জ্বলদর্চি

মাটিমাখা মহাপ্রাণ। চৌত্রিশ

মাটিমাখা মহাপ্রাণ। চৌত্রিশ 

শুভঙ্কর দাস 

"চলো দুর্গমদূরপথযাত্রী চলো দিবারাত্রি, 
করো জয়যাত্রা, 
চলো বহি নির্ভয় বীর্যের বার্তা,
বলো জয় বলো,জয় বলো,জয়
সত্যের জয় বলো ভাই।।

দূর করো সংশয়শঙ্কার ভার,
যাও চলি তিমিরদিগন্তের পার।
কেন যায় দিন হায় দুশ্চিন্তার দ্বন্দ্বে
চলো দুর্জয় প্রাণের আনন্দে
চলো জ্যোতির্লোকে জাগ্রত চোখে----"

একি কথা বলছেন! অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন হীরালাল।

ঠিকই বলছি,এটাই একমাত্র উপায়,এইভাবে মহড়া হবে।জোর গলায় বললেন কুমারচন্দ্র।

তা বলে এইভাবে নিজেকে অকারণে কষ্ট দিয়ে কী লাভ,এতে কী সাহস ও শক্তি বাড়বে?

লাভের জন্য কিছুই করছি না ডাক্তার, আমি করছি লৌহবুক তৈরি করার জন্য, যাতে ইংরেজ পুলিশের রক্তচক্ষু দেখে,চাবুকের সপাং সপাং শব্দে এবং মারের পর মার পড়লেও যাতে এক-পাও নিজের অধিকার থেকে পিছিয়ে পড়তে না পারে!

এ জিনিস আগে আমি কোনোদিন কোথায় শুনিনি!

কেন, আপনি জানেন না,বিপ্লবরা যখন অনুশীলন সমিতিতে দেশোদ্ধারের জন্য শপথ গ্রহণ করেন,তখন হাতের তালুতে জ্বালিয়ে নেন মোম,তারপর তলোয়ারের অগ্রভাগে নিজের আঙুল কেটে কপালে পরে নিতেন রক্ততিলক।
সেসব কি একেবারে অর্থহীন?

হীরালাল কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন।তারপর বললেন,কিন্তু আপনি তো অহিংসার পথিক।গান্ধিজিকে মনেপ্রাণে অনুসরণ করেন,হিংসার পথ তো আপনার নয়,তাহলে?

আমি একটুও সেই মহান মানুষটির পথ থেকে সরে আসিনি,কিন্তু তিনি একটি কথা বার বার বলেন,আত্মশক্তি। আত্মশক্তি। আত্মশক্তি। এই আত্মশক্তিতে বলিয়ান হতে হবে। এই মহড়া হল সেই আত্মশক্তির সূচক মাত্র। 

বুঝেছি,কী করতে বলুন?

তাহলে চলুন,মাঠে।বললেন কুমারচন্দ্র।

চকদ্বীপা মাইনর স্কুল অফিস থেকে বেরিয়ে কুমারচন্দ্র সকলকে মাঠে আসতে বললেন। সেখানে একে একে জড়ো হয়েছেন প্রধান শিক্ষক যুধিষ্ঠির মাইতি,পুলিনবিহারী মাইতি,ইন্দ্রনারায়ণ পড়ুয়া,বঙ্কিম মাইতি, প্রাণকৃষ্ণ জানা,রাসবিহারী জানা,গিরীশ অধিকারী প্রমুখ। 
মহড়াটা হল,এইরকম
পুলিশের প্রহার সহ্য করার জন্য একটি নিজেকে আহত করার পরিকল্পনা। 
মাঠের মধ্যে একটি টুল ছিল। তাতে গোটা পাঁচেক বাঁশের কঞ্চি কেটে রাখা। কঞ্চিগুলো বেশ মজবুত এবং শক্ত।
তারপাশে একগাছা কাতা দড়ি রাখা। 
সকলে সেসব দেখে বেশ অবাক হলেন।
কুমারচন্দ্র সকলের উদ্দেশ্য বলে উঠলেন, মারের বদলে মার দেওয়া খুবই সাহসের কাজ মানছি,কিন্তু মারের বদলা মার হতে পারে না! কারণ এই একে-অপরকে আঘাত কোনোদিন শেষ হবে না। তার জন্য প্রয়োজন মারকে শেষ করা।
আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার,সকলে তো মারের বদলা মার দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে না,বিশেষ করে আমাদের মতো দেশে। যেখানে দু'বেলা দু'মুঠো ভাত জোগাড় করতে পেছনের কাপড় ট্যানা হয়ে যায়! তাদের জন্য বন্দুক,বোমা এইসব অলীক।তাদের কাছে মাটিকে প্রতিরোধের দেওয়াল, ধুলোকে ঝড়ের আস্তরণ এবং কাদাকে সবচেয়ে ধারালো অস্ত্র করা এগোতে হবে। কিন্তু এসব করতে গেলেই নেমে আসবে বৃটিশ সিংহের নখ-দাঁত এবং কামড়।তার জন্য এই দেহকে করতে লোহার ঢাল।যাতে কোনো অবস্থাতেও ভেঙে না পড়ে,নুয়ে না পড়ে এবং গুঁড়িয়ে না যায়!
তাই মারের হাত থেকে বাঁচতে হলে মার খেয়ে বুক-পিঠ লোহা বানাতে হবে,সহ্যের, সহ্যের আর সহ্যের। 

