আষাঢ়ে গল্পের আল ধরে
পর্ব ১৪
তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য
পুরুষ তুমি কত সুন্দর!
" সুন্দর বটে তব অঙ্গদখানি তারায় তারায় খচিত স্বর্ণে রত্নে শোভন লোভন
জানি বর্ণে বর্ণে রচিত"
রবীন্দ্রনাথের অসাধারণ একটি গান।
এই ভাবে তো আমরা কোনো পুরুষের রূপের ও
তার সাজের বর্ণনা করতে পারি। একতরফা কেন মেয়েদের রূপ নিয়ে চর্চা হবে? পুরুষরা কী সাজতে পারেনা ? কোনো পুরুষ সাজলেই তখন তাকে গে অথবা হাফলেডি বলা হয়। রামায়ণ ও মহাভারতের যুগে পুরুষরা হাতে বালা কানে দুল এবং গলায় হারও পরতেন। বৈদিক যুগেও ছেলেরা গয়না পরতেন। মহেঞ্জদড়ো হরোপ্পা সভ্যতায় ছেলেদের গয়নার পরার কথা জানা গেছে।এখনো অবশ্য কিছু কিছু পুরুষ সোনার চেইন পরেন। আচ্ছা ছেলেদের
পোশাক নিয়ে কী কোনো আগ্রহ নেই?
মেয়েদের কোনো সমস্যা নেই ছেলেদের পোশাক পরাতে, ছেলেরা শাড়ি, টিপ, চুড়ি পরতেই পারেন।
মেয়েরা যেমন খালি গায়ে রাস্তাতে বের হয়না কিন্তু অনেক পুরুষকেই দেখেছি খালি গায়ে রাস্তায় বের হতে। এই ধরনের অসভ্যতা কী পুরুষের করা উচিৎ? ছেলেদের দেখতে ভালো লাগলে বা না লাগলে মেয়েদের দরাজ মনে প্রশংসা করা দরকার। একজন কালো মেয়েকে কত কথা শুনতে হয় কিন্তু ছেলেদের এক্ষেত্রে রঙ বা race নিয়ে কেন কথা হয়না? একজন প্রেসেন্টেবেল পুরুষ না হলে মেয়েরা কেন তাকে বিয়ে করবে? একটি মেয়েকে যদি তার কাজের প্রয়োজনে গভীর রাতে ফিরতে হয়.... তখন সেই মেয়েটিকে ধর্ষিতা হতে হয়।
আমার একান্ত ইচ্ছে দশ বারোটি মেয়ে মিলে একা একটি পুরুষকে ভালো করে টর্চার করা যেতেই পারে অন্তত যে পুরুষরা মেয়েদের অসম্মান করে তাদের । তাই বলে সব পুরুষ তো আর খারাপ নয়। অনেক পুরুষ কে দেখলে মাঝে মাঝে করুণা হয়। মেয়েরা যদি এভাবে সংগঠিত হয় পুরুষরা ভাববে বাবা এ রাস্তায় যাবনা এখানে মেয়েরা আছে। এখনো অনেক পুরুষ মানুষ আছেন যাদের দেখলে ইচ্ছে হয় একটা গোটা দিন যদি তার সঙ্গে কাটাতে পারতাম! আমি মেয়ে আমার মনের ইচ্ছা আমি জানাতে পারবনা অথচ একটি পুরুষ তার যখন যা ইচ্ছে করবে। মেয়েদের রূপ নিয়ে গান, কবিতা,
উপন্যাস, সিনেমা সব হয়ে আসছে সেই কবে থেকে। পুরুষের রূপ নিয়ে কবে কোন বই লেখা হয়েছে? পুংলিঙ্গ এবং স্ত্রী লিঙ্গ এই সামান্য পার্থক্য নিয়েই মানব সমাজ গঠিত। তাছাড়া শারীরিক অন্য সব ক্রিয়া দুজনেরই এক।
তবে মেরিট বা বুদ্ধিমত্তাটা মেয়েদের একটু বেশি।
পুরুষ কী কাজ করবে সেটা কিন্তু মহিলাদের নির্ধারণ করে দেওয়া উচিৎ। ঘরের রান্নাবান্নার কাজ, কুলির কাজ, পাথর ভাঙা কয়লা ভাঙা, নৌকা চালানো, ডুবুরির কাজ, বাথরুম পরিষ্কার করার কাজ, আর যে যতই পড়াশোনা করুক এই সব কাজ সব পুরুষ কে জানতে হবে। পুরুষ যতক্ষণ না ঠিক মতো রোজগার করছেন ততক্ষণ তার বিয়ে করা উচিত নয়। নারী যদি চাকরি করে তবুও পুরুষ কে তার রোজগারের
