে ডেকে পাঠায় সতু ঠাকুর। অরুণদা গাঁয়ের নবারুণ সঙ্ঘের সম্পাদক। সব কাজে সতু ঠাকুরের মতো অরুণদাকেও পাওয়া যায়। সতু ঠাকুর তার ঘরের খাটে অরুণদাকে বসতে বলে। তারপর একটা টিনের হাতবাক্স তার সামনে রাখে। বাক্সের ভিতর থেকে একে একে সব বের করে অরুণদাকে দেখায়। অরুণদা দেখে ছোট ছোট অনেক পুঁটলি। সতু ঠাকুর একটা একটা করে তুলে ধরে আর বলতে থাকে,
--এতে আছে গয়ার বালি,এতে তিল,এতে আতব চাল। আর এগুলো ঘি,মধু,আর সাত নদীর জল। এগুলোতে আছে এক এক করে চন্দন,বেল,বট,আসুদ,আম,নিম,তুলসীর সাত বঝা কাঠ। হট্ করে যদি মরে যাই তমরা এগুলা মোর চিতায় দিয়ে পুড়াবে। ঘরের লোকদেরও বলে যাব।
এসব দেখে শুনে অরুণদা তো অবাক চোখে সতু ঠাকুরের দিকে চেয়ে থাকে।তারপর কিছুটা সামলে নিয়ে বলে,
---আরে কাকু, ছাড়োতো ওসব। যখন হবে তখন দেখা যাবে। তুমি এখন দিব্বি থাকবে আমাদের সাথে। কোন চিন্তা নেই।
সতু ঠাকুর দুহাত জোড় করে কপালে ঠেকিয়ে বলে,
---রাখা আর না-রাখা সবই তার কিপা।