বোঝা গেছে কুমারবাবু, এই মহড়ায় দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে? কাকে দিয়ে শুরু করব বলুন? জিজ্ঞেস করলেন প্রধানশিক্ষক যুধিষ্ঠির মাইতি।
তিনি অবশ্য মনেপ্রাণে এই সব মহড়ার বিরুদ্ধে, কারণ এতে গুরুতর আহত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

সকলে নীরবে দাঁড়িয়ে রইল।
তখন কুমারচন্দ্র বলে উঠলেন, আমাকে দিয়ে শুরু করুন। ওরে জনার্দন, এগিয়ে এসো। আমার হাত দুটি বেঁধে দাও।

একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে হীরালাল বলে উঠলেন, না,না,আমি প্রথমে মহড়া দেবো,আমার চাবুক দেখলে বুক কেঁপে যায়,বন্দুক দেখলেই পায়ের তলার শিরশির করে, তাই সেই ভয় কাটাতে হবে।

কুমারচন্দ্র মৃদু হেসে বললেন,একটা কাজ করুন ডাক্তারবাবু,আপনি প্রথমে গুণতে থাকুন,তারপর আপনার সময় আমি গুণব, কে কতবার মার খেতে পেরেছে, মনে রাখবেন,যে জিতবে,তাঁকে দুপুরে এক বাটির বদলে দুই বাটি ছানার ঝোল খেতে দেওয়া হবে।

একথা শুনে হীরালাল বলে উঠলেন, আপনার মনে মনে এই,মানে বাইরে দেশপ্রেম, ভেতরে ছানার ঝোল,সেই উদ্দেশ্যে মার খাওয়া,পারেন বটে,দুটি বাটি নয়, আপনার সামনে কড়া শুদ্ধ বসিয়ে দেওয়া হবে। 
বলেই হেসে উঠলেন। 
অন্যরাও হালকা হেসে উঠলেন। 

পাশেই জনার্দন দাঁড়িয়ে ছিল।তিনিও হেসে ফেলল। তিনি ভেবেছিলেন,এইসব মহড়া কথার কথা,সত্যি কিছু হবে না।কিন্তু কুমারচন্দ্র আবার দৃঢ়কণ্ঠে বললেন,হাত দুটো বেঁধে দাও।
একথা শুনে
এগিয়ে এসে কুমারচন্দ্রের হাত দুটি শক্ত করে বেঁধে দিলেন।
যুধিষ্ঠির হাতে একটি বেত তুলে নিয়ে কুমারচন্দ্রের পিছনে দাঁড়ালেন।
কুমারচন্দ্র শুধু বললেন,মনে করুন,আপনার কোনো অতি অবাধ্য ছাত্র, পড়াশোনা যার লাটে উঠেছে, তাকে চরম শাস্তি না দিলে শোধরানো যাবে না,সেই কথা ভেবে পিটতে থাকুন।

যথা আজ্ঞা, বলেই যুধিষ্ঠির মাইতি বেত চালাতে লাগলেন। পর পর বেতের বাড়ি কুমারচন্দ্রের পিঠে পড়তে লাগল।
অন্যদিকে হীরালাল ডাক্তার গণগা করছিলেন মৃদু শব্দে, এক,দুই, তিন,চার,পাঁচ, ছয়, সাত,আট, নয়,দশ এগারো...
বেতের ঘা চলতেই লাগল।
অন্যরা শিহরিত হলেন। একি হচ্ছে!  এরকম মার খাওয়া তো একপ্রকার নিজেকে অসুস্থ করে তোলার সামিল। 
 কিন্তু কুমারচন্দ্র স্থির।
তিনি যুধিষ্ঠিরের দিকে তাকিয়ে বললেন,এ তো তুলোর আদর হচ্ছে, না,দেখছি,আজকালকার মাস্টারের হাতে সেই জোর নেই, এরা বড্ড দুর্বল,অবাধ্য ছাত্রকে কীভাবে শাসন করতে হয় জানে না! ছিঃ 

