কয়েকটি রম্য কবিতা
শুভশ্রী রায়
কাব্যভীতি
ও মশাই, দাঁড়ান, দাঁড়ান, হাঁটা দিলেন কেন?
আপনার কী এমন ক্ষতি করতে আমি পারব?
মনে করেছেন বুঝি, কবিতা শুনিয়ে তবে ছাড়ব!
ও মশাই শুনুন, শুনুন, ভয় পাবেন না প্লিজ এত
সারা দিন গুরুত্বহীন কথা ও গুজব শোনেন কত,
সে সব বুঝি সুখশ্রাব্য, তার ওপর কেচ্ছা যত,
পড়েন, শোনেন, এর ওর জীবনের কথা গোপন
সে সব বুঝি খুব স্বাদু? যেন দারুণ কিছু ভোজন!
আরে দাদা, আমার কবিতার ভয়ে দৌড়চ্ছেন কেন?
কাব্য শোনার চেয়ে বড় ফাঁড়া একটাও নেই যেন!
জিরিয়ে নিন, এখন বলি, বরং শোনাব হাওয়াকে
তবু আমার কবিতা মোটে শোনাব না আপনাকে!
এবার শুনুন, নায়ক তপেনজিতের কুকুর জ্যাক
নায়িকা প্রিয়মিতাকে পরশু কামড়ে দেছে খ্যাঁক!
খুশি তো? মুখ দেখে মনে হ'চ্ছে এবার কৌতূহলী,
কাছে আসুন মশাই, সে বৃত্তান্ত বিশদ করে বলি।
আলোর নৌকো
একটা নৌকো আলো দিয়ে হো'ক তৈরি!
মনের অন্ধকারের সে তরীটি হবে বৈরী।
মাঝি কে হবে, সেও কী আলোকনির্মিত?
না কি নিজেরাই, ছেড়ে যা কিছু সীমিত?
নদী বাহার
সূর্য নিজেকে নদীতে মেশাচ্ছে অকাতরে
গরম হয়ে উঠছে জল, বাহারী ঝিলিক!
জলের সাম্রাজ্যে বেশ ক'টা সন্ধানী নৌকো,
প্রকৃতি বুনে চলেছে নিজের মহার্ঘ সিলিক।
পাখীর জন্য প্রার্থনা
কেউ আমাকে একটা শক্তিশালী পাখী এনে দাও!
পাখী আমার অস্থিতে দিক বজ্রবিদ্যুৎ আর প্রবাহ,
জড়তায় মাখামাখি এ জীবন সহ্য হয় না আজকাল;
তার ডানার আগুন গলিয়ে দিক জীবনের হিমবাহ।
টুকটুকিকে
টুকটুকি, তোর পুজো তো ফুরলো!
এবারের মতো বায়না কী জুড়লো?
অবশ্য কতটুকুই বা বায়না করিস,
যা আমি এনে দিই তাই তো পরিস,
তোর বেশিরভাগ পোষাক দামী নয়;
তবে তাতে কী আনন্দ কিছু কম হয়?
তুঁতে ঘাগরা হাজারো চুমকি বসানো
যেন পোষাকে হয়েছে তারা খসানো,
সব তুলে রেখে দে এখন দিন কতক
পরে শীতকালে বেড়াবি করে বড় শখ,
আর তো এক দেঢ় মাস; তারপরেই
তুই আর আমি কত বেড়াব হাত ধরেই!
এখন আয় নাড়ুটাড়ু করি এক সাথে
নিজেরাও খাব, কেউ এলে দেব হাতে।
টুকটুকি'র সাজগোজ
সবাই কত সাজে উৎসবের ক'টা দিন
টুকটুকি একটুও সাজগোজ করে না!
আগে পরে কখনো অল্প সাজে হয়তো
তবে তার দিকে কারুর নজর পড়ে না।
তাতে কী, বরাবরই টুকটুকি মনে করে,
কেউ সাজের জন্য কেন দেখবে আমায়?
মানুষের পরিচয় তার ব্যবহার ও কাজে
মানী হয় না কেউ দামী জুতো-জামায়।
0 Comments