এক তৃতীয়াংশ স্ত্রীকে দিতে হবে। আর স্ত্রী যদি চাকরি না করে পুরুষ তার রোজগারের অর্ধেক স্ত্রীকে দিতে হবে। বছরে অন্তত দুটি পরীক্ষা দিতে হবে স্বামী হিসাবে কতটি যোগ্যতা দেখাতে পারল আর না পারলে অজ্ঞাত বাসে ছমাস পাঠানো হবে। পুরুষ যদি অন্যায় করে সে শাস্তি কেবলমাত্র মহিলারাই দিতে পারবে। স্ত্রীর নির্দেশ বা আদেশ ছাড়া কোনো পোশাক কিনতেও পারবেন না এবং পরতেও পারবেন না। বয়স্ক পুরুষ দের ক্ষেত্রে তাদের দেখভাল করার জন্য কমবয়সী পুরুষরা থাকবে এবং তারা পয়সা পাবে । বাড়ির মহিলারাও দেখবেন।
ধরুন কোনো কম বয়সী পুরুষ কোনো কম বয়সী মহিলাদের সামনে হঁচে ফেললে হাত জোড় করে ক্ষমা চাইতে হবে । এমন যদি দেশের নিয়মকানুন থাকত তবে কত ভালো হতো বলুন তো ?
আমার মনে হয় ধর্ম বর্ণ এসব ছেড়ে নিজের নামের সাথে সারনেম না দিয়ে বরং মায়ের নাম জুড়ে দিলেই ভালো হয়। বাবার নাম দেওয়ার চল মহারাষ্ট্র বা দক্ষিণ ভারতে আছে। আমার মনে হয় মহিলারা নিজেকে আড়ালে রেখে পুরুষ কে যেন প্রকাশের মাধ্যম করেছে। আমরা বলি বিধাতা পুরুষ । বিধাতা নারী কেন নয়? নারী পুরুষ নিয়ে কোনো বিদ্বেষ নয় কোনো রাগ নয় । একজন নারীকে পুরুষ কখনো বন্ধু কেন ভাবতে পারেননা? তাহলে নারী কেবলই প্রেমিকা, বউ অথবা শয্যা সঙ্গীনী?
বদল করতে হবে আমাদের দেখার চোখকে। বেশিরভাগ মেয়েদের মিনমিনে স্বভাব অবদমিত হতে তারা ভালোবাসে। একটা ব্যাপার তো মানতেই হবে সবার আগে মেয়েদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার দরকার। মেয়েদের আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকলে কখনোই নিজের মতামত প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। একজন পুরুষ সম্পূর্ণ হয় নারীকে পেলে। তেমন নারীও পুরুষের জন্য ফুলের মতো প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে। যদি নারীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পুরুষ নারীত্বের অপমান ক'রে সমস্যা ঠিক তখনই আসে। পুরুষের দাড়ি, গোঁফ, প্রশস্ত বুক, চোখ, মিষ্টি মুখ,উচ্চতা, শিক্ষা, শৈল্পিক গুণ, মানবিক আচরণ সবই তো নারীকে আকর্ষণ করে। মেয়েদেরও ছেলেদের রূপ নিয়ে সরাসরি প্রশংসা করা দরকার । আমার বেশ মনে আছে তখন অনার্স এর টিউশান পড়তে যেতাম পড়ে ফিরছি কৃষ্ণনগর হসপিটাল মোড়ের কাছে এক বান্ধবীর সঙ্গে দেখা ওর কাছে সাইকেল ছিল ও গান শিখতে গেছিল। আমরা কথা বলছিলাম এবং খেয়াল করছিলাম একটি ছেলে বাসে বসে মন দিয়ে বই পড়ছিল বাসটিতে তখনও লোক খুব একটা ছিলনা।। বান্ধবীর কী খেয়াল হল জানিনা ও তখন সাইকেলটা বাসের কাছে এগিয়ে নিয়ে হালকা করে ছেলেটির মাথায় টোকা দিয়েছে। ছেলেটি চমকে উঠে তাকিয়ে হেসে ফেলেছে। বান্ধবী তখন বলছে তিনটে মেয়ে এখানে আপনি তাকাচ্ছেনই না দেখছি!! এই কথা বলাও সারা বান্ধবী সাইকেল নিয়ে দৌড়। ছেলেটি বাস থেকে নেমে আমার বান্ধবীর সাইকেল নিয়ে যাওয়াটা মাথায় একটা হাত দিয়ে নীরব দেখে আবার বাসে উঠে গেল, আমরাও হাহতে হাসতে এগিয়ে গেলাম। ওর সেদিন ঐ স্মার্ট অ্যাপ্রোচটা আমার খুব ভালো লেগেছিল।