একথা শুনে যুধিষ্ঠির মাইতি আরও জোরে জোরে বেতের আঘাত দিতে লাগলেন। কুমারচন্দ্রের পিঠের খদ্দেরের জামা ছিঁড়ে গেল।
তার ওপর চলতে থাকল মার।মারের ওপর মার।
কুমারচন্দ্র স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে মার খেতে খেতে বলে উঠলেন, 

"যথা দীপো নিবাতস্থো নেঙ্গতে সোপমা স্মৃতা।
যোগিনো যতচিত্তস্য যুঞ্জতো যোগমাত্মনঃ।।"

( বায়ুশূন্য স্থানে দীপশিখা যেমন কম্পিত হয় না,চিত্তবৃত্তির নিরোধ অভ্যাসকারী যোগীর চিত্তও তেমনইভাবে অবিচলিত থাকে।)

একদিকে আঘাতে পর আঘাত,অন্যদিকে একের পর এক গীতার শ্লোক।
এ এক অভাবনীয় দৃশ্য। 
অন্যরা অবাক হয়ে দেখছেন,এ কেমন লোক?  মার খাওয়ার মহড়া করছে,যাতে নিজের এবং সকলের আত্মশক্তি মজবুত থাকে। এরকম মানুষকে কীভাবে শান্ত করা সম্ভব!  এ যে নীরব রুদ্রদেব,ভেতরে প্রচণ্ড আগুনর গোলা,অথচ বাইরে শান্ত নদী।

সহসা ডাক্তার হীরালাল চেঁচিয়ে উঠলেন,আরে থামুন, থামুন কুমারবাবুর পিঠ ফেটে রক্ত পড়ছে।থেমে যান, থেমে যান।

সত্যি! 
সকলে দেখলেন, কুমারচন্দ্রের সেই ছিঁড়ে যাওয়া জামার গা বেয়ে লাল রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। 
কুমারচন্দ্র চেঁচিয়ে উঠলেন,না,মার থামাবেন না,এইভাবে আঘাত সহ্য করে স্বাধীনতা সংগ্রামী স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত হতে হবে।
আপনি মারতে থাকবেন,যতক্ষণ না আমি মাটিতে পড়ে যাই!

এবার যুধিষ্ঠির মাইতি এই মার খাওয়ার মহড়া বন্ধ হচ্ছে না দেখে একটা উপায় বের করলেন।তিনি বেত চালানো থামিয়ে, জিজ্ঞেস করলেন,আচ্ছা কুমারবাবু একটা প্রশ্ন ছিল?

বলুন?

বলছি,ইংরেজ পুলিশ তো শুধু লাঠি ব্যবহার করে না,বন্দুকও চালাও,তার জন্য একবার ভেবেও দেখে না,কে স্বদেশী বা সাধারণ মানুষ। যাকে সামনে পায়,প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে দমাদম গুলি চালিয়ে দেয়। একথা ঠিক কি না?

তা ঠিক, মুখের ঘাম মুছে কুমারচন্দ্র বললেন,কী ঠিক বলতে চাইছেন?

যুধিষ্ঠির মাইতি গোঁফের ওপর আঙুল বুলিয়ে বললেন,আসলে বলছিলাম,এই বেত খাওয়ার বদলে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতিদিন দু'একটি করে গুলি খাওয়া সহ্য করতে মহড়া দেওয়া হোক।সেটা বরং অনেক বেশি কাজের হবে। তাই না!

কী বললেন? গুলি? তার মহড়া!

হ্যাঁ,আপনার লাঠি যেমন সত্য, গুলিও তেমনই সত্যি। 

একথা শুনে কুমারচন্দ্র মাটিতে বসে পড়লেন।জনার্দন ছুটে এসে তাঁর হাতের দড়ি খুলে দিলেন। কী হল কুমারদা,জল খাবেন?
একজন দৌড়ে গিয়ে জল নিয়ে এলো।
তা নিয়ে কুমারচন্দ্র ঢক ঢক করে খেয়ে নিলেন।
তারপর সবাইকে অবাক করে দিয়ে বললেন,এই ভর দুপুরবেলায় ভাবলাম দুটি ডাল-ভাত খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করব,তা নয় প্রধান শিক্ষক তো গুলি খাওয়ার কথা বলছেন? তা মাস্টারমশাই গুলি কীভাবে খাব? তার জন্য কি আপনার অফিস পর্যন্ত যেতে হবে নাকি এই মাঠেই গুলি মারবেন?