চিন্তা যে একেবারেই নেই সেকথা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছিল না। বিদেশ ডিঙিয়ে এদেশেও হু হু করে বাড়ছিল সংক্রমণ। চারিদিক থেকে ধেয়ে আসছিল মৃত্যুর খবর।বাধ্য হয়েই তখন দেশে ঘোষণা হল লকডাউন নামক এক ভয়ানক বন্দীদশা। প্রাণ রক্ষার এমন উপায়ের ভিতর ছিল ভাতের টানের যন্ত্রণা,কাজ হারাণোর যন্ত্রণা আর একটা ঘরের মধ্যে গাদাগুমো করে থাকার হাঁপিয়ে ওঠার যন্ত্রণা। সতু ঠাকুরও কোয়ারেন্টাইন শব্দটাকে বেশ রপ্ত করে নিযেছে। বাইর থেকে যারা আসছে তাদের গাঁয়ের স্কুলে রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। তো একাজে তাকে  ঘরে বন্দী রাখা কারো সাধ্য নয়। যেই আসছে তাকেই বলছে,
--চল্ চল্,ইস্কুলঘরে কোরান্টানে থাকবি চল্। আপ বাঁচলে জগত বাঁচবে।খবরে বলছে শুনুনু।
সতু ঠাকুর যেন মরিয়া কোন ভাবেই সে গাঁয়ে কোভিড ছড়াতে দেবে না। ঘর থেকে মুড়ির চাল নিয়ে মেশিনে লুকিয়ে ভাজায়। তারপর প্যাকেট করে দাস পাড়ায়,দোলই পাড়ায় বিলি করে। শুধু ঘরের লোক নয়,সেদিন অরুণদাও সতু ঠাকুরকে একটু ধমক দিয়েই বলে,
---ঠাকুর কাকা,তোমার বয়স হয়েছে। তোমার এমন করে বেরানো বড় রিস্ক হয়ে যাচ্ছে। আমরা তো দেখছি সব।
--অকে লিয়ে তমরা ভাবনি ত। মোকে তমাদের কোরুনা  রোগ ছুঁতে পারবেনি। তা বাদে তমাদের মত ছেলে ছকরাদের সামনে লম্বা জীবন। আমদের ত সাত বঝার পাঁচ বঝা আগেই চলে গেছে মরা ডাঙায়। তবে মনে রাখবে মোকে কিন্তু মরা ডাঙাতেই পুড়াবে।মোটেই ভুলনি। তাইলে মরেও শান্তি পাবনি।
---কেন মরা মরা কচ্ছো বলো দেখি ঠাকুর কাকা। এখন যাও দেখি। ঘরে গিয়ে সাবান মেখে স্নানটান করো। সাবধানে থাকো।
অত চেষ্টা করেও হোসেনপুর গ্রামে কোভিড সংক্রমণ আটকানো গেল না। মাঝি পাড়ায় একঘরে তিনজন একসাথে আক্রান্ত হতেই গেল গেল রব পড়ে যায় সারা গ্রামে। ভয়ে একেবারে সিঁটিয়ে যায় সবাই। দিন হোক অথবা রাত সারাক্ষণ যেন পাতালপুরীর নিস্তব্ধতা গ্রাস করে নেয় গ্রামটাকে। পুরো পাড়াটাকে থানার লোক এসে ঘিরে দ্যায়। জরুরী কিছু পরিষেবা সিভিক ভলেন্টিয়াররা যোগান দিতে থাকে। কিন্তু সতু ঠাকুর তখনো এগিয়ে থাকে সবার আগে। প্রশাসনের লোকের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করে। তবে আজকাল আর সে বাড়িতে ঢোকে না। বাড়ি থেকে এক- দু'শ হাত দূরে একটা ঝিটেবেড়ার চালায় থাকে। কাউকে কাছে ঘেঁষতে দ্যায় না। নিজেই ভাতডাল ফুটিয়ে খায়।
সেদিন ভোররাত থেকে ঘনঘন জোরালো কাশির শব্দ কানে আসতেই কারক পরিবারকে  দুশ্চিন্তা  গ্রাস করে। সকাল হতেই খবর পৌঁছে যায় হাসপাতালে। সাথে থানায়। স্বাস্থ্যকর্মীরা এসে পি পি কিট পরিয়ে গাড়িতে তুলে নেয় সতু ঠাকুরকে। যাবার সময় দূর থেকে হাঁক দিয়ে বলে,
--যদি না আর ফিরি তরা আমার পুঁটুলটা অন্তত দিয়ে পাঠাবি বুজলু।
অ্যাম্বুলেন্স তার বিদঘুটে সাইরেন বাজিয়ে দ্রুত বেগে গ্রাম ছেড়ে ছুটতে থাকে সদর হাসপাতালের দিকে। খবরটা দ্রুত ছড়িয়ে যায় গ্রামে। সতু ঠাকুরের করোনা হয়েছে। এই কদিনে যারা যারা তার সংস্পর্শে এসেছিল আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কেউ কেউ শাপ শাপান্ত করতে থাকে মনে মনে। অনেকেই এবার স্থির করে নেয় যতই সে ভালো করুক তাকে আর কোন পাড়ায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। বিকেলে হরিতলায় দু'চারজন দূরে দূরে দাঁড়িয়ে বলাবলি করে,
---আরে কারো কথা না মানলে অমন হবে নি তো কী!
---ফিরে এলেও কিছুদিন মোদের পাড়ার চৌহদ্দি ডিঙাতে দুব নি।
কেউ তো আবার আরো দুই ঘাট উঠে বলে,
---ঠাকুরের মরাডাঙায় থাকার সকে জল ঢালা হযে গেল।
---ধূর অই কথা বলিসিনি। কম করেনি মোদের জন্যে। তুই ত ঘরে খিল দিয়ে বসে ছিলু। নেমখারামি করিসিনি।  পাপে ডুববি। লোকটা যেন ভালয় ভালয় ফিরে আসে ঠাকুর।
বিকেল গড়িয়ে তখন শ্লথ পায়ে সন্ধ্যা ঢুকছে গাঁয়ের পাড়ায় পাড়ায়। লোকজন যে যার নিজেদের ঘরেই চাপা ভয়ের মধ্যেও একআধ টুকরো আনন্দ নিয়ে বাঁচার ইচ্ছেয় মশগুল। আর সেই চিলতে আনন্দের মাঝেই খবরটা যেন সাদা মেঘে বজ্রপাতের মতো আছড়ে পড়ে গ্রামে। ভয়ে কুঁকড়ে উঠে সারা হোসেনপুর।
সতু ঠাকুরের পুঁটলিটা আর কোন কাজে লাগে না।

পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

1 Comments

  1. সুন্দর ভাবনার উপর লেখাটি।

    ReplyDelete