কিছু কিছু নিয়মের পরিবর্তন খুব প্রয়োজন। যেমন একজন পুরুষের বিয়ে করবার আগে
তার নিজস্ব একটি বাড়ি থাকা প্রয়োজন, তার ব্যাঙ্ক এ কিছু জমা পয়সা থাকা দরকার কারণ একজন মহিলা কে তিনি কতখানি সম্মান আদর আপ্যায়ন করতে পারবেন এবং সেই দক্ষতার উপর তার কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি হবে। নারী ঈশ্বরের এমন এক মহান সৃষ্টি, পুরুষ যত নারীর সেবা করবে সে তত স্বয়ং ঈশ্বরের দর্শন পাবে। "পতি পরম দেবতা" "পতি পরম গুরু" "পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য নইলে খরচ বাড়ে" এই কথা গুলো সম্পূর্ণ রূপে ভুল কথা।
নিজের সুবিধার জন্য এই বাক্য গুলো খাড়া করা হয়েছে। একটা সংসার কিংবা একটা সমাজের সেন্টার পয়েন্ট হচ্ছেন নারী। নারী পুরুষ দুই এর মনোভাব এমন যে " তোমরা রাঁধিয়া বাড়িয়া আনিয়া দিলে আমরা বসিয়া খাই" কী আশ্চর্য ভাবে মেয়েরা এই প্রচলিত ধ্যান ধারণাকে মেনে নিয়েছে। উল্টোটাও তো হতে পারে! মেয়েটি বাইরে কাজ করে এসেও ঘরের সব কাজ তাকেই করতে হচ্ছে। ঘরের কাজকম্ম করা সন্তান পালন করা এই সব কাজ পুরুষ মন দিয়ে করুক। দায়িত্ববান পুরুষকে পুরস্কৃত করা হবে। আরেকটি প্রবাদের কথা বেশ মনে পড়ল " সোনার আংটি বাঁকা হয়না"
যত ওচা জালি পুরুষ হোক না কেন সে আসলে নিজেকে সিংহ মনে করে। আদতেই সে একটা কুকুর কিংবা বেড়ালের থেকে অধম যেহেতু testosterone hormone..এর জন্য তিনি মহান তিনি কলির ষাঁড় যে তার আছে অবাধ ধর্ষণের ক্ষমতা। তিনি ইচ্ছে মতো নারীদেহের অধিকার ভোগ করতে পারেন। কিছু মহিলাও আছে আমি নিজে দেখেছি পড়ে পড়ে মার গুতো খাবে তাও স্বামীর গায়ে হাত তুলবেনা! নিজে যদি কিছু করতে না পার মানবাধিকার কমিশনে যাও, সেও যাবেনা। ভয় তার শাঁখা সিঁদুর চলে যাবার ভয়। আর একটি কথা শাঁখা সিঁদুর যদি মেয়েরা পরে খুব ভালো কথা, তবে বিবাহিত পুরুষরা পরুন লাল রং বাদে যার যে রঙ পছন্দ সেই রঙ পরুন, নীল সিঁদুর, হলুদ শাঁখা ইত্যাদি। পায়ে নুপূর ছেলেদের পরা আবশ্যক তাতে অনেক সুবিধা হবে। পুরুষগণ সাজগোজ এ মন দিলে কুমতলব, দুষ্টুমি বুদ্ধি এসব মাথায় কম খেলবে। নারী পুরুষ ওরা আমরা এসব নিয়ে ঘ্যানর ঘ্যানর করে লাভ নেই ।
কোনো বাঁকা লোহা পিটিয়েই সোজা করার দরকার। তবে ভালো পুরুষ, ভালো মানুষ মহামানব যুগে যুগে আছেন থাকবেন তাঁরা প্রণম্য। সমাজের সার্বিক কল্যাণের জন্য নারীকে আপন ভাগ্য ছিনিয়ে নিতে হবে। "রাস্তা কারও একার নয়"। মা দুর্গার হাতে ত্রিশূল থাকেই আর অসুর বধ সময়ে করতেই হয়।
0 Comments