একথা শুনে যুধিষ্ঠির মাইতি হেসে ফেললেন, তা দরকার নেই কুমারবাবু, আপাতত রান্নাঘরের দিকে চলুন,সেখানে গুলির বদলে গরম ভাতের মহড়া দিন,না,না,সরাসরি সত্যি গরম গরম ভাত।

আর ছানার ঝোল? 

আরে মশাই তা তো থাকছে,এক কড়া।চলুন।

অন্যদিকে হীরালাল কাছাকাছি ঝোপঝাড় থেকে একটা ঔষধি তৈরি করে সাদা কাপড় দিয়ে কুমারচন্দ্রের ক্ষতস্থান বেঁধে দিলেন।মুখে বললেন,কুমারবাবু, আপনাকে দেখে আমার চাবুকের ভয় চলে গেছে, সত্যি বলছি,আর চাবুককে ভয় পাই না।
যুধিষ্ঠির সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, আর গুলি?

তখন মৃদু হেসে হীরালাল বলে উঠলেন, সেও কেটে গেছে,মানে ওটা খেলে তো বুঝতেই পারব না,কেমন কষ্ট, তার আগে সোজা স্বর্গধাম!  হাঃ হাঃ হাঃ 

তা ঠিক, মাথা নাড়লেন যুধিষ্ঠির। 

সেই বিদ্যালয়ের লম্বা বারান্দায় খাওয়া-দাওয়া চলছে।
কুমারচন্দ্র বললেন,বুঝলেন হেডমাস্টার,আপনি অনেক ছাত্রকে শাস্তি দিয়েছেন,কিন্তু এমন ছাত্র  পাবেন না,যে মার খেতে চায়!

তা ঠিক,অবশ্য এরকম ছাত্র সত্যি পাবো না,যে মার খেতে খেতে গীতা আওড়ায়, এ-ও কম কথা নয়, ওরে কে আছিস, কুমারবাবুকে ভগবতগীতা শোনানোর জন্য আরও একটু ছানার ঝোল দে রে...

একথা শুনে সবাই হেসে উঠল। 

১৯৩০ সালে ২৬ শে জানুয়ারি। 
তমলুক বাজার থেকে অনতিদূরে একটি একটি পোড়ো মন্দিরের চাতালে বৈঠক বসেছে।
কুমারচন্দ্র জানা সহ সুতাহাটা-মহিষাদল-তমলুক থানার কংগ্রেসকর্মীরা উপস্থিত। সেই সঙ্গে তমলুকের গ্রামবাসী এবং ছাত্ররা এসেছেন। 
গাঁয়ের মেয়েরাও এসেছেন, তবে তাঁরা মন্দিরের পাশে সিঁড়িতে বসে আছেন।
কলকাতা থেকে এসেছেন কংগ্রেসী নেতা প্রতাপ গুহরায়।
একজন ছাত্রকে ডেকে নিলেন কুমারচন্দ্র। ছেলেটি হ্যামলিন্টন বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত,এখন দেশের কাজে এগিয়ে এসেছে। তার নাম ক্ষুদিরাম ডাকুয়া।
সেই ছাত্রটি একটা বেদীর ওপর দাঁড়িয়ে পরিষ্কার কণ্ঠে রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাব্যাংশ আবৃত্তি করল,

"স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে
কে বাঁচিতে চায়।
দাসত্ব শৃঙ্খল বল, কে পরিবে হে
কে পরিবে পায়?"
কোটিকল্প দাস থাকা নরকের প্রায় হে নরকের প্রায়
দিনেকের স্বাধীনতা, স্বর্গসুখ তায় হে, স্বর্গসুখ তায়"

এরপর প্রতাপ গুহ রায় বেদির ওপর দাঁড়ালেন। হাতে তাঁর একগুচ্ছ কাগজ। তাতে একবার চোখ বোলালেন আবার চারিদিকে তাকিয়ে নিলেন। তারপর বললেন,আপনারা সবাই স্বামী বিবেকানন্দের নাম শুনেছেন,তিনি কতদিন আগে বলেছিলেন,"জগতের সমস্ত ধনসম্পদের চেয়ে 'মানুষ' হচ্ছে বেশি মূল্যবান"
সেই মানুষের কাছে আমরা এসেছি, কারণ তাদের চোখ ঠিকঠাক খুলে গেলে,আমাদের কেউ চোখে রাঙাতে পারবে না,তাদের হাত একবার অস্ত্র হয়ে উঠলে,তাহলে পৃথিবীর কোনো অস্ত্র আমাদের ভয় দেখাতে পারবে না,তাদের অশ্রু একটিবার আগুন হলে,তাহলে কোনো পরাধীনতার রজ্জু আমাদের বেঁধে রাখতে পারবে না।আবার স্মরণ করছি বিবেকানন্দের কথা," যদি এই পৃথিবীতে এমন কোনও দেশ থাকে,যাকে 'পুণ্যভূমি' নামে বিশেষিত করা যেতে পারে,যদি এমন কোনও স্থান থাকে,যেখানে মানুষের ভেতর ক্ষমা,দয়া,পবিত্রতা,শান্তভাব প্রভৃতি সদ্গুণের বিকাশ সবচেয়ে অধিক পরিমাণে হয়েছে, যদি এমন কোনও দেশ থাকে,যেখানে সর্বাপেক্ষা অধিক আধ্যাত্মিকতা ও অন্তর্দৃষ্টির বিকাশ হয়েছে, তবে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি সে আমাদের মাতৃভূমি, এই ভারতবর্ষ। "
সেই ভারতবর্ষের আজ শুভ দিন।ভারতবাসীর কাছে যেন প্রথম সূর্যোদয়ের দিন।
কংগ্রেস কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এই ২৬ শে জানুয়ারি স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হবে।এবং শহরে-নগরে-গাঁয়ে সর্বত্র চরকা আঁকা স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলিত করা হবে।
এই কথাটি শোনা মাত্র সভায় একটা শিহরণ খেলে গেল! অনেকেই ভাবতেই পারছে না,এ কী করে সম্ভব? নিজের দেশের পতাকা নিজেরা নীল আকাশে উড়িয়ে দিতে পারব? এর জন্য কোনো ভয় অথবা জুমুলবাজি হবে না! ইংরেজ পুলিশ কোনো কিছুই বলবে না!
এতো মারাত্মক রাজদ্রোহ বলে এতদিন জেনে এসেছে!  কী হবে? যদি ইংরেজ রাজসরকারের ধুর্ত পুলিশ এসব জানতে পারে! সকলের মধ্যে একটা চাপা ভয়ের স্রোত বয়ে গেল।
এসব দেখে প্রতাপ গুহ রায় বললেন,কোনো ভয় পাবেন না,আমরা সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে যাবো এবং রূপনারায়ণ নদীর ধারে এই পতাকা উত্তোলন করব।
আপনারদের সঙ্গে কুমারচন্দ্র, হীরালাল, রাসবিহারী জানার মতো নেতারা আছেন। কেনো ভয় পাবেন না।
আমরা কোনো অন্যায় আচরণ বা কাজ করছি না!
কোনো বন্দুক বা তলোয়ার ধরে কাউকে মারতে যাচ্ছি না,আমরা আমাদের দেশের পতাকা উত্তোলন করব।

প্রতাপ গুহ রায় বক্তব্য শেষ করে এগিয়ে গেলেন কুমারচন্দ্রের দিকে,এবার আপনি এই মিছিল পরিচালনার জন্য কিছু বলুন।আপনার কথা শেষ হলে আমরা তাম্রলিপ্ত শহরের মাঝখান দিয়ে নদীর ধারে যাবো।
একথা শুনে কুমারচন্দ্র একপাশে দাঁড়ানো কংগ্রেসকর্মীদের দিকে হেঁটে গেলেন। বেদি করা মঞ্চে উঠলেন না। সকলে অবাক হলেন।
তারপর কংগ্রেসকর্মীদের মধ্যে দাঁড়ানো একটি যুবকের কাঁধে হাত রেখে বললেন,এরপর এই যুবকটি বক্তব্য রাখবে। তারপর আমরা মিছিল করব।
যুবকটি রোগা-পাতলা, ধারালো মুখ।গায়ে একটি খদ্দেরের জামা এবং ধুতি পরে আছেন।দেখলেই বোঝা যায়,এখনও কলেজ পাশ করেননি। 

কে উনি? জিজ্ঞেস করলেন প্রতাপ গুহ রায়।

এর নাম সুশীল। এর বাড়ি মহিষাদলে।আমাদের মধ্যে এর নেতৃত্ব দেওয়ার আশ্চর্য ক্ষমতা আছে এর, এসো সুশীল, তুমি কিছু বলো,বলেই সুশীলকে এগিয়ে দিলেন কুমারচন্দ্র।

সুশীল নামক যুবকটি বেদির ওপর উঠলেন এবং কুমারচন্দ্রের দিকে তাকিয়ে নিয়ে বলে উঠলেন, আজ সমগ্র ভারত জেগে উঠেছে, তাই আমাদের ঘুমিয়ে থাকলে হবে না! আমাদের এমন কাজ করতে হবে,যাতে এখানকার শাসক মনে করতে পারে,আমরা গাঁইয়া বলে হীন নয়, দুর্বল নয়, মুখ লুকিয়ে গর্তে থাকার মানুষ নয়, চলুন, রূপনারায়নের তীরে, সেখানে পতাকা তোলার মাধ্যমে আমরা বুঝিয়ে দেবো,সমগ্র ভারতবাসী কথার কথায় নয়,সত্যিকারের জেগে উঠেছে, রবীন্দ্রনাথের গান আছে না,"দিকে দিকে জাগে,নব ভারতের জনতা, এক জাতি,এক প্রাণ,একতা" এখন আমাদের এক হয়ে লড়াইয়ের সময়। কেউ ছোটো-বড় নয়, কেউ হিন্দু-মুসলমান নয়,সবাই এক ভারতমাতার সন্তান। 
বন্দেমাতরম! বন্দেমাতরম! বন্দেমাতরম! 

সঙ্গে সঙ্গে সমবেত ধ্বনিত বন্দেমাতরম! 

সবাই চলুন,রূপনারায়নের দিকে।

সুশীল যখন বেদি থেকে নেমে এলেন,তখন কুমারচন্দ্র তাঁর পিঠ চাপড়ে বললেন,এই তো চাই, সুশীল তুমি, একদিন খুব বড় হবে।

সুশীল মাথা নত করে বললেন,সে আপনার আশিস কুমারদা,আপনাকে দেখে ভেতরে শক্তি বৃদ্ধি করি।চলুন।এবার নদীর ধারে যাওয়া যাক।সেখানে আমাদের আন্দোলনের আসল অভিযান নিয়ে আপনি সকলকে জানাবেন।

চলো 

বলেই একটি মিছিল এগিয়ে গেলো রূপনারায়ণ নদীর ধারে। সেখানে যথারীতি আবীর দিয়ে একটি ইটের অস্থায়ী বেদী করা হয়েছে। তাতে গাঁদা ফুল ছড়ানো।একটি শক্তপোক্ত বাঁশ দাঁড় করানো। তাতেই পতাকা উত্তোলিত হবে।
পতাকা উত্তোলন করলেন প্রতাপ গুহ রায়।
চারিপাশে হর্ষধ্বনি এবং বন্দেমাতরম মন্ত্র উচ্চারণে ভরে গেল।
এমন আনন্দের মুহূর্তের ভাবতেই পারেনি কেউ! 
যখন পতাকাটি আকাশে পত পত করে উড়ছে,তখন তা দেখে কুমারচন্দ্র কেঁদে ফেললেন।তিনি এই দিনটি সত্যি সত্যি দেখার জন্য বেঁচে থাকবেন কি না জানেন না! কিন্তু আজ তার মহড়া দেখে, তিনি আশ্চর্য আশ্রয়ের আনন্দ পেলেন।
তারপর সেই পতাকা উত্তোলিত দণ্ডটি স্পর্শ করে কুমারচন্দ্র চিৎকার করে বললেন,এই দৃশ্য একেবারে সত্যিকারের হোক, আপনারা সবাই চান তো? কি আপনারা, তোমরা সবাই চাও তো?

সমবেত কণ্ঠে চিৎকার স্রোতের মতো ভেসে এলো,চাই,চাই, চাই 

তাহলে আমাদের সামনে এমন একটা আইন ভাঙতে হবে,তার মতো হাঁড়িচাচা আইন আর হয় না! বৃটিশ সিংহের ভারতবাসীর পেটে বার বার বুটের ঘা না দিলে ওদের ভালে করে হজম হয় না!
তাই তারা লক্ষ্য করল, ভারতবাসীর সোনা-দানা নেই, জমি-জায়গা নেই, মাথামণ্ডু নেই, নাম-ধাম নেই, তাহলে কোথায় বুট কষাবে? তখন তারা সামান্য নুনভাতের দিকে চোখ টাটাল। আমাদের দেশের নদী,তার থেকে নুন মারা বন্ধ করার আইন চালু রেখেছে, একে বলে লবন আইন।
বোঝা গেছে?

সকলে চিৎকার করে বলে উঠল,হ্যাঁ
এর প্রতিকার কী আছে? প্রত্যকের ভেতরে একটা প্রতিকারের আগুন ধিকি ধিকি জ্বলিছিল।
অর্থাৎ সকলেই জানে এই বৃটিশ বাঁদরদের এইরকম বাঁদরামির আইন।
নুন ভারতের মাটি ও জলে মিশে আছে।নোনা মাটি পরিশোধিত করে নুন উৎপাদন করা যায়।সমুদ্রের জল জ্বালিয়ে তা থেকে নুন তৈরি করা যায়।কিন্তু বৃটিশ সরকারের আইন ছিল,ভারতীয়রা কেউ ঘরে নুন তৈরি করতে পারবে না।তাই বিলেত থেকে নুন আনা হবে,তাই চড়া দামে কিনতে হবে।এই ধরণের অমানবিক অত্যাচার বৃটিশ সরকার দিনের পর দিন করে আসছে।এর এবার প্রতিকার চাই?  এর বিরুদ্ধে লড়াই চাই।
সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ অস্ত্র ধরতে, বোম বাঁধতে,বোম ছুঁড়তে অথবা ফাঁসির মঞ্চে যেতে না পারুক, তাদের হাতে যা আছে,তাই দিয়ে বৃটিশ সরকারের ভিত নাড়িয়ে দিতে হবে।১৯৩০ সালের মার্চ মাসে গান্ধিজি ডাণ্ডি অভিযান করবেন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দেশের লোক পরাধীন বলে নুন মারতে পারবে না! এ কেমন আইন?  আমাদের দেশের মানুষের নুন মারার আইন নিজেদের আদায় করে নিতে হবে।একে গান্ধি নাম দিয়েছেন, লবন সত্যাগ্রহ।সবরমতী থেকে ডাণ্ডী সমুদ্রতীরের দূরত্ব প্রায় ৩৮৫ কিলোমিটার। 
সবকিছু হচ্ছে, কিন্তু কংগ্রেসকর্মীরা নিজেরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে আছে।বৃটিশ রাজসরকারের মতো সর্পচতুর, সিংহবিক্রম, হস্তিশক্তিধরকে কি এই সামান্য নুন মেরে টলানো সম্ভব? 
তারপর এই আন্দলোনে কি সাধারণ মানুষ সাড়া দিতে পারবে?  তারা কি বুঝতে পারবে মহাত্মার এই অভিযানের অর্থ!  তাদের কীভাবে সংঘবদ্ধ করা হবে? কে তাদেরকে নিয়ে যাবে আন্দোলনের রূপরেখায়? সবচেয়ে বড় কথা,শুধু মাত্র ডাণ্ডীর তীরে নুন মারলে তো হবে না! মহাত্মা এতখানি রাস্তা অতিক্রম করে ডাণ্ডি পৌঁছাবেন,কিন্তু তাঁর পক্ষে কি সমগ্র ভারতবর্ষের নদীকূলে যাওয়া সম্ভব?  নাকি সর্বত্র গিয়ে নুন মারা সম্ভব? 

তাহলে? 

তাহলে? 

তাহলে?

তাদের সংশয় দেখে,তাদের কিংকর্তব্যবিমুঢ়তা দেখে মহাত্মা শুধু একটি কথা বললেন," হম যব যাত্রা শুরু করেঙ্গে,হিন্দুস্থান উথল যায়েগা "

সেই কথা সত্যি করতে কুমারচন্দ্রের মতো মানুষেররা বদ্ধপরিকর। 

কুমারচন্দ্র বললেন,আমরা এই লবন আইন ভাঙব,আমাদের ডাক দিয়েছেন গান্ধিজি,আমাদের প্রিয় মহাত্মা। জয় মহাত্মা গান্ধি কী জয়। 

সকলে সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠল, জয় মহাত্মা গান্ধি কি জয়। 

একজন শ্রমজীবী মানুষ এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন,এই লবন আইন ভাঙা হবে কী করে? 

কুমারচন্দ্র তাকেই ঘুরিয়ে প্রশ্ন করলেন,তুমি নুন মারত পারো?

সে প্রথমে একটু হকচকিয়ে গেল।
তারপর চেঁচিয়ে বলে উঠল, ও কত্তা,এতো মুই কেন,মোর বাপ-ঠাকুর্দা পর্যন্ত জানে,তাদের লগে এসব শিখছি।

তালে সেই বাপ-ঠাকুর্দাসমতে চলে এসো নুন মারতে,এবার বৃটিশসহ তাদের বাপ-ঠাকুর্দাকে দেখাতে হবে নুন খেয়ে মোরা কীভাবে ভারতমাতার গুণ গাই, বুঝলে বাপধন?

সকলে উল্লাসে ফেটে পড়ল।
চারিদিকে স্বর উঠল,কুমারচন্দ্রের জয় হোক।
কিন্তু কুমারচন্দ্র তা থামিয়ে বলে উঠলেন,বলো,বীরেন শাসমলের জয় 

জয়

বলো মহাত্মা গান্ধির কি জয় 

জয় 

বলো

ভারতমাতা কি জয় 

জয়

সহসা কুমারচন্দ্র একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়লেন।
তাঁর একটি শ্রেণি কক্ষে একটি ছোট্ট মেয়ের কথা মনে পড়ে গেল।গায়ে পতাকা জড়িয়ে ভারতমাতা সেজেছিল! 
মুক্তি 

সত্যি ভারতবর্ষের মুক্তির আর বেশিদিন বাকি নেই!  তার কন্যার নামকরণ একেবারে সার্থক হবে।হতেই হবে।
প্রতাপ গুহ রায় লক্ষ্য করলেন কুমারচন্দ্রকে, ভাবতে লাগলেন,এই গাঁইয়া টাইপের পোশাক-পরিচ্ছদ ও কথাবার্তার লোকটার মধ্যে একটা আকর্ষণী শক্তি আছে। একে দিয়ে অনেক কাজ করানো যাবে।আমেবাদের মিটিংএ এঁকে দেখেছিলেন। সেখানে চুপটি করে কংগ্রেসকর্মীদের সঙ্গে বসে থাকতে।তারপর যখন টিফিন-চা এসব বিতরণ হতো,লোকটি নিজের হাতে সব করত।এমন কি মিটিংয়ের পর পংক্তিভোজনের সময় কুমারচন্দ্রকে দেখেছেন,নিজেই ভাত-ডালের বালতি নিয়ে পরিবেশন করছে।সবার শেষে খেতে বসছে। মহাত্মা বার বার বলতেন,"মুছকো নেতা নেহি চাহি-এ, মুছকো আমি আমদি কা সেবক ডুন দো, যো দেশকো মা কি তারা সেবা করেঙ্গে।"
এতো একবারে সেই কথাটির অক্ষরে অক্ষরে রূপ।
প্রতাপ গুহ রায় অন্তরে অবাক হলেন।
এগিয়ে গিয়ে কুমারচন্দ্রের কাঁধে হাত দিলেন। কুমারচন্দ্র যেন আলতো চমকে উঠলেন।

কী হল কুমারবাবু?

আজ্ঞে কিছুই নয়, আমি একটু বাড়ির কথা চিন্তা করছিলাম।

ওহ্, কিন্তু আপনার বাড়ি তো সুতাহাটায়?  এতটা দূর যাতায়াত করেন কীসে? 

ঐ তো বাস আছে,গরুরা গাড়ি আছে, আর নাক বরাবর মাঠ আছে,তার আলের ওপর দিয়ে হেঁটে সর্বত্র যাই,কোনো অসুবিধা নেই। 

সত্যি তো!  কোনো অসুবিধা নেই, আপনার মতো নেতার অসুবিধা হলে তো দেশ জাগে না!আপনাদের জন্য এই দেশ আজ স্বাধীনতার চক্ষুদানের সময় সমাগত। 

না, না,আমি কোনো নেতা নেই,হতেই চাই না,আমি সেবক মাত্র। আপনাকে আলাপ করিয়ে দিই, এসো সুশীল, এদিকে এসো।

সুশীল এগিয়ে এলো।

প্রতাপ গুহ রায় জিজ্ঞেস করলেন।

তোমার পুরো নাম কী?

আজ্ঞে সুশীল ধাড়া।

বেশ, তোমাদের দেখে শক্তি পাচ্ছি, এই দেশের যুবকেরা যদি পথে নামে এই বৃটিশরাজ ধ্বংস হতে বেশি সময় লাগবে না।
তা তোমার পরিকল্পনা কী?

কুমারদা যেমন বলবেন।আমরা সেই পথে চলব।
কুমারচন্দ্র বলে উঠলেন,আগামী এপ্রিলমাসের কোনো একটা দিন আমরা নরঘাটে হলদি নদীর তীরে প্রথম লবন আইন ভাঙব।কারণ ঐ মাসের শুরুতে কোনোদিন দিন মহাত্মা ডাণ্ডিতে পৌঁছাতে পারবেন। আমরা সেই সংবাদ ওপর মহল থেকে পেয়ে যাবো।এই নদীর তীরে আমাদের সঙ্গে যেমন সুতাহাটা, মহিষাদল,নন্দীগ্রাম,তমলুক ও ময়নার মানুষজন থাকবে। সেই জন্য ছোট ছোট স্তরে সভা করব।মানুষকে নুন মারার গুরুত্ব বোঝাতে হবে।

তারপর কুমারচন্দ্র চিৎকার করে বলে উঠলেন,মহাত্মার ডাণ্ডি অভিযান সফল হবেই, সেই সঙ্গে আমরাও সফল হব,মনে রাখতে হবে হলদি নদীর নরঘাট হবে আমাদের ডাণ্ডি। 
জয় মহাত্মার জয়। 

সকলে মহাত্মা জয় বলে চেঁচিয়ে সমর্থন করল।
এমন সময় জনার্দন এগিয়ে এসে কুমারচন্দ্রের কানে কানে কী সব বললেন।
সন শুনে কুমারচন্দ্রের মুখটা করুণ হয়ে গেল,শুধু তিনি মুখে উচ্চারণ করলেন,মুক্তি মা আমার.... 


ক্রমশ....

পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments